পারমাণবিক রসায়ন

পারমাণবিক (বা নিউক্লয়) রসায়ন হল রসায়নের এমন একটি উপবিভাগ যা তেজস্ক্রিয়তা, নিউক্লিয় প্রক্রিয়া (যেমন নিউক্লিয় রূপান্তর) ও নিউক্লিয় ধর্মের সঙ্গে সম্পর্কিত।

চিত্রে একটি আলফা কণা (α) দেখা যায়, যা পরমাণুর নিউক্লিয়াস থেকে বের হয়ে আসছে। প্রোটনগুলি লাল এবং নিউট্রনগুলি নীল রঙের।

ইহা যেমন একদিকে অ্যাক্টিনাইড, রেডিয়ামরেডনের মত তেজস্ক্রিয় মৌলের রসায়ন, তেমনি একসঙ্গে নিউক্লিয় প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে প্রয়োজনীয় উপকরণ (যেমন পারমাণবিক চুল্লি) -এরও রসায়ন। তলীয় ক্ষয় এবং স্বাভাবিক ও অস্বাভাবিক (যেমন দুর্ঘটনা), উভয় ধরনের প্রক্রিয়া চলার সময়কালীন আচরণ এই রসায়নের অন্তর্গত। এ বিষয়েএকটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র হল যে বস্তু ও দ্রব্যগুলি পারমাণবিক বর্জ্যের সংরক্ষণাগার বা আবার্জনাস্থলে ফেলা হয়, তাদের আচরণ পর্যবেক্ষণ করা।

জীবিত প্রাণী, উদ্ভিদ এবং অন্যান্য দ্রব্য কর্তৃক শোষণ ও বিকিরণের ফলে যে তাদের ওপর যে রাসায়নিক প্রভাব পড়ে, তা নিয়েও এখানে আলোচনা করা হয়। এই বিকিরণ রসায়ন অনেকাংশে বিকিরণ জীববিজ্ঞানকে নিয়ন্ত্রণ করে কারণ বিকিরণের জীবন্ত জিনিসের ওপর আণবিক স্কেলে প্রভাব আছে; অন্যভাবে বলতে গেলে, বিকিরণ জীবের মধ্যে জীবজ-রাসায়নিক পরিবর্তন ঘটায়, তারপর সেই পরিবর্তিত জীবজ অণুর জীবের অভ্যন্তরের রসায়নে পরিবর্তন ঘটায়, এবং সেই রাসায়নিক পরিবর্তন অবশেষে জৈবিক পরিণতি লাভ করে। ফলস্বরূপ, নিউক্লিয় রসায়ন, ডাক্তারি চিকিৎসা (যেমন ক্যান্সার চিকিৎসা রেডিওথেরাপি) বোঝার জন্য ব্যাপকভাবে সহায়ক এবং এই চিকিৎসার উন্নতিবিধানে সক্ষম।

অনেক ধরনের প্রক্রিয়ার কাজে তেজস্ক্রিয় উৎসের উৎপাদন ও ব্যবহার এই বিজ্ঞানের অন্তর্ভুক্ত; এর মধ্যে পড়ে চিকিৎসাবিদ্যায় চিকিৎসা রেডিওথেরাপির প্রয়োগ, শিল্প, বিজ্ঞান ও পরিবেশে তেজস্ক্রিয় ট্রেসারের ব্যবহার এবং পলিমারের মত দ্রব্যে রূপান্তর আনতে বিকিরণের ব্যবহার।

এছাড়া, মনুষ্য কার্যকলাপের অন্তর্গত অ-তেজস্ক্রিয় ক্ষেত্রগুলিতে নিউক্লিয় প্রক্রিয়ার পরীক্ষা ও ব্যবহারও ইহার অন্তর্ভুক্ত। উদাহরণস্বরূপ, নিউক্লিয় চুম্বকীয় অনুনাদ (এন এম আর) বর্ণালিবীক্ষণ সাধারণভাবে সংশ্লেষীয় রসায়ন জৈব রসায়ন, রসায়ন ভৌত রসায়ন এবং বৃহদাণবিক রসায়নে আকারগত বিশ্লেষণ ব্যবহৃত হয়।

ইতিহাস

এরপর কনরাড র‌ন্টগেন ভিলহেল্ম র‌ন্টগেন টেসলার ছবির ওপর কাজ যখন এক্স-রে আবিষ্কার করলেন, অনেক বিজ্ঞানী আয়নীকরণ বিকিরণের ওপর কাজ শুরু করলেন। তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন অঁরি বেক্যরেল অঁরি বেক্যরেল, যিনি অনুপ্রভাফোটোগ্রাফিক প্লেটের কালো হয়ে যাওয়ার মধ্যে সম্পর্ক খুঁজছিলেন। যখন  ফ্রান্সে কর্মরত অবস্থায় বেক্যরেল আবিষ্কার করেন যে কোন বাইরের শক্তির উৎস ছাড়াই ইউরেনিয়াম এমন এক ধরনের রশ্মি উৎপন্ন করতে পারে, যা ফোটোগ্রাফিক প্লেটকে কালো (অথবা কুয়াশাচ্ছন্ন) করে দিতে পারে, তেজস্ক্রিয়তা আবিষ্কৃত হয়। প্যারিসে কর্মরত অবস্থায় ক্যুরি মারি ক্যুরি ও তার স্বামী ক্যুরি পিয়ের ক্যুরি ইউরেনিয়ামের আকরিক থেকে দুটি নতুন তেজস্ক্রিয় মৌল পৃথক করেন। প্রতিটি রাসায়নিক পৃথকীকরণের পর তারা কোন স্ট্রিমে তেজস্ক্রিয়তা ছিল, তা তেজস্ক্রিয়মিতিক পদ্ধতিতে চিহ্নিত করেন এবং ইউরেনিয়ামের আকরিককে, তখন যে যে পৃথক পৃথক রাসায়নিক মৌল জানা ছিল, সেগুলিতে আলাদা করেন এবং প্রতিটি পৃথকাংশের তেজস্ক্রিয়তা মাপেন। এরপর তারা তেজস্ক্রিয় পৃথকাংশগুলিকে আরও আলাদা করতে চেষ্টা করেন যাতে উচ্চতর আপেক্ষিক সক্রিয়তা (তেজস্ক্রিয়তা বিভক্ত ভর)-বিশিষ্ট ক্ষুদ্রতর পৃথকাংশ পাওয়া যায়। এই ভাবে, তারা পোলোনিয়াম এবং রেডিয়াম পৃথক করতে সক্ষম হন। ১৯০১ সালে জানা গেল যে উচ্চ মাত্রায় বিকিরণ মানুষের ক্ষতিসাধনে সক্ষম। অঁরি বেক্যরেল অঁরি বেক্যরেল রেডিয়ামের একটি নমুনা পকেটে বহন করেছিলেন, যার ফলে তার একটা বড়সড় শারীরিক ক্ষতি হয়ে যায় যা একটি বিকিরণ-ঘটিত ফোস্কাররূপ নেয়। এই  শারীরিক ক্ষতির ফলে বিকিরণ জৈবিক প্রভাব নিয়ে গবেষণা শুরু হয়, যা পরবর্তীকালে চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নতি হয

রাদারফোর্ড আর্নেস্ট রাদারফোর্ড, কানাডা ও ইংল্যান্ডে কাজ করে দেখালেন যে, তেজস্ক্রিয় ক্ষয়কে একটি সরল সমীকরণ (সরলরৈখিক প্রথম ক্রমের অবকল সমীকরণ যা এখন প্রথম ক্রমের গতিবিজ্ঞান নামে পরিচিত) বর্ণনা করা যায়, যা থেকে বোঝা যায় যে একটি প্রদত্ত তেজস্ক্রিয় পদার্থের একটি বৈশিষ্টমূলক 'অর্ধায়ুকাল' আছে (কোন তেজস্ক্রিয় উৎসে উপস্থিত তেজস্ক্রিয়তার পরিমাণ যে সময় পর কমে অর্ধেক হয়ে যায়, তাকে 'অর্ধায়ুকাল' বলে)। তিনি আলফা, ক্ষয় বিটা এবং রশ্মি গামা রশ্মি - এই পদ্গুলিও উদ্ভাবন করেন, নাইট্রোজেনঅক্সিজেনে রূপান্তরিত করেন এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল যে, তিনি সেইসব ছাত্রের তত্ত্বাবধায়ক ছিলেন যাঁরা গাইগার-মার্সডেনের সোনার পাত পরীক্ষা হাতেকলমে করে দেখেন যা প্রমাণ করে দেয় যে, পরমাণু সংক্রান্ত 'পরমাণু মডেল কিসমিস পুডিং মডেল' ভুল। ১৯০৪ সালে যে যে থমসন প্রস্তাবিত কিসমিস পুডিং মডেল অনুসারে, পরমাণু একটি 'মেঘ' এর ধনাত্মক আধানের একটি 'মেঘ' দ্বারা বেষ্টিত ইলেকট্রন নিয়ে গঠিত যাতে সেই ধনাত্মক আধানের দ্বারা ইলেকট্রনের ঋণাত্মক আধান সামঞ্জস্য বজায় থাকে। সোনার পাত পরীক্ষা থেকে রাদারফোর্ড এই সিদ্ধান্তে এসেছিলেন যে সেই ধনাত্মক আধান খুব ছোট নিউক্লিয়াসে আবদ্ধ যা প্রথমে পরমাণুর পরমাণু মডেল রাদারফোর্ড মডেল, এবং শেষ পর্যন্ত মডেল বোর মডেলের ধারণা দেয় যেখানে ধনাত্মক নিউক্লিয়াস ঋণাত্মক ইলেকট্রন দ্বারা বেষ্টিত।

১৯৩৪ সালে ক্যুরি মারি কুরি'র কন্যা (আইরিন জোলিয়ট-কুরি) এবং জামাতা (ফ্রেডেরিক জোলিয়ট-কুরি) প্রথম বার কৃত্রিম তেজস্ক্রিয়তা সৃষ্টি করেন যেখানে তারা আলফা কণা দ্বারা বোরন কে আঘাত করে অল্পসংখ্যক নিউট্রনবিশষ্ট আইসোটোপ নাইট্রোজেন-13 তৈরি করেন যা পজিট্রন নির্গত করে. উপরন্তু, তারা অ্যালুমিনিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়ামের ওপর নিউট্রন বর্ষণ করে নতুন রেডিও-আইসোটোপ তৈরি করেন।

প্রধান প্রধান ক্ষেত্র

তেজস্ক্রিয় রসায়ন হল তেজস্ক্রিয় পদার্থের রসায়ন,যেখানে মৌলের তেজস্ক্রিয় সমস্থানিক গুলি অ-তেজস্ক্রিয় সমস্থানিকের ধর্ম ও বিক্রিয়া রাসায়নিক বিক্রিয়ার অধ্যয়ন করার কাজে ব্যবহার করা হয় (তেজস্ক্রিয় রসায়নে প্রায়ই তেজস্ক্রিয়তার অনুপস্থিতিতে পদার্থকে নিষ্ক্রিয় হিসেবে বর্ণনা করা হয় কারণ তাদের সমস্থানিকগুলি স্থিতিশীল)।

আরও বিস্তারিতভাবে জানার জন্য তেজস্ক্রিয় রসায়নের  পেজ দেখুন।

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.