নুরুদ্দিন জেনগি

নুরুদ্দিন আবুল কাসিম মাহমুদ ইবনে ইমাদুদ্দিন জেনগি (ফেব্রুয়ারি ১১১৮ – ১৫ মে ১১৭৪) ছিলেন তুর্কি বংশোদ্ভূত জেনগি রাজবংশীয় শাসক। ১১৪৬ থেকে ১১৭৪ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত তিনি সেলজুক সাম্রাজ্যের সিরিয়া প্রদেশ শাসন করেছেন। তিনি ১১৪৬ থেকে ১১৭৪ সাল পর্যন্ত রাজত্ব করেছিলেন। তাঁকে দ্বিতীয় ক্রুসেডের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব হিসাবে গণ্য করা হয়।[1]

নুরুদ্দিন জেনগি
দামেস্কআলেপ্পোর আমির
রাজত্বআলেপ্পো ১১৪৬-১১৭৪
দামেস্ক ১১৫৬-১১৭৪
পূর্বসূরিইমাদুদ্দিন জেনগি
উত্তরসূরিসালিহ ইসমাইল মালিক
জন্ম১১১৮
মৃত্যু১৫ মে ১১৭৪
দামেস্ক, সিরিয়া
সমাধি
নুজঙ্গির উদ্দিন মাদরাসা
পূর্ণ নাম
আল মালিক আল আদিল নুর উদ্দিন আবুল কাসিম মাহমুদ ইবনে ইমাদ উদ্দিন জেনগি
রাজবংশজেনগি রাজবংশ
পিতাইমাদ উদ্দিন জেনগি

ক্রুসেডারদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ

নুর উদ্দিন ছিলেন ইমাদউদ্দিন জেনগির দ্বিতীয় পুত্র। ইমাদউদ্দিন জেনগি ছিলেন আলেপ্পো এবং মসুলের তুর্কি আতাবেগ। যিনি সিরিয়ায় ক্রুসেডার উপস্থিতির একনিষ্ঠ শত্রু ছিলেন। ১১৪৬ সালে তার বাবার মৃত্যুর পর নুর উদ্দিন এবং তার বড় ভাই ১ম সাইফ উদ্দিন গাজি রাজ্যটিকে নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নিয়েছিলাম।নুর উদ্দিন আলেপ্পো শাসন করছিল এবং সাইফ উদ্দিন গাজি মসুলে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছিল। আল-খাবুর নদীকে দুটি নতুন রাজ্যের মধ্যে সীমান্ত হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছিল। তার শাসন শুরু হওয়ার সাথে সাথে নুর উদ্দিন এন্টিওকের প্রিন্সিপালিটি আক্রমণ করেন এবং সিরিয়ার উত্তরে বেশ কয়েকটি দুর্গ দখল করে।একই সাথে তিনি ২য় জোসেলিনের এডেসা কাউন্টি পুনরুদ্ধারের একটি প্রচেষ্টাকে পরাজিত করেন।১১৪৪ সালে জেনগির এডেসা কাউন্টি জয় করেন। ১১৪৬ সালে, এডেসা পুনর্দখল করার ফ্রাঙ্কিশ প্রচেষ্টার পর, নূর আদ-দিন এই প্রচেষ্টায় জোসেলিনকে সহায়তা করার জন্য শাস্তিস্বরূপ শহরের স্থানীয় আর্মেনিয়ান খ্রিস্টান জনগোষ্ঠীকে হত্যা করে এবং এর দুর্গগুলি ধ্বংস করে[lower-alpha 1] [3] । টমাস অ্যাসব্রিজের মতে, এডেসার নারী ও শিশুদের ক্রীতদাস পরিনত করা হয়েছিল। [4]


নুর আদ-দীন তাদের ক্রুসেডার শত্রুদের বিরুদ্ধে মুসলিম ফ্রন্টকে শক্তিশালী করার জন্য উত্তর ইরাক ও সিরিয়ায় তার মুসলিম প্রতিবেশীদের সাথে জোট করার চেষ্টা করেছিলেন। ১১৪৭ সালে, তিনি দামেস্কের গভর্নর মুইন আদ-দিন উনুরের সাথে একটি দ্বিপাক্ষিক চুক্তি স্বাক্ষর করেন। এই চুক্তির অংশ হিসেবে তিনি মুইন আদ-দীনের মেয়ে ইসমত আদ-দীন খাতুনকেও বিয়ে করেন। মুইন আদ-দ্বীন এবং নুর আদ-দিন একসাথে বসরা এবং সালখাদ শহরগুলি অবরোধ করেছিলেন, যেগুলি আলতুনতাশ নামক মুইন আদ-দিনের বিদ্রোহী ভাসালের দ্বারা দখল করা হয়েছিল।কিন্তু মুইন আদ-দীন সর্বদা নূরের প্রতি সন্দেহ পোষণ করতেন।মুইন আদ-দিনের উদ্দেশ্য এবং ইচ্ছা ছিল জেরুজালেমে তার প্রাক্তন ক্রুসেডার মিত্রদের অসন্তুষ্ট না করা, যারা জেঙ্গির বিরুদ্ধে দামেস্ককে রক্ষা করতে সাহায্য করেছিল। মুইন আদ-দিনকে আশ্বস্ত করার জন্য, নূর আদ-দিন দামেস্কে তার অবস্থান কমিয়ে আনেন এবং এর পরিবর্তে অ্যান্টিওকের প্রিন্সিপ্যালিটির দিকে ফিরে যান।সেখানে তিনি আর্তাহ, কাফার লাথা, বাসরফুট এবং বারা দখল করতে সক্ষম হন।

১১৪৮ সালে, ফ্রান্সের লুই সপ্তম এবং জার্মানির তৃতীয় কনরাডের নেতৃত্বে দ্বিতীয় ক্রুসেড সিরিয়ায় পৌঁছেছিল। যদিও এশিয়া মাইনরে নুর আদ-দিনের বিজয় এবং ক্রুসেডারদের পরাজয় তাদের মূল লক্ষ্য -এডেসার পুনরুদ্ধার কার্যত অসম্ভব করে তুলেছিল। আলেপ্পো আক্রমণের জন্য জেরুজালেম থেকে অনেক দূরে ছিল দামেস্ক। অন্যদিকে সম্প্রতি জেঙ্গির বিরুদ্ধে জেরুজালেম রাজ্যের সাথে জোটবদ্ধ হয়েছিল এবং নুর আদ-দিনের সাথে একটি মৈত্রীতে প্রবেশ করেছিল। ক্রুসেডাররা দামেস্ক আক্রমণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল।জেরুজালেমের শত্রুদের সংমিশ্রণ তাদেরকে বাঁধা দেয়।

মুইন আদ-দ্বীন অনিচ্ছায় নূর আদ-দীনের কাছে সাহায্যের জন্য ডাকেন, কিন্তু মাত্র চার দিন পর ক্রুসেডারদের অবরোধ ভেঙ্গে যায়।

ক্রুসেডের ব্যর্থতার সুযোগ নেন নূর আদ-দীন।দূর্গের বিরুদ্ধে আরেকটি আক্রমণ প্রতিহতের প্রস্তুত নেন তিনি। ১১৪৬ সালে, তিনি ওরোন্টেসের পূর্ব তীরে অবস্থিত হারিম দুর্গ দ্বারা অধ্যুষিত অঞ্চলগুলির বিরুদ্ধে আক্রমণ শুরু করেন।এরপর

তিনি ইনাবের দুর্গ অবরোধ করেন।

অ্যান্টিওকের যুবরাজ পয়েটার্সের রেমন্ড,দ্রুত অবরুদ্ধ দুর্গের সাহায্যে এগিয়ে আসেন। মুসলিম বাহিনী ইনাবের যুদ্ধে ক্রুসেডার বাহিনীকে ধ্বংস করে, যার সময় রেমন্ড নিহত হয়। তাছাড়া, রেমন্ডের মাথা নুর আদ-দীনের কাছে পাঠানো হয়েছিল, যিনি এটিকে বাগদাদে খলিফা আল-মুকতাফীর কাছে পাঠিয়েছিলেন। [3] নুর আদ-দীন উপকূলের দিকে অগ্রসর হন এবং প্রতীকীভাবে ভূমধ্যসাগরে স্নান করে সিরিয়ায় তার আধিপত্য প্রকাশ করেন। তিনি অবশ্য অ্যান্টিওক আক্রমণ করেননি; তিনি ওরোন্টেসের পূর্বে সমস্ত অ্যান্টিওচিন অঞ্চল দখল করে এবং শহরের চারপাশে একটি বিশৃংখল রাজ্য ছেড়ে দিয়ে সন্তুষ্ট ছিলেন।যেটি যেকোনও ক্ষেত্রে শীঘ্রই বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের অধীনে চলে যায়। ১১৫০ সালে, তিনি রাম এর সেলজুক সুলতান মাসুদের (যার মেয়েকে তিনিও বিয়ে করেছিলেন) সাথে মিত্রতার পর চূড়ান্ত বারের জন্য দ্বিতীয় জোসেলিনকে পরাজিত করেন। জোসেলিন অন্ধ হয়েছিলেন এবং ১১৫৯ সালে আলেপ্পোতে তাঁর কারাগারে মারা যান। আইনতাবের যুদ্ধে, নুর আদ-দীন জেরুজালেমের রাজা বাল্ডউইন তৃতীয় টারবেসেলের লাতিন খ্রিস্টান বাসিন্দাদের সরিয়ে নেওয়া রোধ করার চেষ্টা করেছিলেন কিন্তু ব্যর্থ হন। ১১৫২ সালে, নুর আদ-দীন টর্টোসাকে দখল করে পুড়িয়ে দেন, [5] মোটকথা শহরটি দখল করেন।

তথ্যসূত্র

উৎস

  • Altan, Ebru (২০১৪)। "Nur al-Din Mahmud b. Zangi (1146-1174): One of the prominent leaders of the struggle against the Crusaders"Tarih Dergisi
  • Asbridge, Thomas (২০১২)। The Crusades: The War for the Holy Land। Simon & Schuster।
  • Barber, Malcolm (১৯৯৪)। The New Knighthood: A History of the Order of the Temple। Cambridge University Press।
  • Elisseeff, N. (১৯৯৫)। "Nur al-Din Mahmud b. Zanki"। Bosworth, C. E.; van Donzel, E.; Heinrichs, W. P. & Lecomte, G.The Encyclopaedia of Islam, New Edition, Volume VIII: Ned–Sam। Leiden: E. J. Brill। আইএসবিএন 90-04-09834-8।
  • The Damascus Chronicle of the Crusades, Extracted and Translated from the Chronicle of Ibn al-Qalanisi. H.A.R. Gibb, 1932 (reprint, Dover Publications, 2002)
  • Jotischky, Andrew (২০১৭)। Crusading and the Crusader States। Routledge।121
  • Raby, Julian (২০০৪)। "Nur Al-Din, the Qstal al-Shu-aybiyya, and the "Classical Revival""। Muqarnas: Essays in Honor of J.M. Rogers। Brill। 21
  • Runciman, Steven (1952). A History of the Crusades, Volume II: The Kingdom of Jerusalem and the Frankish East. Cambridge: Cambridge University Press.
  • Tyerman, Christopher (২০০৬)। God's War: A New History of the Crusadesবিনামূল্যে নিবন্ধন প্রয়োজন। Harvard University Press।
  • William of Tyre, A History of Deeds Done Beyond the Sea, trans. E.A. Babcock and A.C. Krey. Columbia University Press, 1943.

গ্রন্থপঞ্জি

  • Gabrieli, Francesco (১৯৮৪), Arab Historians of the Crusadesবিনামূল্যে নিবন্ধন প্রয়োজন, Berkeley: University of California Press, আইএসবিএন 978-0-520-05224-6.
  • Murray, Alan V. (২০১৫), The Crusades to the Holy Land: The Essential Reference Guide, ABC-CLIO, আইএসবিএন 9781610697804.
শাসনতান্ত্রিক খেতাব
পূর্বসূরী
ইমাদউদ্দিন জেনগি
আলেপ্পোর আমির
১১৪৬–১১৭৪
উত্তরসূরী
সালিহ ইসমাইল মালিক
পূর্বসূরী
মুজিরউদ্দিন
দামেস্কের আমির
১১৫৪–১১৭৪
উত্তরসূরী
সালিহ ইসমাইল মালিক
  1. A Frankish attempt to take advantage of the situation by reoccupying Edessa in November 1146, led by Joscelin II and Baldwin of Marash, failed utterly, the count fleeing ignominiously, Baldwin meeting a heroic death, the city's walls being levelled and the local Armenian Christians suffering the massacre they had avoided two years earlier.[2]
This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.