পাংওয়ালি ভাষা
পাংওয়ালি ভাষা (টাকরী: 𑚞𑚫𑚌𑚦𑚭𑚪𑚯) পশ্চিমা পাহাড়ী ভাষাগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত একটি ভাষা, যা মূলত উত্তর ভারতের হিমাচল প্রদেশ রাজ্যের চম্বা জেলার পাঙ্গি উপত্যকাকে কেন্দ্র করে বসবাসকারী জনগোষ্ঠীর ভাষা৷ ইউনেস্কো এই ভাষাটিকে ভারতের প্রায় অবলপ্ত ভাষাগুলির তালিকাভুক্ত করেছে৷[3]
পাংওয়ালি | |
---|---|
পঙ্গওয়াড়ি | |
𑚞𑚫𑚌𑚦𑚭𑚪𑚯, पंगवाड़ी | |
জাতিতত্ত্ব | পঙ্গওয়ালা |
মাতৃভাষী | ১৮,৬৬৮ (২০১১ জনগণনা)[1] বেশ কিছু পাংওয়ালিভাষী নিজেদের হিন্দি ও পাহাড়িভাষী বলে উল্লেখ করছেন |
উপভাষাসমূহ |
|
টাকরী, দেবনাগরী লিপি | |
ভাষা কোডসমূহ | |
আইএসও ৬৩৯-৩ | pgg |
গ্লোটোলগ | pang1282 [2] |
লিপি
পাংওয়ালি ভাষার জন্য ব্যবহৃত মূল লিপি হলো টাকরী লিপির একটি বিশেষ স্থানীয় প্রকার, যা চম্বিয়ালী লিপি নামে পরিচিত৷ তবে ভারতের স্বাধীনতা লাভের পর দেবনাগরী লিপি এই লিপিটিকে প্রতিস্থাপিত করে৷
শ্রেণীবিন্যাস
ভাষাবিদ জর্জ আব্রাহাম গ্রিয়ার্সন তার ভারতের ভাষিক অনুসন্ধানে পাংওয়ালিকে চম্বিয়ালী ভাষার উপভাষা বলে উল্লেখ করেছেন৷[4] বর্তমানে এটি পশ্চিমা পাহাড়ি ভাষা চম্বিয়ালী শ্রেণীর পৃথক ভাষা হিসাবে স্বীকৃতি পেয়েছে৷
পাংওয়ালি ভাষার সাথে মণ্ডিয়ালী ভাষার ৬৪ শতাংশ, কাংড়ি ভাষার সাথে ৫২ শতাংশ, চম্বিয়ালী ভাষার সাথে ৪৪ শতাংশ, এবং ভদ্রবাহী ভাষার সাথে ৫০ শতাংশ পারস্পরিক বোধগম্যতা রয়েছে৷ এটির সাথে হিন্দির ৫৫ শতাংশ, কুলুবী ভাষার ৭৭ শতাংশ ও ভদ্রবাহী ভাষার ৪৫ শতাংশ আভিধানিক সাদৃৃশ্য রয়েছে৷[5]
উপভাষা
পাংওয়ালি ভাষার মূলত চারটি উপভাষা রয়েছে:
- কিল্লার
- পুরথি
- সচ
- ধরওয়াসি
কিল্লার শহর পাঙ্গী তহশিলের সদর হওয়ার ফলে কিল্লার উপভাষাটি সকলের কাছে বোধগম্য৷ আবার সচ উপভাষাটি বাকী উপভাষার তুলনায় অধিক সংস্কৃতকৃত৷ [6]
ব্যাকরণ
গ্রিয়েরসনের পাংওয়ালির চিত্রণের পর এই ভাষা বিষয়ক শ্রী বিনয়সুন্দর নায়ক হিন্দি ভাষায় একটি পুস্তক মুদ্রণ করান৷[7]
সর্বনাম
পাংওয়ালির সর্বনাম ও সম্বোধন লিঙ্গভেদে ভিন্ন হয়, যথা স্ত্রী ও পুরুষ৷
কারক বিভক্তি
কারক | বিভক্তি |
---|---|
করণ কারক | বই, জুএ, বলি |
সম্প্রদান কারক | জে |
অপাদান কারক | কেআঁ, পুটা/বুটা, -এ |
সম্বন্ধ পদ | -এ |
বাগধারা
টাকরী | দেবনাগরী | প্রতিবর্ণী | অর্থ |
---|---|---|---|
𑚢𑚌𑚮𑚤𑚮 𑚩𑚙𑚴𑚄 𑚥𑚃 𑚠𑚮𑚧𑚰𑚘 | मगिरि हतोउ लई बिशुण | মগিরি হতোউ লঈ বিশুণ | অধিক চিন্তাভাবনা |
𑚥𑚰𑚫𑚌𑚙𑚲 𑚑𑚅 𑚊𑚱𑚘 𑚥𑚌𑚴𑚨𑚲 | लुंगते जऊ कूण लगोसे | লুঙ্গতে জঊ কূণ লগোসে | যুবক বয়সে বৃদ্ধবৎ |
𑛂𑛀 𑚤𑚲𑚙𑚯 𑚏𑚴𑚤𑚲, 𑛂𑛁 𑚆𑚊𑚯𑚣𑚰 𑚢𑚭𑚥𑚸𑚲 | २० रेती चोरे, २१ एकीयु मालखे | ২০ রেতী চোরে, ২১ একীয়ু মালখে | চোর ধরা পড়বেই |
𑚛𑚰𑚁𑚤𑚲 𑚛𑚰𑚁𑚤𑚲 𑚢𑚲𑚝𑚯 𑚏𑚰𑚘𑚯𑚘 | दुआरे दुआरे मेनी चुणीण | দুআরে দুআরে মেনী চুণীণ | অধিক পরশ্রম |
জনসংখ্যা
পাংওয়ালি ভাষাভাষী লোক মূলত পাঙ্গী অঞ্চলে থাকেন৷ ২০১১ খ্রিস্টাব্দের জনগণনা অনুযায়ী ভারতে পাংওয়ালি ভাষাভাষীর সংখ্যা ১৮,৬৬৮ জন, যেখানে ২০০১ খ্রিস্টাব্দে এই জনসংখ্যা ছিলো ১৬,২৮৫ জন৷[9] জন সচেতনতার অভাবে যথেষ্ট সংখ্যক লোক নিজেদের হিন্দি এবং পাহাড়ী ভাষা (পাহাড়ি মূলত হিমাচলের ভাষাগুলিকে একত্রিত করতে কেন্দ্রীয় সরকার প্রবর্তিত নাম) বলে উল্লেখ করেছেন৷
- ভারত - ১৮,৬৬৮
- হিমাচল প্রদেশ - ১৮,৬৪০ (০.২৭%)
- চম্বা জেলা - ১৮,০৮৫ (৩.৪৮%)
- পাঙ্গী ব্লক - ১৭,৩৩৭ (৯১.৮৯%)
- চম্বা জেলা - ১৮,০৮৫ (৩.৪৮%)
সাহিত্য
টুবারি ম্যাগাজিন[10] বর্তমানে জনপ্রিয় পাংওয়ালি ম্যাগাজিন, যা ভাষাটিকে অজ্জীবিত রেখেছে৷ ম্যাগাজিনটি মূলত দেবনাগরী লিপিতে মুদ্রণ হয়৷ এছাড়াও আরো কিছু প্রকাশক তাদের প্রকাশনার মাধ্যমে ভাষাটিক উজ্জীবিত রেখেছেন৷
বর্তমান অবস্থা
পাংওয়ালি ভাষাটি সাধারণভাবে পাহাড়ি অথবা হিমাচলি ভাষা নামে পরিচিত। এই ভাষাটি কোন সরকারি পদমর্যাদা নেই এবং এটি বর্তমানে হিন্দি ভাষার একটি উপভাষা হিসেবে পরিগণিত হয়। ইউনেস্কোর তথ্য অনুসারে এই ভাষাটি প্রায় অবলুপ্ত ভাষার তালিকাভুক্ত, যার অর্থ অধিকাংশ পাংওয়ালি ভাষাভাষী শিশুরা নিজের মাতৃভাষায় প্রাথমিক শিক্ষালাভে অক্ষম এবং তাদের পূর্বপুরুষরাও সঠিকভাবে এই ভাষার বিশুদ্ধতা বজায় রাখতে অক্ষম।[11]
ভারতের সংবিধানের অষ্টম তফসিলে পাহাড়ী হিমাচলি ভাষাগুলির অন্তর্ভুক্তির জন্য ২০১০ খ্রিস্টাব্দে সিংহভাগ সম্মতিতে বিষয়টি রাজ্য বিধানসভায় উপস্থাপিত হয়৷[12] ছোটো ছোট সংস্থাগুলির দাবীকে বাদ দিতে সরকারীভাবে বিশেষ ঐই ভাষাগুলি সংরক্ষণ ও মান্যতা দানের কোনো বড় পদক্ষেপ নেওয়া হয় নি৷[13] রাজনৈতিক প্রভাবে ভাষাগুলির অধিকাংশের সাথেই হিন্দি ভাষাগোষ্ঠীর কোনরূপ পারস্পরিক সম্পর্ক না থাকলেও পাহাড়ি এই ভাষাগুলি হিন্দি ভাষার অন্তর্গত একেকটি উপভাষা হয়ে রয়েছে৷[14]
তথ্যসূত্র
- "Statement 1: Abstract of speakers' strength of languages and mother tongues - 2011"। www.censusindia.gov.in। Office of the Registrar General & Census Commissioner, India। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০৭-০৭।
- হ্যামারস্ট্রোম, হারাল্ড; ফোরকেল, রবার্ট; হাস্পেলম্যাথ, মার্টিন, সম্পাদকগণ (২০১৭)। "Pangwali"। গ্লোটোলগ ৩.০ (ইংরেজি ভাষায়)। জেনা, জার্মানি: মানব ইতিহাস বিজ্ঞানের জন্য ম্যাক্স প্লাংক ইনস্টিটিউট।
- "UNESCO Atlas of the World's Languages in danger"। Unesco.org। সংগ্রহের তারিখ ২৫ আগস্ট ২০১২।
- টেমপ্লেট:Linguistic Survey of India
- এথ্নোলগে পাংওয়ালি ভাষা (২২তম সংস্করণ, ২০১৯)
- "Introduction to Pangwali"।
- Binaya Sundar Nayak, Parmas (২০১১)। G.S. Chouhan; Raj Kumar; Mahatam; Shakuntla Rana, সম্পাদকগণ। प्रारंभिक पंगवाड़ी व्याकरण [Basic Pangwali Grammar] (হিন্দি ভাষায়)। Pangiteam।
- Nayak, Binaya (সেপ্টেম্বর ৫, ২০১৮)। "Pangwali, Himachal Pradesh, India"। Numeral Systems of the World's Languages। জুন ২৯, ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ডিসেম্বর ১৮, ২০২০।
- "Tubari all 2019 Editions"।
- "Endangered languages"।
- "Pahari Inclusion"। Zee News।
- "Pahari Inclusion"। The Statesman। ১৭ নভেম্বর ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৮ ডিসেম্বর ২০২০।
- "Indian Language Census" (পিডিএফ)।