নেত্রবতী নদী
নেত্রবতী নদীর উৎপত্তি হয়েছে ভারতের কর্ণাটকের চিকমাগালুর জেলার কুড়েমুখের ইয়েলানিরু ঘাটে বঙ্গবালিজ উপত্যকায়। এই নদীটি প্রসিদ্ধ তীর্থস্থান ধর্মস্থল দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে এবং ভারতের অন্যতম পবিত্র নদী হিসাবে বিবেচিত হয়। ম্যাঙ্গালোর শহরের দক্ষিণে আরব সাগরে পড়ার আগে এটি উপ্পিনাঙ্গাড়িতে কুমারধারা নদীর সাথে মিশেছে। ম্যাঙ্গালোর এবং বানতওয়াল অঞ্চলের জলের মূল উৎস হল এই নদী। নেত্রবতী রেলওয়ে সেতুটি ম্যাঙ্গালোর শহরের প্রবেশদ্বার হিসাবে কাজ করে।
নেত্রবতী নদী | |
---|---|
স্থানীয় নাম | নেত্রবতী মালাকালি নদী |
দেশ | ভারত |
অববাহিকার বৈশিষ্ট্য | |
মূল উৎস | গঙ্গামুলা, চিকমাগালুর জেলা, কর্ণাটক |
মোহনা | আরব সাগর |
প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য | |
দৈর্ঘ্য | ১০৬ কিমি |
এর আগে গত শতাব্দীতে এটি বান্তুওয়াল নদী নামে পরিচিত ছিল; গুরুত্বপূর্ণ শহর বান্তুওয়াল এর তীরে অবস্থিত। ১৮৫৫ সালে প্রকাশিত গেজেটিয়ার অফ সাদার্ন ইন্ডিয়াতে, দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর সময়, জল ভেঙে পার হওয়া যায় না এমন একটি উল্লেখ, নেত্রবতী নদী সম্বন্ধে পাওয়া যায়। প্রস্থের দিকে এটির প্রসার প্রায় ২০০ গজ, নদীতল বড় শিলা পাথরে ভরা। সেগুলি মূলত হর্নব্লেন্ড শিলা, মাইকা এবং গার্নেটের ছোট, পাতলা, ধাতব বৃত্তাকার টুকরোয় ভর্তি। চামড়া রঙা সুন্দর পেগমেটাইটের টুকরো হিসাবে সায়ানাইটসও এই ছোট নদীটির তলায় পাওয়া যায়। ছোট দেশীয় নৌকা দিয়ে নেত্রবতী নদীতে অনেক দূর পর্যন্ত চলাচল করে। এই নদীর নামানুসারে, ম্যাঙ্গালোর দিয়ে যাওয়া একটি ট্রেনের নামকরণ করা হয়েছে নেত্রবতী এক্সপ্রেস।
প্রায়শই বর্ষার সময় নেত্রবতী নদীর স্রোতে বান্তুওয়াল ভেসে যায়। সেজন্য এখানকার অনেক বাসিন্দা শহর ছেড়ে অন্যত্র বসতি স্থাপন করেছে এবং উন্নতি করেছে। ১৯২৮ এবং ১৯৭৪ সালে বড় বন্যা দেখা দিয়েছিল, যা শহরের বয়ষ্কদের মনে আছে।
যাত্রাপথ
নেত্রবতী নদীর উৎপত্তি কর্ণাটক রাজ্যের কুড়েমুখ পর্বতশ্রেণীর ইয়েল্লনার ঘাটের ইয়েলানিরু ঘাটে বঙ্গবালিজ উপত্যকার পশ্চিমঘাট পর্বতমালায়। এই নদীর অববাহিকা প্রায় ১,৩৫৩ বর্গমাইল অঞ্চল।[1] কুমারধারা নদীটি, যেটি পশ্চিম ঘাট পর্বতমালার সুব্রমণ্য পরিসরে উৎপন্ন হয়েছে, সেটি উপ্পিনাঙ্গাড়ি গ্রামের কাছে নেত্রবতী নদীর সাথে মিলিত হয়েছে। প্রতি বছর প্রায় ১০০ টিএমসির বেশি জল আরব সাগরে প্রবাহিত হচ্ছে।[2]
কৃষি ও মাছ ধরা
এই নদীর তীরে বসতি স্থাপন করা মানুষের প্রধান পেশা হল কৃষিকাজ ও মাছ ধরা। বর্ষার সময় কৃষিকাজের মূল উৎস এই নদীটির জল। নদীটি জলজীবনে সমৃদ্ধ। নদীর আশেপাশে বসতি স্থাপনকারী বেশিরভাগ মানুষ এখানে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করে। এইখানকার সূক্ষ্ম বালিও বিক্রি হয়, যা নির্মাণের জন্য ব্যবহৃত হয়। এই বালি নদী তলদেশ থেকে নেওয়া হয়।
বিতর্ক
এই নদীর তীরে অনেক ছোট জলবিদ্যুৎ প্রকল্প এবং তার বিবর্তন প্রকল্প স্থাপন করা হয়েছে, এর ফলে পরিবেশগতভাবে সংবেদনশীল এই অঞ্চলের পরিবেশের ক্ষতি হয়েছে; এবং আরও কিছু প্রকল্প পরিকল্পনার পর্যায়ে রয়েছে এবং কিছু বাস্তবায়িত হয়েছে। সাম্প্রতিক কালে এক বিতর্ক দেখা দিয়েছে, প্রস্তাব রাখা হয়েছিল নদীর গতিপথ পরিবর্তন করে দিয়ে পশ্চিমঘাট পর্বতমালার সেই শুকনো জমির অঞ্চলে সেচ করার। [3] তবে কিছু বিশেষজ্ঞের মতে নদীর পথ পরিবর্তনের ফলে অপ্রত্যাশিত পরিবেশ বিপর্যয়ের সৃষ্টি হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, মিঠা জলের প্রবাহ হ্রাস পেতে পারে এবং এর ফলে পরবর্তী সময়ে সমুদ্রের মধ্যে প্রবাহিত জলে পুষ্টিগুণ হ্রাস পেতে পারে। এটি সামুদ্রিক জীবনে প্রভাব ফেলতে পারে। এটি পশ্চিম ঘাটে বৃষ্টিচ্ছায় অরণ্যের ক্ষতি সাধন করতে পারে। এছাড়াও নেত্রবতী নদীর প্রস্তাবিত বৈদ্যুতিক প্রকল্পগুলির বিরুদ্ধে কিছু বিরোধিতা দেখা দিয়েছে।[4]
আরো দেখুন
- List of rivers of Dakshina Kannada and Udupi districts
তথ্যসূত্র
- Minutes of proceedings of the Institution of Civil Engineers, Volume 174। Institution of Civil Engineers (Great Britain)। পৃষ্ঠা 41।
- Sir William Wilson Hunter। The imperial gazetteer of India, Volume 5। পৃষ্ঠা 471।
- "Minister promises help for Netravati scheme"। The Hindu। Chennai, India। ২০০৯-০৭-২০। ২০১০-০৫-২৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১০-০২-০১।
- "Netravati diversion project opposed"। The Hindu। ২০১৩-০১-২৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১০-০২-০১।
টেমপ্লেট:Hydrology of Karnataka টেমপ্লেট:Western Ghats