পশ্চিমা পাহাড়ী ভাষাগোষ্ঠী
পশ্চিমা পাহাড়ী উত্তরা ইন্দো-আর্য ভাষা সমূহের অন্তর্গত একটি ভাষাগোষ্ঠী৷ মূলত হিমালয় পার্বত্য অঞ্চলে ভারতের হিমাচল প্রদেশ রাজ্য এবং জম্মু-কাশ্মীর ও উত্তরাখণ্ড রাজ্যের কিছু অঞ্চলে এই ভাষাগোষ্ঠীর অন্তর্গত ভাষাগুলি বলা হয়ে থাকে৷
পশ্চিমা পাহাড়ী | |
---|---|
ভৌগোলিক বিস্তার | ভারত (হিমাচল প্রদেশ ও জম্মু ও কাশ্মীর এবং উত্তরাখণ্ড রাজ্যদুটির একাংশ) |
ভাষাগত শ্রেণীবিভাগ | ইন্দো-ইউরোপীয়
|
আইএসও ৬৩৯-২/৫ | him |
গ্লটোলগ | hima1250[1] |
পশ্চিমা পাহাড়ী ভাষাগুলিকে অনেকক্ষেত্রে হিমাচলি ভাষা নামেও অভিহিত করা হয়ে থাকে( নয়)৷আবার কিছু ক্ষেত্রে এটিকে সাধারণত পাহাড়ি ভাষা বলা হয়ে থাকলেও পাহাড়ী বলতে উত্তরাখণ্ড ও নেপাল সহ পশ্চিম কাশ্মীরের পোঠোহারী ভাষার মতো একাধিক উত্তরা ও উত্তর-পশ্চিমী ইন্দো-আর্য ভাষাকেও বোঝানো হয়ে থাকে৷
ভাষা তালিকা
গ্লোটোলগ অনুযায়ী নিম্নলিখিত তালিকাটি পশ্চিমা পাহাড়ী ভাষাগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত:[2]
- জৌনসারি
- কেন্দ্রীয় হিমাচলি:
- হিণ্ডুরী
- পাহাড়ি কিন্নরী
- কুলুবী
- মহাসু পাহাড়ি
- সিরমৌরী
- মণ্ডিয়ালী
- কাংড়ি-চম্বিয়ালী-ভটিয়ালী:
পাহাড়ী ভাষাগুলি হলো উপভাষার ধারাবাহিকতা এবং প্রতিটি ভাষাই তার পার্শ্ববর্তী ভাষাটির সাথে পারস্পরিক বোধগম্য৷ কিছু পশ্চিমা পাহাড়ী ভাষা ডোগরি, কিছু পাঞ্জাবী এবং বাকী সকল হিন্দির উপভাষা হিসাবে মান্যতাপ্রাপ্ত৷
ডোগরি ও কাংড়ির মতো পশ্চিমা পাহাড়ী ভাষাগুলি পাঞ্জাবি ভাষার মতো স্বন ভাষা, যা অন্যান্য অধিকাংশ ভারতীয় ভাষাগুলির বৈশিষ্ট্যের থেকে যথেষ্ট আলাদা৷ ২০০৩ খ্রিস্টাব্দে ডোগরি ভাষা ভারতের সংবিধানের অষ্টম তফসিলের অন্তর্ভুক্ত করে রাষ্ট্রের একটি সরকারী ভাষার মর্যাদা দেওয়া৷
একটি বিতর্কিত গবেষণা অনুসারে বর্তমানে গাড়োয়ালী ভাষার উপভাষা হিসেবে চিহ্নিত বঙ্গাণীকে একটি স্বতন্ত্র পশ্চিমা পাহাড়ি ভাষা হিসেবে তুলে ধরেন।[3]
লিখন পদ্ধতি
সাম্প্রতিককালে পশ্চিমা পাহাড়ি ভাষাগুলি লেখার ক্ষেত্রে মান্য দেবনাগরী লিপিই ব্যবহার করা হয়।
নিকট অতীতকাল অবধিও এই ভাষাগুলি টাকরী লিপিতে লেখা হতো। পূর্ব থেকে পশ্চিমে এই লিপির বিভিন্ন প্রকার ছিল, এগুলি মধ্যে ডোগরি টাকরী, মান্য টাকরী, সিরমৌরী টাকরি ও জৌনসারি টাকরী অন্যতম৷[4] ভারতের স্বাধীনতা লাভের পর এই লিপির ব্যবহার দ্রুত হারে কমতে থাকে এবং তার পরিবর্তে দেবনাগরী লিপি প্রতিস্থাপিত হওয়া শুরু হয়। এর মধ্যেও লিপি এবং ভাষা পুনরুদ্ধারে ও পুনঃ প্রতিষ্ঠিত করার জন্য বিক্ষিপ্তভাবে একাধিকবার আন্দোলনও সংঘটিত হয়েছে।[5]
বর্তমান অবস্থা
ইউনেস্কোর তথ্য অনুসারে পশ্চিমা পাহাড়ী ভাষাগুলির মধ্যে একমাত্র ডোগরি ছাড়া বাকি প্রতিটি ভাষাই হয় সঙ্কটাপন্ন বা বিপন্ন শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত৷[6]
ভারতের সংবিধানের অষ্টম তফসিলে পাহাড়ী ভাষাগুলির অন্তর্ভুক্তির জন্য ২০১০ খ্রিস্টাব্দে সিংহভাগ সম্মতিতে বিষয়টি রাজ্য বিধানসভায় উপস্থাপিত হয়৷ ছোটো ছোট সংস্থাগুলির দাবীকে বাদ দিতে সরকারীভাবে বিশেষ ঐই ভাষাগুলি সংরক্ষণ ও মান্যতাঅদানের কোনো বড় পদক্ষেপ নেওয়া হয় নি৷ রাজনৈতিক প্রভাবে ভাষাগুলির অধিকাংশই হিন্দি ভাষাগোষ্ঠীর অন্তর্গত একেকটি উপভাষা হয়ে রয়েছে৷ তবে ডোগরি বর্তমানে একটি স্বতন্ত্র ভাষা ও বিলাসপুরী, ভটিয়ালী সহ কিছু কিছু ভাষা পাঞ্জাবি ভাষা উপভাষার তকমা পেয়েছে৷
তথ্যসূত্র
- হ্যামারস্ট্রোম, হারাল্ড; ফোরকেল, রবার্ট; হাস্পেলম্যাথ, মার্টিন, সম্পাদকগণ (২০১৭)। "হিমাচলি"। গ্লোটোলগ ৩.০ (ইংরেজি ভাষায়)। জেনা, জার্মানি: মানব ইতিহাস বিজ্ঞানের জন্য ম্যাক্স প্লাংক ইনস্টিটিউট।
- "Family: Himachali"। Glottolog 4.1।
- Zoller, Claus Peter. "Is Bangani a V2 language?".
- "Tankri once the language of royals, is now dying in Himachal Pradesh - Hindustan times"। ২০১৭-০২-০২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০১-২৫।
- "Ancient scripts of Indian Mountains fights for survival - Zee News"। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০১-০৯।
- "Endangered languages"।