পশ্চিমবঙ্গের পর্যটন

পশ্চিমবঙ্গের পর্যটন বলতে ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য পশ্চিমবঙ্গের পর্যটনকে বোঝায়। এই রাজ্যটি দেশের চতুর্থ-সর্বাধিক জনবহুল রাজ্য।[1] পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী হল কলকাতা। রাজ্যটি দু-টি প্রধান প্রাকৃতিক অঞ্চলে বিভক্ত: দক্ষিণে গাঙ্গেয় সমভূমি এবং উত্তরে হিমালয় ও হিমালয়ের পাদদেশীয় অঞ্চল। পশ্চিমবঙ্গের পর্যটন শিল্পকে তত্ত্বাবধান করে রাজ্য সরকারের মালিকানাধীন সংস্থা পশ্চিমবঙ্গ পর্যটন উন্নয়ন নিগম

দার্জিলিং হিমালয়ান রেল বা টয় ট্রেন হল পশ্চিমবঙ্গের তৃতীয় বিস্ময়।

পশ্চিমবঙ্গ ভারতের পূর্বভাগে এক সংকীর্ণ ভূখণ্ডে অবস্থিত। উত্তরে হিমালয় থেকে দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত এই রাজ্যের প্রসার। রাজ্যের একাধিক স্থানের প্রাকৃতিক দৃশ্যাবলি অত্যন্ত মনোহর। ভারতের সর্বাধিক জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্রগুলির কয়েকটি এই রাজ্যে অবস্থিত। এগুলির মধ্যে রয়েছে রাজ্যের উত্তর সীমান্ত বরাবর অবস্থিত দার্জিলিং হিমালয় পার্বত্য অঞ্চল, রাজ্যের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ সন্দকফু (৩,৬৩৬ মি অথবা ১১,৯২৯ ফু)[2] এবং রাজ্যের দক্ষিণ সীমান্ত বরাবর অবস্থিত সুন্দরবন ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল।

ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক যুগে ১৭০০ থেকে ১৯১২ সাল পর্যন্ত কলকাতা ছিল ব্রিটিশ ভারতের রাজধানী। এই কারণে কলকাতায় নিও-গথিক, ক্যারোক, নিও-ক্ল্যাসিকাল, প্রাচ্য ও ইসলামি শৈলীর প্রচুর অট্টালিকা ও অন্যান্য স্থাপনা গড়ে ওঠে। উত্তর ভারতের অনেক শহরে নির্মাণকার্যের উপর সংক্ষিপ্ততায় গুরুত্ব আরোপ করা হয়। কিন্তু কলকাতার ভবন ও স্থাপনাগুলির স্থাপত্যশৈলীতে যথেষ্ট বৈচিত্র্য দেখা যায়। প্রধানত ব্রিটিশরা এবং অল্প কয়েকটি ক্ষেত্রে পর্তুগিজ ও ফরাসিরা যে ইউরোপীয় স্থাপত্য ও রুচির আমদানি এই শহরে করেছিল, সেটিই এই বৈচিত্র্যের কারণ।

বর্তমানে বলিউড অভিনেতা শাহরুখ খান পশ্চিমবঙ্গ পর্যটনের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাস্যাডার। জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার-বিজয়ী চলচ্চিত্র-নির্মাতা অনিরুদ্ধ রায়চৌধুরী পরিচালিত পর্যটন প্রচারমূলক ছবিগুলিতে শাহরুখ খান অভিনয়ও করেছেন।[3][4][5]

বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান

সুন্দরবন জাতীয় উদ্যান

সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ অরণ্যে বেঙ্গল টাইগার

পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ প্রান্তে গাঙ্গেয় বদ্বীপ অঞ্চলে বঙ্গোপসাগরের উপকূলে অবস্থিত সুন্দরবন জাতীয় উদ্যান বিশ্বের বৃহত্তম মোহনাস্থিত ম্যানগ্রোভ অরণ্য। এটি একাধারে একটি জাতীয় উদ্যান, ব্যাঘ্র প্রকল্প, ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান ও একটি বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভ। এটি ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড নেটওয়ার্ক অফ বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভেরও অংশ। সমগ্র সুন্দরবন অঞ্চলের আয়তন ১০,০০০ কিমি (৩,৯০০ মা)। এর মধ্যে ৫,৯৮০ কিমি (২,৩১০ মা) বাংলাদেশের এবং অবশিষ্টাংশ পশ্চিমবঙ্গের অন্তর্গত। সুন্দরবন অঞ্চলটি বঙ্গীয় অববাহিকায় পরস্পরের সঙ্গে মিলিত হওয়া গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্রমেঘনা নদীর পলিগঠিত ৮০,০০০ বর্গ কিলোমিটার ব্যাপী বদ্বীপ অঞ্চলের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এই বদ্বীপটি বিশ্বের বৃহত্তম বদ্বীপ। সমগ্র অববাহিকাটি পরস্পর-সংযুক্ত জলপথের এক জটিল জালের দ্বারা আবদ্ধ। ভারতীয় ভূখণ্ডের অন্তর্গত বনাঞ্চলটির সংরক্ষণ শুরু হয় ১৯৭৮ সালে। তার আগে ১৯৭৩ সালে এই বনের কেন্দ্রীয় অংশটিকে সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্প হিসেবে এবং ১৯৭৭ সালে সেই ব্যাঘ্র প্রকল্পের ২,৫৮,৫০০ হেক্টর (৬,৩৯,০০০ একর) অঞ্চলের কেন্দ্রস্থ ১৩৩,০০০ হেক্টর অঞ্চল একটি বন্যপ্রাণী অঞ্চল হিসেবে ঘোষিত হয়। ১৯৮৪ সালের ৪ মে এটি জাতীয় উদ্যান ঘোষিত হয়। ১৯৮৭ সালে এটি প্রাকৃতিক সম্পদ হিসেবে ইউনেস্কো কর্তৃক বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থানের স্বীকৃতি লাভ করে। সুন্দরবনে বেঙ্গল টাইগার ও লবণাক্ত জলের কুমির সহ বিভিন্ন প্রজাতির পাখি, সরীসৃপঅমেরুদণ্ডী প্রাণী দেখা যায়।[6][7]

সুন্দরবন জাতীয় উদ্যানের কুমির

নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে সুন্দরবনের দূরত্ব ১৪০ কিলোমিটার। সুন্দরবন জাতীয় উদ্যানের নিকটতম রেল স্টেশন ক্যানিং সুন্দরবনের প্রবেশদ্বার গোধখালি থেকে ২৯ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। কলকাতা-বাসন্তী সড়কের মাধ্যমেও সুন্দরবন কলকাতার সঙ্গে যুক্ত।[8]

সুন্দরবন জাতীয় উদ্যানে ভ্রমণের একমাত্র উপায় হল জলযান। পশ্চিমবঙ্গ পর্যটন উন্নয়ন নিগম এম. ভি. চিত্রলেখা ও এম. ভি. সর্বজয়া নামে দু-টি স্থানীয় জলযান পরিষেবা প্রদান করে। বনের মধ্যে রাত্রিবাস ও সাফারির ব্যবস্থা করে সুন্দরবন টাইগার ক্যাম্প। এটিই এই অঞ্চলের একমাত্র সরকার-অনুমোদিত বিলাসবহুল রিসর্ট। বন্যপ্রাণী পর্যবেক্ষণ ও নৌ-সাফারি ছাড়া পর্যটকেরা ভগতপুর কুমির প্রকল্প, জম্বুদ্বীপ, সুধন্যখালি ওয়াচটাওয়ার, বুরিডাবরি ব্যাঘ্র প্রকল্প, নেতিধোপানি ওয়াচটাওয়ার, হলিডে আইল্যান্ড বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য, কনক ও সজনেখালি পাখিরালয়ও দেখতে যান।

দার্জিলিং হিমালয়ান রেল ( ট্রয় ট্রেন)

দার্জিলিং হিমালয়ান রেল

প্রাকৃতিক ও স্থাপত্য-বিষয়ক

পশ্চিমবঙ্গের প্রাকৃতিক ও স্থাপত্য ঐতিহ্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। রাজধানী কলকাতা "প্রাসাদনগরী" নামে পরিচিত।[9][10] বিষ্ণুপুরের টেরাকোটা মন্দিরগুলির জন্যও পশ্চিমবঙ্গ বিখ্যাত।[11][12]

জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র হাজারদুয়ারি প্রাসাদে বিশ্বের বৃহত্তম ঝাড়বাতি ও ভারতের বৃহত্তম সিঁড়ি দেখা যায়। ১৮৩৭ সালে বাংলার তৎকালীন নবাব নবাব নাজিম হুমায়ুন জাহের জন্য ডানকান ম্যাকলিয়ড ইন্দো-ইউরোপীয় শৈলীর এই তিনতলা প্রাসাদটি নির্মাণ করেন।[13] "হাজারদুয়ারি " নামটির অর্থ "[যে প্রাসাদে] এক হাজারটি দরজা "। এগুলির মধ্যে ৯০০টি মাত্র সত্যিকারের দরজা। ১৯৮৫ সালে সুসংরক্ষণের উদ্দেশ্যে প্রাসাদটি আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার হাতে তুলে দেওয়া হয়।[14][15] হাজারদুয়ারি প্রাসাদ সংগ্রহালয়টিকে আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার বৃহত্তম ক্ষেত্র জাদুঘর মনে করা হয়। এই জাদুঘরের ২০টি প্রদর্শশালায় ৪৭৪২টি প্রত্নসামগ্রী রক্ষিত আছে। এগুলির মধ্যে ১০৩৪টি সামগ্রী পর্যটকেরা দেখতে পারেন। এই সামগ্রীগুলির মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের অস্ত্রশস্ত্র, ওলন্দাজ, ফরাসি ও ইতালীয় শিল্পীদের অঙ্কিত তৈলচিত্র, শ্বেতপাথরের মূর্তি, দুষ্প্রাপ্য বই, পুরনো মানচিত্র, ভূমি রাজস্বের নথিপত্র ও পালকি (প্রধানত ১৮শ ও ১৯শ শতাব্দীতে ব্যবহৃত)। ১৮৮৭ সালে মহারাজা নৃপেন্দ্র নারায়ণের রাজত্বকালে লন্ডনের বাকিংহ্যাম প্রাসাদের আদলে নির্মিত হয় কোচবিহার রাজবাড়ি

সমুদ্র সৈকত

মন্দারমণি সৈকতে মৎস্যজীবীদের নৌকা

পশ্চিমবঙ্গের সমগ্র দক্ষিণ সীমান্ত বরাবর বঙ্গোপসাগর অবস্থিত। রাজ্যের উপকূলভাগ গাঙ্গেয় বদ্বীপ অঞ্চল থেকে ওডিশা রাজ্যের সীমান্ত পর্যন্ত প্রসারিত। রাজ্যে কয়েকটি সুন্দর সৈকত শহর রয়েছে। এগুলি হল দিঘা, শঙ্করপুর, মন্দারমণি, বকখালি, গঙ্গাসাগরতাজপুর। এই সৈকতগুলির মধ্যে কয়েকটি সৈকত গাড়ি চলাচলেরও উপযোগী।[16]

শৈলশহর

উত্তর পশ্চিমবঙ্গে অনেকগুলি শৈলশহর অবস্থিত। এগুলির মধ্যে দার্জিলিং একটি বিশ্ববিখ্যাত পর্যটন কেন্দ্র। অন্যান্য শৈলশহরগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য কার্শিয়াং, কালিম্পং, রিমবিক, লাভা, লোলেগাঁও, মিরিকসন্দকফু

বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য ও জাতীয় উদ্যান

পশ্চিমবঙ্গের ভৌগোলিক আয়তনের ৩.২৬% জুড়ে রয়েছে ১৫টি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য ও পাঁচটি জাতীয় উদ্যান নিয়ে গঠিত সংরক্ষিত বনাঞ্চল।[17] এই পাঁচটি জাতীয় উদ্যান হল সুন্দরবন, বক্সা, গোরুমারা, নেওড়া উপত্যকা, সিঙ্গালিলাজলদাপাড়া। জাতীয় উদ্যান ছাড়াও পশ্চিমবঙ্গে চিন্তামণি কর পাখিরালয়রায়গঞ্জ বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যের মতো কয়েকটি পাখিরালয় ও বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য আছে।

উদ্ভিদ ও প্রাণীসম্পদ

দার্জিলিং হিমালয় পার্বত্য অঞ্চল

বৌদ্ধ প্রার্থনা ধ্বজা, মহাকাল মন্দির, অবজারভেটরি হিল, দার্জিলিং

তীর্থস্থান

পশ্চিমবঙ্গের প্রধান তীর্থস্থান গুলি হল গঙ্গাসাগর, কালীঘাট, তারকেশ্বর, তারাপীঠ, মায়াপুর

পশ্চিমবঙ্গের সাত বিস্ময়

সুন্দরবন হল পশ্চিমবঙ্গের প্রথম বিস্ময়

চিত্রকক্ষ

কলকাতা

আরও দেখুন

তথ্যসূত্র

  1. "India: Administrative Divisions (population and area)"। Census of India। ১৭ ডিসেম্বর ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৭ এপ্রিল ২০০৯
  2. Pal, Supratim (১৪ মে ২০০৭)। "Top of world in kingdom of cloud"The Telegraph। Kolkata। সংগ্রহের তারিখ ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১২
  3. "SRK becomes brand ambassador of West Bengal"Times of India। ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১২। ৩১ অক্টোবর ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৪ নভেম্বর ২০১২ Authors list-এ |প্রথমাংশ1= এর |শেষাংশ1= নেই (সাহায্য)
  4. Soudhriti Bhabani (৩ অক্টোবর ২০১২)। "Shah Rukh Khan to promote Mamata's brand Bengal"India Today। সংগ্রহের তারিখ ২৪ নভেম্বর ২০১২
  5. Tanvi Trivedi (২২ নভেম্বর ২০১২)। "After Big B-SRK, other states too roped in stars"Times of India। ২৩ জুলাই ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৪ নভেম্বর ২০১২
  6. "Sundarbans National Park"। World Heritage: Unesco.org। মার্চ ৬, ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ নভেম্বর ৬, ২০১০
  7. "Sundarbans National Park" (পিডিএফ)। Unesco। এপ্রিল ২৯, ২০১১ তারিখে মূল (PDF) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ নভেম্বর ৬, ২০১০
  8. How to reach Sundarban West Bengal, India
  9. Dr.S.N.Pandey (১ সেপ্টেম্বর ২০১০)। West Bengal General Knowledge Digest। Upkar Prakashan। আইএসবিএন 9788174822826। সংগ্রহের তারিখ ২৪ নভেম্বর ২০১২
  10. Tourist Places of Asia। Dreamland Publications। পৃষ্ঠা 96। আইএসবিএন 9788173018824। সংগ্রহের তারিখ ২৪ নভেম্বর ২০১২
  11. S. S. Biswas; Zulekha Haque (১৯৯৫)। Terracotta temples of Bengal। Friendship Publishers।
  12. Samira Dasgupta; Rabiranjan Biswas and Gautam Kumar Mallik (২০০৯)। Heritage Tourism: An Anthropological Journey to Bishnupur। Mittal Publications। পৃষ্ঠা 152। আইএসবিএন 9788183242943। সংগ্রহের তারিখ ২৪ নভেম্বর ২০১২
  13. "Hazarduari Palace"Murshidabad.net। সংগ্রহের তারিখ ২৪ নভেম্বর ২০১২
  14. "Slice of history slips past Hazarduari doors"The Telegraph। ১৩ আগস্ট ২০১০। সংগ্রহের তারিখ ২৪ নভেম্বর ২০১২
  15. "Hazarduari Palace Museum, Murshidabad (West Bengal) handed over to ASI of India"Archaeological Survey of India। সংগ্রহের তারিখ ২৪ নভেম্বর ২০১২
  16. "Sea beaches in West Bengal"। Government of West Bengal। ৩ জুলাই ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৪ নভেম্বর ২০১২
  17. "Eden Gardens"। CricInfo। সংগ্রহের তারিখ ১২ এপ্রিল ২০০৯
  18. "East Bengal Football Club"। ২৮ আগস্ট ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৩ মে ২০১৯

বহিঃসংযোগ

টেমপ্লেট:ভারতের পর্যটন

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.