নাসরীন জাহান

নাসরীন জাহান (জন্ম: মার্চ ৫, ১৯৬৪) একজন বাংলাদেশী লেখক, ঔপন্যাসিক, এবং সাহিত্য সম্পাদক। আশির দশকের শুরু থেকে তিনি লেখালেখি শুরু করেন। উড়ুক্কু উপন্যাসের মাধ্যমে তিনি খ্যাতি লাভ করেন।[1] এই উপন্যাসের জন্য লাভ করেন ফিলিপ্‌স সাহিত্য পুরস্কার। এছাড়া বাংলা সাহিত্যে সামগ্রিক অবদানের জন্য লাভ করেন বাংলা একাডেমি পুরস্কার[2]

নাসরীন জাহান
জন্মনাসরীন সুলতানা
(1964-03-05) ৫ মার্চ ১৯৬৪
হালুয়াহাট, ময়মনসিংহ জেলা, পূর্ব পাকিস্তান (বর্তমান বাংলাদেশ)
পেশালেখক, সাহিত্য সম্পাদক
ভাষাবাংলা
জাতীয়তাবাংলাদেশী
নাগরিকত্ববাংলাদেশী
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানলালমাটিয়া কলেজ
সময়কালআধুনিক যুগ
ধরনমনস্তাত্ত্বিক, রূপকথা
উল্লেখযোগ্য রচনাবলি
  • উড়ুক্কু
  • সোনালি মুখোশ
  • ঈশ্বরের বামহাত
উল্লেখযোগ্য পুরস্কারবাংলা একাডেমি পুরস্কার
সক্রিয় বছর১৯৭৭বর্তমান
দাম্পত্যসঙ্গীআশরাফ আহমেদ (বি. ১৯৮৩বর্তমান)
সন্তানঅর্চি অতন্দ্রিলা (মেয়ে)

প্রাথমিক জীবন

নাসরীন জাহান ১৯৬৪ সালে ৫ মার্চ বাংলাদেশের ময়মনসিংহ জেলার হালুয়াঘাটে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা গোলাম আম্বিয়া ফকির ছিলেন সরকারী চাকুরিজীবী ও মা উম্মে সালমা ছিলেন গৃহিণী।[3] বাবার চাকরির কারণে থাকতেন মামাবাড়িতে। ১৯৭১ সালে যুদ্ধ শুরু হলে তাকে আর তার ভাইকে ভারতের সীমান্তবর্তী এলাকায় তাদের এক মামীর বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। যুদ্ধ শেষে ফিরে এসে ভর্তি হন শানকিপাড়া স্কুলে। যাতায়াতের সুবিধার জন্য থাকতেন ফুফুর বাড়িতে। ফুফুর এক মেয়ে ছিল শবনম জাহান। ফুফু তার নামের সাথে মিল রেখে মা-বাবার দেয়া নাম নাসরীন সুলতানা পরিবর্তন করে তার নাম রাখেন নাসরীন জাহান। স্কুলে পড়াকালীন পারভিন সুলতানা নামে এক বন্ধুর সাথে তার সখ্য গড়ে উঠে। সে বিদ্যাময়ী সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়-এ ভর্তি হলে তিনিও একই স্কুলে ভর্তি হন। ১৯৭৭ সালে শিশু একাডেমি থেকে লেখা চাওয়া হলে দুই বান্ধবী লেখা পাঠায়। দুজনের লেখা প্রকাশিত হয় সেই পত্রিকায়। নাসরীনের লেখা গল্পের নাম ছিল ছাপানো গল্পটা[4]

পারিবারিক জীবন

ব্যক্তিগত জীবনে নাসরীন জাহান কবি আশরাফ আহমেদের স্ত্রী। লেখালেখির সূত্রেই তার সাথে পরিচয় এবং সে থেকে প্রণয়। ১৯৮৩ সালে তারা বিয়ে করেন। তাদের এক মেয়ে। নাম অর্চি অতন্দ্রিলা।

কর্মজীবন

নাসরীন জাহান পাক্ষিক পত্রিকা অন্যদিনের সাহিত্য সম্পাদক। ১৯৯৭ সাল থেকে তিনি এই পত্রিকার সম্পাদকের দায়িত্বে রয়েছেন।[5]

সাহিত্য জীবন

নাসরীন জাহান কৈশোর থেকে সাহিত্যচর্চার সাথে জড়িত। ১৯৮৩ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে তিনি ময়মনসিংহ সাহিত্য সংসদের পাঠচক্র সংগঠন বীক্ষণে অংশ নিতেন। সেখানে কবি নির্মলেন্দু গুনের সাথে পরিচিত হন।[6] স্থবির যৌবন, বিচূর্ণ ছায়া, পথ, হে পথ, সারারাত বিড়ালের শব্দ গল্পগ্রন্থগুলো প্রকাশের পর তিনি তার প্রথম উপন্যাস লিখেন। তার রচিত প্রথম উপন্যাস উড়ুক্কু। উপন্যাসটি ইংরেজিতে অনুবাদ করেন কায়সার হক। এই উপন্যাসের জন্য তিনি ১৯৯৪ সালে ফিলিপ্‌স সাহিত্য পুরস্কার অর্জন করেন।[7] ১৯৯৪ সালে প্রকাশিত তার দ্বিতীয় উপন্যাস চন্দ্রের প্রথম কলা। রূপকথাধর্মী এই উপন্যাসটি প্রথমটির তুলনায় কম সাড়া লাভ করে। ১৯৯৫ সালের একুশে বইমেলায় প্রকাশিত হয় তার রচিত উপন্যাস চন্দ্রলেখার যাদুবিস্তার ও মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক যখন চারপাশের বাতিগুলো নিভে আসছে। পরের বছর একুশে বইমেলায় প্রকাশিত হয় তার দীর্ঘ নিরীক্ষাধর্মী উপন্যাস সোনালি মুখোশ। পরবর্তীতে তার রচিত উপন্যাসের মধ্যে লি, ক্রুশকাঠের কন্যা, শঙ্খনর্তকী, ঈশ্বরের বামহাত উল্লেখযোগ্য। তার রচিত ঈশ্বরের বামহাত উপন্যাস অবলম্বনে নাট্য নির্মাতা সুমন আনোয়ার ২০১১ সালে নির্মাণ করেন ধারাবাহিক নাটক দূর পাহাড়ের বাতাসেরা[8] ২০০৯ সালে চিল পাখির নীল ঠোঁটে এবং পরের বছর ২০১০ সালে সেই সাপ জ্যান্ত প্রকাশের পর তিনি সাময়িক বিরতি নেন। সর্বশেষ ২০১৬ সালের একুশে বইমেলায় প্রকাশিত হয় তার উপন্যাস নিঃসঙ্গতার পাহারাদার[4]

তার লেখা সম্পর্কে তার নিজের উক্তি

অনেকের কাছে আমার লেখার ভাষা জটিল বলে মনে হয়। কিন্তু আমি এভাবেই লিখি। আমার পাঠকরাও আমাকে এভাবে গ্রহণ করতে অভ্যস্ত।

গ্রন্থতালিকা

উপন্যাস

  • উড়ুক্কু (১৯৯৩)
  • চন্দ্রের প্রথম কলা (১৯৯৪)
  • চন্দ্রলেখার যাদুবিস্তার (১৯৯৫)
  • যখন চারপাশের বাতিগুলো নিভে আসছে (১৯৯৫)
  • সোনালি মুখোশ (১৯৯৬)
  • বৈদেহী (১৯৯৭)
  • লি (১৯৯৭)
  • ক্রুশকাঠে কন্যা (১৯৯৮)
  • উড়ে যায় নিশিপক্ষী (১৯৯৯)
  • মেঘের সোনালি চুল (২০০০)
  • স্বর্গলোকের ঘোড়া (২০০০)
  • নিকুন্তিলা (২০০১)
  • কমলাসুন্দরী আর এক সন্ধ্যার কাহিনী (২০০২)
  • শঙ্খনর্তকী (২০০৩)
  • আকাশে অনেক রাত (২০০৪)
  • দূর পৃথিবীর গন্ধে (২০০৪)
  • সামান্তা (২০০৫)
  • মৃত্যুসখীগণ (২০০৬)
  • ঈশ্বরের বামহাত (২০০৭)
  • কুয়াশার ফণা (২০০৮)
  • আঁধারে রঙিন রাখাল (২০০৯)
  • চিল পাখির নীল ঠোঁটে (২০০৯)
  • সেই সাপ জ্যান্ত (২০১০)
  • এ এক অদ্ভুত লজ্জা
  • কানামাছি কোন স্বপ্নে ছুট
  • দূর পৃথিবীর গন্ধে
  • সিসেম দুয়ার খোল
  • নিঃসঙ্গতার পাহারাদার (২০১৬)

গল্প

  • স্থবির যৌবন
  • বিচূর্ণ ছায়া
  • পথ, হে পথ
  • সারারাত বিড়ালের শব্দ (১৯৮৯)
  • পাগলাটে এক গাছ বুড়ো
  • অথৈ মনের তীর
  • এলেনপোর বিড়াল
  • কাঠপেঁচা
  • কাসান্দ্রা ১৯৭৫
  • ছেলেটি যে মেয়ে মেয়েটি তা জানত না
  • পাখি তুমি সেদিন রাতে কাঁদছিলে কেন?
  • সম্ভ্রব যখন অশ্লীল হয়ে ওঠে
  • নারীবাদী গল্প

নাটক

  • তিনটি মঞ্চনাটক

পুরস্কার

  • ফিলিপ্‌স সাহিত্য পুরস্কার (১৯৯৪) (উড়ুক্কু উপন্যাসের জন্য)
  • আলাওল সাহিত্য পুরস্কার (১৯৯৫) (পাগলাটে এক গাছ বুড়ো গল্পের জন্য)
  • বাংলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৯৯) (সামগ্রিক অবদানের জন্য)
  • সীতাকুণ্ড সাহিত্য পুরস্কার
  • খুলনা রাইটার্স ক্লাব পুরস্কার (২০০২)
  • মাতৃভূমি সম্মাননা পদক (২০০৭)
  • বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ-সাহিত্য সম্মাননা (২০০৭)
  • আনন্দ আলো সাহিত্য পুরস্কার (২০১০)
  • খালেকদাদ চৌধুরী সাহিত্য পুরস্কার (২০১১)

তথ্যসূত্র

  1. "আজ বাতিঘরে আসছেন নাসরীন জাহান"দৈনিক আজাদী। ২১ জুন ২০১৩। সংগ্রহের তারিখ ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৬
  2. "বাংলা সাহিত্যের রাজকুমারী'র লেখালেখি নিয়ে কথা"নতুনদেশ ডটকম। সংগ্রহের তারিখ ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৬
  3. "নাসরিন জাহান"বিকাশমিডিয়া। সংগ্রহের তারিখ ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৬
  4. "'কখনো আপস করিনি'"বনিক বার্তা। দেওয়ান হানিফ মাহমুদ। জানুয়ারি ২৫, ২০১৬। সংগ্রহের তারিখ ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৬
  5. ইমরান মাহফুজ (২৮ মার্চ ২০১৪)। "নাসরীন জাহান - একটি বড় উপন্যাস লেখার কথা ভাবছি"দৈনিক ইত্তেফাক। সংগ্রহের তারিখ ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৬
  6. আরিফ আহমেদ (নভেম্বর ১১, ২০১৪)। "এমন নান্দনিক পাঠচক্র পৃথিবীতে বিরল : নাসরীন জাহান"সাহিত্য বাজার। সংগ্রহের তারিখ ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৬
  7. কামরুজ্জামান জাহাঙ্গীর (২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৪)। "উড়ুক্কু, নাসরীন জাহান এবং কিছু কথা"দৈনিক কালের কণ্ঠ। সংগ্রহের তারিখ ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৬
  8. অনলাইন প্রতিবেদক (১২ জুন ২০১১)। "নাসরিন জাহানের উপন্যাস নিয়ে ধারাবাহিক"দৈনিক প্রথম আলো। ৫ মে ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৬

বহিঃসংযোগ

রকমারিতে নাসরিন জাহান

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.