নাথসাহিত্য

নাথপন্থী সাধকেরা একটা বিশেষ ধর্মকর্মের সঙ্গে যুক্ত। যোগসাধনাই সেই ধর্মের মূল প্রেরণা। এজন্য নাথপন্থী সাধকদের যোগী বলা হয়।[1] নাথধর্মের সঙ্গে চর্যাপদের সহজপন্থী ধর্মমতের হয়তো কিছু প্রভেদ আছে,কিন্তু মিলটি সেই পরিমাণে কম নয়। এ সম্পর্কে মণীন্দ্রমোহন বসুর মন্তব্য,

"প্রকৃতপক্ষে এই সকল ধর্মমত একই উৎস হইতে উৎপন্ন হইয়া বিভিন্ন ভাবধারায় পরিপুষ্টি লাভ করিয়া বিশিষ্টতাসম্পন্ন হইয়াছে। নাথ অর্থে "সদগুরুনাথ" এবং গুরু বুঝাইতে এই শব্দটি চর্য্যাতেও ব্যবহৃত হইয়াছে,যথা "ভক্তি ন পুচ্ছসি নাহ" এই গুরুপরম্পরায় প্রচারিত বিশিষ্ট মতবাদই নাথ-ধর্মেরও বিশেষত্ব। চর্যাতেও ধর্মার্থে গুরুকেই অনুসরণ করিতে নির্দেশ দেওয়া হইয়াছে। তাহা হইলে এই দুই মতবাদের বিভিন্নতা কোথায়?"

দশম শতাব্দীতে সারা ভারতই নাথপন্থীদের বিচরণক্ষেত্র ছিলো। হাজার বছরের বাংলাদেশের ইতিহাসেও নাথপন্থী যোগীদের সাধনভজনের কাহিনী শ্রুতিবদ্ধ হয়েছে। এদেশের ছড়াপাঁচালি, লোকগীতি ও কিছু কিছু আখ্যানকাব্যে নাথপন্থী যোগীদের ধর্মকর্ম ও আচার-আচরণের অনেক চিত্তাকর্ষক কাহিনীকে রূপদান করা হয়েছে। জনচিত্ত আকর্ষণকারী ময়নামতি ও গোপীচন্দ্রের গান এবং গোরক্ষবিজয়-কাহিনী এই নাথসাহিত্যের অন্তর্ভুক্ত। এই সব কাহিনী দশম-দ্বাদশ শতাব্দীতে রচিত হলেও পরবর্তীকালে একই বিষয়ের ভিত্তিমূলে উৎপন্ন অনেক ছড়াগান উত্তরবঙ্গের কৃষকদের মুখে মুখে প্রচলিত হয়। কাজেই এসব ছড়ায় প্রাচীন ভাষাবৈশিষ্ট্যের পরিচয় নেই।

প্রাচীন বাংলা সাহিত্যের নিদর্শন বৌদ্ধগান ও দোহার ভাষারূপের পরিচয় মেলে নাথসাহিত্যে। উভয় ধারার সাহিত্যেই বৌদ্ধ সিদ্ধাচার্যগণের উল্লেখ রয়েছে। এইসব সিদ্ধপুরুষ হচ্ছেন মীননাথ বা মৎস্যেন্দ্রনাথ, জলান্ধরীপাদ বা হাড়িপা, গোরক্ষনাথ বা গোরখনাথ এবং কানুপা বা কাহ্নপাদ। এঁদের সময় ও স্থানিক অবস্থান সম্পর্কে পণ্ডিতগণ একমত নন।

বৌদ্ধ ধর্মের সঙ্গে শৈব ধর্মের সম্মিলনে যে নাথধর্মের প্রসার লাভ করেছিল, তারই যোগমাহাত্ম্য ও কাহিনী অবলম্বনে নাথসাহিত্যের বিকাশ ঘটে।

তথ্যসূত্র

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.