পদ্ম

শালুক (waterlily) দেখতে পদ্মফুলের মতো হলেও শালুক পরিবারের (Nympheaceae) সঙ্গে পদ্ম পরিবারের (Nelumbonaceae) খুব একটা নিকটত্ব নেই। এদের পাতা দেখলে সহজেই পৃথক করা যায়। ভারতের জাতীয় ফুল বলে মনে করা হতো, সাংবিধানিক ভাবে তা নয়। বৈজ্ঞানিক নাম: Nelumbo nucifera

লাল পদ্ম
পশ্চিমবঙ্গের নদিয়ার একটি পদ্ম ফুলের কুঁড়ি।

পদ্ম
Nelumbo nucifera
পদ্মফুল
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস
জগৎ: Plantae
বিভাগ: Tracheophyta
শ্রেণী: Magnoliopsida
বর্গ: Proteales
পরিবার: Nelumbonaceae
গণ: Nelumbo
প্রজাতি: Nelumbo nucifera
দ্বিপদী নাম
Nelumbo nucifera
Gaertn.
প্রতিশব্দ
  • Nelumbium speciosum Willd.
  • Nelumbo komarovii Grossh.
  • Nymphaea nelumbo

পদ্ম কন্দ জাতীয় ভূ-আশ্রয়ী বহু বষর্জীবী জলজ উদ্ভিদ। এর বংশ বিস্তার ঘটে কন্দের মাধ্যমে। পাতা জলের ওপরে ভাসলেও এর কন্দ বা মূল জলের নিচে মাটিতে থাকে। জলের উচ্চতা বৃদ্ধির সঙ্গে গাছ বৃদ্ধি পেতে থাকে। পাতা বেশ বড়, পুরু, গোলাকার ও রং সবুজ। পাতার বোটা বেশ লম্বা, ভেতর অংশ অনেকটাই ফাঁপা থাকে। ফুলের ডাটার ভিতর অংশে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অসংখ্য ছিদ্র থাকে। ফুল আকারে বড় এবং অসংখ্য নরম কোমল পাপড়ির সমন্বয়ে সৃষ্টি পদ্ম ফুলের। ফুল ঊধ্বর্মুখী, মাঝে পরাগ অবস্থিত। ফুটন্ত তাজা ফুলে মিষ্টি সুগন্ধ থাকে। ফুল ফোটে রাত্রি বেলা এবং ভোর সকাল থেকে রৌদ্রের প্রখরতা বৃদ্ধির পূর্ব পযর্ন্ত প্রস্ফুটিত থাকে। রৌদ্রের প্রখরতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ফুল সংকোচিত হয়ে যায় ও পরবর্তীতে রৌদ্রর প্রখরতা কমে গেলে আবার প্রস্ফুটিত হয়। ফুটন্ত ফুল এভাবে বেশ অনেক দিন ধরে সৌন্দর্য বিলিয়ে যায়। পদ্ম ফুলের রং মূলত লাল সাদা ও গোলাপীর মিশ্রণ যুক্ত। তাছাড়া নানা প্রজাতির পদ্ম ফুল দেখা যায়। এর মাঝে রয়েছে লাল, সাদা ও নীল রঙের ফুল। বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি প্রাকৃতিক জলাধার হাওর-বাঁওড়, খালে-বিলে ও ঝিলের জলে পদ্ম ফুল ফুটতে দেখা যায়। বর্ষা মৌসুমে ফুল ফোটা শুরু হয়। তবে শরতে অধিক পরিমাণে ফুল ফোটে এবং এর ব্যপ্তি থাকে হেমন্তকাল অবধি। ফুটন্ত ফুলের বাহারি রূপ দেখে চোখ জুড়িয়ে যায়। যে রূপের মায়ায় মুগ্ধ হয়ে শরৎ ঋতুর পদ্ম ফুলকে নিয়ে অনেক কবি তার কাব্যের উপমায় পদ্ম ফুলের রঙ রূপকে তুলে ধরেছেন ভিন্ন ভিন্ন ভাবে। সনাতন ধর্মাবলম্বী মানুষজনের কাছে অতি প্রিয় ও পবিত্র ফুল পদ্ম। বিশেষ করে দুর্গা পূজাতে পদ্ম ফুলের রয়েছে বেশ চাহিদা ও কদর। ব্যাপক চাহিদা থাকার কারণে পদ্ম ফুল সংগ্রহ ও বিক্রয় অনেক মানুষ জীবিকা নির্বাহ করেন। তাছাড়া পদ্ম ফুল ভেষজগুণ সমৃদ্ধ ফুল গাছ। এর ডাটা সবজি হিসেবে খাওয়া যায়। মানব দেহে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি পূরণে অতুলনীয়। চুলকানি ও রক্ত আমাশয় নিরাময়ে বেশ উপকারী।

বিভিন্ন নাম

পদ্মফুলের বহু নাম:

পদ্ম, কমল, শতদল, সহস্রদল, উৎপল (পদ্ম বা শাপলা), মৃণাল, পঙ্কজ, অব্জ, অম্বুজ, নীরজ, সরোজ, সরসিজ, সররুহ, নলিনী, অরবিন্দ, রাজীব, ইন্দিরা, কুমুদ, তামরস,

  • পুণ্ডরীক=শ্বেতপদ্ম
  • কোকনদ=লাল পদ্ম
  • ইন্দিবর= নীল পদ্ম

নাল

বৃন্ত

পদ্মপাতা

পরিধি পুরো গোল, শালুকের মতো একদিকে খাঁজকাটা নয়।

পদ্মমধু

পদ্ম মধু থেকে চোখের ঔষধ তৈরি হয় ।

কন্দ

কন্দগুলি শীতল প্রতিরোধী নয় তবে তাপমাত্রা 0 ডিগ্রি সেলসিয়াস (32 ডিগ্রি ফারেনহাইট) এর নীচে প্রতিরোধ করতে পারে যদি তারা জল বা মাটির নিরোধক কভার দিয়ে ঢেকে থাকে। শীতের সময় শিকড়গুলি হিমশীতল জায়গায় সংরক্ষণ করতে হয়"

গুনাগুণ

  • শ্বেতী রোগ ভাল করে।
  • হৃদশূলের যন্ত্রণা কমায়।

সাংস্কৃতিক ও প্রতীকী গুরুত্ব

পদ্মফুল পবিত্র সৌন্দর্যের প্রতীক ( চরণকমল, পাদপদ্ম, করকমল, মুখপদ্ম, কমলনয়না ইত্যাদি ), যেমন: লাল গোলাপ ভালোবাসার ও চাঁপার কলি নমনীয় লালিত্যের (softness) প্রতীক

  • পদ্মাসন : একটি যোগাসন
  • পদ্ম, মহাপদ্ম প্রাচীন ভারতের সংখ্যাবাচক শব্দ
  • সিপাহী বিদ্রোহের সময় পদ্ম উপহার সাংকেতিক ভাষা হিসাবে ব্যবহার হত।
  • পদ্মকাঁটা : একপ্রকার চর্মরোগ

গোবরে পদ্মফুল

গোবরে পদ্মফুল বলতে বুঝায় অস্থানে মূল্যবান বস্তু।

পদ্ম ফুলের জন্ম পুকুরের/জলাধারের গভীরে। সেখানে গোবর থাকা অসম্ভব। তাই এই উপমা ব্যবহৃত হয়। যেমন: মুচির ছেলে ডাক্তার হলে গোবরে পদ্মফুল উপমা ব্যবহার করা যায়।

পদ্ম পাতায় জল

পদ্ম পাতার উপর জল আটকায় না, খুব তরলভাবে এদিক—ওদিক করে তাড়াতাড়ি হড়কে পড়ে যায়। তাই অস্থায়ী অবস্থাকে "পদ্মপাতায় জল" উপমা দ্বারা বোঝানো হয়।

হিন্দু, বৌদ্ধ, বাহাই ধর্মীয় প্রতীক

  • হিন্দু ধর্মের কাহিনি অনুসারে নারায়ণের নাভি থেকে নির্গত পদ্ম ব্রহ্মার আসন।
  • শ্বেতপদ্ম বিদ্যার দেবী সরস্বতীর আসন।
This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.