পাকস্থলী

পাকস্থলী (ইংরেজি: Stomach) মানব দেহে পরিপাকতন্ত্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ যা অন্ননালীক্ষুদ্রান্ত্রের মধ্যে অবস্থিত। এটি উদর গহবরের বাম পাশে উপর দিকে থাকে। খাদ্য পরিপাক প্রক্রিয়া প্রধানত পাকস্থলীতে শুরু হয়। বিশেষ করে আমিষ জাতীয় খাদ্যের পরিপাকে পাকস্থলীর ভূমিকা প্রধান। সাধারণত স্নেহ জাতীয় খাদ্য পাকস্থলীতে পরিপাক হয় না।

পাকস্থলী
দেহে পাকস্থলির অবস্থান
চিত্রঃ cancer.gov:
* 1. পাকস্থলির দেহ
* 2. ফান্ডাস
* 3. সম্মুখ প্রাচীর
* 4. বৃহত্তর বক্রতা
* 5. ক্ষুদ্রতর বক্রতা
* 6. কার্ডিয়া
* 9. পাইলরিক স্ফিংক্টার
* 10. পাইলরিক অ্যান্ট্রাম
* 11. পাইলরিক গহ্বর
* 12. অ্যাঙ্গুলার খাঁজ
* 13. গ্যাস্ট্রিক গহ্বর
* 14. রুগাল খাঁজ

Work of the United States Government
বিস্তারিত
স্নায়ুceliac ganglia, vagus<
লসিকাceliac preaortic lymph nodes
শনাক্তকারী
লাতিনVentriculus
গ্রিকGaster
মে-এসএইচD013270
টিএ৯৮A05.5.01.001
টিএ২2901
এফএমএFMA:7148
শারীরস্থান পরিভাষা

পাকস্থলীর গঠন

পাকস্থলির প্রস্থচ্ছেদ

অন্ননালীডিওডেনাম এর মাঝখানে পাকস্থলী একটি থলির মতো অঙ্গ। এর দৈর্ঘ্য প্রায় ২৫ সে.মি.।এটি উদরীয় গহ্বরের উপরের বাম দিকে থাকে। এর উপর প্রান্ত ডায়াফ্রামের বিপরীতে থাকে।পাকস্থলির পিছনে অগ্ন্যাশয় আছে।বৃহত্তর বক্রতা (greater curvature) থেকে বৃহত্তর ওমেন্টাম নামে। প্রাচীর পুরু ও পেশিবহুল।

পাকস্থলিতে দুটি স্ফিংক্টার থেকে-অন্ননালী এবং পাইলরিক।

পাকস্থলি প্যারাসিমপ্যাথেটিক ও অর্থোসিমপ্যাথেটিক প্লেক্সাস দিয়ে আবদ্ধ থাকে।

প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের ক্ষেত্রে বিশ্রামরত ,প্রায় খালি অবস্থায় পাকস্থলির আয়তন ৪৫ থেকে ৭৫ মিলিলিটার হয়ে থাকে।[1] যেহেতু এটি বর্ধনশীল অঙ্গ,এটি প্রায় এক লিটার খাদ্য ধারণ করতে পারে।[2] সদ্যোজাত শিশুর পাকস্থলি মাত্র ৩০ মিলিলিটার খাদ্য ধারণ করতে পারে।

বিভিন্ন অঞ্চল

অ্যানাটমিতে পাকস্থলিকে চার ভাগে ভাগ করা হয়।পাকস্থলির প্রথম অংশ কার্ডিয়া[3] প্রতিটা ভাগের বিভিন্ন কোষ এবং কাজ আছে।

  • অন্ননালী পাকস্থলির যেখানে উন্মুক্ত হয়,তাকে কার্ডিয়া বলে।এই অঞ্চলেই এপিথেলিয়াম কোষের প্রকৃতি পরিবর্তিত হয়।এর কাছেই নিম্নস্থ অন্ননালীয় স্ফিংক্টার। [4]
  • পাকস্থলির উপরের বক্রতাকে ফান্ডাস বলে।
  • পাকস্থলির দেহ প্রধান অংশ।
  • পাকস্থলির নিচের অংশকে পাইলরাস বলে,যেখান থেকে পাকস্থলির খাদ্য ক্ষুদ্রান্তে উন্মোচিত হয়।

রক্ত সরবরাহ

পাকস্থলির রক্ত সরবরাহ[5]

কলাতত্ত্ব

মাইক্রোগ্রাফে প্রদর্শিত পাকস্থলির প্রস্থচ্ছেদ

গ্রন্থি

পাকস্থলীর স্তর নামক্ষরণপাকস্থলীর অঞ্চল স্টেইনিং
গ্রন্থির ইস্থমাসমিউকাস নেক কোষমিউকাসফান্ডাস,কার্ডিয়া,পাইলোরাসপরিষ্কার
গ্রন্থির দেহপ্যারাইটাল বা অক্সিনটিক কোষগ্যাস্ট্রিক অ্যাাসিড ও ইন্ট্রিন্সিক ফ্যাক্টর [ফান্ডাসঅম্লীয়
গ্রন্থির মূলচীফ বা জাইমোজেন কোষপেপসিনোজেন,গ্যাস্ট্রিক লাইপেজফান্ডাসক্ষারীয়
গ্রন্থির মূলআন্ত্রিক অন্তঃক্ষরা কোষগ্যাস্ট্রিন,হিস্টামিন,সেরোটোনিন,কোলিসিস্টোকাইনিনফান্ডাস,কার্ডিয়া,পাইলোরাস

পাকস্থলীতে পরিপাক

পাকস্থলীর প্রাচীরে অসংখ্য গ্যাস্ট্রিকগ্রন্থি থাকে। গ্যাস্ট্রিক গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত রস খাদ্য পরিপাকে সহায়তা করে। পেরিসস্ট্যালসিস অর্থাৎ পাকস্থলীর পেশি সংকোচন ও প্রসারণের মাধ্যমে খাদ্যবস্তুকে পিষে মন্ডে পরিণত করে।

পাকস্থলীতে খাদ্য আসার পর অন্তঃপ্রাচীরের গ্যাস্ট্রিক গ্রন্থি থেকে গ্যাস্ট্রিক রস নিঃসৃত হয়। এই রসে প্রধান যে উপাদানগুলো থাকে তা হলো:

  • হাইড্রোক্লোরিক এসিড: হাইড্রোক্লোরিক এসিড খাদ্যের মধ্যে কোনো অনিষ্টকারী ব্যাকটেরিয়া থাকলে তা মেরে ফেলে। নিষ্ক্রিয় পেপসিনোজেনকে সক্রিয় পেপসিনে পরিণত করে এবং পাকস্থলীতে পেপসিনের সুষ্ঠু কাজের জন্য অম্লীয় পরিবেশ সৃষ্টি করে।
  • পেপসিন: পেপসিন এক ধরনের এনজাইম যা আমিষকে ভেঙ্গে দুই বা ততোধিক অ্যামাইনো এসিড দ্বারা তৈরি যৌগ গঠন করে যা পেপটাইড নামে পরিচিত।

পাকস্থলীতে খাদ্যদ্রব্য পৌঁছানো মাত্র উপরিউক্ত রসগুলো নিঃসৃত হয়। পাকস্থলীর অনবরত সংকোচন ও প্রসারণ এবং এনজাইমের ক্রিয়ার ফলে খাদ্যমিশ্র মন্ডে পরিণত হয়। একে পাকমণ্ড বলে। এই মন্ড অনেকটা স্যুপের মতো এবং কপাটিকা ভেদ করে ক্ষুদ্রান্ত্রে প্রবেশ করে।

শর্করা এবং স্নেহ জাতীয় খাদ্য সাধারণত পাকস্থলীতে পরিপাক হয় না। কারণ, এদের পরিপাকের জন্য গ্যাস্ট্রিক রসে নির্দিষ্ট কোনো এনজাইম থাকে না। [6]

তথ্যসূত্র

  1. BBC news article
  2. Sherwood, Lauralee (১৯৯৭)। Human physiology: from cells to systems। Belmont, CA: Wadsworth Pub. Co। আইএসবিএন 0-314-09245-5। ওসিএলসি 35270048
  3. সানি ডাউনস্টেট মেডিকেল সেন্টারে শারীরস্থান চিত্র:37:06-0103 - "Abdominal Cavity: The Stomach"
  4. Schwartz's principles of surgery (9th ed. সংস্করণ)। New York: McGraw-Hill, Medical Pub. Division। ২০১০। আইএসবিএন 0071547703। Authors list-এ |প্রথমাংশ1= এর |শেষাংশ1= নেই (সাহায্য)
  5. Anne M. R. Agur; Moore, Keith L. (২০০৭)। Essential Clinical Anatomy (Point (Lippincott Williams & Wilkins))। Hagerstown, MD: Lippincott Williams & Wilkins। আইএসবিএন 0-7817-6274-X। ওসিএলসি 172964542; p. 150
  6. জীববিজ্ঞান, নবম-দশম শ্রেণি (২০২০)। খাদ্য ও পরিপাক। NCTB। পৃষ্ঠা ১১৬।

৬. প্রান্তিক রিসোর্স ল্যাব বিজ্ঞান বিভাগ, ক্যাটাগরি।

আরও দেখুন

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.