পরাগায়ন
যে পদ্ধতিতে ফুলের পরাগধানী থেকে পরাগরেণু সেই ফুল বা একই প্রজাতির অন্য কোনো উদ্ভিদের ফুলের গর্ভমুন্ডে স্থানান্তরিত হয় তাকে পরাগায়ন বলে।
উদ্ভিদে পরাগায়ন প্রধানত ২ পদ্ধতিতে হয় । যথা:-
- স্ব-পরাগায়ন এবং
- পর-পরাগায়ন
স্ব-পরাগায়ন ( Self Pollination)
কোন ফুলের পরাগরেণু সেই একই ফুলের অথবা সেই একই উদ্ভিদের অন্য ফুলের গর্ভমুণ্ডে স্থানান্তরিত হলে তাকে স্ব-পরাগায়ন বলে।
উদাহরণ- সরিষা,ধুতুরা,সন্ধ্যামালতী, শিম, টমেটো ইত্যাদি।
স্ব-পরাগায়নে জন্মলাভ করা উদ্ভিদের বৈশিষ্ট্য মাতৃ-উদ্ভিদের হুবহু অনুরূপ হয়। বলা যায়, এ পদ্ধতিতে প্রজাতির বিশুদ্ধতা অটুুট থাকে ।[1]
উপকারিতা
- স্বপরাগায়নে উদ্ভিদের প্রজাতির বিশুদ্ধতা রক্ষিত হয়।
- পরাগসংযোগ প্রায় নিশ্চিত।
- পরাগরেণু নষ্ট হয় খুবই কম।
- এক্ষেত্রে বাহকের প্রয়োজন হয় না বললেই চলে।
অপকারিতা
- সাধারণত বংশানুক্রমে কোনো নতুন গুণের আবির্ভাব হয় না।
- নতুন বংশধরদের অভিযোজন ক্ষমতা বা নতুনের সাথে খাপ খাওয়ানোর ক্ষমতা কমে।
- এ প্রজনন অব্যাহত থাকলে, অভিযোজন ক্ষমতা হ্রাসের কারণে কোনো এক পর্যায়ে প্রজাতির বিলুপ্তি ঘটতে পারে।
- গাছের ফল-এ কম সহনশীল ও কম জীবনীশক্তিসম্পন্ন বীজের সৃষ্টি হয়।
পর-পরাগায়ন (Cross Pollination)
যে প্রক্রিয়ায় পরাগধানী হতে পরাগরেণু কোনো মাধ্যম বা বাহক দ্বারা একই প্রজাতির অন্য একটি গাছের ফুলের গর্ভমুণ্ডে স্থানান্তরিত হয় তাকে পর-পরাগায়ন বলে। আর যে মাধ্যম পরাগ বহন করে গর্ভমুন্ড পর্যন্ত নিয়ে যায় তাকে পরাগায়নের মাধ্যম বলে। উদাহরণ- বাতাস, পোকামাকড়, পাখি ইত্যাদি।
এক্ষেত্রে ফুলগুলোতে জিনোটাইপের ভিন্নতা থাকে বিধায় এর ফল থেকে যে বীজ উৎপন্ন হয় তাতেও জিনোটাইপের পরিবর্তন হয়। ফলস্বরূপ এ বীজ থেকে যে গাছ হয় তার বৈশিষ্ট্য পুরোপুরি মাতৃ-উদ্ভিদের মতো হয় না; পরবর্তী বংশধরদের মাঝে নতুন প্রকরণ কিংবা নতুন প্রজাতিরও উদ্ভব হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ সরিষা, জবা, কুমড়া, ধুতরা, টমেটো, সিম। [1]
উপকারিতা
- নতুন বৈশিষ্ট্যের সংমিশ্রণ ঘটে। এর ফলে ফুলগুলো রঙিন হয়।
- ভিন্ন প্রকরণ বা ভিন্ন প্রজাতির সৃষ্টি হতে পারে।
- ফল-এ সৃষ্ট বীজ অধিক সহনশীল হয়।
অপকারিতা
- ইতর পরাগ যোগ বাহকের উপর নির্ভরশীল।
- বাহক-নির্ভর পরাগায়ন বলে এ পরাগায়ন প্রায় অনিশ্চিত।
- অধিকাংশ পরাগরেণু নষ্ট হয়।
- প্রজাতির বিশুদ্ধতা রক্ষিত হয় না।
- বাহকের আকর্ষণের জন্য উদ্ভিদ বিভিন্ন প্রকার কৌশল অবলম্বন করে (যেমন উজ্জ্বল বর্ণ ও গন্ধ যুক্ত ফল সৃষ্টি মকরন্দ উৎপাদন প্রভৃতি) তাই উদ্ভিদের পুষ্টি উপাদান এর চাহিদা বেশি থাকে ও উদ্ভিদের শক্তি ক্ষয় হয়।
আরও দেখুন
তথ্যসূত্র
- মাধ্যমিক জীববিজ্ঞান বই (অধ্যায়-১১; পৃষ্ঠা-১৬০ থেকে ১৬৭), ড. ইকবাল আজীজ মুত্তাকী, নাসিম বানু, ড. মো: আবুল হাসান, গুল আনার আহমেদ; সম্পাদনা: ড. সৈয়দ হাদীউজ্জামান, জাহান আফরোজ বেগম হাবিয়া। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড কর্তৃক ঢাকা থেকে প্রকাশিত। সংস্করণ: ডিসেম্বর, ২০০৮। সংগ্রহের তারিখ: ১২ এপ্রিল ২০১২।