নীলমণি সরকার

শহীদ নীলমণি সরকার (জন্ম: অজানা - মৃত্যু: ১৯৭১) বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর বিক্রম খেতাব প্রদান করে।[1][2][3]

নীলমণি সরকার
মৃত্যু১৯৭১
জাতীয়তাবাংলাদেশী
নাগরিকত্ব পাকিস্তান (১৯৭১ সালের পূর্বে)
 বাংলাদেশ
পরিচিতির কারণবীর বিক্রম

জন্ম ও শিক্ষাজীবন

শহীদ নীলমণি বিশ্বাসের জন্ম সিলেট জেলার সদর উপজেলার পালপুর গ্রামে। তিন বোন ও পাঁচ ভাইয়ের মধ্যে তিনি ছিলেন সবার বড়। তার বাবার নাম অতুল বিশ্বাস এবং মায়ের নাম মনোদা বিশ্বাস। তিনি অবিবাহিত ছিলেন।[1] [4]

কর্মজীবন

সিলেট সদর উপজেলার কুচাই ইস্রাব আলী উচ্চবিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন নীলমণি সরকার। ১৯৭১ সালে এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিলেন তিনি। পরীক্ষার আগেই শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। পাকিস্তান সেনাবাহিনী সিলেটে সংখ্যালঘু হিন্দুদের হত্যা শুরু করলে বেশির ভাগ হিন্দু পরিবার ভারতে চলে যায়। নীলমণির আত্মীয়স্বজন সবাই চলে গেলেও কয়েকটি পরিবার থেকে যায়। এপ্রিল মাসের প্রথম সপ্তাহের একদিন কিশোর নীলমণিদের গ্রামে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর একটি দল আক্রমণ করে। পাকিস্তানি সেনারা কয়েজন সংখ্যালঘুকে হত্যা করে। সেদিন নীলমণি ও তার পরিবারের সদস্যরা পালিয়ে রক্ষা পান। এরপর তার পরিবার ভারতে চলে যায়। সেখানে নীলমণি মুক্তিবাহিনীতে নাম দেন। কিন্তু তাকে প্রথমে মুক্তিবাহিনীতে নেওয়া হয়নি। অনেক অনুনয়-বিনয়ের পর তাকে মুক্তিবাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ভারতের শিলচরের ধালচরা ক্যাম্পে প্রশিক্ষণ নেওয়ার পর নীলমণি যুদ্ধ করেন চার নম্বর সেক্টরের আমলাসিদ সাব-সেক্টরে। এই সাব-সেক্টরের অধীন ছিল কানাইঘাট ও পার্শ্ববর্তী এলাকা। এই অঞ্চলে ছিল সুরমা নদীসহ আরও কয়েকটি ছোট ছোট নদী এবং অসংখ্য খালবিল ও ছোট ছোট পাহাড়। প্রাকৃতিক এসব প্রতিবন্ধকতার সুযোগ নিয়ে মুক্তিবাহিনীর স্বল্প প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধারা সাহসিকতার সঙ্গে অ্যামবুশ, রেইড, ডিমোলিশন, আকস্মিক আক্রমণ ইত্যাদি চালিয়ে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করতে সক্ষম হন।[1]

মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা

১৯৭১ সালে নীলমণি বেশ কয়েকটি অপারেশনে অংশ নেন। এর মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত পর্যায়ে কানাইঘাটের যুদ্ধ অন্যতম। এই যুদ্ধে নীলমণি শহীদ হন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে স্মরণীয় ও উল্লেখযোগ্য সিলেট জেলার অন্তর্গত কানাইঘাটের যুদ্ধ। যখন মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর সিলেট অভিমুখে অগ্রাভিযানের জন্য কানাইঘাট মুক্ত করা ছিল জরুরি; কানাইঘাটে পাকিস্তানিরা তখন শক্ত প্রতিরক্ষা অবস্থান তৈরি করে। মুক্তিবাহিনীর কয়েকটি দল কানাইঘাটে আক্রমণ করে। মূল পরিকল্পনা অনুযায়ী লেফটেন্যান্ট গিয়াস ও লেফটেন্যান্ট জহিরের নেতৃত্বে দুই কোম্পানি মুক্তিযোদ্ধা দরবস্ত-কানাইঘাট এবং চরঘাট-কানাইঘাট সড়কের ওপর ব্লকিং পজিশন করার জন্য অগ্রসর হয়। নীলমণি ছিলেন লেফটেন্যান্ট জহিরের নেতৃত্বাধীন দলে। এই দলের বেশিরভাগ মুক্তিযোদ্ধাই ছিলেন স্বল্প প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। তারা অগ্রসর হওয়ার পথে পাকিস্তানি সেনাদের আকস্মিক আক্রমণের মুখে পড়েন। প্রচণ্ড গোলাগুলির কারণে মুক্তিযোদ্ধাদের অগ্রযাত্রা স্থবির হয়ে পড়ে এবং সেখানে ভয়াবহ যুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। নীলমণিসহ কয়েকজনের সাহসিকতার পরও মুক্তিযোদ্ধারা সামনে এগোতে ব্যর্থ হন। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর গোলাগুলিতে শহীদ ও আহত হন বেশ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা। যুদ্ধের একপর্যায়ে বাংকারে থাকা নীলমণি মাথা তুলে পাকিস্তানি সেনাদের অবস্থানে গ্রেনেড নিক্ষেপের চেষ্টা করেন। এমন সময় গুলি এসে লাগে তার মাথায়। শহীদ হন কিশোর নীলমণি। পরে তার মরদেহ সমাহিত করা হয় কানাইঘাটেই। [5][1][3]

পুরস্কার ও সম্মাননা

তথ্যসূত্র

  1. "কিশোর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ নীলমণি"SAMAKAL (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৫-০৮
  2. দৈনিক প্রথম আলো, "তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না" | তারিখ: ০৩-১২-২০১১
  3. ডেস্ক, প্রথম আলো। "নীলমণি বিশ্বাস, বীর বিক্রম"চিরন্তন ১৯৭১ | প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৫-০৮
  4. একাত্তরের বীরযোদ্ধাদের অবিস্মরণীয় জীবনগাঁথা, খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা সম্মাননা স্মারকগ্রহন্থ। জনতা ব্যাংক লিমিটেড। জুন ২০১২। পৃষ্ঠা ১৪০। আইএসবিএন 9789843351449।
  5. একাত্তরের বীরযোদ্ধা, খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা (প্রথম খন্ড)। প্রথমা প্রকাশন। এপ্রিল ২০১২। পৃষ্ঠা ১৭১। আইএসবিএন 9789843338884।

বহি:সংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.