পল হ্যারিস

পল লি হ্যারিস (ইংরেজি: Paul Harris; জন্ম: ২ নভেম্বর, ১৯৭৮) রোডেশিয়ার সলসবারি এলাকায় জন্মগ্রহণকারী সাবেক দক্ষিণ আফ্রিকান আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার। দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেট দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন তিনি। ২০০৭ থেকে ২০১১ সময়কালে দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন।

পল হ্যারিস
২০০৯ সালের সংগৃহীত স্থিরচিত্রে পল হ্যারিস
ব্যক্তিগত তথ্য
পূর্ণ নামপল লি হ্যারিস
জন্ম (1978-11-02) ২ নভেম্বর ১৯৭৮
সলসবারি, রোডেশিয়া
ডাকনামহারো, হ্যারি
উচ্চতা ফুট ৪ ইঞ্চি (১.৯৩ মিটার)
ব্যাটিংয়ের ধরনডানহাতি
বোলিংয়ের ধরনস্লো লেফট আর্ম অর্থোডক্স
ভূমিকাবোলার
আন্তর্জাতিক তথ্য
জাতীয় দল
টেস্ট অভিষেক
(ক্যাপ ৩০১)
২ জানুয়ারি ২০০৭ বনাম ভারত
শেষ টেস্ট২ জানুয়ারি ২০১১ বনাম ভারত
ওডিআই অভিষেক
(ক্যাপ ৯১)
৯ মার্চ ২০০৮ বনাম বাংলাদেশ
শেষ ওডিআই১৪ মার্চ ২০০৮ বনাম বাংলাদেশ
ওডিআই শার্ট নং
ঘরোয়া দলের তথ্য
বছরদল
২০০০ – ২০০২ওয়েস্টার্ন প্রভিন্স
২০০২ – ২০০৬নর্দার্নস
২০০৬ – ২০০৭ওয়ারউইকশায়ার
২০০৪ – ২০১০টাইটান্স
২০১০ – ২০১৩লায়ন্স
খেলোয়াড়ী জীবনের পরিসংখ্যান
প্রতিযোগিতা টেস্ট ওডিআই এফসি এলএ
ম্যাচ সংখ্যা ৩৭ ১১২ ৫১
রানের সংখ্যা ৪৬০ ১,৬৩০ ৬৭
ব্যাটিং গড় ১০.৬৯ ১৪.১৭ ৭.৪৪
১০০/৫০ –/– –/– –/৩ –/–
সর্বোচ্চ রান ৪৬ ৫৫ ১৫*
বল করেছে ৮,৮০৯ ১৮০ ২৫,৭৭১ ২,১৯০
উইকেট ১০৩ ৩৬৮ ৫৯
বোলিং গড় ৩৭.৮৭ ২৭.৬৬ ৩১.৬১ ২৭.২৭
ইনিংসে ৫ উইকেট ২০
ম্যাচে ১০ উইকেট
সেরা বোলিং ৬/১২৭ ২/৩০ ৭/৯৪ ৫/২৭
ক্যাচ/স্ট্যাম্পিং ১৬/– ২/– ৪৩/– ২১/–
উৎস: ইএসপিএনক্রিকইনফো.কম, ২৯ নভেম্বর ২০১৮

ঘরোয়া প্রথম-শ্রেণীর দক্ষিণ আফ্রিকান ক্রিকেটে ওয়েস্টার্ন প্রভিন্স, নর্দার্নস, টাইটান্স ও হাইভেল্ড লায়ন্স দলের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। এছাড়াও, প্রথম-শ্রেণীর ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে ওয়ারউইকশায়ারের পক্ষে খেলেছেন তিনি। দলে তিনি মূলতঃ স্লো লেফট আর্ম অর্থোডক্স বোলার হিসেবে খেলতেন। এছাড়াও, নিচেরসারিতে ডানহাতে ব্যাটিংয়ে নামতেন ‘হারো’ ডাকনামে পরিচিত পল হ্যারিস

শৈশবকাল

রোডেশিয়ায় (বর্তমানে - জিম্বাবুয়ে) পল হ্যারিসের জন্ম। বাবা মার্ক ১৯৮০ সাল পর্যন্ত ব্রিটিশ সাউথ আফ্রিকা পুলিশের সদস্য ছিলেন।[1] কিশোর অবস্থায় তার পরিবার দক্ষিণ আফ্রিকায় চলে আসে। এরপর তারা কেপটাউনের ফিশ হোকে স্থানান্তরিত হন।[2][3] ফিশ হোক এলাকায় তার পিতা যাজকের কার্যে নিয়োজিত থাকেন।[1]

ফিশ হোক হাই স্কুলে অধ্যয়ন করেন পল হ্যারিস। এ সময়েই ওয়েস্টার্ন প্রভিন্সের কোচ ডানকান ফ্লেচারের দৃষ্টি আকর্ষণে সক্ষম হন তিনি ও প্রাদেশিক বয়সভিত্তিক খেলার আওতায় তাকে নিয়ে আসেন।[4] ওয়েস্টার্ন প্রভিন্সে থাকাকালে ইংল্যান্ডের ভবিষ্যতের টেস্ট খেলোয়াড় জোনাথন ট্রটের সাথে একত্রে খেলেন। [5]

ঘরোয়া ক্রিকেট

১৯৯৮ সালে পোর্ট এলিজাবেথে ওয়েস্টার্ন প্রভিন্স বি দলের সদস্যরূপে ইউসিবি বোল প্রতিযোগিতার খেলায় ইস্টার্ন প্রভিন্স বি দলের বিপক্ষে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট অভিষেক ঘটে পল হ্যারিসের।[6] দুই বছর পর আরেকটি প্রথম-শ্রেণীর খেলায় অংশগ্রহণের সুযোগ ঘটে তার। স্পিন বোলিংয়ের নিয়মের প্রবর্তন ঘটানোয় প্রায়শঃই পল অ্যাডামসক্লদ হেন্ডারসনকে প্রাধান্য দেয়া হতো। মার্চ, ২০০১ ও ফেব্রুয়ারি, ২০০২ সালে ওয়েস্টার্ন প্রভিন্সের মাত্র দুইটি খেলায় অংশগ্রহণ করতে পেরেছিলেন।[7]

২০০১-০২ মৌসুম শেষে নর্দার্নসে স্থানান্তরিত হন তিনি। দক্ষিণ আফ্রিকান ঘরোয়া ক্রিকেটের পুণর্গঠন হলে ২০০৪ সালে টাইটান্সের পক্ষে সুপারস্পোর্ট সিরিজে অংশ নেন। তাসত্ত্বেও, মাঝেমধ্যেই সাউথ আফ্রিকান এয়ারওয়েজ প্রভিন্সিয়াল চ্যালেঞ্জেস প্রতিযোগিতায় নর্দার্নসের পক্ষে খেলতেন।[7]

কাউন্টি ক্রিকেট

নিউজিল্যান্ডীয় স্পিনার ড্যানিয়েল ভেট্টোরি আঘাতপ্রাপ্ত হলে কোলপ্যাক নিয়মের আওতায় ২০০৬ সালে ওয়ারউইকশায়ারে যোগদান করেন।[8] ইংল্যান্ডের মাটিতে নেমে তাৎক্ষণিকভাবে বিয়ার্সের পক্ষে টুয়েন্টি২০ কাপের খেলায় ওরচেস্টারশায়ারের বিপক্ষে মাঠে নামেন। অফ-স্পিনার অ্যালেক্স লুডনের সাথে স্পিন বোলিং জুটি হিসেবে ছিলেন।[9] আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রতিনিধিত্ব করার প্রেক্ষিতে কোলপ্যাক নিয়মের আওতায় ওয়ারউইকশায়ারের পক্ষে খেলার যোগ্যতা হারান।[3]

আন্তর্জাতিক ক্রিকেট

২০০৬ সালে শেষদিকে দলীয় সঙ্গী ও স্পিনার নিকি বোয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট অঙ্গন থেকে অবসর গ্রহণ করেন। অতঃপর ক্লদ হেন্ডারসন খেলতে অপারগতা প্রকাশ করলে তাকে প্রথমবারের মতো দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে খেলার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়। সমগ্র খেলোয়াড়ী জীবনে ৩৭ টেস্টে অংশগ্রহণের সুযোগ পেয়েছেন তিনি।

২ জানুয়ারি, ২০০৭ তারিখে ভারতের বিপক্ষে টেস্ট অভিষেক ঘটে পল হ্যারিসের।[2][10] ২০০৬-০৭ মৌসুমে সফরকারী ভারতের বিপক্ষে নিউল্যান্ডস ক্রিকেট গ্রাউন্ডে সিরিজের তৃতীয় টেস্টে অভিষেক ঘটে তার। সুন্দরভাবে তার খেলোয়াড়ী জীবন শুরু হয়। প্রথম ইনিংসে শচীন তেন্ডুলকরের উইকেটসহ চারটি উইকেট পান তিনি। অক্টোবর-নভেম্বর, ২০০৭ সালে পাকিস্তান গমন করেন। টেস্ট সিরিজে ২০.৬৬ গড়ে ১২ উইকেট দখল করেন। তন্মধ্যে, করাচীতে অনুষ্ঠিত সিরিজের প্রথম টেস্টে ৫/৭৩ বোলিং পরিসংখ্যান গড়েছিলেন।[11][12]

আগস্ট, ২০০৭ সালে নিজ জন্মভূমি জিম্বাবুয়েতে যান। দক্ষিণ আফ্রিকা এ দলের নেতৃত্ব দিয়ে জিম্বাবুয়ে এ দলের বিপক্ষে নয় উইকেট পান ও ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন তিনি।[13]

বাংলাদেশ গমন

মার্চ, ২০০৮ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা দল বাংলাদেশ গমন করে। ঐ সফরে একদিনের দলে তাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। চট্টগ্রাম, মিরপুর ও ঢাকায় অনুষ্ঠিত সিরিজের তিনটি ওডিআইয়েই তার অংশগ্রহণ ছিল।[14][15]

২০০৮ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা দলের সাথে ইংল্যান্ড গমন করেন। হ্যারিসের বোলিংয়ের ধরন ইংরেজ ধারাভাষ্যকারদের কাছে হাসির খোরাক জোগায়। সাবেক ক্রিকেটার জিওফ্রে বয়কট তার বোলিংকে বাজেরূপে আখ্যায়িত করেন।[16][17] ডিসেম্বর, ২০০৯ সালে এ ধরনের সমালোচনার প্রেক্ষিতে তিনি মজা করে বলেন যে, বোলিংয়ে স্পিন না থাকলে অধিকাংশ লোকই মনে করে যে, বল সোজা করে মারা উচিত।[18]

২০০৮-০৯ মৌসুমে অস্ট্রেলিয়া দল দক্ষিণ আফ্রিকা গমন করে। সিরিজের তৃতীয় টেস্টে দক্ষিণ আফ্রিকার সিরিজে ফিরে আসার পিছনে পল হ্যারিস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ঐ খেলায় তিনি নয় উইকেট লাভ করে প্রোটিয়াসদেরকে ইনিংস ও ২৯ রানের ব্যবধানে জয় পেতে প্রভূতঃ সহায়তা করেন। অসাধারণ কৃতিত্বের স্বীকৃতিস্বরূপ ম্যান অব দ্য ম্যাচের সম্মাননা লাভ করেন তিনি।[19]

ফেব্রুয়ারি, ২০১০ সালে ভারতের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে ১২টি ওয়াইড বল মারেন। এরফলে এক টেস্ট ইনিংসে ব্যক্তিগত সর্বাধিক ওয়াইড করেন তিনি।[20]

সম্মাননা

২০০৭ সালে উইজডেন ক্রিকেটার্স অ্যালমেনাকের ৪০জন সেরা খেলোয়াড়ের একজন ছিলেন পল হ্যারিস।[21] একই বছরে মিউচুয়াল এন্ড ফেডারেল এসএ ক্রিকেট পুরস্কার হিসেবে দক্ষিণ আফ্রিকান বর্ষসেরা নবাগত পুরস্কার লাভ করেন।[22]

ব্যক্তিগত জীবন

ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত পল হ্যারিস ম্যারিলেট নাম্নী এক রমণীর পাণিগ্রহণ করেন। বর্তমানে তারা প্রিটোরিয়ার অলিম্পাসে বসবাস করছেন।[23]

তথ্যসূত্র

  1. "Around and About"। British South Africa Police Association। ২১ নভেম্বর ২০০৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১ জানুয়ারি ২০১০
  2. "Harris picked for SA squad"Pretoria News। Independent Online। ১৯ ডিসেম্বর ২০০৬। সংগ্রহের তারিখ ১ জানুয়ারি ২০১০
  3. "South Africa / Players – Paul Harris"। Cricinfo। সংগ্রহের তারিখ ১ জানুয়ারি ২০১০
  4. Owen-Smith, Michael (২ জানুয়ারি ২০০৭)। "Titan Harris keen for a go at India today"Pretoria News। Independent Online। সংগ্রহের তারিখ ১ জানুয়ারি ২০১০
  5. Briggs, Simon (১৬ ডিসেম্বর ২০০৯)। "South Africa v England: Paul Harris aims to put mate Jonathan Trott off his game"। The Telegraph। সংগ্রহের তারিখ ১ জানুয়ারি ২০১০
  6. "Eastern Province B v Western Province B"। Cricket Archive। সংগ্রহের তারিখ ১ জানুয়ারি ২০১০
  7. "First-Class Matches played by Paul Harris"। Cricket Archive। সংগ্রহের তারিখ ১ জানুয়ারি ২০১০
  8. "Bears sign South African spinner"। BBC Sport। ৭ জুলাই ২০০৬। সংগ্রহের তারিখ ১ জানুয়ারি ২০১০
  9. Hampshire v Warwickshire, LV County Championship 2006 (Division 1), CricketArchive, Retrieved 25 April 2009
  10. "Proteas pick uncapped spinner"। Fox Sports। ১৯ ডিসেম্বর ২০০৬। সংগ্রহের তারিখ ১ জানুয়ারি ২০১০
  11. "Pakistan v South Africa"। Cricket Archive। সংগ্রহের তারিখ ১ জানুয়ারি ২০১০
  12. "Test Bowling for South Africa South Africa in Pakistan 2007/08"। Cricket Archive। সংগ্রহের তারিখ ১ জানুয়ারি ২০১০
  13. "Harris spins South Africa A to huge win"। Cricinfo। ১৮ আগস্ট ২০০৭। সংগ্রহের তারিখ ১ জানুয়ারি ২০১০
  14. "One-Day International Matches played by Paul Harris"। Cricket Archive। ২ ডিসেম্বর ২০০৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১ জানুয়ারি ২০১০
  15. "Untried South Africans in line for one-day action"। cricbuzz। ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০০৮। সংগ্রহের তারিখ ১ জানুয়ারি ২০১০
  16. Adams, Zaahier (২৩ মার্চ ২০০৯)। "I have come full circle – Harris"Cape Times। Independent Online। সংগ্রহের তারিখ ১ জানুয়ারি ২০১০
  17. Barbuti, Jon (১১ ডিসেম্বর ২০০৯)। "Paul Harris hopes to be a star turn for South Africa"। BBC Sport। সংগ্রহের তারিখ ১ জানুয়ারি ২০১০
  18. Dean, Geoffrey (১৯ ডিসেম্বর ২০০৯)। "Jocular finger spinners Graeme Swann and Paul Harris find plenty to laugh about"। The Times। সংগ্রহের তারিখ ১ জানুয়ারি ২০১০
  19. Swanton, Will (২৩ মার্চ ২০০৯)। "Johnson smashes debut ton as South Africa take victory honours"। Sydney Morning Herald। সংগ্রহের তারিখ ১ জানুয়ারি ২০১০
  20. "Sehwag and Tendulkar seize control"। The National। ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১০। ২৬ মার্চ ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১০
  21. "England pair named among Wisden Cricketers of the Year"। The Times। ৯ এপ্রিল ২০০৮। সংগ্রহের তারিখ ১ জানুয়ারি ২০১০
  22. "SA's cricketer of the year revealed"। Independent Online। ১০ মে ২০০৭। সংগ্রহের তারিখ ১ জানুয়ারি ২০১০
  23. "Bigstar Players : Paul Harris : About Me"। bigstarcricket.com। ৬ অক্টোবর ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১ জানুয়ারি ২০১০

বহিঃসংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.