পতাকা

পতাকা এক খণ্ড বস্ত্র বিশেষ যা কোন গোষ্ঠী, দল, জাতি, দেশ বা সংগঠনের, এমনকী বিশেষ অনুষ্ঠানের প্রতীক তথা পরিচায়ক হিসাবে ব্যবহৃত হয়। সচরাচর চারকোণা একটুকরো সাদা বা রঙীন কাপড় পতাকা হিসাবে ব্যবহৃত হয়। ব্যবহারকালে পতাকার এক প্রান্ত একটি দণ্ডে বাঁধা হয়। পতাকার বস্ত্রখণ্ডে বিশেষ কোনও রঙ, নকশা, প্রতিকৃতি এবং চিহ্নের দ্বারা কোনও আদর্শ কিংবা বার্তা উৎকীর্ণ থাকতে পারে। আধুনিক বিশ্বের প্রায় প্রতিটি রাষ্ট্রের একটি করে স্বতন্ত্র পতাকা আছে যা জাতীয় পতাকা হিসাবে বিবেচিত।

মানচিত্রে বিশ্বের দেশসমূহের জাতীয় পতাকা
বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা। পতাকার অনুপাত ৩:৫
ভারতের জাতীয় পতাকা । পতাকার অনুপাত ২:৩
পাকিস্তানের জাতীয় পতাকা

ইতিহাস

বাংলা "পতাকা" একটি সংস্কৃতজাত শব্দ। ‘পত্‌’ ধাতু থেকে এর উৎপত্তি। যথা:√ √ /পত্‌ + আক + আ = পতাকা। এটি স্ত্রী-বাচক শব্দ। পত্‌ অর্থ ধাবিত হওয়া, উড্ডীন হওয়া ইত্যাদি। ধ্বন্যাত্মক সম্পর্কও রয়েছে; কারণ পতাকা বাতাসে উড়লে 'পত্‌ পত্‌' শব্দ হয়। লাতিন শব্দ 'ভেক্সিলাম' [vexillum (ইংরেজি উচ্চারণ: /vɛkˈsɪləm/;] থেকে ইংরেজি ভাষার ফ্ল্যাগ শব্দের উৎপত্তি, যার অর্থ নিশান (উর্দ্দু: ঝাণ্ডা hf) এবং প্রতিশব্দ কেতন, ধ্বজা, বৈজয়ন্তী। খ্রিস্টপূর্ব ৫৫০ থেকে ৩৩০ অব্দে পারস্যে এক ধরনের পতাকার প্রচলন ছিল। যুদ্ধক্ষেত্রে সেনাদল সমন্বয়ের কাজে প্রথম পতাকা ব্যবহার হয়েছিল। মধ্যযুগে পতাকার ব্যাপক প্রচলন শুরু হয়। শুধু রাষ্ট্রীয় প্রতীক হিসেবেই নয়, বিভিন্ন কাজের সমন্বয়ের জন্য নানা আয়তন, রঙ ও নকশায় এটা তৈরি করা হতো। ১৩ শতকে ডেনমার্কে রাষ্ট্রীয় পতাকার প্রচলন ঘটে। এটাকেই সবচেয়ে পুরনো রাষ্ট্রীয় পতাকা হিসেবে ধরা হয়। ১৬৩০ খ্রিষ্টাব্দের পর এ ধরনের পতাকা তৈরিতে লাল, নীল ও সাদা রঙয়ের ব্যবহারই বেশি দেখা যায়। ১৭৭৭ খ্রিষ্টাব্দের ১৪ জুন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় পতাকা আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি লাভ করে। ১৭৯৪ খ্রিষ্টাব্দের ফ্রান্সে জাতীয় পতাকার উদ্ভব ঘটে। ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ২ মার্চ বাংলাদেশের পতাকা প্রথম উত্তোলন করা হয়। ভারতে এই পতাকাটিকে সাধারণত "তেরঙা" বা "ত্রিবর্ণরঞ্জিত পতাকা" বলা হয়। পিঙ্গালি ভেঙ্কাইয়া কৃত ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের "স্বরাজ" পতাকার ভিত্তিতে এই পতাকাটির নকশা প্রস্তুত করা হয়েছিল।

বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা

বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা বাঙালি জাতি বা রাষ্ট্রের জাতীয় পরিচয়ের প্রতীক। গাঢ় সবুজ বর্ণের আয়তক্ষেত্রের মাঝখানে একটা ভরাট রক্তিম বৃত্ত নিয়ে এটা তৈরি। এর দৈর্ঘ্য ও প্রস্থের অনুপাত ১০:৬। পতাকার মাঝখানের লাল বৃত্তটির ব্যাসার্ধ হবে পতাকার দৈর্ঘ্যের ৫ ভাগের একভাগ।

ভারতের জাতীয় পতাকা

ভারতের জাতীয় পতাকা হলো কেন্দ্রে চব্বিশটি দণ্ডযুক্ত নীল "অশোকচক্র" সহ গেরুয়া, সাদা ও সবুজ আনুভূমিক আয়তাকার ত্রিবর্ণরঞ্জিত পতাকা। ১৯৪৭ সালের ২২ জুলাই গণপরিষদের একটি অধিবেশনে ভারতের পতাকার এই বর্তমান রূপটি ভারত অধিরাজ্যের সরকারি পতাকা হিসেবে গৃহীত হয়। পরবর্তীকালে এটি ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের জাতীয় পতাকার মর্যাদা লাভ করে। ভারতে এই পতাকাটিকে সাধারণত "তেরঙা" বা "ত্রিবর্ণরঞ্জিত পতাকা" বলা হয়। পিঙ্গালি ভেঙ্কাইয়া কৃত ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের "স্বরাজ" পতাকার ভিত্তিতে এই পতাকাটির নকশা প্রস্তুত করা হয়েছিল।

সাদা পতাকা

সাদা পতাকা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত আত্মরক্ষামূলক প্রতীকিচিহ্ন যা সাময়িক যুদ্ধবিরতী কিংবা স্থায়ী যুদ্ধবিরতীর জন্যে প্রদর্শন করা হয়। বিবাদমান উভয় পক্ষের মধ্যেকার আলাপ-আলোচনার জন্যে প্রাথমিক অনুরোধ বার্তা হিসেবেও এর ব্যবহার রয়েছে। এছাড়াও এটি আত্মসমর্পণের প্রতীকিরূপ যা কোন দেশের দূর্বল সামরিক বাহিনীর পক্ষ থেকে আলোচনার জন্যে অনুরোধ বার্তা প্রেরণের মাধ্যম। ইতিহাসগত কিংবা স্থানীয়ভাবে সাদা রঙযুক্ত পতাকা বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়েছে। তবে, এর বহুল ব্যবহার ঘটে থাকে মূলতঃ যুদ্ধকালীন সময়ে। রোমান সাম্রাজ্যে ইতিহাসবেত্তা কর্নেলিয়াস টেসিতাস উল্লেখ করেছেন যে, ১০৯ খ্রিষ্টাব্দে আত্মসমর্পণের জন্যে সাদা রঙের পতাকা ব্যবহার করা হয়েছিল। ঐ সময়ের পূর্বে রোমের সেনাবাহিনী তাদের আত্মসমর্পণের জন্যে মাথার উপর বর্ম্ম রাখতো।[1]

কালো পতাকা

কালো কাপড় কেটে কালো পতাকা তৈরী করা হয়। সাধারণভাবে কালো পতাকা শোকের প্রতীক। জাহাজে মৃত দেহ থাকলে কালো পতাকা উড়িয়ে দেয়া হয়। আবার জলদস্যুরাও তাদের নৌযানে কালো পতাকা ব্যবহার করতো।

তথ্যসূত্র

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.