পরিবেশ প্রকৌশল
পরিবেশ প্রকৌশল মূলত একটি পেশাদারী প্রকৌশল ক্ষেত্র যেখানে পরিবেশ ও পরিবেশের বিভিন্ন উপাদানসমূহের বিশোধন, সংগ্রহণ, সংরক্ষণ সর্বোপরি পুরো পরিবেশ রক্ষার উপায় সমূহ আলোচিত হয়। পরিবেশ প্রকৌশল এমন একটি শাখা, যা রসায়ন, জীববিজ্ঞান, পরিবেশবিজ্ঞান, ভূতত্ত্ব, উদপ্রবাহবিজ্ঞান, জলবিদ্যা, অণুজীববিজ্ঞান এবং গণিতের মত বিচিত্র বৈজ্ঞানিক বিষয়ের সম্মিলনে জীবের স্বাস্থ্য রক্ষা এবং পরিবেশের মান উন্নয়নে প্রয়োজনীয় সমস্যার সমাধানের সন্ধান করে।[1][2] পরিবেশ প্রকৌশল, পুরকৌশল এবং রসায়ন প্রকৌশল এর একটি উপ-শাখা।
পরিবেশ |
---|
|
|
|
|
পরিবেশ প্রকৌশল হচ্ছে পরিবেশের উন্নয়ন ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বৈজ্ঞানিক ও প্রকৌশল নীতির প্রয়োগ, যাতে:
- মানব স্বাস্থ্য রক্ষিত হয়,
- প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষিত হয়,
- এবং মানব জীবনের মানোন্নয়ন সম্পর্কিত পরিবেশ-জনিত বিষয়ের উৎকর্ষসাধন ঘটে।[1]
পরিবেশ প্রকৌশলীরা বর্জ্য পানি ব্যবস্থাপনা, পানি এবং বায়ু দূষণ নিয়ন্ত্রণ, পুনর্ব্যবহার, বর্জ্য নিষ্কাশন এবং জনস্বাস্থ্যের জন্য উদ্ভূত সমস্যার সমাধান প্রদান করে।[2][3] তারা নগরের পানি সরবরাহ এবং শিল্পের বর্জ্য পানি শোধনাগার ব্যবস্থার নকশা করে[4][5] এবং পানিবাহিত রোগ প্রতিরোধ এবং শহুরে ও গ্রামীণ এলাকার স্যানিটেশন ব্যবস্থা উন্নত করার পরিকল্পনা করে। তারা ঝুঁকির তীব্রতা মূল্যায়নের উদ্দেশ্যে বিপজ্জনক-বর্জ্য ব্যবস্থাপনার মূল্যায়ন করে, এগুলোর ব্যবহার এবং নিয়ন্ত্রণ সম্পর্কে উপদেশ প্রদান করে এবং দুর্ঘটনা প্রতিরোধের জন্য নিয়মকানুন বিকাশিত করে। তারা পরিবেশ প্রকৌশল আইন বাস্তবায়ন করে, যেমন প্রস্তাবিত নির্মাণ প্রকল্পের পরিবেশগত প্রভাব মূল্যায়ন।
পরিবেশ প্রকৌশলীরা পরিবেশের উপর প্রযুক্তিগত অগ্রগতির প্রভাব অধ্যয়ন করে এবং স্থানীয় এবং বিশ্বব্যাপী পরিবেশগত বিভিন্ন সমস্যা যেমন এসিড বৃষ্টি, বৈশ্বিক উষ্ণায়ন, ওজোনস্তর ক্ষয়, পানি দূষণ এবং যানবাহন ও শিল্প উৎস থেকে বায়ু দূষণ ইত্যাদি চিহ্নিত করে।[2][6][7][8]
অধিকাংশ প্রশাসনেই যোগ্যতাসম্পন্ন পরিবেশ প্রকৌশলীদের জন্য লাইসেন্স এবং নিবন্ধনের বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়।[9][10][11]
ইতিহাস
প্রাচীন সভ্যতা
পরিবেশ প্রকৌশল এমন সব কাজের নাম, যেগুলো সভ্যতার শুরুতেই মানুষ নিজের চাহিদা পূরণের জন্য পরিবেশগত অবস্থা পরিবর্তন এবং নিয়ন্ত্রণ করতে শেখার সময় থেকে করে আসছে।[3][12] যখন মানুষ বুঝতে পেরেছে যে, তাদের পারিপার্শ্বিক পরিবেশের অবস্থার সাথে তাদের দৈহিক স্বাস্থ্য সম্পর্কিত, তখন থেকেই তারা পরিবেশের মানোন্নয়নে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।[3] প্রাচীন সিন্ধু সভ্যতার মানুষেরা (৩৩০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকে ১৩০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ) পানি সম্পদের ব্যবস্থাপনায় বেশ দক্ষতা অর্জন করেছিল। তাদের বসবাসকৃত এলাকায় বিভিন্ন কূপ, গোসলখানা, জলাধার, পানীয় জলের ব্যবস্থা এবং শহরব্যাপী বিস্তৃত নিকাশি ব্যবস্থা পাওয়া গিয়েছে।[12][13] এছাড়াও তারা একটি প্রাথমিক সেচ ব্যবস্থা তৈরী করেছিল যা তাদের ব্যাপক আকারে কৃষিকাজ করার সক্ষমতা দান করে।[14]
৪০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকে ২০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ পর্যন্ত, অনেক সভ্যতাই জল নিকাশি ব্যবস্থা এবং কিছু পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা ব্যবহার করেছে, যেমন মেসোপটেমিয়া, মহেঞ্জোদাড়ো, প্রাচীন মিশর এবং স্কটল্যান্ডের ওর্কনি দ্বীপপুঞ্জ। এছাড়াও প্রাচীন গ্রীকরা বৃষ্টি এবং বর্জ্য পানি, নালা এবং নর্দমা ব্যবস্থার মাধ্যমে সেচ এবং সার দেওয়ার কাজে ব্যবহার করতো।[3]
রোমে ৩১২ খ্রিস্টপূর্বাব্দে প্রথম নালা নির্মিত হয় এবং এরপর থেকে তারা খরার সময় সেচ এবং সুপেয় পানি সরবরাহের জন্য নালা নির্মাণ অব্যাহত রাখে। এমনকি তারা খ্রিস্টপূর্ব ৭ম শতাব্দীর শুরুতেই একটি ভূগর্ভস্থ নর্দমা ব্যবস্থা নির্মাণ করেছিল, যা তাইবার নদী পর্যন্ত প্রবাহিত হয়ে জলাবদ্ধতা নিরসরণের মাধ্যমে কৃষিজমি তৈরি এবং একই সাথে শহর থেকে নর্দমা অপসারণ, উভয় কাজই করতো।[3][12]
আধুনিক যুগ
রোমের পতন থেকে উনবিংশ শতাব্দী পর্যন্ত জনস্বাস্থ্য উন্নয়নে ক্রমবর্ধমান প্রচেষ্টা ব্যতীত খুব সামান্যই পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়।[15] আধুনিক পরিবেশ প্রকৌশল ঊনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে লন্ডনের গ্রেট স্টিংক ঘটনার পর জোসেফ বাজালগেট এর প্রথম প্রধান নর্দমা নিকাশী ব্যবস্থা নকশার মাধ্যমে শুরু হয়। সেসময় শহরের নর্দমা ব্যবস্থা টেমস নদীতে কাঁচা নর্দমা সরবরাহ করতো, যে নদী আবার শহরের পানীয় জলের সিংহভাগের সরবরাহকারী, যার ফলে কলেরা মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়ে।[12] শিল্পোন্নত দেশগুলোতে পানীয় জল শোধন এবং পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার প্রবর্তন, পানিবাহিত রোগ কে মৃত্যুর প্রধান কারণ থেকে বিরল কারণে পরিণত করেছে।[16]
পানি ও বায়ু দূষণ এবং অন্যান্য পরিবেশগত অবক্ষয় সম্পর্কে জনগণের ব্যাপক উদ্বেগের প্রতিক্রিয়া হিসেবে বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে পরিবেশ প্রকৌশল একটি পৃথক একাডেমিক শাখা হিসেবে আবির্ভূত হয়। সমাজ এবং প্রযুক্তির জটিলতা বৃদ্ধির সাথে সাথে এগুলো ক্রমবর্ধমানভাবে প্রাকৃতিক পরিবেশের উপর অনভিপ্রেত প্রভাব সৃষ্টি করতে শুরু করে। একটি উদাহরণ হল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরের বছরগুলোতে কৃষিক্ষেত্রে কীটপতঙ্গ নিয়ন্ত্রণের জন্য কীটনাশক ডিডিটি এর ব্যাপক প্রয়োগ। ডিডিটির গল্প, যা রেচল কারসন এর সাইলেন্ট স্প্রিং (১৯৬২) গ্রন্থে স্পষ্টভাবে বর্ণিত হয়েছে, এটিকে আধুনিক পরিবেশ আন্দোলনের জন্মসূত্র হিসেবে বিবেচনা করা হয়,[17] যার ফলশ্রুতিতে আধুনিক "পরিবেশ প্রকৌশল" ক্ষেত্রটি সৃষ্টি হয়েছে।
প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা
অনেক বিশ্ববিদ্যালয় পুরকৌশল অথবা রসায়ন প্রকৌশল বিভাগের মাধ্যমে পরিবেশ প্রকৌশল শিক্ষার সুযোগ প্রদান করে ও পরিবেশগত অবস্থার উন্নয়ন ও ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য ইলেকট্রনিক প্রকল্পসমূহও এর অন্তর্ভুক্ত। পুরকৌশলের অধীনে পরিবেশ প্রকৌশলীরা সাধারণত জলবিদ্যা, পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনা, বায়োরিমিডিয়েশন এবং পানি ও বর্জ্য পানি শোধনাগার নকশা বিষয়ে অধ্যয়ন করেন। রসায়ন প্রকৌশলের অধীনে পরিবেশ প্রকৌশলীরা পরিবেশ রসায়ন, উন্নত বায়ু ও পানি ব্যবস্থাপনা প্রযুক্তি এবং পৃথকীকরণ প্রক্রিয়া বিষয়ে অধ্যয়ন করেন। পরিবেশ প্রকৌশলের কিছু শাখায় প্রাকৃতিক সম্পদ প্রকৌশল এবং কৃষি প্রকৌশল অন্তর্ভুক্ত।
শিক্ষার্থীদের পাঠ্যসূচি মূলত কিছু প্রধান শাখায় বিভক্ত:
- যন্ত্র প্রকৌশল, পরিবেশগত ব্যবহারের উদ্দেশ্যে যন্ত্র এবং যান্ত্রিক ব্যবস্থা যেমন পানি এবং বর্জ্য পানি শোধনাগার, পাম্পিং স্টেশন, আবর্জনা পৃথকীকরণ উদ্ভিদ এবং অন্যান্য যান্ত্রিক সুবিধা নকশা সম্পর্কে অধ্যয়ন।
- পরিবেশ প্রকৌশল বা পরিবেশ ব্যবস্থাপনা, পরিবেশ রক্ষার উদ্দেশ্যে পুরকৌশল-মূলক পদ্ধতিতে বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণ সম্পর্কে অধ্যয়ন।
- পরিবেশ রসায়ন, টেকসই রসায়ন বা পরিবেশ রসায়ন প্রকৌশল, পরিবেশে খনন, দূষক এবং জৈব রাসায়নিক প্রক্রিয়া সহ সকল রাসায়নিক দ্রব্যের প্রভাব সম্পর্কে অধ্যয়ন।
- পরিবেশ প্রযুক্তি, নবায়নযোগ্য উৎস থেকে শক্তি উৎপাদন পর্যবেক্ষণ ও পরিচালনা সহ পরিবেশগত প্রভাব পর্যবেক্ষণ, পরিমাপ, নকশা এবং নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম ইলেকট্রনিক যন্ত্র নির্মাণ সম্পর্কে অধ্যয়ন।
পাঠ্যক্রম
পরিবেশ প্রকৌশলের একটি সাধারণ পাঠ্যক্রম নিম্নলিখিত বিষয়গুলো নিয়ে গঠিত:[18]
- ভর এবং শক্তি স্থানান্তর
- পরিবেশ রসায়ন
- বৃদ্ধি মডেল
- সম্পদ ব্যবহার
- জনসংখ্যা বৃদ্ধি
- অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি
- ঝুঁকি মূল্যায়ন
- ঝুঁকি শনাক্তকরণ
- ডোজ-রিসপন্স মূল্যায়ন
- এক্সপোজার মূল্যায়ন
- ঝুঁকি চরিত্রায়ণ
- তুলনামূলক ঝুঁকি বিশ্লেষণ
- পানি দূষণ
- পানি সম্পদ এবং দূষকসমূহ
- অক্সিজেন চাহিদা
- দূষক পরিবহন
- পানি এবং বর্জ্য পানি শোধন
- বায়ু দূষণ
- শিল্প, পরিবহন, বাণিজ্যিক এবং আবাসিক নিঃসরণ
- মানদণ্ড এবং বিষাক্ত বায়ু দূষকসমূহ
- দূষণ মডেলিং(যেমন বায়ুমণ্ডলীয় বিচ্ছুরণ মডেলিং)
- দূষণ নিয়ন্ত্রণ
- বায়ু দূষণ ও আবহাওয়াবিজ্ঞান
- বৈশ্বিক পরিবর্তন
- গ্রীনহাউজ প্রতিক্রিয়া এবং বৈশ্বিক তাপমাত্রা
- কার্বন, নাইট্রোজেন, এবং অক্সিজেন চক্র
- আইপিসিসি নির্ধারিত নিঃসরণ পরিস্থিতি
- সামুদ্রিক পরিবর্তন (সমুদ্র অম্লীকরণ, সমুদ্রের উপর বৈশ্বিক উষ্ণায়নের অন্যান্য প্রভাব) এবং স্ট্রাটোমণ্ডলে পরিবর্তন (জলবায়ু পরিবর্তনের ভৌত প্রভাব দেখুন)
- কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং সম্পদ পুনরুদ্ধার
- জীবন চক্র মূল্যায়ন
- উৎস হ্রাস
- সংগ্রহ এবং স্থানান্তর কার্যক্রম
- পুনর্ব্যবহার
- বর্জ্য থেকে শক্তিতে রূপান্তর
- আবর্জনাভূমি
ভর ভারসাম্য
একটি মানব-সৃষ্ট রাসায়নিক দ্রব্য বিবেচনা করা যাক, যার সময়, অবস্থান, পদার্থের কোনো পর্যায় বা তরলের প্রবাহের সাথে সম্পর্কিত অবস্থা জানা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে ঘনমাত্রার পরিমাপকৃত পরিবর্তনকে ওই দ্রব্যের ওপর প্রভাবদানকারী সকল পরিবর্তনের হারের ফাংশন হিসেবে প্রকাশ করা হয়।
অর্থাৎ কিছু নির্দিষ্ট আয়তনের জন্য, ঘনমাত্রার পরিবর্তন বনাম রৈখিক স্বাধীন সময়ের পরিবর্তন, ওই নির্দিষ্ট আয়তনের ভেতরে (+) এবং বাইরে (-) যা কিছু পরিবর্তন ঘটছে তার যোগফলের সমান। এটি কয়েকটি ভিন্ন কারণের জন্য অনুমোদিত:
(১) ভরের নিত্যতা
(২) একটি সাধারণ ব্যবকলনীয় সমীকরণ হিসেবে প্রকাশ
(৩) এর একটি সমাধান বিদ্যমান।
যদিও ব্যবকলনীয় সমীকরণ বেশ জটিল হতে পারে, তবে প্রতি একক সময়ে একটি নির্দিষ্ট আয়তনের জন্য ঘনমাত্রার পরিবর্তনের এই সূত্রটি ক্যালকুলাস ছাড়াই বেশ সহজবশ্য। উদাহরণস্বরূপ, একটি নির্দিষ্ট ঘনমাত্রার দূষক সংবলিত একটি পাত্রের আয়তনের কথা বিবেচনা করা যেতে পারে। যদি সেখানে প্রথম মাত্রার বিক্রিয়া -kC সংঘটিত হয় এবং পাত্র স্থির অবস্থায় থাকে তবে তরল বর্জ্যের ঘনমাত্রাকে প্রাথমিক ঘনত্ব, বিক্রিয়া ধ্রুবক k, এবং হাইড্রলিক রিটেনশন টাইম (এইচআরটি) দ্বারা প্রকাশ করা যায়, যা প্রবাহ ও পাত্রের আয়তনের ভাগফলের সমান।
প্রয়োগ
পানি সরবরাহ ও ব্যবস্থাপনা
পরিবেশ প্রকৌশলীরা একটি জলাশয়ের মধ্যে পানির ভারসাম্য মূল্যায়ন করেন এবং ব্যবহারযোগ্য পানির পরিমাণ, ওই জলাশয়ে বিভিন্ন চাহিদার জন্য প্রয়োজনীয় পানি, জলাশয়ের মধ্য দিয়ে পানি প্রবাহের মৌসুমী চক্র নির্ধারণ করেন এবং তারা বিভিন্ন কাজের জন্য পানি সঞ্চয়, শোধন এবং সরবাহের নানা সিস্টেম তৈরী করেন।
পানি শোধন করে গুণগত মান উন্নয়নের মাধ্যমে তা ব্যবহারোপযোগী করা হয়। পান-উপযোগী পানি সরবরাহের ক্ষেত্রে, পানি শোধনের মাধ্যমে সংক্রামক রোগ সংক্রমণ ও অসংক্রামক অসুস্থতার ঝুঁকি হ্রাস এবং সুস্বাদু করা হয়। পানি বণ্টন ব্যবস্থা[19][20] এমনভাবে নকশা করা হয় যেন ব্যবহারকারীর বিভিন্ন চাহিদা যেমন গার্হস্থ্য ব্যবহার, অগ্নি দমন এবং সেচ ইত্যাদির জন্য সরবরাহ নিশ্চিত করার মত পর্যাপ্ত পানির চাপ এবং প্রবাহের হার বিদ্যমান থাকে।
বর্জ্য পানি শোধন
বর্তমানে বেশ কয়েকটি বর্জ্য পানি শোধন প্রযুক্তি রয়েছে। একটি বর্জ্য পানি শোধনাগার কঠিন এবং ভাসমান উপাদান অপসারণের জন্য একটি প্রাথমিক শোধন ব্যবস্থা, একটি এয়ারেশন বেসিন, অধঃক্ষেপণ বা সক্রিয় স্লাজ ব্যবস্থা নিয়ে গঠিত সেকেন্ডারি শোধন ব্যবস্থা, একটি তৃতীয় জৈবিক নাইট্রোজেন অপসারণ সিস্টেম এবং সর্বশেষে একটি নির্বীজন প্রক্রিয়া নিয়ে গঠিত। এয়ারেশন বেসিন/সক্রিয় স্লাজ ব্যবস্থা ব্যাকটেরিয়ার (সক্রিয় স্লাজ) সাহায্যে জৈব উপাদান অপসারণ করে। সেকেন্ডারি শোধন ব্যবস্থা পানি থেকে সক্রিয় স্লাজ অপসারণ করে। তৃতীয় ব্যবস্থাটি যদিও সবসময় খরচের কারণে অন্তর্ভুক্ত করা হয় না, তবুও নাইট্রোজেন এবং ফসফরাস অপসারণ এবং প্রবাহে বা সমুদ্রে ছাড়ার আগে পানি জীবাণুমুক্ত করার জন্য ক্রমেই প্রচলিত হয়ে উঠছে।[21]
বায়ু দূষণ ব্যবস্থাপনা
বিজ্ঞানীরা রিসেপ্টরে দূষকের ঘনত্ব বা যানবাহন এবং শিল্প গ্যাস নির্গমন থেকে সামগ্রিক বায়ুর গুণগত মানের উপর প্রভাব মূল্যায়নে বায়ু দূষণ বিচ্ছুরণ মডেল তৈরি করেছেন। কিছু মাত্রায়, এই শাখা, দহন প্রক্রিয়া থেকে কার্বন ডাই অক্সাইড এবং অন্যান্য গ্রীনহাউজ গ্যাস নির্গমন কমানোর লক্ষ্যের সাথে একীভূত হয়।
পরিবেশগত প্রভাব মূল্যায়ন এবং নিরসন
পরিবেশ প্রকৌশলীরা বৈজ্ঞানিক এবং প্রকৌশল নীতি প্রয়োগ করে পানি, বায়ু, আবাসস্থলের মান, উদ্ভিদ ও প্রাণী, কৃষি এবং বাস্তুসংস্থানের উপর কোন বিরূপ প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা থাকে কিনা তা মূল্যায়ন করেন। যদি প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা থাকে, তাহলে তারা এই ধরনের প্রভাব সীমিত বা প্রতিরোধ করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। এর একটি উদাহরণ হলো, সড়ক নির্মাণের জন্য জলাভূমি ভরাট করা হলে এর বকল্প হিসেবে নিকটবর্তী কোনো স্থানে পুনরায় জলাভূমি তৈরি করা।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে,পরিবেশগত প্রভাব মূল্যায়নের রীতিটি আনুষ্ঠানিকভাবে ১৯৭০ সালের ১ জানুয়ারি, জাতীয় পরিবেশ নীতি আইন (নেপা) কার্যকরের মাধ্যমে শুরু হয়। সেই সময় থেকে, ১০০ টিরও বেশি উন্নয়নশীল এবং উন্নত দেশ হয় অনুরূপ নির্দিষ্ট আইন তৈরি করেছে অথবা অন্য কোথাও ব্যবহৃত পদ্ধতি গ্রহণ করেছে। নেপা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সকল ফেডারেল এজেন্সির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।[22]
নিয়ন্ত্রক সংস্থা
পরিবেশ সুরক্ষা সংস্থা
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এনভায়রনমেন্টাল প্রোটেকশন এজেন্সি (ইপিএ) একটি অন্যতম সংস্থা, যারা মূল সমস্যা সমাধানের জন্য পরিবেশ প্রকৌশলীদের নিয়ে কাজ করে। ইপিএ-এর অন্যতম লক্ষ্য হচ্ছে ক্ষতিকর প্রভাব এড়ানো বা কমানোর জন্য বায়ু, পানি এবং সামগ্রিক পরিবেশগত মান রক্ষা এবং এর উন্নয়ন।[23]
আরও দেখুন
- পরিবেশ বিজ্ঞান
- পুরকৌশল
- তরল প্রবাহ প্রকৌশল
- জলবিদ্যা
- পরিবেশগত সম্পদ ব্যবস্থাপনা
- পরিবেশগত প্রভাব মূল্যায়ন
তথ্যসূত্র
- "Careers in Environmental Engineering and Environmental Science"। www.aaees.org। ২০২১-০২-২৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৩-০৯।
- "Architecture and Engineering Occupations : Occupational Outlook Handbook: : U.S. Bureau of Labor Statistics"। www.bls.gov (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৩-০৯।
- "10 Advancements in Environmental Engineering"। HowStuffWorks (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৪-০৫-১৮। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৩-০৯।
- Beychok, Milton R. (১৯৬৭)। Aqueous Wastes from Petroleum and Petrochemical Plants (1st সংস্করণ)। John Wiley & Sons। এলসিসিএন 67019834।
- Tchobanoglous, G.; Burton, F.L.; Stensel, H.D. (২০০৩)। Wastewater Engineering (Treatment Disposal Reuse) / Metcalf & Eddy, Inc. (4th সংস্করণ)। McGraw-Hill Book Company। আইএসবিএন 978-0-07-041878-3।
- Turner, D. Bruce (১৯৯৪)। Workbook of atmospheric dispersion estimates : an introduction to dispersion modeling (2nd ed সংস্করণ)। Boca Raton: Lewis Publishers। আইএসবিএন 1-56670-023-X। ওসিএলসি 29387428।
- Beychok, Milton R. (১৯৯৪)। Fundamentals of stack gas dispersion (3rd ed সংস্করণ)। Irvine, Calif.: M.R. Beychok। আইএসবিএন 0-9644588-0-2। ওসিএলসি 33462889।
- project editor, Mary Rose Bonk; editorial, Jennifer Greve (২০০৭)। Career information center। Internet Archive। Farmington Hills, MI : Macmillan Reference USA। আইএসবিএন 978-0-02-866047-9।
- "Become Board Certified in Environmental Engineering"। www.aaees.org। ২০২১-০৩-১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৩-০৯।
- "NCEES PE Environmental exam information"। NCEES (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৩-০৯।
- "Engineering Council"। www.engc.org.uk। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৩-০৯।
- Mason, Matthew। "Environmental Engineering: Why It's Vital for Our Future | EnvironmentalScience.org" (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৩-১০।
- Jansen, M. (১৯৮৯)। "Water supply and sewage disposal at Mohenjo‐Daro"। World Archaeology (ইংরেজি ভাষায়)। 21 (2): 177–192। আইএসএসএন 0043-8243। ডিওআই:10.1080/00438243.1989.9980100।
- Evolution of sanitation and wastewater technologies through the centuries। Andreas N. Angelakis, Joan B. Rose। London। ২০১৪। আইএসবিএন 978-1-78040-485-1। ওসিএলসি 897838565।
- "Environmental Engineering | NSF - National Science Foundation"। www.nsf.gov। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৩-১০।
- "Waterborne Infections | Encyclopedia.com"। www.encyclopedia.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৩-১০।
- "What is Environmental Engineering?"। web.engr.oregonstate.edu। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৩-১০।
- Masters, Gilbert M. (২০০৮)। Introduction to environmental engineering and science। Wendell Ela (Third edition সংস্করণ)। Upper Saddle River, New Jersey। আইএসবিএন 0-13-148193-2। ওসিএলসি 124074982।
- Drinking water distribution systems : assessing and reducing risks। National Research Council. Committee on Public Water Supply Distribution Systems: Assessing and Reducing Risks, National Research Council. Water Science and Technology Board। Washington, D.C.: National Academies Press। ২০০৬। আইএসবিএন 0-309-66432-2। ওসিএলসি 228146864।
- "Water Distribution Networks CE370" (পিডিএফ)। King Fahd University of Petroleum and Minerals। সংগ্রহের তারিখ ৬ অক্টোবর ২০১৯।
- Sims, J. (২০০৩)। Activated sludge, Environmental Encyclopedia। Detroit।
- None (১৯৯৩)। McGraw-Hill encyclopedia of environmental science & engineering। Internet Archive। New York : McGraw-Hill। আইএসবিএন 978-0-07-051396-9।
- "EPA Seeks Comment On Protecting Human Health From PBT Chemicals"। New City, NY Patch (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২১-০৩-১২। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৩-১৩।
আরও পড়ুন
- Davis, M. L. and D. A. Cornwell, (২০০৬) Introduction to environmental engineering (4th ed.) McGraw-Hill আইএসবিএন ৯৭৮-০০৭২৪২৪১১৯
- National Academies of Sciences, Engineering, and Medicine (২০১৯)। Environmental Engineering for the 21st Century: Addressing Grand Challenges (প্রতিবেদন)। Washington, DC: The National Academies Press। ডিওআই:10.17226/25121।