নাযারাতুল মাআরিফ আল কুরআনিয়া
নাযারাতুল মাআরিফ আল কুরআনিয়া (উর্দু: نزارة المعارف القرانية) ১৯১৩ সালে প্রতিষ্ঠিত একটি কুরআন শিক্ষা প্রশিক্ষণ কেন্দ্র।[1][2] জমিয়তুল আনসার থেকে পদত্যাগের পর মাহমুদ হাসান দেওবন্দির নির্দেশে উবাইদুল্লাহ সিন্ধি দিল্লিতে চলে যান এবং সেখানে দারুল উলুম দেওবন্দের ইসলামি শিক্ষা ও আলিগড় ওরিয়েন্টাল কলেজের ইংরেজি শিক্ষার মধ্যে সমন্বয় সাধনের পাশাপাশি ব্রিটিশদের প্রদত্ত আধুনিক শিক্ষার ফলে মুসলমানদের মনে ইসলাম সম্পর্কে যে ভ্রান্ত ধারণার সৃষ্টি হয়েছে, তা নিরসনের চেষ্টা করতে থাকেন। এ লক্ষ্যে তিনি দিল্লির ফতেহপুরী মসজিদে অত্র প্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠা করেন।[3]
نزارة المعارف القرانية | |
পূর্বসূরী | জমিয়তুল আনসার |
---|---|
গঠিত | ১৯১৩ |
প্রতিষ্ঠাতা | উবাইদুল্লাহ সিন্ধি |
আইনি অবস্থা | ধর্মীয় সংগঠন |
উদ্দেশ্য | বুদ্ধিভিত্তিক কুরআন শিক্ষা প্রশিক্ষণ দেওয়া |
সদরদপ্তর | দিল্লি |
পৃষ্ঠপোষক | মাহমুদ হাসান দেওবন্দি |
দেওবন্দি আন্দোলন |
---|
সিরিজের অংশ |
|
প্রতিষ্ঠানটি ক্রমেই ব্রিটিশ বিদ্রোহী মুসলমানদের সভাস্থল ও কেন্দ্র হয়ে উঠে। এদের মধ্যে অন্যতম হলেন হাকিম আজমল খান, মুখতার আহমদ আনসারি, শওকত আলি, মুহাম্মদ আলি জওহর, জাফর আলী খান ও আবুল কালাম আজাদ। মাহমুদ হাসান দেওবন্দি দিল্লি গমন করে এ সকল নেতৃবৃন্দের সাথে সিন্ধির পরিচয় করিয়ে দেন। এভাবে দিল্লিতে উচ্চ পর্যায়ের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও রাজনীতির সাথে উবাইদুল্লাহ সিন্ধির সম্পর্ক স্থাপিত হয়।[3]
বর্ণনা
প্রতিষ্ঠানটির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে হুসাইন আহমদ মাদানি বলেন,
“ | পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত তরুণদের দৈনন্দিন জীবনে খারাপ অভ্যাস ও অসৎকর্ম দূরীভূত করে কুরআন ও সুন্নাহর ছাঁচে ঢেলে তাদের জীবনকে নতুন রূপ দান করাই ছিল নাযারাতুল মাআরিফের প্রধান লক্ষ্য। | ” |
উবাইদুল্লাহ সিন্ধি এ প্রতিষ্ঠানে এমনভাবে কুরআন শিক্ষা দেওয়ার চিন্তা করেন যেন ইসলাম সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের সকল প্রকার সংশয়, সন্দেহ দূরীভূত হয়। তিনি এ প্রতিষ্ঠান থেকে "কলীদে কুরআন" এবং "তালীমে কুরআন" নামক দুটি পুস্তক প্রকাশ করেন। এতে মুসলিম সম্প্রদায়কে দলমত নির্বিশেষে বিপুলভাবে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য উৎসাহিত করা হয়। এ কারণে ব্রিটিশ সরকার সিন্ধির প্রতি ক্ষিপ্ত হয়ে গ্রন্থ দুটি বাজেয়াপ্ত করে এবং প্রকাশনা বন্ধ করে দেয়। এতদসত্ত্বেও এই প্রতিষ্ঠানের প্রভাবে পাঞ্জাব, সিন্ধু এবং সীমান্ন্ত প্রদেশে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে দূর্গ গড়ে উঠেছিল। ব্রিটিশ সিআইডির "দ্য পিটিশন অব দ্য ব্রিটিশ কুইন ভার্সেস মাওলানা উবাইদুল্লাহ সিন্ধি" শীর্ষক রিপোর্টে বলা হয়,
“ | উবাইদুল্লাহ সিন্ধি দারুল উলম দেওবন্দকে তার ধর্মপ্রচারকদের প্রশিক্ষণ শিবির হিসেবে ব্যবহার করতে পারেননি। তাই তিনি এই উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য দিল্লিতে একটি মাদ্রাসা (নাযারাতুল মাআরিফ) প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত নেন। এর নাম থেকেই স্পষ্ট, মাদ্রাসাটি কুরআন এবং এর শিক্ষাকে সঠিক দৃষ্টিকোণে ব্যাখ্যা করার জন্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। আরবি ভাষাও শেখানো হয়। এই প্রতিষ্ঠানটি বেআইনি, এসব শিক্ষার পাশাপাশি এটি ষড়যন্ত্রকারীদের গোপন বৈঠকের জায়গা হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। | ” |
— [3] |
আরও দেখুন
তথ্যসূত্র
- খান, ইরফানুল্লাহ (২০১৭)। দি দেওবন্দ মুভমেন্ট এন্ড দি রাইজ অব রিলিজিয়াস মিলিট্যান্সি ইন পাকিস্তান। পিএইচডি অভিসন্দর্ভ (ইংরেজি ভাষায়)। ইসলামাবাদ: কায়েদে আজম বিশ্ববিদ্যালয়। পৃষ্ঠা ১০২–১০৩।
- হাসান, তুরাবুল; আহমদ, খলিল; হাসান, শহিদ (২০১৫)। "The Role of Deobandi Ulema in Strengthening the Foundations of Indian Freedom Movement (1857-1924)" [ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনের ভিত্তি শক্তিশালীকরণে দেওবন্দি ওলামাদের ভূমিকা (১৮৫৭-১৯২৪)] (পিডিএফ)। পাকিস্তান জার্নাল অব ইসলামিক রিসার্চ। পাকিস্তান: বাহাউদ্দিন জাকারিয়া বিশ্ববিদ্যালয়। ১৫: ৪১।
- শামসুজ্জামান, মুহাম্মদ (২০১৯)। ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে দেওবন্দ মাদ্রাসার ভূমিকা (গবেষণাপত্র)। বাংলাদেশ: ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। পৃষ্ঠা ১৩৫–১৩৭। ৩ জুন ২০২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৫ জানুয়ারি ২০২২।