পারভেজ মুশাররফ
পারভেজ মুশাররফ (উর্দু: پرویز مشرف, প্রতিবর্ণী. Parvez Muśharraf; (১১ আগস্ট ১৯৪৩ – ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩) পাকিস্তানের সাবেক রাষ্ট্রপতি, এবং সাবেক সেনাপ্রধান। ১৯৯৯ সালের ১২ই অক্টোবর তারিখে সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে নওয়াজ শরীফকে ক্ষমতাচ্যুত করে মোশাররফ রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে নেন। পরে ২০০১ সালের ২০শে জুন তারিখে তিনি রাষ্ট্রপতির পদ গ্রহণ করেন।[2]
পারভেজ মুশাররফ Pervez Musharraf | |
---|---|
১০ম পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি | |
কাজের মেয়াদ ২০ জুন ২০০১ – ১৮ আগস্ট ২০০৮ | |
প্রধানমন্ত্রী | জাফরুল্লাহ খান জামালী চৌধুরী সুজাত হোসেন শওকত আজিজ মুহাম্মদ মিয়া সুমরো ইউসুফ রাজা গিলানি |
পূর্বসূরী | মুহাম্মদ রফিক তারার |
উত্তরসূরী | মুহাম্মদ মিয়া সুমরো (ভারপ্রাপ্ত) |
চীফ এক্সিকিউটিভ অব পাকিস্তান | |
কাজের মেয়াদ ১২ অক্টোবর ১৯৯৯ – ২১ নভেম্বর ২০০২ | |
রাষ্ট্রপতি | মুহাম্মদ রফিক তারার |
পূর্বসূরী | নওয়াজ শরীফ (প্রধানমন্ত্রী) |
উত্তরসূরী | জাফরুল্লাহ খান জামালী (প্রধানমন্ত্রী) |
প্রতিরক্ষামন্ত্রী | |
কাজের মেয়াদ ১২ অক্টোবর ১৯৯৯ – ২৩ অক্টোবর ২০০২ | |
পূর্বসূরী | নওয়াজ শরীফ |
উত্তরসূরী | রাও সিকান্দার ইকবাল |
সেনাবাহিনী প্রধান (পাকিস্তান) | |
কাজের মেয়াদ ৬ অক্টোবর ১৯৯৮ – ২৮ নভেম্বর ২০০৭ | |
পূর্বসূরী | জাহাঙ্গীর কেরামত |
উত্তরসূরী | আশফাক পারভেজ কায়ানী |
চেয়ারম্যান অব দ্যা জয়েন্ট চীফস অব স্টাফ কমিটি | |
কাজের মেয়াদ ৮ অক্টোবর ১৯৯৮ – ৭ অক্টোবর ২০০১ | |
পূর্বসূরী | জাহাঙ্গীর কেরামত |
উত্তরসূরী | আজিজ খান |
ব্যক্তিগত বিবরণ | |
জন্ম | দিল্লি, ব্রিটিশ ভারত (এখন ভারত) | ১১ আগস্ট ১৯৪৩
মৃত্যু | ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ৭৯) দুবাই, সংযুক্ত আরব আমিরাত | (বয়স
রাজনৈতিক দল | পাকিস্তান মুসলিম লীগ (কায়েদ) (২০১০ এর পূর্বে) অল পাকিস্তান মুসলিম লীগ (২০১০-বর্তমান) |
দাম্পত্য সঙ্গী | সেহবা |
সন্তান | আয়লা বেলাল |
প্রাক্তন শিক্ষার্থী | ফরমান ক্রিশ্চিয়ান কলেজ লাহোর পাকিস্তান সামরিক একাডেমী কমান্ড এ্যান্ড স্টাফ কলেজ পাকিস্তান ন্যাশনাল ডিফেন্স ইউনিভার্সিটি পাকিস্তান রয়্যাল কলেজ অব ডিফেন্স স্টাডিজ যুক্তরাজ্য |
পুরস্কার | নিশান-ই-ইমতিয়াজ তমগা-ই-বাসালাত ইমতিয়াজি সনদ অর্ডার অব আল-সৌদ |
সামরিক পরিষেবা | |
ডাকনাম | "কাউবয়", "মুশ", "পাল্লু" [1] |
আনুগত্য | পাকিস্তান |
শাখা | পাকিস্তান সেনাবাহিনী |
কাজের মেয়াদ | ১৯৬১-২০০৭ |
পদ | জেনারেল |
ইউনিট | গোলন্দাজ রেজিমেন্ট, পাকিস্তান সেনাবাহিনী |
কমান্ড | ১ম কোর দ্বাদশ কোর স্পেশাল সার্ভিসেস গ্রুপ মহাপরিচালক, মিলিটারি অপারেশন্স পরিদপ্তর, রাওয়ালপিন্ডি সেনাসদর ৪০তম পদাতিক ডিভিশন |
যুদ্ধ | ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ ১৯৬৫ ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ ১৯৭১ সিয়াচেন দ্বন্দ্ব কার্গিল যুদ্ধ আফগান গৃহ যুদ্ধ ১৯৯৬-২০০১ ১৯৯৯ সালের সামরিক অভ্যুত্থান পাক-ভারত সীমান্ত দ্বন্দ্ব ২০০১-২০০২ উত্তর-পশ্চিম পাকিস্তানে যুদ্ধ |
পারভেজের জন্ম হয়েছিলো দিল্লীতে ১৯৪৩ সালে, তিনি করাচী এবং তুরস্কের ইস্তানবুলে বড় হন। লাহোরের ফরমান ক্রিশ্চিয়ান কলেজে মুশাররফ গণিত নিয়ে ভর্তি হলেও পরিবারের অমতে পাকিস্তান মিলিটারি একাডেমিতে যোগ দেন ১৯৬১ সালে। ১৯৬৪ সালে তিনি একাডেমী থেকে ২য় লেফটেন্যান্ট হিসেবে বের হয়েছিলেন।[3] এই ২য় লেফটেন্যান্ট পদবীতেই তিনি ১৯৬৫ সালের পাক-ভারত যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। আশির দশকে ব্রিগেডিয়ার পদবীতে তিনি একটি গোলন্দাজ ব্রিগেডের অধিনায়কত্ব করেন। নব্বইয়ের দশকে মেজর-জেনারেল মুশাররফ একটি পদাতিক ডিভিশনের অধিনায়কত্ব এবং পাকিস্তান সেনাবাহিনীর কমান্ডো বাহিনী 'স্পেশাল সার্ভিসেস গ্রুপ'-এর প্রধান অধিনায়ক হন। তিনি পরে সেনাবাহিনী সদর দপ্তরে ডেপুটি মিলিটারি সেক্রেটারি এবং ডাইরেক্টর জেনারেল অব মিলিটারি অপারেশন্স ডাইরেক্টরেট ছিলেন।[4]
১৯৯৮ সালের অক্টোবর মাসে পারভেজ মুশাররফের পদবী লেফটেন্যান্ট-জেনারেল থেকে পূর্ণ জেনারেল পদবীতে উন্নীত করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফ। পূর্ণ জেনারেল হিসেবে পারভেজ সেনাবাহিনী প্রধান এবং চেয়ারম্যান অব দ্যা জয়েন্ট চীফস অব স্টাফ কমিটির দায়িত্ব পেয়েছিলেন। ১৯৯৯ সালে ভারতে হামলার মূল পরিকল্পনা পারভেজই করেছিলেন যেটা পরে কার্গিল যুদ্ধতে রূপ নেয়।[5] প্রধানমন্ত্রী শরীফের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে পারভেজের তর্কাতর্কি থাকায় শরীফ পারভেজকে সামরিক বাহিনী থেকে বরখাস্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। জেনারেল পারভেজ এর জবাব হিসেবে নওয়াজ শরীফকে এক সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরিয়ে দেন ১৯৯৯ সালে; শরীফ গৃহবন্দী হন এবং তাকে রাওয়ালপিন্ডির সেন্ট্রাল জেলে আটকিয়ে রাখা হয়।[6]
পারভেজ দেশের শাসনক্ষমতা পরিপূর্ণভাবে নিজের হাতে তুলে নেন এবং ২০০১ সালে চেয়ারম্যান অব দ্যা জয়েন্ট চীফস অব স্টাফ কমিটির পদ ছেড়ে দেন যদিও তিনি আর্মি চীফের দায়িত্বে থেকে যান।[7] ২০০১ সালের ২০শে জুন পারভেজ নিজেকে দেশের প্রকৃত রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করেন এবং ২০০২ সালের ১ই মে তারিখে একটি রেফারেন্ডামের মাধ্যমে তিনি পাঁচ বছরের জন্য রাষ্ট্রপতি থাকবেন বলে ঘোষণা করেন।[8]
ক্ষমতায় বসার সঙ্গে সঙ্গেই পারভেজ দেশের অর্থনীতি এবং সমাজ-ব্যবস্থা পরিবর্তনের দিকে মনোযোগ দেন, তিনি 'থার্ড ওয়ে' রাজনৈতিক ধারার সমর্থক ছিলেন, তিনি শওকত আজিজকে দেশের নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ করেন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আরো ভালো সম্পর্ক গড়ে তোলেন।[5] জেনারেল পারভেজ ক্ষমতায় আসার কয়েক বছরের মধ্যেই ইসলামপন্থী জঙ্গীদের হামলার দ্বারা হত্যাচেষ্টার শিকার হয়েছিলেন যদিও প্রত্যেকবারই তিনি বেঁচে যান। ২০০২ সালে তিনি দেশের সংবিধানে পরিবর্তন আনেন। তিনি সামাজিক উদারনীতিবাদ এর একজন গোঁড়া সমর্থক ছিলেন এবং তিনি পাকিস্তানের জন্য 'এনলাইটেন্ড মোডারেশোন প্রোগ্রাম' চালু করেন, সঙ্গে সঙ্গে তিনি 'ইকোনমিক লিবারেলাইজেশোন' শক্তভাবে চালু করে ট্রেড ইউনিয়ন নিষিদ্ধ করেছিলেন।[9]
শাস্তি
দেশদ্রোহের অভিযোগে পাকিস্তানের লাহোর উচ্চবিচারালয়-এর বিচারক শহীদ করিমের বেঞ্চ হতে পারভেজের মৃত্যুদণ্ড ঘোষিত হয়।[10][11][12] যদিও খুব শীঘ্রই মৃত্যুদণ্ডের রায় বাতিল করে দেওয়া হয়।[13]
মৃত্যু
২০২৩ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে আমেরিকান হসপিটালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মুত্যু হয়।[14][15]
তথ্যসূত্র
- http://fact.com.pk/archives/april/feng/mush.htm
- Dummett, Mark (১৮ আগস্ট ২০০৮)। "Pakistan's Musharraf steps down"। Work and report completed by BBC correspondent for Pakistan Mark Dummett। BBC Pakistan, 2008। BBC Pakistan। সংগ্রহের তারিখ ৫ জানুয়ারি ২০১৫।
- Wilson, John (২০০৭)। "General Pervez Musharraf— A Profile"। The General and Jihad। Washington D.C.: Pentagon Press, 2007। আইএসবিএন 9780520244481।
- "Pervez Musharraf Biography President (non-U.S.), General (1943–)"। ১০ অক্টোবর ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা।
- Morris, Chris (১৮ আগস্ট ২০০৮)। "Pervez Musharraf's mixed legacy"। Special report published by Chris Morris BBC News, Islamabad। BBC News, Islamabad। BBC News, Islamabad। সংগ্রহের তারিখ ৫ জানুয়ারি ২০১৫।
- "Pervez Musharraf | president of Pakistan"। সংগ্রহের তারিখ ২০১৬-০৯-২১।
- Constable, Pamela (২০০৭-১১-২৮)। "Musharraf Steps Down as Head of Pakistani Army"। The Washington Post (ইংরেজি ভাষায়)। আইএসএসএন 0190-8286। সংগ্রহের তারিখ ২০১৬-০৯-২৪।
- "Pakistan's Dubious Referendum"। The New York Times। ২০০২-০৫-০১। আইএসএসএন 0362-4331। সংগ্রহের তারিখ ২০১৬-০৯-২১।
- "Labour leaders urge Musharraf to quit"। ২০০৮-০৩-১০। সংগ্রহের তারিখ ২০১৬-০৯-২৪।
- "স্বৈরশাসক পারভেজ মোশাররফের মৃত্যুদণ্ড"। ১৭ ডিসেম্বর ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৭ ডিসেম্বর ২০১৯ ।
|url-status=অকার্যকর
অবৈধ (সাহায্য); এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন:|সংগ্রহের-তারিখ=, |আর্কাইভের-তারিখ=
(সাহায্য) - "পারভেজ মোশাররফের মৃত্যুদণ্ড"। ১৭ ডিসেম্বর ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৭ ডিসেম্বর ২০১৯ ।
|url-status=অকার্যকর
অবৈধ (সাহায্য); এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন:|সংগ্রহের-তারিখ=, |আর্কাইভের-তারিখ=
(সাহায্য) - "পারভেজ মোশাররফের মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা"। সংগ্রহের তারিখ ১৭ ডিসেম্বর ২০১৯।
- "পারভেজ মোশাররফের মৃত্যুদণ্ড বাতিল"। ntvbd.com। ১৩ জানুয়ারি ২০২০। সংগ্রহের তারিখ ৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০।
- এনডিটিভি (৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩)। "Pakistan's Former President Pervez Musharraf Dies After Prolonged Illness"।
- প্রথম আলো, দৈনিক (৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩)। "পাকিস্তানের সাবেক প্রেসিডেন্ট পারভেজ মোশাররফ মারা গেছেন"। সংগ্রহের তারিখ ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩।