পাকিস্তানের রাষ্ট্র ভাষা বাংলা না উর্দু?

পাকিস্তানের রাষ্ট্র ভাষা: বাংলায় না উর্দু? একটি পুস্তিকা, যা ১৫ সেপ্টেম্বর ১৯৪৭ তারিখে তমদ্দুন মজলিশের পক্ষ থেকে প্রকাশ করেন বাংলা ভাষা আন্দোলনের পথিকৃৎ প্রিন্সিপাল আবুল কাশেম। পাকিস্তানের স্বাধীনতা লাভের এক মাসের মধ্যে প্রকাশিত এই বইতে সমগ্র পাকিস্তানের একটি রাষ্ট্রীয় ভাষা হিসেবে বাংলা প্রবর্তনের দাবি জানানো হয়। এই বইটিতে জোরালোভাবে পূর্ব পাকিস্তানে বাংলা ভাষাকে শিক্ষার মাধ্যম, কোর্টের ভাষা এবং সরকারী অফিসগুলোতে ব্যবহারের ভাষা হিসাবে ব্যবহারের জন্য সমর্থন দেয়া হয়।[1]

পাকিস্তানের রাষ্ট্র ভাষা: বাংলায় না উর্দু? -এর প্রচ্ছদ

পুস্তিকা সম্পর্কে

১ সেপ্টেম্বর ১৯৪৭ তারিখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগ অধ্যাপক আবুল কাশেমের নেতৃত্বে অন্যান্য কয়েকজন শিক্ষকের সম্বনয়ে তমদ্দুন মজলিশ প্রতিষ্ঠিত হয়। এই প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে 'পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা: বাংলা না উর্দু?' নামে একটি পুস্তিকা প্রকাশ করা হয়, (পাকিস্তান রাষ্ট্রভাষা বাংলা না উর্দু?) ১৯৪৭ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর তারিখে। পুস্তিকাটিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন বিশিষ্ট অধ্যাপক কাজী মোতাহের হোসেন, রাজনীতিবিদ, সাহিত্যিক এবং কলকাতার দৈনিক ইতিহাদের সম্পাদক আবুল মনসুর আহমেদ, এবং তদ্দুন মজলিশের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক আবুল কাশেমের লেখা মোট তিনটি নিবন্ধ ছিলো। অধ্যাপক কাজী মোতাহের হোসেন 'রাষ্ট্রভাষা এবং পূর্ব পাকিস্তানের ভাষা সমস্যা' (রাজ্য ভাষা এবং পূর্ব পাকিস্তানের ভাষা সমস্যা) শিরনামে তার নিবন্ধে বাংলা ভাষাকে কিছু মানুষের হৃদয় এবং মন থেকে অপসারণের চেষ্টা করেন, তিনি উল্লেখ করেছেন যে মুসলিম শাসকদের যারা উদার পৃষ্ঠপোষকতার মাধ্যমেই বাংলা ভাষার বিকাশ হয়েছে এবং মুসলমানদের ব্যবহারের জন্য বাংলা একটি উপযোগী ভাষা। আবুল মনসুর আহমেদ ভাষা আন্দোলনের অর্থনৈতিক গুরুত্বের উপর প্রাধান্য দিয়ে তার 'বাংলা ভাষাই হবে আমাদের রাষ্ট্রভাষা' (বাংলা আমাদের রাষ্ট্র ভাষা করা আবশ্যক) নিবন্ধে। নিবন্ধে তিনি সতর্ক করেন যে উর্দু যদি পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্র ভাষা হিসাবে নির্ধারণ করা হয় তবে, পূর্ব পাকিস্তান শিক্ষিত মানুষ অশিক্ষিত হিসাবে বিবেচিত হবেন। 'আমাদের প্রস্তাব' (আমাদের প্রস্তাব) শিরনামে পুস্তিকার প্রথম নিবন্ধে, অধ্যাপক আবুল কাশেম ভাষা আন্দোলনের মৌলিক দাবিগুলোর বিষয়ে আলোকপাত করেছিলেন।[2]

তার প্রবন্ধে তিনি বলেন যে-

  1. বাংলা হবে:
    1. পূর্ব পাকিস্তানের শিক্ষার মাধ্যম
    2. পূর্ব পাকিস্তানের আদালত ভাষা; এবং
    3. পূর্ব পাকিস্তানের সরকারি ভাষা।
  2. পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকারের সরকারি ভাষা হবে দুইটি, উর্দু এবং বাংলা।
  3. পূর্ব পাকিস্তানের অধিবাসীদের জন্য বাংলা হবে শিক্ষার প্রধান মাধ্যমে যেহেতু এখানকার ১০০ ভাগ মানুষ এই ভাষায় অভ্যস্ত;
    1. উর্দু পূর্ব পাকিস্তানের দ্বিতায় ভাষা বা অন্তর্বিভাগীয় কাজে ব্যবহারের উপযোগী ভাষা হিসাবে বিবেচিত হতে পারে এবং যারা ​​পশ্চিম পাকিস্তানে কর্রত থাকবেন তাদেরকে এই ভাষাটি শেখানো যেতে পারে। পূর্ব পাকিস্তান মোট জনসংখ্যার মাত্র ৫% থেকে ১০% ভাগ উর্দু শেখাই যথেষ্ট। পূর্ব পাকিস্তানে মাধ্যমিক স্কুলের উচ্চতর শ্রেণীগুলোতে উর্দু ভাষাটি শেখানো যেতে পারে; এবং
    2. ইংরেজি হবে পূর্ব পাকিস্তানের তৃতীয় বা আন্তর্জাতিক ভাষা হবে।
  4. ইংরেজি এবং বাংলা উভয় ভাষাই একই সাথে পূর্ব পাকিস্তানে সরকারী ভাষা হিসেবে কয়েক বছর ধরে ব্যবহৃত হবে।" [3]

তিনি আরো মানুষের সাথে বিভিন্ন সমাবেশ করেন এবং বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মাতৃভাষার পরিবর্তে অন্য একটি ভাষা ব্যবহারে বাধ্য করার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে উদ্বুদ্ধ করেন এবং গভর্নর জেনারেল কাইদে আজম এবং অন্যান্য নেতারের বৈঠকে স্মার লিপি পাঠান। তিনি দেশের বিভিন্ন স্থানে একাধিক ব্যক্তির সাথে যোগাযোগ করেন এবং গণপরিষদের সদস্যদের কাছে প্রতিনিধি পাঠিয়ে বাংলা ভাষার এই দাবিটি সমর্থন জানানোর প্রস্তাব করেন। এছাড়া তিনি সকলকে এই আন্দোলনে যোগ দিয়ে এটিকে আরও শক্তিশালী এবং অপরাজেয় করার আহ্বান জানান।

পুস্তিকা কেবলমাত্র ভাষা আন্দোলন জন্য যুক্তিগুলো মানুষের কাছে উপস্থান করেননি বরং বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসাবে ব্যবহার করার জন্য একটি সক্রিয় আন্দোলনেরও ইঙ্গিত দেন। [4]

তথ্যসূত্র

  1. এম.আর. আক্তার মুকুল, ভাষা আন্দোলনের জন্যই সূচনা করেছিলেন। দৈনিক বাংলা, মার্চ ১০, ১৯৯৩
  2. আব্দুল গাফফার, ঐতিহাসিক ভাষা আন্দোলন। দ্যা নিউ ন্যাশন, ঢাকা, ফেব্রুয়ারি ২১, ২০০২
  3. বদরুদ্দিন ওমর, পূর্ব বাংলার ভাষা আন্দোলন ও তৎকালীন রাজনীতি। মাওলা ব্রাদার্স, ১৯৭০, পৃঃ ১৪
  4. আব্দুল গাফফার ঐতিহাসিক ভাষা আন্দোলন. http://ruchichowdhury.tripod.com/historic_language_movement.htm
This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.