পর্তুগীজ রন্ধনশৈলী

পর্তুগীজ রন্ধনশৈলী আটলান্টিক বিধৌত হওয়া সত্ত্বেও অনেকটাই ভূমধ্যসাগরীয় প্রভাবে প্রভাবিত। পর্তুগীজ রন্ধনশৈলী সামুদ্রিক খাদ্যের জন্য বিখ্যাত।[1] পর্তুগালের সাবেক উপনিবেশিকতার প্রভাবও কিছুটা রয়েছে। বিশেষ করে বিভিন্ন প্রকার মশলার ব্যবহার। পর্তুগীজ রন্ধনশৈলীর অন্যতম ভিত্তি হচ্ছে জলপাই তেল যা রান্নায় এবং খাবারের স্বাদ বাড়ানো উভয় কাজে ব্যবহার করা হয়।

বাকাল হাউ, পর্তুগীজ শুটকি ও নোনা কড মাছ।

খাবার

পর্তুগীজ সকালের নাস্তায় থাকে সদ্য তৈরি রুটি যা ঘি, হ্যাম, পনীর অথবা জ্যাম দিয়ে পরিবেশিত হয়। সংগে থাকে কফি, দুধ, চা কিংবা গরম চকলেট। সকালের নাস্তায় ছোট এস্প্রেসো কফি পর্তুগালে খুবই জনপ্রিয়। এই কফি বাড়িতে তৈরি করা হয় এবং শহরের ক্যাফে গুলোতে পাওয়া যায়। মিষ্টি প্যাস্ট্রিও জনপ্রিয়।

দুপুরের খাবার বেলা একটা থেকে তিনটার মধ্যে এবং রাতের খাবার রাত আটটার পরে পরিবেশিত হয়। দুপুর এবং রাতের খাবারে সাধারণত স্যুপসহ তিন পদের খাবার থাকে। সাধারণ পর্তুগীজ স্যুপ হচ্ছে কালডো ভার্ডে যা আলু এবং চোরিকো নামে মশলাদার পর্তুগীজ সসেজ দিয়ে তৈরি করা হয়। মাছের পদের মধ্যে বাকালহাউ নামে নোনা কর্ড মাছ জনপ্রিয়। ছাগল, ভেড়া এবং গরুর দুধ থেকে বহুপদের পনির তৈরি করা হয়।

মাছ এবং সামুদ্রিক খাদ্য

পর্তুগিজরা সমুদ্রগামী জাতি। তাদের মৎসশিল্প উন্নত এবং তার প্রতিফলন ঘটে তাদের মাছ ও সামুদ্রিক খাবার গ্রহণের পরিমাণে। পর্তুগাল হলো ইউরোপের মধ্যে সর্বোচ্চ এবং পৃথিবীর মধ্যে চতুর্থ সর্বোচ্চ মাছ ভক্ষণকারী দেশ। মাছ গ্রিল, সিদ্ধ, ভাজা, কড়াভাজা, ঝোল, ঝলসানো ইত্যাদিভাবে পরিবেশন করা হয়। পর্তুগালে বাকালহাউ (কড) মাছ সবথেকে বেশি খাওয়া হয়। বলা হয়ে থাকে সেখানে কড মাছ রান্নার ৩৬৫টি নিয়ম বা প্রণালী আছে। প্রতিদিনের জন্য একটি করে রেসিপি। শুটকি কড মাছ এবং নোনা কড মাছ প্রায়শই খাওয়া হয়। উত্তর আটলান্টিকে পর্তুগীজদের মাছ ধরার ঐতিহ্য রেফ্রিজারেটর আবিষ্কারের বহু আগেই শুরু হয়। তাই শুকনো বা নোনা মাছ রান্নার পূর্বে দুধ বা পানিতে ভিজিয়ে রাখার ঐতিহ্য আছে। সব থেকে সহজ মাছ রান্নাটিও জলপাই তেল সাদা ওয়াইন ভিনেগার স্বাদ দেওয়া হয়।

পর্তুগাল পনের শতক থেকে কড মাছ ধরা ও ব্যবসায় নিয়োজিত আছে। তাদের রন্ধনশিল্পে কড মাছ গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। অন্যান্য জনপ্রিয় সামুদ্রিক খাবারের মধ্যে আছে সার্ডিন, অক্টোপাস, স্কুইড, কাটলফিশ, কাঁকড়া, চিংড়ি এবং মলাস্কার বিভিন্ন খোলসযুক্ত প্রাণী ইত্যাদি। আলু, টমেটো এবং পেঁয়াজের সাথে বিভিন্ন মাছ ও শেলফিশ মিশিয়ে ক্যাল্ডেইরাডা নামে স্ট্যু তৈরি করা হয়।

গ্রামীণ অঞ্চলের বিক্রির জন্য সার্ডিন মাছ ব্রাইন দ্রবণে (ঘন লবণ পানি) সংরক্ষণ করা হত। পরবর্তীতে পর্তুগীজ উপকূল জুড়ে সার্ডিন ক্যানারি গড়ে ওঠে। উত্তর পর্তুগালে সূর্যালোকে রে মাছ শুকানো হয়। পর্তুগালে ক্যানজাত টুনা মাছ সহজপ্রাপ্য। আলগার্ভের পানিতে টুনা মাছ পাওয়া যায়। আটলান্টিক থেকে ভূমধ্যসাগরে আসা যাওয়ার পথে পর্তুগালের দক্ষিণ উপকূল অতিক্রমের সময় পাতা জালে প্রচুর পরিমান টুনা মাছ ধরা পড়ে। মাদেইরা এবং আলগার্ভে সতেজ টুনা মাছ খাওয়া হয়। সেখানকার স্থানীয় কুইজিনে টুনা মাছের স্টেক খুবই গুরুত্বপূর্ণ খাবার।

বিশ্বরন্ধনশৈলীতে প্রভাব

একদা পর্তুগালের বিশাল সাম্রাজ্য ছিলো। বিভিন্ন অঞ্চলে ছিলো পর্তুগালের উপনিবেশ। তাই পর্তুগীজ রন্ধনশৈলীর প্রভাব উভমুখী। ব্রাজিলীয় রন্ধনশৈলীর একটা বড় অংশ জুড়ে আছে পর্তুগীজ রন্ধনপ্রণালী।

তথ্যসূত্র

  1. "Portuguese food"baidu। সংগ্রহের তারিখ ২৪ অক্টোবর ২০১৭
This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.