নির্মলা মিশ্র

নির্মলা মিশ্র একজন স্বনামধন্য ভারতীয় বাঙালি গায়িকা। তিনি তাঁর গাওয়া আধুনিক বাংলা এবং ফিল্মি গানের জন্য বহুল পরিচিত। দক্ষিণ কলকাতার চেতলার বাসিন্দা নির্মলা মিশ্রর ডাক নাম 'ঝামেলা'। সংগীত জগতের ঘনিষ্ঠ মহলে তাঁকে অনেকেই ‘ঝামেলাদি’ বলেই ডাকেন।[1]

নির্মলা মিশ্র
জন্ম২১ অক্টোবর ১৯৩৮
মৃত্যু৩১ জুলাই ২০২২
চেতলা, কলকাতা, পশ্চিমবঙ্গ , ভারত
জাতীয়তা ভারতীয়
পেশাকণ্ঠশিল্পী
দাম্পত্য সঙ্গীপ্রদীপ দাশগুপ্ত
সন্তানশুভজিৎ দাশগুপ্ত (পুত্র)
পিতা-মাতা
  • মোহিনীমোহন মিশ্র (পিতা)
  • ভবানী দেবী (মাতা)

তাঁর বিখ্যাত আধুনিক গানগুলি হচ্ছে 'এমন একটা ঝিনুক খুঁজে পেলাম না', 'সেই একজন দিও না তাকে মন', 'আবেশে মুখ রেখে', 'বলো তো আর্শি', 'আমি তো তোমার হাসি কান্নার চিরদিনের সাথী', 'কাগজের ফুল বলে', 'ও তোতা পাখি রে', 'উন্মনা মন স্বপ্নে মগন' ইত্যাদি। এছাড়া তাঁর গাওয়া জনপ্রিয় ছায়াছবির গানগুলি হচ্ছে তুমি আকাশ এখন যদি, আমি হারিয়ে ফেলেছি গানের সাথীরে, রিমিঝিমি রিমিঝিমি, আবিরে রাঙালো কে আমায়।, চোখের মণি হারিয়ে খুঁজি।

তিনি অনেক গীতিনাট্যেও অংশ নিয়েছেন। ১৯৭৬ সালে তিনি উত্তম কুমারের মহালয়া গীতিনাট্যে অংশ নেন। নির্মলা মিশ্র অসংখ্য নজরুলগীতি, রবীন্দ্রসঙ্গীত, শ্যামা সঙ্গীত, দেশাত্মবোধক গান এবং লোকসঙ্গীতও গেয়েছেন। তিনি মান্না দে, প্রতিমা বন্দ্যোপাধ্যায়, মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায়, সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় শিপ্রা বসু এবং অন্যান্য অনেক বিখ্যাত শিল্পীর সাথে দ্বৈত গান গেয়েছেন।

প্রারম্ভিক জীবন

নির্মলা মিশ্র ১৯৩৮ সালের দুর্গা সপ্তমীতে পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার মজিলপুরে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা ছিলেন পণ্ডিত মোহিনীমোহন মিশ্র এবং মাতা ছিলেন ভবানী দেবী। [2] পরে তাঁর পিতার চাকরির কারণে তাঁর পরিবার কলকাতার চেতলায় স্থানান্তরিত হয়।

নির্মলা মিশ্র’র পরিবার ছিল একটি সঙ্গীতমুখর পরিবার। তাঁর পিতা মোহিনীমোহন মিশ্র এবং বড় ভাই মুরারিমোহন মিশ্র দু’জনই বিখ্যাত গায়ক ছিলেন। তাঁর পারিবারিক পদবি ছিল বন্দ্যোপাধ্যায়। পরে তাঁর পরিবারকে ‘মিশ্র’ উপাধি দেওয়া হয়। এছাড়া ‘কাশী সঙ্গীত সমাজ’ তাঁর পিতাকে ‘পণ্ডিত’, ‘সঙ্গীত রত্ন’, ‘সঙ্গীত নায়ক’ উপাধিতে ভূষিত করে।

নির্মলা মিশ্রর স্বামী প্রদীপ দাশগুপ্ত একজন গায়ক এবং গীতিকার।[3]

সঙ্গীত জগতে পদার্পণ

নির্মলা মিশ্র ১৯৬০ সালে সঙ্গীত জগতে পদার্পণ করেন যখন সঙ্গীত পরিচালক বালকৃষ্ণ দাস তাঁকে ‘শ্রী লোকনাথ’ ছায়াছবির গানে কন্ঠ দেওয়ার সুযোগ দেন। তিনি যেসব ছায়াছবির গানে কণ্ঠ দিয়েছেন তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে স্ত্রী (১৯৭২), কা (১৯৬৫), অভিনেত্রী (১৯৭০), অনুতাপ (১৯৯২) ইত্যাদি।    

নির্মলা মিশ্রর গাওয়া কয়েকটি বিখ্যাত গান

  • এমন একটা ঝিনুক খুঁজে পেলাম না
  • চাঁদকে নিভিয়ে রাখো
  • আমি তো তোমার চিরদিনের
  • সুখ যে আমার
  • তোমার আকাশ দু'টি চোখে
  • আজ কোনও কাজ নেই
  • ও আমার মন পাখি
  • আমায় বাঁশের বাঁশি দাও বাজাতে
  • আকাশে নেই তারার দীপ
  • ও তোতা পাখি রে
  • সবুজ পাহাড় ডাকে
  • ঘুম পাড়ানি মাসিপিসি
  • বলোতো আরশি তুমি মুখটি দেখে

পুরস্কার

বালকৃষ্ণ দাস পদক।

১৯৯৭ খ্রিস্টাব্দে ওড়িশা সরকার “গান গান্ধর্বী সম্মান প্রদান করে।[4] পশ্চিমবঙ্গ সরকার তাঁকে ২০১২ সালে 'সঙ্গীতসম্মান' এবং ২০১৩ সালে 'সঙ্গীত মহাসম্মান' ও 'বঙ্গবিভূষণ' সম্মাননা প্রদান করে।

মৃত্যু

২০২২ খ্রিস্টাব্দের ৩০ জুলাই (১৯২৯ বঙ্গাব্দের ১৪ শ্রাবণ) শনিবার মধ্যরাতে বাড়িতে হৃদরোগে আক্রান্ত হন প্রবীণ শিল্পী। রাত ১২টা ৫ মিনিট (৩১ জুলাই ২০২২ খ্রিস্টাব্দের) নাগাদ দক্ষিণ কলকাতার চেতলায় নিজের বাড়িতেই তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮১ বছর। পরিবারে তাঁর স্বামী, পুত্র এবং পুত্রবধূ রয়েছেন।[5]

তথ্যসূত্র

  1. ডেস্ক, বিনোদন (০৫ ডিসেম্বর ২০১৮)। "নির্মলা মিশ্র গুরুতর অসুস্থ"প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ ২০ অক্টোবর ২০১৯ এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |তারিখ= (সাহায্য)
  2. Kumar, S (2011)। "Nirmala Mishra Family & Early Life Details – Singer Nirmala Mishra"Kolkata Bengal Info। সংগ্রহের তারিখ ২৩ অক্টোবর, ২০১৯ এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |সংগ্রহের-তারিখ= (সাহায্য)
  3. Barik, Bibhuti (৬ জুন ২০১১)। "Oriya nightingale mesmerises crowd"The Telegraph। সংগ্রহের তারিখ ২৩ অক্টোবর ২০১৯
  4. "ওড়িশা জুড়ে আপন মেয়ের স্মৃতি"। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৮-০৫
  5. সংবাদদাতা, নিজস্ব (৩১ জুলাই ২০২২)। "Nirmala Mishra: 'এমন একটি ঝিনুক খুঁজে পেলাম না'র শিল্পী নির্মলা মিশ্র প্রয়াত, কেড়ে নিল হৃদরোগ"আনন্দবাজার পত্রিকা। সংগ্রহের তারিখ ৩১ জুলাই ২০২২
This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.