নাগাপুসানী

নাইনাতিভু নাগাপুসানী আম্মান মন্দির শ্রীলঙ্কার উত্তর প্রান্ত অবস্থিত জাফনা শহরের নিকটবর্তী নয়নাতিভু গ্রামের একটি হিন্দু মন্দির[1] স্থানীয় তামিল ভাষায় এটি নাইনাতিভু নাগাপুসানী আম্মান মন্দির নামে পরিচিত ৷ এটি হিন্দু তন্ত্রসাধনার ৫১ শক্তিপীঠের মধ্যে অন্যতম ও অবস্থানে দক্ষিণতম ৷ [2]

নৈনাটিভু নাগাপুসানী আম্মান মন্দির

ইতিহাস

এখানে দেবী সতীর গোড়ালি বা ডান পায়ের নুপুর পড়েছিল । শক্তি আরাধনায় এই শক্তিপীঠকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। বিখ্যাত তামিল মহাকাব্য শিলাপথিকরমেও এই তীর্থের উল্লেখ করা হয়েছে । যেখানে দক্ষযজ্ঞে সতীর দেহত্যাগ এবং শক্তিপীঠ সৃষ্টির কথা বলা হয়েছে। শাস্ত্র অনুসারে এখানে দেবী ইন্দ্রাক্ষী ও ভৈরব রাক্ষসেশ্বর।

দেবীর মূর্তি ইন্দ্রের দ্বারা প্রতিষ্ঠাপিত ও পূজিত হয়েছিল । ভগবান রাম এবং রাবণ দেবীকে পূজা করেছেন। মহাভারত অনুসারে নাগগণ এবং গরুড় এই দেবীকে পূজা করার পর তাদের দীর্ঘদিনের বিরোধের সমাধান হয়।

ষোড়শ শতাব্দীতে পর্তুগীজ শাসকরা খৃস্টানধর্ম প্রচারের উদ্দ্যেশে শ্রীলঙ্কা ও দক্ষিণ ভারতের অন্যান্য হিন্দু মন্দিরের মত এটিও ভেঙ্গে দেন ৷ পরে এটিকে আবার নির্মাণ করা হয় ৷[3]

আইকনোগ্রাফি

লঙ্কেশ্বরী দেবী শঙ্করী ত্বং চতুর্ভুজা । কৈকষীনন্দনইষ্টা বরদাভয়পাণিনী । উর্ধ্বে অঙ্কুশহস্তভ্যা বামে নাগপাশঞ্চ তথা । হেমাঙ্গদেহকান্তা বিশালস্তনযুগলশোভিতা । প্রচণ্ডেদৈত্যদলনীরাবণইষ্টা মহেশ্বরী । জানকিরূপেণ ত্বং হি দশাননমর্দিনী।।

অর্থ :- ইনি লঙ্কার দেবী চার-বাহুযুক্ত দেবী শঙ্করী। তিনি রামের প্রিয় এবং বরাভয় ধারিণী । তিনি উপরে তার হাতে একটি অঙ্কুশ এবং বাম হাতে একটি সাপের দড়ি ধরেছিলেন। তিনি একটি সোনালী শরীর এবং বৃহৎ স্তন একটি জোড়া সঙ্গে সুন্দর ছিল. দেবী মহেশ্বরী । জানকী রূপে তুমি দশ মুখের বিনাশকারী।

পূজা

মন্দিরে প্রায় ১৫ জন পুরোহিত আছেন যারা দৈনিক পূজা করেন। তামিলকম অন্যান্য সব শিব মন্দিরের মতো পুরোহিতরা ব্রাহ্মণ বর্ণের শৈবায়েত আদিশৈব সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত। পুরোহিতরা মন্দিরের উত্তর-পূর্ব এলাকায় থাকেন। মন্দিরে প্রতিদিন ছয়বার পুজোর সময়সূচী রয়েছে । প্রত্যেকবার চারটি আচার রয়েছে । যেমন- অভিষেক (পবিত্র স্নান), অলঙ্গারাম (সাজানো), নৈবেদ্যম ( নৈবেদ্য দান) এবং শ্রী নাগাপুশানি (ভুবনেশ্বরী) আম্মান এবং দেবীর ভৈরব শ্রীনয়ীনর স্বা‌মী উভয়ের জন্য দীপা আরদানাই (প্রদীপ জ্বালানো) হয়। পূজার সময় নাদশ্বরম (পাইপ যন্ত্র) এবং টাভিল (পারকিউশন যন্ত্র) সহ সঙ্গীতের মাধ্যমে পুরোহিতদের দ্বারা বেদের ধর্মীয় নির্দেশাবলী মেনে পূজা করা হয় এবং মন্দিরে উপাসকরা দেবদেবীকে প্রণাম করে । মন্দিরের রাস্তা একটি বিশাল মণ্ডল (পবিত্র বৃত্তের প্যাটার্ন) গঠন করে যার পবিত্র বৈশিষ্ট্য ঘড়ির কাঁটার মত ডানদিকে কেন্দ্রীয় মন্দির প্রদক্ষিণকালে সক্রিয় হয় ।

উৎসব

মন্দিরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উৎসব হল ১-দিন ব্যাপী মহোস্তবম (তিরুভিঝা) যা তামিল আনি মাসে (জুন/জুলাই) পালিত হয়। এই সময়ের মধ্যে, স্বর্ণ রথোলসভম ("মাঞ্জা তিরুভিঝা" বা স্বর্ণরথ উৎসব), রথলসভম ("থের তিরুভিঝা" বা রথ উৎসব) এবং পুংগানাম ("থেপা থিরুভিঝা" বা ভাসমান উৎসব) প্রভৃতি। প্রধান হিন্দু উৎসব যেমন নবরাত্রি এবং শিবরাত্রিতে এখানে হাজার হাজার ভক্ত আসে । তামিলকমের অধিকাংশ শক্তি মন্দিরের মতো, তামিল মাস আদি (জুলাই -আগস্ট) এবং থাই (জানুয়ারি -ফেব্রুয়ারি) এর শুক্রবার এই মন্দিরে বিশেষ পূজা হয় । আদি পুরাম, যেদিন পার্বতী বয়সন্ধিকালে পৌঁছান সেদিন তিনি তার সমস্ত ভক্তদের মা হয়েছিলেন বলে এই মন্দিরে সেদিন প্রচুর ভক্ত আসে।

তথ্যসূত্র

  1. Expeditions, Ceylon। "Nagapooshani Amman Temple Nainativu"Ceylon Expeditions (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৮-২৮
  2. বেনীমাধব শীলের ফুল পঞ্জিকা
  3. লোনলি প্ল্যানেটঃ শ্রীলঙ্কা
This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.