নাসির উদ্দিন

নাসির উল্লাহ্ (জন্ম: ১৯৩৬ - মৃত্যু: ২০০৬) বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর প্রতীক খেতাব প্রদান করে। [1]

নাসির উল্লাহ্
মৃত্যু২০০৬
জাতীয়তাবাংলাদেশী
নাগরিকত্ববাংলাদেশ
পরিচিতির কারণবীর প্রতীক

জন্ম ও শিক্ষাজীবন

নাসির উল্লাহ্ এর জন্ম ৬৩ নং সিদ্দিক বাজার। তার বাবার নাম তারিক উল্লাহ্ এবং মায়ের নাম সুফিয়া খাতুন। তার স্ত্রীর নাম মেহেরজান বিবি। তাঁদের পাঁচ ছেলে ও তিন মেয়ে।

কর্মজীবন

নাসির উল্লাহ্ চাকরি করতেন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর চতুর্থ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে। ১৯৭১ সালে এই রেজিমেন্টের অবস্থান ছিল কুমিল্লার ময়নামতি সেনানিবাসে। মার্চ মাসের শুরুতে এই রেজিমেন্টে বেশির ভাগ সেনাকে সেনানিবাসের বাইরে মোতায়েন করা হয়। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তারা বিদ্রোহ করে ঝাঁপিয়ে পড়েন যুদ্ধে। প্রতিরোধ যুদ্ধ শেষে তিনি প্রথমে যুদ্ধ করেন ২ নম্বর সেক্টরে। পরে কে ফোর্সের নবম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের অধীনে। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে আগস্ট মাসের শেষে নবম ইস্ট বেঙ্গল গঠিত হয়। ১৯৭৯ সালের আগ পর্যন্ত তিনি ৩৭ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে নায়েব সুবেদার হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা

১৯৭১ সালের অক্টোবরের শেষের দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা উপজেলার সীমান্ত এলাকায় ছিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর শক্ত এক প্রতিরক্ষা। রাতের অন্ধকারে নাসির উদ্দিনসহ একদল মুক্তিযোদ্ধা নিঃশব্দে অবস্থান নিলেন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর প্রতিরক্ষা অবস্থানের অদূরে। তারা সেখানে অপেক্ষা করতে থাকলেন। একটু পর ভারত থেকে পাকিস্তানি অবস্থানে শুরু হলো গোলাবর্ষণ। মুক্তিযোদ্ধারা সবাই প্রস্তুত। অধিনায়কের নির্দেশ পাওয়ামাত্র তারা একযোগে ছুটে গিয়ে আক্রমণ চালাবেন পাকিস্তানি সেনাদের। তার আগে পাকিস্তানি সেনাদের ভীতসন্ত্রস্ত করার জন্য চলছে গোলাবর্ষণ। একটু পর গোলাবর্ষণ শেষ হলো। অধিনায়কের নির্দেশ পাওয়ামাত্র নাসির উদ্দিন তার অধীন সহযোদ্ধাদের নিয়ে এগিয়ে যেতে থাকলেন পাকিস্তানি অবস্থানের উদ্দেশে। ইতিমধ্যে পাকিস্তানি অবস্থান থেকেও শুরু হয়েছে গোলাগুলি। নাসির উদ্দিন ভয় না পেয়ে দুর্বার গতিতে এগিয়ে গেলেন সামনে। তার পেছনে সহযোদ্ধারা। অল্প সময়ের মধ্যেই তারা পৌঁছে গেলেন পাকিস্তানি প্রতিরক্ষা অবস্থানে। এমন অতর্কিত আক্রমণে হতভম্ব পাকিস্তানি সেনারা। মুক্তিযোদ্ধাদের মুহুর্মুহু আক্রমণে তাদের মনোবল ভেঙে পড়ার উপক্রম। তখন নাসির উদ্দিন সহযোদ্ধাদের নিয়ে আরও সাঁড়াশি আক্রমণ চালালেন। প্রচণ্ড আক্রমণের মুখে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর প্রতিরক্ষা আবস্থানগুলো ভেঙে পড়তে থাকল। দিশেহারা পাকিস্তানি সেনারা অবস্থান ছেড়ে পেছনে পালিয়ে গেল। তিন ঘণ্টা যুদ্ধের পর মুক্তিযোদ্ধা দখল করে নেন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর কসবার প্রতিরক্ষা অবস্থান। সেদিন যুদ্ধে নাসির উদ্দিন যথেষ্ট বীরত্ব ও সাহস প্রদর্শন করেন। মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে ২৬ জন পাকিস্তানি সেনা নিহত হয়। আহত হয় ১৮ জন। হস্তগত হয় ১১টি এলএমজি, একটি সিগন্যাল পিস্তল, ৪০টি গ্রেনেড (এইচই ৩৬), তিনটি এনারগা গান, ৪৪টি প্লাস্টিক মাইন, একটি ম্যাপ ও দুটি র‌্যাংক ব্যাজ। মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষে চারজন শহীদ ও ১৫ জন আহত হন। পরদিন পাকিস্তানি সেনারা পুনর্গঠিত হয়ে কসবা দখলের চেষ্টা চালায়। তাদের একটি দল একটি ছোট নালার পশ্চিমতীরে দ্রুত অবস্থান নেয়। তখন নাসির উদ্দিন তার দল নিয়ে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ওই দলের ওপর আক্রমণ চালান। প্রচণ্ড আক্রমণের মুখে পাকিস্তানি সেনাদের ওই প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়ে যায়। কিছুক্ষণ পর মুক্তিযোদ্ধাদের আরও কয়েকটি দল এসে পাকিস্তানি সেনাদের ওপর আক্রমণ শুরু করে। তখন পাকিস্তানি সেনারা পুরোপুরিভাবে পিছু হটে যায়। [2]

পুরস্কার ও সম্মাননা

তথ্যসূত্র

  1. "দৈনিক প্রথম আলো, "তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না"| তারিখ: ২৪-০৫-২০১২"। ২০১৯-০১-২৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-১১-১৭
  2. একাত্তরের বীরযোদ্ধা, খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা (দ্বিতীয় খন্ড)। প্রথমা প্রকাশন। মার্চ ২০১৩। পৃষ্ঠা ২৪৬। আইএসবিএন 9789849025375।

পাদটীকা

বহি:সংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.