নিকারাগুয়ার ইতিহাস
নিকারাগুয়া মধ্য আমেরিকার একটি দেশ। দেশটি মেক্সিকো এবং কলম্বিয়া-এর মাঝামাঝি উত্তরে হন্ডুরাস এবং দক্ষিণে কোস্টা রিকা দ্বারা সীমাবদ্ধ। দেশটির পূর্ব উপকূলে রয়েছে ক্যারিবিয়ান সাগর এবং পশ্চিম প্রান্ত প্রশান্ত মহাসাগর দ্বারা সীমাবদ্ধ। নিকারাগুয়ায় একাধিক দ্বীপ রয়েছে এবং কে (দ্বীপ) ক্যারিবিয়ান সাগরে অবস্থিত।
নিকারাগুয়ার নামটি নিকারাও থেকে এসেছে। এই উপজাতিটি নাহুয়াতল-ভাষায় কথা বলত এবং আমেরিকান স্প্যানিশদের বিজয়ের আগে নিকারাগুয়া হ্রদ এর উপকূলে বাস করত। আবার এই অঞ্চলে বৃহৎ হ্রদ কোকিবোলকা (বা লেক নিকারাগুয়া) এবং মানাগুয়া হ্রদ (বা জোলোৎল্যান হ্রদ) আর উপহ্রদ ও নদীর উপস্থিতির কারণে স্প্যানিশ শব্দ 'আগুয়া (agua)' মানে জল ব্যবহৃত হয়ে থাকতে পারে।
প্রাক-কলম্বিয়ান নিকারাগুয়া
নওয়া ভাষা গোষ্ঠীর মানুষেরা ৫০০ খ্রিস্টাব্দের পরে মধ্য মেক্সিকো থেকে এখানে অভিবাসন করেছিল। [1]
নিকারাগুয়ার বেশিরভাগ ক্যারিবিয়ান নিম্নভূমি অঞ্চলটিতে বর্তমানে কলম্বিয়া থেকে উত্তর দিকে পাড়ি দিয়ে অভিবাসন করে আর এক দল উপজাতি। এই অঞ্চলের বিভিন্ন উপভাষা এবং ভাষা চিবচা এর সাথে সম্পর্কিত। এই চিবচা ভাষায় উত্তর কলম্বিয়ার বিভিন্ন গোষ্ঠী কথা বলে। পূর্ব নিকারাগুয়ার জনসংখ্যায় বর্ধিত পরিবার বা উপজাতি রয়েছে। তারা খাদ্য সংগ্রহ করে শিকার, মাছ ধরা এবং ঝুম চাষ যোগ্য কৃষির মাধ্যমে। কাসাভা এবং আনারস এর মতো ফসল তাদের প্রধান খাদ্য। পূর্ব নিকারাগুয়ার মানুষেরা ক্যারিবীয় স্থানীয় মানুষদের এর সাথে বাণিজ্য করত এবং এরা তাদের দ্বারা প্রভাবিত বলে মনে করা হয়। ক্যারিবীয়দের সাধারণত ব্যবহৃত গোলাকার খড়ে ছাওয়া কুটির এবং ক্যানো - উভয়ই সাধারণভাবে পূর্ব নিকারাগুয়ায় ব্যবহৃত হতে দেখা যায়।
স্পেনীয়রা যখন ১৬ শতকের গোড়ার দিকে পশ্চিম নিকারাগুয়ায় পৌঁছোয় তখন তারা তিনটি প্রধান উপজাতির খোঁজ পায় যাদের প্রত্যেরই আলাদা সংস্কৃতি ও ভাষা ছিল: নিক্যুইরানো, চোরোটেগানো এবং চন্টাল। এই বিভিন্ন গোষ্ঠীগুলির প্রত্যেকেরই দখলে ছিল নিকারাগুয়ার অনেক অঞ্চল। তারা প্রত্যেকেই স্বাধীন প্রধান দ্বারা দলের আইন ও রীতিনীতি অনুসারে শাসন করত। তাদের অস্ত্রশস্ত্র ছিল তরোয়াল, বল্লম এবং কাঠের তৈরি তীর। বেশিরভাগ উপজাতির সরকারের রূপ ছিল রাজতান্ত্রিক। সর্বোচ্চ শাসক ছিল প্রধান যে তার রাজকুমারী দ্বারা বেষ্টিত হয়ে আভিজাত্য গঠন করত। আইন-কানুনগুলি রাজকীয় বার্তাবাহক দ্বারা প্রচারিত হত। তারা প্রতিটি জনপদ পরিদর্শন করে সেখানের বাসিন্দাদেরকে একত্রিত করে তাদের প্রধানের আদেশ সম্পর্কে অবগত করাতো।
নিকারাগুয়া হ্রদ এবং প্রশান্ত মহাসাগরীয় উপকূলের মধ্যবর্তী অঞ্চলটি দখলে ছিল নিক্যুইরানো গোষ্ঠীর। এই অংশটি পরিচালিত হত এক প্রধান দ্বারা যে ছিল ধনী শাসক এবং নিকারাওকলি-তে বাস করত। এই নিকারাওকলি-ই এখনকার শহর রিভাস। চোরোটেগানো গোষ্ঠী মধ্য অঞ্চলে বাস করত। এই দুটি গোষ্ঠীর সাথে বিজয়ী স্পেনীয়দের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল। এর ফলে দেশীয় এবং ইউরোপীয়দের মধ্যে বর্ণগত মিশ্রণের পথ সুগম হয় যাদের এখন পরিচিতি মেস্তিজো নামে। চন্টাল (যার অর্থ নাহুয়ায় বিদেশী [2]) গোষ্ঠীর দখলে ছিল মধ্য পার্বত অঞ্চল। এই গোষ্ঠীটি অন্য দু'টির চেয়ে সংখ্যায় ছোট ছিল এবং তারা প্রথম কখন নিকারাগুয়ায় বসতি স্থাপন করেছিল তা জানা যায়নি।
স্পেনীয়রা পশ্চিম এবং উচ্চভূমির যে অঞ্চলে বসতি স্থাপন করেছিল সেখানে স্প্যানিয়ার্ডদের দ্বারা আনা নতুন রোগের প্রকোপে স্থানীয় আদিবাসী সম্প্রদায় প্রায় সম্পূর্ণরূপে নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছিল। কারণ সে গুলির বিরুদ্ধে স্থানীয় জনগণের কোনওরকম প্রতিরোধ ক্ষমতা ছিল না। পূর্বদিকে যেখানে ইউরোপীয়রা বসতি স্থাপন করেনি সেখানেরই বেশিরভাগ আদিবাসী দল বেঁচে গিয়েছিল। ইংরেজরা উত্তর-পূর্ব নিকারাগুয়ায় বসবাসকারী স্থানীয় জনগণের মধ্যে বন্দুক এবং গোলাবারুদের ব্যবহার চালু করে। এরা বাওয়িকা নামে পরিচিত ছিল। পরবর্তী কালে ব্রিটেনের ক্যারিবিয়ান সম্পত্তি থেকে পালিয়ে আসা পলাতক দাসদের সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয় এই বাওয়িকারা। এর ফলে উদ্ভূত সম্প্রদায় উন্নততর অস্ত্রে অধিগম্যতার সাথে অঞ্চলটিতে প্রসারিত হতে শুরু করে এবং ক্রমে তারা অন্যান্য আদিবাসী গোষ্ঠীগুলিকে অভ্যন্তরের দিকে ঠেলে দেয়। এই আফ্রো-আদিবাসী গোষ্ঠী ইউরোপীয়দের কাছে মিসকিটো নামে পরিচিতি লাভ করে। তাদের এই সম্প্রসারণবাদী কর্মকাণ্ডে বাস্তুচ্যুত লোকদের বলা হত মায়াংনা।
তথ্যসূত্র
- Fowler Fowler, William R., Jr. (১৯৮৫)। "Ethnohistoric Sources on the Pipil Nicarao: A Critical Analysis"। Ethnohistory। 32 (1): 37–62। ওসিএলসি 62217753। জেস্টোর 482092। ডিওআই:10.2307/482092। :38; Kaufman, Terrence (২০০১)। "The history of the Nawa language group from the earliest times to the sixteenth century: some initial results" (পিডিএফ)। Revised March 2001। Project for the Documentation of the Languages of Mesoamerica। ২০২০-০১-১৯ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-১০-০৭।
- Covarrubias, Miguel (১৯৮৬)। "Mexico South: The Isthmus of Tehuantepec"। পৃষ্ঠা 68ff। আইএসবিএন 9780710301840। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০১-১৯।