নবদ্বীপ
নবদ্বীপ ধাম ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের নদিয়া জনপদের একটি সুপ্রাচীন ঐতিহ্যবাহী শহর ও পৌরসভা এলাকা। নবদ্বীপ চৈতন্য মহাপ্রভুর জন্মস্থান ও সন্ন্যাসপূর্ব লীলাক্ষেত্রের জন্য বিখ্যাত। নবদ্বীপ পৌরসভা ১৮৬৯ সালে স্থাপিত। বাংলায় সেন রাজাদের আমলে (১১৫৯ - ১২০৬) নবদ্বীপ ছিল রাজধানী। ১২০২ সালে রাজা লক্ষ্মণসেনের সময় বখতিয়ার খলজি নবদ্বীপ জয় করেন,[1] যা বাংলায় মুসলিম সাম্রাজ্যের সূচনা করে। মহাপ্রভু চৈতন্যদেবের সময়ে বাসুদেব সার্বভৌম, রঘুনাথ শিরোমণি, স্মার্ত রঘুনন্দন প্রমুখ এবং পরবর্তীতে কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশ, বুনো রামনাথ প্রমুখের পাণ্ডিত্যে তৎকালীন সময় থেকে নবদ্বীপ সংস্কৃতচর্চা ও বিদ্যালাভের পীঠস্থান হয়ে ওঠে। নবদ্বীপ ছিল সেই সময়ে বিদ্যালাভের পীঠস্থান ও একে বলা হত বাংলার অক্সফোর্ড।[2] পশ্চিমবঙ্গ হেরিটেজ কমিশন ২০১৯ খ্রিস্টাব্দে নবদ্বীপকে ঐতিহ্যবাহী বা হেরিটেজ শহর হিসেবে ঘোষণা করে।[3]
নবদ্বীপ প্রাচ্যের অক্সফোর্ড | |
---|---|
ঐতিহ্যবাহী শহর | |
ডাকনাম: চৈতন্য মহাপ্রভুর জন্মস্থান মন্দিরের শহর | |
নবদ্বীপ | |
স্থানাঙ্ক: ২৩.৪২° উত্তর ৮৮.৩৭° পূর্ব | |
দেশ | ভারত |
রাজ্য | পশ্চিমবঙ্গ |
বিভাগ | প্রেসিডেন্সি |
জেলা | নদিয়া |
প্রতিষ্ঠিত | ১০৬৩ (খ্রিস্টাব্দ) |
নামকরণের কারণ | নতুন দ্বীপ |
সরকার | |
• ধরন | পৌরসভা |
• শাসক | নবদ্বীপ পৌরসভা |
আয়তন | |
• ঐতিহ্যবাহী শহর | ৯৮.০১ বর্গকিমি (৩৭.৮৪ বর্গমাইল) |
উচ্চতা | ১৪ মিটার (৪৬ ফুট) |
জনসংখ্যা (২০১১) | |
• ঐতিহ্যবাহী শহর | ১,২৫,৫৪৩ |
• জনঘনত্ব | ১,৩০০/বর্গকিমি (৩,৩০০/বর্গমাইল) |
• মহানগর | ১,৭৫,৪৭৯ |
বিশেষণ | নবদ্বীপবাসী |
ভাষা | |
• সরকারী | বাংলা, ইংরেজি |
সময় অঞ্চল | ভারতীয় প্রমাণ সময় (ইউটিসি+৫:৩০) |
পিন | ৭৪১৩০২ |
টেলিফোন ডোক | ০৩৪৭২ |
যানবাহন নিবন্ধন | ডব্লুবি ৫২ (WB 52) |
লোকসভা কেন্দ্র | রানাঘাট |
বিধানসভা কেন্দ্র | নবদ্বীপ |
ওয়েবসাইট | nabadwipmunicipality.in |
নামকরণ
নবদ্বীপ নামের উৎস সম্বন্ধে নানা ধারণা প্রচলিত আছে। নবদ্বীপ ও নদিয়া এই দুটি নামই এই জনপদে প্রচলিত ছিল। এই শহর বহুবার বৈদেশিক আক্রমণের শিকার হওয়ায় উচ্চারণের বিকৃতির মাধ্যমে নদিয়া ও নবদ্বীপ দুটি পৃথক নামের সৃষ্টি হয়। নবদ্বীপ ভাষান্তরের কারণে বিভিন্ন বিদেশী লেখকের লেখনীতে 'নূদীয়া' 'নওদিয়া' বা 'নদীয়াহ' নামে প্রকাশ পেয়েছে। রজনীকান্ত চক্রবর্তী স্পষ্ট জানিয়েছেন, "মিনহাজউদ্দিন সিরাজির গ্রন্থে নবদ্বীপকে 'নওদিয়ার' বলা হইয়াছে। নওদিয়ার শব্দে নূতন দেশ।"[4] নূতন দেশ বলতে এখানে গঙ্গাবিধৌত পলিসঞ্জাত নতুন দ্বীপকেই বোঝান হয়েছে।
কবিকর্ণপুর তাঁর চৈতন্য চরিতামৃতাম্ মহাকাব্যে নবদ্বীপকে নবীন দ্বীপং বলে উল্লেখ করেছেন।[5] ষোড়শ শতাব্দীতে নুলো পঞ্চানন বলেছেন, কহেন রাজা কাহার কথা অভিলাশ। নব নব দ্বীপপুঞ্জ নবদ্বীপে প্রকাশ।[6] লক্ষ্মণসেনের সমসাময়িক এডু মিশ্র নবদ্বীপ সম্বন্ধে বলেছেন, গঙ্গাগর্ভোস্থিত দ্বীপ দ্বীপপূঞ্জৈবর্হিধৃত। প্রতিচ্যাং যস্য দেশস্য গঙ্গাভাতি নিরন্তরম।[4]
নবদ্বীপ নামটির প্রথম উল্লেখ পাওয়া যায় কৃত্তিবাস ওঝার রামায়াণে।[7] তিনি অবশ্য নদিয়া এবং নবদ্বীপ দুটি নামই উল্লেখ করেছেন-
“ | গঙ্গারে লইয়া জান আনন্দিত হইয়া আসিয়া মিলিল গঙ্গা তীর্থ যে নদীয়া। সপ্তদ্বীপ মধ্যে সার নবদ্বীপ গ্রাম। একঅরাত্রি গঙ্গা তথা করিল বিশ্রাম।। |
” |
মৃত্যুঞ্জয় মণ্ডলের মতে, গঙ্গা গর্ভোত্থিত নতুন দ্বীপটি সংস্কৃতজ্ঞ পণ্ডিতদের সুসংবদ্ধ উচ্চারণে হয়েছিল ‘নবদ্বীপ’। পরে ত্রয়োদশ শতাব্দীর প্রারম্ভে বখতিয়ার খলজি নবদ্বীপ জয় করার পর ফার্সি-ভাষায় নবদ্বীপ অর্থে নতুন দ্বীপ কথাটির ভাষান্তর ঘটিয়ে ‘নদিয়া’ করেছেন মাত্র।[4] অধ্যাপক ড. ক্ষুদিরাম দাস ভাষা বিবর্তনের কথা উল্লেখ করে বলেছেন, "'নদীয়া' নবদ্বীপ শব্দের প্রাকৃত তদ্ভব রূপ। নবদ্বীপ-ণঅদ্দীপ-নদীঅ-নদীয়া"[8] এবং ড. সুকুমার সেন ''নবদ্বীপ>নদীয়া>ন'দে''-র উল্লেখ করেছেন।[9] ১২৫৫ খ্রিস্টাব্দে নদীয়া বিজয়ের স্মারক হিসেবে মুগীসউদ্দিন য়ুজবকের স্মারক রৌপ্য-মুদ্রায় 'নূদয়া' শব্দের প্রথম উল্লেখ পাওয়া যায়।[10] মিনহাজউদ্দিন সিরাজ ১২৬০ খ্রিস্টাব্দে ত্ববাকত-ই-নাসিরী গ্রন্থে 'নূদিয়াহ' নামটি প্রথম ব্যবহার করেন।[11]
অষ্টাদশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে নরহরি চক্রবর্তী (ঘনশ্যাম দাস) নবদ্বীপকে প্রথম নয়টি দ্বীপের সমষ্টিরূপে প্রচার করেন। নরহরি চক্রবর্তীর পূর্বে রচিত বিশাল বৈষ্ণব-সাহিত্যের কোথাও নবদ্বীপকে নয়টি দ্বীপের সমষ্টি বলা হয়নি। তিনিই প্রথম নয়টি স্থানকে দ্বীপ হিসাবে চিহ্নিত করে প্রচার করেন।[12]
নদিয়ার নামকরণ প্রসঙ্গে কান্তিচন্দ্র রাঢ়ী একটি কিংবদন্তির উল্লেখ করে লেখেন, ভাগীরথী তীরস্থ নবসৃষ্ট চরভূমিতে এক তান্ত্রিক ন’টি দিয়া বা প্রদীপ জ্বালিয়ে তন্ত্র-সাধানা করতেন। দূর থেকে দেখে লোকে এই দ্বীপটিকে ন’দিয়ার চর বলত। আর সেই থেকেই নাকি লোকমুখে ‘নদিয়া’ নামের প্রচলন হয়।[13]
ইতিহাস
নবদ্বীপের ইতিহাসের উল্লেখযোগ্য দৃষ্টান্ত সেন যুগ থেকে পাওয়া গেলেও বিভিন্ন ঐতিহাসিক পাল যুগে এবং শূরবংশে নবদ্বীপের উল্লেখ করছেন। সমসাময়িক লেখমালা ও পুঁথিপত্রে আদিশূরের উল্লেখ পাওয়া না যাওয়ায় অনেক ইতিহাসবিদ আদিশূরকে ঐতিহাসিক চরিত্র হিসেবে না মানলেও ঐতিহাসিক ভিনসেন্ট আদিশূরের অস্তিত্ব স্বীকার করেছেন।[14] ইংরেজ ঐতিহাসিক নবদ্বীপকে আদিশূরের রাজধানী বলে উল্লেখ করেছেন।[15]
সেন যুগ
সেন রাজারা নবদ্বীপকে ধর্মীয় রাজধানীতে রূপ দিয়েছিলেন। রাজশাহী জেলার দেওপাড়া প্রস্তর ফলক থেকে জানা যায়, কর্ণাটক নিবাসী রাজা সামন্ত সেন তার প্রজা ও জমিদারদের দ্বারা পরাভূত হলে শেষ বয়সে গঙ্গা-পুলিনে বাস করেন। বিশিষ্ট ইতিহাসবিদ হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর মতে, সামন্ত সেন শেষ বয়সে ভাগীরথী তীরবর্তী নবদ্বীপে বাস করেন।[16] গৌড়ের পূর্বে, লক্ষ্মণসেন ও বল্লালসেনের সময়ে নবদ্বীপ সেন রাজাদের রাজধানী ছিল। ১১৫৯ থেকে ১২০৬ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত তারা বাংলায় রাজত্ব করেন। নবদ্বীপ সংলগ্ন বামনপুকুর অঞ্চলে সেন-স্মৃতি বিজড়িত বল্লাল ঢিপি ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ দ্বারা সংরক্ষিত করা হয়েছে।[17] লক্ষ্মণসেনের রাজত্বকালে ১২০২ খ্রিস্টাব্দে বখতিয়ার খলজি নবদ্বীপ আক্রমণ[18] ও লুটপাট করেন এবং লক্ষ্মণসেনকে পরাজিত করে বাংলায় মুসলিম শাসনের সূচনা করে। সেইসময় নবদ্বীপের সমৃদ্ধি বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। মুসলিম শাসনকালে বাংলা তথা নবদ্বীপের বিভিন্ন মন্দির-সুবর্ণবিহার ও প্রতিমা ধংস করা হয়।[19]
চৈতন্য যুগ
চৈতন্য মহাপ্রভুর জন্ম পঞ্চদশ শতাব্দীর একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। চৈতন্য মহাপ্রভুর আবির্ভাবে নবদ্বীপে বৈষ্ণব সংস্কৃতি সুপ্রতিষ্ঠিত হয়। ঐতিহাসিক যজ্ঞেশ্বর চৌধুরীর মতে, ১৭৭৭ থেকে ১৭৮২ সালের মধ্যে ভাগীরথী নদীর গতি বদলানোর জন্য চৈতন্যের জন্মস্থান জলের অতলে তলিয়ে গেছে। মহাপ্রভুর জন্মের পূর্ব থেকেই জালালুদ্দীন ফতেহ্ শাহের (১৪৮১-৮৭) রাজত্বকালে নবদ্বীপে রাজভয় উপস্থিত হয়েছিল। শাসক সমাজ ও ব্রাহ্মণ সমাজ নবদ্বীপে বৈষ্ণব সংস্কৃতির প্রসারে বাধা সৃষ্টি করে।[20] রাজ-অত্যাচারের কারণে তৎকালীন সময়ে বহু ব্রাহ্মণ-পণ্ডিত ও সাধারণ মানুষকে নবদ্বীপ ত্যাগ করতে হয়। তবে তৎকালীন নবদ্বীপের শাসক চাঁদ কাজী বৈষ্ণব সমাজকে নাম-সংকীর্তন বন্ধের আদেশ জারি করলে মহাপ্রভু তাঁর পার্ষদদের সঙ্গে কাজী বাড়ি গিয়ে কাজী দলন বা উদ্ধার করেন, যা ভারতের ইতিহাসে সত্যের প্রতিষ্ঠায় প্রথম আইন অমান্য আন্দোলনের দৃষ্টান্ত।[21] চৈতন্য ও তৎপরবর্তী সময়ে নবদ্বীপে বিভিন্ন পণ্ডিত-সাধক-বিদ্যালঙ্কার এবং সংস্কৃত পণ্ডিতেরা জন্মগ্রহণ করেন। চৈতন্যের সময়ে বাসুদেব সার্বভৌম, রঘুনাথ শিরোমণি, স্মার্ত রঘুনন্দন প্রমুখ এবং পরবর্তীতে কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশ, বুনো রামনাথ প্রমুখের পাণ্ডিত্যে তৎকালীন সময় থেকে নবদ্বীপ সংস্কৃতচর্চা ও বিদ্যালাভের পীঠস্থান হয়ে ওঠে। নদিয়ারাজ রুদ্র রায়ের সময় নবদ্বীপে চার হাজার ছাত্র এবং ছয়শো অধ্যাপক অধ্যাপনা করতেন।[22]
পরবর্তী শতক
বুনো রামনাথ, শঙ্কর তর্কবাগীশ প্রমুখ নৈয়ায়িক অষ্টাদশ শতকে ন্যায়চর্চায় নবদ্বীপের নাম উজ্জ্বল করেছিলেন। নদিয়া রাজপরিবারের মহারাজ রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের সময়ে নবদ্বীপে শক্তি পূজার প্রসার ঘটে। রাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায় এবং পরবর্তীতে রাজা গিরীশচন্দ্রের সময়ে নবদ্বীপে শাক্তরাস যাত্রার জনপ্রিয়তা ও জৌলুস বৃদ্ধি পায়। এই সময়ে নবদ্বীপে বিভিন্ন মন্দির-প্রতিমা প্রতিষ্ঠিত হয়।[23]
ভৌগোলিক অবস্থান
নবদ্বীপ ভারতের পূর্বাঞ্চলে ২৩.৪২° উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৮.৩৭° পূর্ব দ্রাঘিমাংশে অবস্থিত গঙ্গার পশ্চিম তীরবর্তী শহর।[24] সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে শহরের গড় উচ্চতা ১৪ মিটার বা ৪৬ ফুট। নবদ্বীপ শহরের পূর্বপ্রান্ত দিয়ে প্রবাহিত ভাগীরথীর সঙ্গে খড়ে বা জলঙ্গী নদীর সংযোগ ঘটেছে।[25] পূর্বে নবদ্বীপ ভাগীরথীর পূর্বে অবস্থিত হলেও নদীর ভাঙ্গন ও ভূমিকম্পের কারণে ক্রমাগত নদীর প্রবাহপথ পরিবর্তন ঘটায় বর্তমানে নবদ্বীপ শহর ভাগীরথীর পশ্চিম তীরে অবস্থিত।
নদ-নদী
নবদ্বীপ ও তৎসংলগ্ন গাঙ্গেয় তীরবর্তী অঞ্চল নদীর প্রবাহ পরিবর্তনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ভূপ্রাকৃতিক ভারসাম্য বজায় রেখেছে। সুপ্রাচীনকালে ভাগীরথী মুর্শিদাবাদ প্রদেশ বা নবদ্বীপ পর্যন্ত প্রবাহিত হয়ে সমুদ্রে মিলিত হয়েছিল বলে অনেক ইতিহাসবিদ মনে করেন।[26] নবদ্বীপের প্রধান নদী ভাগীরথীর সঙ্গে জলঙ্গী নদী মহেশগঞ্জ-গাদিগাছার উত্তর সীমায় মিলিত হয়েছে।[27] সেন আমলে ভাগীরথী নবদ্বীপের পশ্চিমে প্রবাহিত ছিল। পরবর্তীকালে কাটোয়া থেকে কালনা পর্যন্ত ভাগীরথীর আঁকাবাঁকা ধারা বারংবার গতি পরিবর্তন করে।[28] ১৬৬৬ খ্রিস্টাব্দের তাভার্ণিয়ের ভ্রমণ বৃত্তান্ত অনুসারে তৎসময়ে জোয়ারের জল নবদ্বীপ পর্যন্ত আসতো।[29] ১৬৬০ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত ভেন-ড্রেন-ব্রুকের মানচিত্রে নবদ্বীপের পশ্চিমবাহিনী ভাগীরথীর আদি খাল চিহ্নিত আছে। ভাগীরথীর পূর্বে অবস্থিত বিস্তীর্ণ এই অঞ্চলের উত্তর-পশ্চিম ও দক্ষিণ সীমা বরাবর অলকানন্দার একটি ধারা প্রবাহিত ছিল, যা ১৬৬০-৭৯ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে বিলুপ্ত হয়। ১৭৬২ খ্রিস্টাব্দ থেকে ভাগীরথীর ধারাটি পূর্ববাহিনী হয়ে প্রবাহিত হতে শুরু করে এবং জলঙ্গীর ধারাটি স্বরূপগঞ্জের কাছে ভাগীরথীর সঙ্গে মিলিত হয়। নবদ্বীপের পশ্চিমের পরিত্যক্ত খাতটি বর্তমানে মরিগঙ্গা বা পোলতার খাল নামে পরিচিত। এই খাতটি নবদ্বীপ তথা নদিয়া জেলার পশ্চিম সীমা নির্ধারণ করে। ১৮৫৩-৬০ খ্রিস্টাব্দের নবদ্বীপ, শান্তিপুর ও কৃষ্ণনগর অঞ্চলের দারোগা গিরিশচন্দ্র বসু বলেছেন[30]-
“ | বর্তমান নবদ্বীপের উত্তর ও পূর্বদিকে ভাগীরথী, পশ্চিমে পোলতার বিল, উহা পূর্বে নিশ্চয়ই ভাগীরথী ছিল, এই বিল পশ্চিম হইতে দক্ষিণ দিক দিয়া পুনরায় ভাগীরথীর সঙ্গে মিলিত হয়। |
” |
ভাগীরথীর গতি পরিবর্তনে নবদ্বীপে অনেক পুকুর, বিল, খাত দেখতে পাওয়া যায় বলে নবদ্বীপকে বলা হয়-বাঁশ বাসক ডোবা, তিন নদের শোভা।।[lower-alpha 1][31][32][33]
জলবায়ু
নবদ্বীপের জলবায়ু "ক্রান্তীয় সাভানা" প্রকৃতির ("কোপেন জলবায়ু শ্রেণিবিভাগ" অনুসারে Aw) হয়। গ্রীষ্মকাল, অর্থাৎ এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত আবহাওয়া উষ্ম থাকে এবং তাপমাত্রা সর্বোচ্চ ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে সর্বনিম্ন ২৬ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড হয়। গ্রীষ্মকালে আর্দ্রতার স্তর বৃদ্ধি পায়। জুন থেকে শুরু করে সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে বর্ষাকাল বিরাজ করে। নবদ্বীপে প্রতিবছর গড়ে ১২৫ দিন বৃষ্টিপাত হয় এবং বার্ষিক ১,৪৬৯ মিমি (৫৭.৮ ইঞ্চি) বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে। শীতকালে তাপমাত্রা গড়ে সর্বোচ্চ ২৬° থেকে সর্বনিম্ন ১২° হয়ে থাকে। গড় আপেক্ষিক আর্দ্রতা ৫২%, যার মধ্যে মার্চ মাসে সর্বনিম্ন আদ্রতা থাকে। আবহাওয়া মনোরম প্রকৃতির হলেও, গ্রীষ্ম এবং শীতকালে জলবায়ুর তীব্রতা ঘটে। গ্রীষ্মের শুরুতে প্রায়শই ঝড় ও বজ্রবিদ্যুৎ সহ বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে। এই ধরনের ঝড়বৃষ্টি প্রকৃতিগতভাবে ঘটে, যার স্থানীয় নাম কালবৈশাখী। অত্যধিক বৃষ্টির প্রভাবে এবং ভাগীরথী নদীর জলস্তর বৃদ্ধির কারণে এখানে প্রায়শই বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়।[34]
নবদ্বীপ-এর আবহাওয়া সংক্রান্ত তথ্য | |||||||||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
মাস | জানু | ফেব্রু | মার্চ | এপ্রিল | মে | জুন | জুলাই | আগস্ট | সেপ্টে | অক্টো | নভে | ডিসে | বছর |
সর্বোচ্চ গড় °সে (°ফা) | ২৬ (৭৯) |
২৯ (৮৪) |
৩৪ (৯৩) |
৩৭ (৯৯) |
৩৭ (৯৯) |
৩৫ (৯৫) |
৩৩ (৯১) |
৩৩ (৯১) |
৩৩ (৯১) |
৩৩ (৯১) |
৩১ (৮৮) |
২৭ (৮১) |
৩২ (৯০) |
সর্বনিম্ন গড় °সে (°ফা) | ১২ (৫৪) |
১৫ (৫৯) |
২০ (৬৮) |
২৪ (৭৫) |
২৫ (৭৭) |
২৬ (৭৯) |
২৫ (৭৭) |
২৫ (৭৭) |
২৫ (৭৭) |
২৩ (৭৩) |
১৮ (৬৪) |
১৩ (৫৫) |
২১ (৭০) |
বৃষ্টিপাতের গড় মিমি (ইঞ্চি) | ১ (০.০) |
২ (০.১) |
৩ (০.১) |
৪ (০.২) |
১০৭ (৪.২) |
২৪৩ (৯.৬) |
৩৭৭ (১৪.৮) |
৩২১ (১২.৬) |
২৮০ (১১.০) |
১২৯ (৫.১) |
১ (০.০) |
১ (০.০) |
১,৪৬৯ (৫৭.৭) |
বৃষ্টিবহুল দিনগুলির গড় | ৪ | ৩ | ৪ | ৬ | ১২ | ১৮ | ২৩ | ২২ | ১৮ | ১১ | ৩ | ১ | ১২৫ |
আপেক্ষিক আদ্রতার গড় (%) | ৬৩ | ৫৫ | ৫২ | ৫৮ | ৬৫ | ৭৫ | ৮৩ | ৮৩ | ৮১ | ৭৪ | ৬৬ | ৬৫ | ৬৮ |
দৈনিক সূর্যালোক ঘণ্টার গড় | ৬.৬ | ৭.১ | ৭.৩ | ৭.৮ | ৭.৩ | ৪.১ | ৩.০ | ৩.৪ | ৩.৯ | ৫.৯ | ৬.৪ | ৬.৬ | ৫.৮ |
উৎস: |
অর্থনীতি
নবদ্বীপের অর্থনৈতিক ভিত্তি হিসেবে কাঁসা-পিতল, তাঁতশিল্প, শাঁখারী শিল্প, মৃৎশিল্প, মিষ্টান্ন শিল্প, স্বর্ণশিল্প, ঘড়ি শিল্প ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা অর্জন করেছে। চৈতন্যদেবের সময়কাল থেকেই নবদ্বীপে তন্তুবায়, মিষ্টান্ন শিল্পী, কাংসব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের অবস্থান লক্ষ্য করা যায়। বৃন্দাবন দাস লিখেছেন:
“ | নবদ্বীপ সম্পত্তি কে বর্ণিবারে পারে। একো গঙ্গা ঘাটে লক্ষ স্নান করে॥[35] |
” |
তাঁত শিল্পের পাশাপাশি শঙ্খশিল্পের প্রচলনেরও উল্লেখ পাওয়া যায়।[36] নবদ্বীপ-সহ কাটোয়া ও বিষ্ণুপুরেও শাঁখা তৈরি হয়।[37] বর্তমানে নবদ্বীপের শ্রীবাসঅঙ্গন ও ওলাদেবীতলার শিল্পীরা এই শিল্পের সঙ্গে যুক্ত আছেন। বৈষ্ণব ধর্মকেন্দ্রিক তুলসীর মালা, নামাবলী ও মৃদঙ্গশিল্প নবদ্বীপে খ্যাতি অর্জন করেছে। চৈতন্যদেবের সময়কাল থেকেই নবদ্বীপ সুতির কাপড়ের উপর হরে কৃষ্ণ বলি, কোশাকুশি, রাধাকৃষ্ণ ইত্যাদি অঙ্কিত নামাবলী উৎপাদনের মূল কেন্দ্রে পরিণত হয়।[38] স্বর্ণশিল্পী শচীনন্দন গোস্বামী নবদ্বীপ প্যাক কো-অপারেটিভ ইন্ডাস্ট্রিয়াল মাল্টিপারপাস সোসাইটি গঠন করেন, যা কৃত্রিম অলঙ্কার প্রস্তুতকরণে অগ্রগণ্য ছিল।[39] এছাড়াও বিড়ি শিল্প, ইট শিল্প, মুদ্রণ শিল্প, পোড়ামাটির কাজ ইত্যাদি নবদ্বীপের গোষ্ঠী ভিত্তিক শিল্প হিসেবে অর্থনৈতিক ভারসাম্য বজায় রেখে চলেছে। এখামে শিল্পভিত্তিক শাঁখারী পাড়া, কাঁসারি পাড়া, বেনে পাড়া ইত্যাদি পাড়া গড়ে উঠেছে।
কাঁসা-পিতল শিল্প
নদিয়া জেলার নবদ্বীপ সুদূর অতীতকাল থেকেই কাঁসা পিতল শিল্পের ঐতিহ্যের জন্য বিখ্যাত।[40] ১৭৭০ খ্রিস্টাব্দে বিজয় রাম বিশারদের রচিত তীর্থমঙ্গল কাব্যে নবদ্বীপের স্বর্ণশিল্প, শঙ্খশিল্পের সঙ্গে কাঁসা-পিতল শিল্পের সুস্পষ্ট উল্লেখ পাওয়া যায়-
“ | সুবর্ণ-বণিক কত শাঁখারি কাঁসারি। বাজার শড়কে কতো মুদী সারি সারি।।[41] |
” |
এখানকার কাঁসার রেকাবি ও ডিস বিখ্যাত, এছাড়াও নবদ্বীপের ঠাকুর মন্দিরের পিতলের সিংহাসন, প্রদীপগাছা, কলসি ঘটি, পিতলের সাজানো শৌখিন নৌকা, চালন, কুলো, কলার মাঝ পাতা, আমের সরা, ফুলের সাজি ইত্যাদির খ্যাতি বর্তমান।[42] এখানে কাঁসারী পাড়া নামক একটি অঞ্চলে অতীতে কাঁসারিগণ বসবাস করতেন, এখনও এই কাঁসারি পাড়া বর্তমান। তবে বর্তমানে নবদ্বীপেরই বিভিন্ন অঞ্চলে এনারা ছড়িয়ে পরেছেন। ঊনবিংশ শতাব্দীতে বিখ্যাত কাংসব্যবসায়ী গুরুদাস দাসের সময়ে নবদ্বীপের কাঁসা-পিতল শিল্প জগৎজোড়া খ্যাতি অর্জন করে।[43] বাংলার কলকাতা, দাঁইহাট, সিরাজগঞ্জ, ধুলিয়ান এবং বাংলার বাইরে বিহার, উড়িষ্যা ও ভারতের অন্যান্য প্রসিদ্ধস্থানে তাঁর প্রায় ৮০০ টি ব্যবসকেন্দ্র ছিল। কাংসব্যবসায় তিনি কোটিপতি হয়ে উঠেছিলেন।[44] তাঁর সময়ে রাত্রি চার ঘটিকা থেকে রাত্রি এক প্রহর পর্যন্ত নবদ্বীপের কাঁসারি পাড়া থেকে কাংসকারের হাতুড়ির শব্দ শোনা যেত। নবদ্বীপের মনিপুর রাজবাড়িতে মণিপুরী তীর্থযাত্রীরা এলে নবদ্বীপ থেকে কাঁসা-পিতলের সামগ্রী কিনে নিয়ে যায়।
তাঁত শিল্প
কাঁসা ছাড়াও বস্ত্রশিল্পেরও সুনাম রয়েছে। নবদ্বীপের তাঁত শিল্পের বিশেষ সমাদর রয়েছে। নবদ্বীপের ঢাকাই জামদানী অর্থনৈতিক ভিত্তি ও ঐতিহ্য বহন করে চলেছে।[27][45] চৈতন্য সমসাময়িক সময়েও নবদ্বীপে তাঁত শিল্পের উল্লেখ পাওয়া যায়। নবদ্বীপের তন্তুবায় সম্প্রদায় সম্পর্কে চৈতন্য ভাগবত থেকে জানা যায়[36]-
“ | উঠিলেন প্রভু তন্তুবায়ের নগরে। দেখিয়া সম্ভ্রমে তন্তুবায় নমস্কারে।। ভাল বস্ত্র আন প্রভু বলয়ে বচন। তন্তুবায় বস্ত্র আনিলেন সেই ক্ষণে।। |
” |
নবদ্বীপে বসবাসকারী তাঁত শিল্পীগণ যে অগ্রগণ্য বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের মতোই খ্যাতি অর্জন করেছিল তা নবদ্বীপের বিভিন্ন জাতির ব্যক্তিদের সম্পর্কে প্রচলিত ছড়া- নবদ্বীপে শতেক জাতি, বামুন কয়েত গোঁসাই তাঁতি। থেকেই তা স্পষ্ট বোঝা যায়। ইংরেজ শাসনকালে নবদ্বীপে সুতোর কল স্থাপিত হয়। এখানকার তাঁতে তৈরি নদিয়া-ধুতি, শাড়ি, লুঙ্গি নামাবলী, গামছা ইত্যাদির যথেষ্ট সমাদর ছিল। দেশভাগের পর ঢাকা থেকে অনেক দক্ষ তাঁতশিল্পী এই অঞ্চলে চলে এসে বসতি স্থাপন করেন। প্রধানত ঢাকা ও পাবনা থেকে আগত বসাক ও দেবনাথ সম্প্রদায়ের তাঁতিরা সাধারণ চল্লিশ সুতোর মোটা কাপড়ের পাশাপাশি এখানে জামদানী ও টাঙ্গাইল শাড়ীর বয়ন শুরু করেন। সরকারি উৎসাহ ও অর্থসাহায্যে তারা তাদের বংশগত পেশার পুনরুজ্জীবন ঘটান এবং এই অঞ্চলের অসামান্য তাঁত শিল্পেরও নবজন্ম ঘটে।[42] স্বাধীনতার পর থেকে আটের দশক পর্যন্ত নবদ্বীপের তাঁতের শাড়ির জগৎজোড়া খ্যাতি ছিল। ১৯৮৭-৮৮ খ্রিস্টাব্দের গণনা অনুযায়ী নবদ্বীপ পৌর এলাকায় প্রায় ১৬০০০ তাঁত ছিল।[46] তাঁতশিল্পীদের বাঁচানোর তাগিদে এখানে নবদ্বীপ থানা কো-অপারেটিভ মার্কেটিং এণ্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল সোসাইটি লিমিটেড[47] প্রতিষ্ঠা করে যা বর্তমানে নবদ্বীপ তাঁতকাপড় হাট নামে পরিচিত। সপ্তাহের বৃহস্পতিবার সমগ্র দিন ও শুক্রবারের শুধুমাত্র সকালে হাট থেকে তাঁত বস্ত্র কেনাবেচা হয়।[48] তাঁতের কাপড়ের পাইকারি কেনাবেচার জন্য নবদ্বীপ তাঁত কাপড় হাট একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান। হ্যান্ডলুম এবং টেক্সটাইল অধিদপ্তর প্রকাশিত ২০০২ খ্রিস্টাব্দের পরিসংখ্যান অনুযায়ী নদিয়া জেলার হাটগুলো থেকে প্রতি সপ্তাহে প্রায় ৩.২০ কোটি টাকার কেনাবেচা হতো।[49] নবদ্বীপের তাঁতিরা ঐতিহ্যবাহী পদ্ধতিতেই তাঁত বুনতো।[50] বিষ্ণুপুরসহ নদিয়ার নবদ্বীপে বাংলার ঐতিহ্যবাহী তাঁত শিল্পের আধিপত্য এবং প্রধান বিপণন কেন্দ্র ছিল।[51] এছাড়াও কমলকৃষ্ণ ভট্টাচার্য ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দে নবদ্বীপ কুটির শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন যা বর্তমানে খাদি গ্রামদ্যোগ কমিশন দ্বারা পরিচালিত হয়।[42]
মিষ্টান্ন শিল্প
চৈতন্যসমসাময়িক সময়ে নবদ্বীপে পরমেশ্বর মোদক নামে একজন মিষ্টান্ন প্রস্তুতকারীর নাম পাওয়া যায়, যিনি চৈতন্যদেবের বাড়ির সমীপে বাস করতেন। নবদ্বীপের লাল দই বা ক্ষীর দই বাংলার একটি জনপ্রিয় মিষ্টান্ন। ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দের দিকে নবদ্বীপের জনৈক কালিপদ মোদক, মতান্তরে কালী ঘোষ, এই দই প্রথম প্রস্তুত করেন। লাল দই ছাড়াও নবদ্বীপের মিষ্টান্ন গুনগত মানের দিক থেকে খ্যাতি অর্জন করেছে।[52][53] মিষ্টান্ন প্রস্তুতির গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ ক্ষীর (বিশেষত খোয়া ক্ষীর)-এর জন্য নবদ্বীপের খ্যাতি বর্তমান।[lower-alpha 2][54]
জনপরিসংখ্যান
নবদ্বীপ মূলত বাঙালি হিন্দু সংস্কৃতির পীঠস্থান। নবদ্বীপ পৌরসভা স্থাপনের পর ১৮৭২ খ্রিস্টাব্দে নবদ্বীপে প্রথম জনগণনা শুরু হয়। সেই সময়ে নবদ্বীপে ৮৫২০ জন হিন্দু, ৩৩৫ জন মুসলিম ও ৮ জন খ্রিস্টান ছিল। ১৮৯১ ও ১৯০১ খ্রিস্টাব্দের জংগণনায় ব্যতিক্রমীভাবে নবদ্বীপের জনসংখ্যা হ্যাস পায়। ১৮৮৪, ১৮৯৬ ও ১৯০০ খ্রিস্টাব্দে নবদ্বীপে কলেরার প্রাদুর্ভাব দেখা দিলে এবং ১৯৮৯৯ ও ১৯০০ খ্রিস্টাব্দে প্লেগের প্রকোপে বহু লোকের মৃত্যু হয়। ১৮১৭ খ্রিস্টাব্দে নদিয়া জেলায় প্রথম কলেরার প্রাদুর্ভাব দেখা যায়।[55] ফলে ১৯০১ খ্রিস্টাব্দের জংগণনায় জনসংখ্যা লক্ষণীয়ভাবে হ্রাস পায়। পরবর্তীতে দেশভাগের পর নবদ্বীপের জনসংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেতে থাকে। পূর্ববঙ্গ থেকে কয়েক হাজার নাথ সম্প্রদায়ভুক্ত তাঁতিরা এখানে এসে বসতি স্থাপন করে।[56] ১৯৪১ খ্রিস্টাব্দের জনগণনা অনুযায়ী নবদ্বীপ পৌরাঞ্চলের জনসংখ্যা ছিল ৩০,৫৮৩ জন। কিন্তু পরবর্তী ৩০ বছরের মধ্যে, ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে এখানকার জনসংখ্যা ২০৮.০৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে হয় ৯৪,২০৪ জন। দেশভাগের পর তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান থেকে ২৬,৫৭৫ জন লোক নবদ্বীপে আসে।[57]
|
|
| ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
সূত্র: ভারতের জনপরিসংখ্যান †১৮৮৪ থেকে ১৯০০ সালের মধ্যে প্রাদুর্ভাব হওয়া কলেরা, প্লেগ ও দুর্ভিক্ষের কারণে ১৯০১ সালের জনগণনায় জনসংখ্যা হ্যাস পায়। ††১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে দেশভাগের ফলে আগত শরণার্থীদের জন্য ১৯৫১ খ্রিস্টাব্দের জনগণনায় বিশাল প্রভাব পরে। |
ভারতের ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুসারে নবদ্বীপ শহরের জনসংখ্যা হল ১,৭৫,৪৭৪ জন।[58] এর মধ্যে পুরুষ ৫১.৭৫% এবং নারী ৪৮.২৫%। এই শহরের জনসংখ্যার ৭.৪৪% হল ৬ বছর বা তার কম বয়সী। সাক্ষরতার হার ৮৭.৫৭%। ২০০১ সালের আদমশুমারি অনুসারে নবদ্বীপ শহরের জনসংখ্যা ছিল ১,১৫,০৩৬ জন। পুরুষদের মধ্যে সাক্ষরতার হার ৮০% এবং নারীদের মধ্যে এই হার ৭০%। সারা ভারতের সাক্ষরতার হার ৫৯.৫%, তার চাইতে নবদ্বীপের সাক্ষরতার হার বেশি।
ধর্মবিশ্বাস
নবদ্বীপের সংখ্যাগরিষ্ঠ ধর্মীয় সম্প্রদায় হল হিন্দু (মোট জনসংখ্যার ৯৮.৯৭%)। নবদ্বীপে বসবাসকারী ইসলাম ধর্মে, ০.৭৯ %, খ্রিস্ট ধর্মে ০.০৪ %, শিখধর্মে ০.০১ % মানুষ বিশ্বাসী। এছাড়া অন্যান্য ধর্মে বিশ্বাসী ০.০১ % এবং বিবৃতি নেই এমন মানুষ ০.১৮ %।
শিক্ষাব্যবস্থা
নবদ্বীপ বঙ্গ সংস্কৃতি ও জ্ঞানচর্চার ঐতিহাসিক পীঠস্থান। সংস্কৃতচর্চার প্রাণকেন্দ্র নবদ্বীপে ভারতের বিভিন্ন প্রদেশ থেকে ছাত্রের আগমন ঘটতো। চৈতন্যদেবের সময়ে এখানকার ছাত্রসংখ্যা সম্পর্কে বৃন্দাবন দাস বলেছেন[60]-
“ | নানাদেশ হৈতে লোক নবদ্বীপে যায়। নবদ্বীপে পড়িলে সে বিদ্যারস পায়।। অতএব পড়ুয়ার নাহি সমুচ্চয়। লক্ষকোটি অধ্যাপক নাহিক নির্ণয়।। |
” |
তৎকালীন সময়ে নবদ্বীপে টোল শিক্ষাব্যবস্থার প্রাধ্যন্য ছিল। টোল বা চতুষ্পাঠীর শিক্ষা ছিল অবৈতনিক, শিক্ষা গ্রহণের জন্য শিষ্যদের কোনো ব্যয়ভার বহন করতে হতো না। ১৭৯১ খ্রিস্টাব্দে শঙ্কর তর্কবাগীসের প্রাধান্যকালে এখানে ১১০০ জন ছাত্র ও ১৫০ জন অধ্যাপক ছিল। ১৮১৮ খ্রিস্টাব্দে নবদ্বীপে ৩১ টি ও ১৮২২ খ্রিস্টাব্দে ৫০-৬০ টি টোল বর্তমান ছিল। ১৮৬৬ খ্রিস্টাব্দে নবদ্বীপের বিদগ্ধ পণ্ডিতসমাজ সংষ্কৃতচর্চার প্রসারের জন্য সংষ্কৃত বিদ্যাবিবর্দ্ধনী বিদগ্ধজননী সভা স্থাপন করেন,যা পরবর্তীকালে ১৮৯৭ খ্রিস্টাব্দে বঙ্গ বিবুধ জননী সভা নামে পরিচিতি লাভ করে।[61] টোল শিক্ষাক্ষেত্র হিসেবে প্রসন্নচন্দ্র তর্করত্নের পাকাটোল বিশেষভাবে খ্যাতি অর্জন করেছিল।[62] তাঁর টোলে মিথিলা, দিল্লী, লাহোর, মাদ্রাজ, পুরী প্রভৃতি বিভিন্ন প্রদেশ থেকে ছাত্ররা এসে অধ্যয়ন করে।[63] তার আবাসিক ১৪ জন ছাত্রের মধ্যে ৫ জন দিল্লি ও লাহোর থেকে, মিথিলা থেকে ৬ জন, দুই জন পুরী এবং একজন তামিলনাড়ু থেকে এসে পড়াশোনা করতেন।[64]
বর্তমানে নবদ্বীপে মোট ১৮টি উচ্চ বিদ্যালয় আছে; এদের মধ্যে নবদ্বীপ বকুলতলা উচ্চ বিদ্যালয়, নবদ্বীপ হিন্দু স্কুল, নবদ্বীপ শিক্ষা মন্দির, আর. সি. বি. সারস্বত মন্দির, জাতীয় বিদ্যালয়, তারাসুন্দরী বালিকা (উচ্চ) বিদ্যালয়, নবদ্বীপ বালিকা বিদ্যালয় উল্লেখযোগ্য। এখানে কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে নবদ্বীপ বিদ্যাসাগর মহাবিদ্যালয় নামে একটি মহাবিদ্যালয়ও আছে।
সংস্কৃতি
ধর্মকেন্দ্রিক
নবদ্বীপের সাংস্কৃতিক আভিজাত্যে মিশ্র প্রভাব লক্ষ করা যায়। বৈষ্ণব-শাক্ত-শৈব সংস্কৃতির সংমিশ্রণে নবদ্বীপের প্রাচীনত্ব বিরাজমান। নবদ্বীপের শৈব সংস্কৃতিতে বৌদ্ধ প্রভাব লক্ষ করা যায়, যা প্রধানত পালযুগের বৌদ্ধধর্মাবলম্বীদের কারণে। নবদ্বীপের শক্তি উপাসনায় তন্ত্রের উপস্থিতিও বৌদ্ধ প্রভাবের কারণে ঘটেছে। চৈতন্যদেবের মাধ্যমে নবদ্বীপে যে গৌড়ীয় বৈষ্ণবধর্মের উৎপত্তি ঘটে, তা সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র ভাবধারা।
শাক্ত সংস্কৃতি
দ্বাদশ-ত্রয়োদশ শতক থেকেই সমগ্র বাংলায় তান্ত্রিক সাধনার সামগ্রিক বিকাশ ঘটতে থাকে। সেই সময় সিদ্ধ তন্ত্রসাধকেরা নিষ্ঠা সহকারে নিয়ম-নীতি মেনে দেবীর উপাসনা করতেন। নবদ্বীপের তন্ত্রসাধক কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশ দক্ষিণাকালীর রুপ বর্ণনা করে বাংলায় কালী পূজার প্রসার ঘটান।[65] তাঁর প্রতিষ্ঠিত পঞ্চমুন্ডির আসন নবদ্বীপের আগমেশ্বরী পাড়ায় অবস্থিত। তিনি বাংলায় প্রথম দক্ষিণাকালীর রূপ কল্পনা করে আগমেশ্বরী মাতার পূজা শুরু করেন, যা প্রতিবছর দীপান্বিতা কালীপূজার দিন এখানে পূজা হয়ে আসছে।[66] নবদ্বীপের শাক্তদেবীর মধ্যে অন্যতম পোড়ামাতলার মা পোড়ামা। এছাড়াও ভৃগুরাম প্রতিষ্ঠিত এলানিয়াকালী মাতা, ওলাদেবী, সিদ্ধেশ্বরী মাতা উল্লেখযোগ্য। ঢাকা নিবাসী ভৃগুরাম ১৭২৮ খ্রিষ্টাব্দে নবদ্বীপে এসে ভাগীরথীর তীরে মহাশ্মশানে পঞ্চমুণ্ডির আসন স্থাপন করে শক্তি আরাধনায় ব্রতী হন। রাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায়ের পৃষ্ঠপোষকতায় নবদ্বীপে শাক্তরাসের জনপ্রিয়তা ও জৌলুস বৃদ্ধি পেতে থাকে। পরবর্তীতে রাজা গিরীশচন্দ্রের সময়ে এটি নবদ্বীপের অন্যতম প্রধান উৎসবে পরিণত হয়। শাক্তদেবীদের বিশাল মৃন্ময়ী প্রতিমা নির্মাণ করে শক্তি আরাধনা নবদ্বীপের রাসের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য।[67]
বৈষ্ণব সংস্কৃতি
নবদ্বীপের মহাপুরুষ চৈতন্য মহাপ্রভুর আবির্ভাবে নবদ্বীপে বৈষ্ণব ধর্মাবলম্বীর প্রসার ঘটতে থাকে। চৈতন্য জীবনীকাব্যে পাওয়া যায় -
“ | নবদ্বীপ হেন গ্রাম ত্রিভুবনে নাই যঁহি অবতীর্ণ হৈলা চৈতন্য গোঁসাঞি।। |
” |
চৈতন্য জীবনীকে কেন্দ্র করে বৈষ্ণবসাহিত্যের যে অপার সম্ভার সৃষ্টি হয়, তাতে নবদ্বীপের তৎকালীন ভৌগোলিক অবস্থান ও খ্যাতি সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায়। তৎকালীন সময়ে বাংলা তথা নবদ্বীপে জাতপাত সম্পর্কে যে বিদ্বেষী মনোভাব মানুষের মধ্যে ছিল, চৈতন্য মহাপ্রভু নামকীর্তনের মাধ্যমে সেই ভাবধারাকে চূর্ণ করতে পেরেছিলেন। কার্ল মার্কসের জাতিতাত্তিক লেখায় চৈতন্যদেবের এই গণআন্দোলন ও সমাজসংস্কারের উল্লেখ পাওয়া যায়।[68] তৎকালীন নবদ্বীপের শাসক চাঁদকাজীর বিরুদ্ধে তাঁর গণআন্দোলন বিশ্বের অন্যতম প্রথম সাম্যবাদ প্রতিষ্ঠার আন্দোলন হিসেবে মনে করা হয়।[69] ভারতে বৈষ্ণবধর্মের যে চারটি সম্প্রদায় ছিল, তার মধ্যে চৈতন্যদেবের ধর্মমত ছিল সম্পূর্ণ মৌলিক, তাঁর ধর্মমতে অন্য কোনো সম্প্রদায়ের প্রভাব ছিল না।[70]
শৈব সংস্কৃতি
নবদ্বীপের সাংস্কৃতিক আভিজাত্যে শৈবসংস্কৃতির প্রভাব বিশেষভাবে লক্ষণীয়। পাল যুগে নবদ্বীপ বৌদ্ধ ধর্মের পীঠস্থান হওয়ায় নবদ্বীপের শিবলিঙ্গগুলোর বেশিরভাগই বৌদ্ধ প্রভাবিত। নবদ্বীপের পশ্চিমে ‘পারডাঙা’র ঢিপির ( বর্তমানে ‘পাড়পুর’) ধ্বংসাবশেষ থেকে বৌদ্ধ-প্রভাবিত অনেকগুলি শিবমূর্তিগুলি পাওয়া যায়। নবদ্বীপের বুড়োশিব, যোগনাথ, বানেশ্বর, হংসবাহন, পারডাঙার শিব প্রভৃতি বৌদ্ধ প্রভাবিত শিবলিঙ্গ বর্তমান।[71] এঁদের কোন গৌরীপট্ট নেই। নবদ্বীপের বুড়োশিব, যোগনাথ, বানেশ্বর, দণ্ডপাণি, হংসবাহন, অলকনাথ, বালকনাথ, ভবতারণ, পোলোশ্বর শিব মূর্তিগুলোর মধ্যে ভবতারণ ও অলোকনাথ ব্রাহ্মণ্য সংস্কৃতির চিহ্ন যুক্ত প্রতিষ্ঠিত শিব।[72] নদিয়ার রাজারা এই দুই শিবের প্রতিষ্ঠাতা। অলকনাথ প্রতিষ্ঠা করেন মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্র এবং ভবতারণ প্রতিষ্ঠা করেন মহারাজ গিরিশচন্দ্র রায় (১৮২৫ খ্রি)। ভবতারণ শিবের গাজন হয় না। বালকনাথ শিব কুড়িয়ে পেয়ে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন শ্যামাচরণ দাস। পোলো দিয়ে মাছ ধরতে গিয়ে যে মূর্তি পাওয়া যাওয়ায় তার নাম পোলোশ্বর শিব। হংসবাহন শিব সারাবছর হংসদার বিলে নিমজ্জিত থাকেন, গাজনের কদিন মন্দিরে অধিস্থান করেন। পূর্বে এটা ছিল বৌদ্ধ মূর্তি ছিল, হংসের উপর স্থাপিত প্রস্তর নির্মিত পঞ্জর চিহ্নযুক্ত শিলাটি বর্তমানে শিব রূপে পূজিত হয়।[73] চৈত্রসংক্রান্তির ঠিক পাঁচদিন আগে থেকে নবদ্বীপের গাজনের অনুষ্ঠান শুরু হয়। গাজনের এই পাঁচ দিন ক্রমান্বয়ে সাতগাজন, ফুল, ফল, নীল ও চড়ক অনুষ্ঠানে নবদ্বীপের আপামর জনগণ উৎসবে মেতে ওঠেন।[74] দ্বাদশ শিব মন্দির নবদ্বীপে অবস্থিত আটচালা শিল্পরীতির মন্দির বাংলার মন্দির স্থাপত্যের একটি অন্যতম প্রাচীন শিবমন্দির। শিবের মুখোশ এখানকার শৈব সংস্কৃতির একটি উল্লেখযোগ্য উদাহরণ। বিশ্ব বাংলা স্টল বাংলার ঐতিহ্যপূর্ণ ও হারিয়ে যেতে বসা যেসকল পুতুলকে সংরক্ষণ ও প্রদর্শনের ব্যবস্থা করেছে, তাতে নবদ্বীপের শিবের মুখোশ অন্যতম।[75] চৈত্রমাসে বাসন্তী পুজোর শেষ দিন অর্থাৎ দশমীর পরদিন ভোররাতে শিবের বিয়ে অনুষ্ঠিত হয়, যা নবদ্বীপের একটি অন্যতম লৌকিক উৎসব।[76]
উৎসব
নবদ্বীপে বছরজুড়ে অনেক উৎসব পালিত হয়। এখানকার উৎসবের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল- নববর্ষ, শাক্তরাস, চন্দনযাত্রা, গাজন উৎসব, রথযাত্রা, দুর্গা পূজা, শিবের বিয়ে, দোল পূর্ণিমা, ঝুলন পূর্ণিমা, ধুলোট, গৌর-পূর্ণিমা, গঙ্গা পূজা, সরস্বতী পূজা, গুরু পূর্ণিমা প্রভৃতি। এদের মধ্যে রাসযাত্রা এবং দোলযাত্রা ও রথযাত্রা মহাসমারহে পালিত হয়। নবদ্বীপের বিলুপ্তপ্রায় একটি উৎসব হল ধুলোট। এটি মাঘ মাসে হওয়া কীর্তনিয়াদের একটি সাধারণ সম্মেলন। সাধারণত সমগ্র বাংলার খ্যাতিমান কীর্তনীয়গণ নবদ্বীপে একত্রিত হয়ে তেরো দিন ব্যাপী নাম-সংকীর্তন করতেন।[77]
শাক্তরাস
শাক্তরাস নবদ্বীপের সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং প্রাচীন উৎসব, যা শারদীয় দুর্গা পূজা উদযাপনের পঁয়ত্রিশ দিন পরে বা কার্তিক পূর্ণিমাতে কালী পূজার পনের দিন পরে উদযাপিত হয়। বিভিন্ন দেব-দেবীর বিশাল মৃন্ময়ী প্রতিমা গড়ে শক্তির উপাসনা করা এই উৎসবের মূল বৈশিষ্ট্য। কৃষ্ণনগরের নদীয়া রাজপরিবার এই উৎসবের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ছিল।[78] রাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায় এবং পরবর্তীতে প্রধানত রাজা গিরিশচন্দ্র পৃষ্ঠপোষকতার নবদ্বীপ শাক্তরাস জনপ্রিয় ও গৌরবময় হয়ে ওঠে।
রথযাত্রা
রথযাত্রা ওড়িশার প্রধান উৎসব হলেও চৈতন্য মহাপ্রভুর জন্য নবদ্বীপের রথযাত্রার গর্ব রয়েছে। প্রায় ২০-২৫ টি রথ এই উপলক্ষে বের হয়। এখানে ভগবান জগন্নাথের সম্পূর্ণ হাতযুক্ত বিগ্রহের ব্যতিক্রমী উদাহরণ পরিলক্ষিত হয়। এখানে রথযাত্রার আরেকটি বিশেষত্ব হ'ল "নটকনা" নামক একটি ফল, যা বিশেষত এই সময়ে পাওয়া যায়।[79]
নবদ্বীপ থানা
নবদ্বীপ থানার এখতিয়ারভুক্ত অঞ্চল হল নবদ্বীপ পৌরসভা এবং নবদ্বীপ কমিউনিটি উন্নয়ন ব্লক।[80][81] নবদ্বীপ থানার আওতাভুক্ত অঞ্চল ১০২.৯৪ বর্গকিলোমিটার এবং জনসংখ্যা ২৬০,৮৪৩ (২০০১ অনুযায়ী)।[82]
পরিবহন
রেলপথ
নবদ্বীপ ধাম রেলওয়ে স্টেশন হল নবদ্বীপের প্রধান রেল স্টেশন। রেলপথটি ১৯১৩ খ্রিস্টাব্দে চালু করা হয়। এটি হাওড়া থেকে ব্যান্ডেল-কাটোয়া শাখা লাইনের ১০৫ কিমি এবং কাটোয়া থেকে ৪০ কিমি দূরে অবস্থিত। নবদ্বীপ ধাম রেলওয়ে স্টেশন ভারতের সপ্তম দীর্ঘতম রেলওয়ে স্টেশন (২৩৬২ ফুট)। বিষ্ণুপ্রিয়া রেলওয়ে স্টেশন নবদ্বীপের আরেকটি হল্ট স্টেশন, যা হাওড়া জংশন থেকে ১০৭ কিলোমিটার এবং কাটোয়া জংশন থেকে ৩৮ কিমি দূরে অবস্থিত। পূর্ব রেলের ব্যান্ডেল-কাটোয়া-আজিমগঞ্জ বিভাগে নবদ্বীপ শিয়ালদহ থেকে ১১২ কিমি দূরে অবস্থিত। উত্তরবঙ্গ, আসাম, বিহার, ওড়িশা এবং কলকাতার সাথে নবদ্বীপের রেল যোগাযোগ খুবই ভাল।
সড়ক পরিবহণ
নবদ্বীপের বাস পরিষেবা বিভিন্ন স্থানের সঙ্গে সংযোগ রক্ষা করেছে। নবদ্বীপ বাসস্ট্যান্ড থেকে এটি কৃষ্ণনগর, শান্তিপুর, ফুলিয়া, রানাঘাট, চাকদহ, নাদনঘাট, কুসুমগ্রাম, বর্ধমান, করিমপুর, সমুদ্রগড়, মেমারি, কাটোয়া, তারকেশ্বর, তারাপীঠ ইত্যাদি স্থানে সংযোগ স্থাপন করে। দুর্গাপুর, আসানসোল, শিলিগুড়ি, দিনহাটা, বহরমপুর, মালদহ, কোচবিহার, বোলপুর, পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, সিউড়ি, গঙ্গারামপুর ইত্যাদির মতো দীর্ঘ-দূরত্বে বাস পরিষেবাও এখানে বর্তমান।গৌরাঙ্গ সেতুর মাধ্যমে কৃষ্ণনগরের সঙ্গে সড়কপথে নবদ্বীপের যোগাযোগ সম্পন্ন হয়েছে। এছাড়া সাইকেল রিকশা ও বৈদ্যুতিক রিকশার (টোটোগাড়ি) মাধ্যমে শহরতলির মধ্যে যোগাযোগ সম্পন্ন হয়।
সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন
নবদ্বীপে বিভিন্ন ধরনের সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন রয়েছে। এর মধ্যে চিকিৎসক সংগঠন হিসাবে আছে নবদ্বীপ হোমিও স্টাডি সার্কেল, ইন্ডিয়ান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশান, লায়ন্স ক্লাব ইত্যাদি; ক্লাবগুলোর মধ্যে নদিয়া ক্লাব, টাউন ক্লাব, নির্ভীক সমিতি, স্পোর্টিং ক্লাব, বিদ্যাসাগর ক্লাব, আথেলেটিক ক্লাব, বিদ্যার্থী মণিমেলা, প্রগতি পরিষদ, উত্তরপ্রবেশ, পুরাতত্ত্ব পরিষদ ইত্যাদি; গ্রন্থাগারের মধ্যে নবদ্বীপ সাধারণ গ্রন্থাগার, আদর্শ পাঠাগার, প্রগতি পরিষদ পাঠাগার, বঙ্গবাণী এরিয়া লাইব্রেরি উল্লেখযোগ্য।
বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব
তথ্যসমূহ
পাদটীকা
- এখানে নদ বলতে নদীয়া বা নবদ্বীপকে বোঝানো হয়েছে।
- নবদ্বীপের খোয়া ক্ষীরের জনপ্রিয়তা সম্পর্কে প্রচলিত ছড়াটি হলো- কাশীর মালাই খ্যাত, জয়নগরের মোয়া। রাণাঘাটের পানতোয়া, নবদ্বীপের খোয়া।
তথ্যসূত্র
- আহমেদ ২০১১, পৃ. ৫৩
- কটন ১৯৮০, পৃ. ১
- "WEST BENGAL HERITAGE COMMISSION, Report July 2019" (পিডিএফ)। West Bengal Heritage Commission, Government of West Bengal। পৃষ্ঠা 4। ২ অক্টোবর ২০২০ তারিখে মূল (PDF) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৩ মার্চ ২০২১।
- মণ্ডল ২০১৩, পৃ. ৫৭-৫৯
- কবিকর্ণপূর ১৯৫৮, পৃ. ১৬৮
- ভট্টাচার্য্য ১৯০৮, পৃ. ৭১৪
- সেন ১৯৫৯, পৃ. ২১
- মল্লিক ১৯১১, পৃ. ৩১৫-৩১৭
- সেন ১৯৮১, পৃ. ২০
- Wright 1907, পৃ. 146
- জুর্জানি ১৮৮১, পৃ. ৫৫৪
- চক্রবর্তী, পৃ. ৫০-৫২
- রাঢ়ি ২০০৪, পৃ. ১৪
- স্মিথ ১৯২৩, পৃ. ১৮৪-১৮৫
- মার্শম্যান ১৮৫৩, পৃ. ৪
- শাস্ত্রী ১৮৯৬, পৃ. ৩৪
- রাঢ়ি ২০০৪, পৃ. ৫৫
- রায় ১৯৪৯, পৃ. ৪১৫
- জুর্জানি ১৮৮১, পৃ. ৫৫৯
- জয়ানন্দ ১৯৭১
- "ধর্মের বেড়াজাল ভেঙে সাম্যের ধারণার প্রতিষ্ঠা"। anandabazar.com। ২০২০-০৬-১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৬-১৩।
- মুখার্জী ১৯৮৯
- বসু ১৯৫৮
- "Maps, Weather, and Airports for Navadwip, India"। www.fallingrain.com। ২০১৯-১০-১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১২-০৪।
- "Rail India"। ২ মে ২০০১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২২ এপ্রিল ২০১৫।
- দাস ১৯৭১
- সেন ১৯৮৮, পৃ. ৬
- বসু ২০১৩, পৃ. ৬৩
- তাভেরনিয়ার ১৮৮৯, পৃ. ১৩৩
- বসু ১৯৫৮, পৃ. ১৫
- বন্দ্যোপাধ্যায় ১৯৬০, পৃ. ৩১
- বন্দ্যোপাধ্যায় ১৯৬০, পৃ. ৬৫
- মণ্ডল ২০১৩, পৃ. ১০১
- d.o.o, Yu Media Group। "Nabadwip, India - Detailed climate information and monthly weather forecast"। Weather Atlas (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২০-০৬-১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৬-১৩।
- সান্যাল ১৯৭৯, পৃ. ৩২
- দাস ঠাকুর ১৯২৮
- সংকলন ১৯৭৩, পৃ. ৪৭৮
- কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় ১৮৪৪, পৃ. ১৫০
- ভট্টাচার্য ১৯৯৭, পৃ. ৩৯
- Geographical Review of India (ইংরেজি ভাষায়)। Geographical Society of India। ১৯৮১। পৃষ্ঠা 384। ৯ আগস্ট ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৮ নভেম্বর ২০২০।
- সেন ১৯১৫
- রায় ২০০৭
- মুখোপাধ্যায়, নবীনচন্দ্র। আত্মজীবনী। পৃষ্ঠা 49।
- চন্দ ১৮৬৯, পৃ. ৩৮: "The wealthiest man in Nuddea is a brazier by birth and profession, but who has risen to be a millionnaire. He has more than eight hundred braziery shops in all the principal towns and villages of Bengal, Orissa, and Hindoostan. In his house we saw a Kam-dhenu, reminding of old Vashishta's Nandini."
- পার্লামেন্ট লোকসভা, ইন্ডিয়া (২০০৫-১২-০১)। Lok Sabha Debates (ইংরেজি ভাষায়)। দিল্লি: লোক সভা সেক্রেটারিয়েট। পৃষ্ঠা ৩৮৩। ৯ আগস্ট ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৮ নভেম্বর ২০২০।
- বসাক ১৯৯৭, পৃ. ১৯৬
- Indian Cooperative Review (ইংরেজি ভাষায়)। ২২। ন্যাশনাল কোপারেটিভ ইউনিয়ন অফ ইন্ডিয়া। ১৯৮৪। পৃষ্ঠা ১৭৬। ৯ আগস্ট ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৮ নভেম্বর ২০২০।
- বন্দ্যোপাধ্যায়, দেবাশিস। "তাঁতের হাটে ত্রস্ত নবদ্বীপ"। anandabazar.com। ২০২১-০৮-০৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১১-১৮।
- বিজলেস স্টাডিজস ২০০২, পৃ. ২২২
- Journal of Scientific & Industrial Research (ইংরেজি ভাষায়)। ৫৯-৬০। কাউন্সিল অফ সায়েন্টিফিক এণ্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিসার্চ। ২০০১। পৃষ্ঠা ২৪১। আইএসবিএন 978-81-7236-207-2। ৯ আগস্ট ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৮ নভেম্বর ২০২০।
- দে ২০০৭, পৃ. ২৭৭
- বন্দ্যোপাধ্যায়, দেবাশিস। "কেউ লাল কেউ দুধ-সাদা, দই দিয়ে যায় চেনা"। anandabazar.com। ২০২০-০৯-২৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১১-১৮।
- "Chef Suman Chakraborty sets out on a trip across Bengal in search of its hidden gems — Mishti!"। www.telegraphindia.com। ২০২১-০৩-০৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১১-১৮।
- বন্দ্যোপাধ্যায় ১৯৬০, পৃ. ৭২
- The Calcutta Review, 1846 (ইংরেজি ভাষায়)। খণ্ড ৬ (জুলাই-ডিসেম্বর সংস্করণ)। কলিকাতা: কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়। ১৮৪৬। পৃষ্ঠা ৪২১–৪২৬। ৯ আগস্ট ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৪ ডিসেম্বর ২০২০।
- চ্যাটার্জি ২০০৭, পৃ. ১২৩
- মণ্ডল ২০১৩, পৃ. ৩৫৭
- "Urban Agglomerations/Cities having population 1 lakh and above" (পিডিএফ)। Provisional Population Totals, Census of India 2011। ১৩ নভেম্বর ২০১১ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১১-১০-২১।
- "Nabadwip Religion 2011"। ১১ জুন ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২২ মার্চ ২০১৭।
- চৈতন্যভাগবত - বৃন্দাবন দাস, সুকুমার সেন সম্পাদিত, ১/২
- বন্দ্যোপাধ্যায়, দেবাশিস। "রামনাথের ঐতিহ্যেই প্রাণ পাচ্ছে নবদ্বীপের বঙ্গ বিবুধ জননী সভা"। anandabazar.com। ২০২০-০৬-১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১২-০৪।
- রাঢ়ি ২০০৪, পৃ. ৩২৯
- জেনারেল রিপোর্ট ১৮৬৮, পৃ. ২০৭
- মহাদেবন ১৯৫৭
- ভট্টাচার্য, বিভূতিসুন্দর। "কৃষ্ণানন্দের হাত ধরে বাংলার ঘরে এলেন কালী"। anandabazar.com। ২০২০-০৬-১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৬-১৩।
- বন্দ্যোপাধ্যায়, দেবাশিস। "কৃষ্ণানন্দকে সামনে দেখে জিভ কাটলেন কৃষ্ণাঙ্গী বধূ - Anandabazar"। anandabazar.com। ২০২০-০৯-০৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১২-০৫।
- বসু ১৯৫৮, পৃ. ৩৪-৩৫
- মার্ক্স ১৯৭২, পৃ. ২৫০-২৫১
- মণ্ডল ২০১২, পৃ. ৪৭
- দে ১৯৪২, পৃ. ১৩
- চক্রবর্তী, পৃ. ৫৫-৫৬
- মিত্র ১৯৬৮, পৃ. ২৫৩
- "নবদ্বীপে শিব সাধনায় বৌদ্ধ প্রভাব"। bartamanpatrika.com। এপ্রিল ১৩, ২০২১। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৪-১৫।
- মিত্র ১৯৬৮, পৃ. ২৫৪
- Oct 26, Rohit Khanna / TNN /; 2015; Ist, 03:10। "Dolls' house at state store | Kolkata News - Times of India"। The Times of India (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২১-০১-১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০১-১৬।
- "আজ শিবের বিয়ে নিয়ে মাতোয়ারা হতে প্রস্তুত নবদ্বীপবাসী"। bartamanpatrika.com। এপ্রিল ১৪, ২০১৯। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৪-১৫।
- ভাটিয়া ২০১৭, পৃ. ৮০
- চন্দ্র, হিয়ারস্টাড এবং নীলসন ২০১৫, পৃ. ২২৩
- বন্দ্যোপাধ্যায়, দেবাশিস। "আজ উল্টোরথ, নবদ্বীপে বিরলদৃষ্ট জগন্নাথ থাকেন নিভৃতেই"। anandabazar.com। ২০২০-০৬-১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৬-১৩।
- "District Statistical Handbook 2014 Nadia"। Table 2.1। ডিপার্টমেন্ট অফ স্ট্যাটিসটিকস্ এণ্ড প্রোগ্রাম ইমপ্লিমেন্টেশন, পশ্চিমবঙ্গ সরকার। ২৯ জুলাই ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৭ মে ২০১৭।
- "Nadia District Police"। Police Unit। West Bengal Police। ২৮ মে ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৭ মে ২০১৭।
- "Nabadwip Police Station Details"। Nadia Police। ২৯ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৭ মে ২০১৭।
গ্রন্থপঞ্জি
- রাঢ়ি, কান্তিচন্দ্র (২০০৪)। নবদ্বীপ মহিমা। নবদ্বীপ পুরাতত্ত্ব পরিষদ।
- মণ্ডল, মৃত্যুঞ্জয় (২০১৩)। নবদ্বীপের ইতিবৃত্ত। কলকাতা: দেজ পাবলিশিং।
- বসু, গিরিশচন্দ্র (১৯৫৮)। রায়, আলোক; উপাধ্যায়, অশোক, সম্পাদকগণ। সেকালের দারোগা কাহিনী (দ্বিতীয় সংস্করণ)। বেনিষাটোলা লেন, কলিকাতা: পুস্তক বিপণি।
- সেন, বিজয়রাম (১৯১৫)। বসু, নগেন্দ্রনাথ, সম্পাদক। তীর্থ-মঙ্গল। বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ মন্দির।
- রায়, নীহাররঞ্জন (১৯৪৯)। বাঙ্গালীর ইতিহাস: আদি পর্ব (অষ্টম সংস্করণ)। বঙ্কিম চ্যাটার্জি স্ট্রিট, কলকাতা: দেজ পাবলিশিং। আইএসবিএন 81-7079-270-3।
- মল্লিক, কুমুদনাথ (১৯১১)। রায়, মোহিত, সম্পাদক। নদীয়া কাহিনী (দ্বিতীয় সংস্করণ)। ২৭ বেনিয়াটোলা লেন, কলকাতা: পুস্তক বিপণি।
- চ্যাটার্জি, জয়া (২০০৭-১১-১৫)। বেইলি, সি. এ.; চন্দাভারকর, রাজনারায়ণ; জনসন, গর্ডন, সম্পাদকগণ। The Spoils of Partition: Bengal and India, 1947-1967। Cambridge Studies in Indian History and Society (15) (ইংরেজি ভাষায়)। কেমব্রিজ, যুক্তরাজ্য: কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটি প্রেস। আইএসবিএন 978-0-521-87536-3। ওসিএলসি 148830807। জেস্টোর 27748588। ডিওআই:10.1017/CBO9780511497384।
- ভাটিয়া, ভারুনী (২০১৭)। Unforgetting Chaitanya: Vaishnavism and Cultures of Devotion in Colonial Bengal (ইংরেজি ভাষায়)। ইংল্যান্ড: অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস। আইএসবিএন 978-0-19-068624-6।
- শাস্ত্রী, হরপ্রসাদ (১৮৯৬)। A School History Of India। কলিকাতা: সংস্কৃত প্রেস ডিপোসেটরি।
- জুর্জানি, মিনহাজ-ই-সিরাজ (১৮৮১)। Tabaḳāt-i-Nāṣirī: A General History of the Muhammadan Dynasties of Asia, Including Hindūstān, from A.H. 194 [810 A.D.], to A.H. 658 [1260 A.D.], and the Irruption of the Infidel Mug̲h̲als Into Islam (ইংরেজি ভাষায়)। রাভার্টি, হেনরি জর্জ কর্তৃক অনূদিত। কলিকাতা: এশিয়াটিক সোসাইটি অফ বেঙ্গল।
- ভট্টাচার্য, অমরেন্দ্রনাথ (১৯৯৭)। "নবদ্বীপের শিল্প ও অর্থনৈতিক বনিয়াদ"। রশ্মি পত্রিকা।
- বসু, অশোক কুমার (২০১৩)। "গঙ্গাপথের ইতিকথা"। wbbookboard.org। পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য পুস্তক পর্ষদ: বিজ্ঞান পুস্তিকা। আইএসবিএন 978-81-247-0721-0। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১২-০৪।
- মিত্র, অশোক (১৯৬৮)। পশ্চিমবঙ্গের পূজা-পার্বণ ও মেলা। দ্বিতীয়। ভারতের জনগণনা দপ্তর, পশ্চিমবঙ্গ ১৯৬৭।
- বন্দ্যোপাধ্যায়, অমিয় কুমার (১৯৬০)। ছড়ায় স্থান বিবরণ। রাজা রাজকৃষ্ণ স্ট্রীট, কলকাতা: জি. এ. ই. পাবলিশার্স।
- সেন, সুকুমার (১৯৮১)। বাংলার স্থাননাম। ২৭, বেনিয়াটোলা লেন, কলকাতা-৯: পুস্তক বিপণি।
- কবিকর্ণপূর (১৯৫৮)। গোস্বামী, শ্রীপ্রাণকিশোর, সম্পাদক। শ্রীকৃষ্ণচৈতন্যচরিতামৃত (মহাকাব্যম্ )। ১১২ ক্যানেল স্ট্রীট, কলকাতা: শ্রীগৌরাঙ্গ মন্দির (শ্রীভূমি)।
- জয়ানন্দ (১৯৭১)। মজুমদার, বিমান বিহারী; মুখোপাধ্যায়, সুখময়, সম্পাদকগণ। জয়ানন্দ বিরচিত চৈতন্য মঙ্গল। কলিকাতা: দ্য এশিয়াটিক সোসাইটি। ওসিএলসি 499557268।
- দাস ঠাকুর, শ্রীশ্রীমদ্ বৃন্দাবন (১৯২৮)। শ্রীশ্রীচৈতন্যভাগবত (আদিখণ্ড মূল)। উল্টাডিঙ্গি জংশন রোড, কলিকাতা: শ্রীগৌড়ীয়মঠ।
- মণ্ডল, মৃত্যুঞ্জয় (২০১২)। চৈতন্যদেব। কলেজষ্ট্রীট, কলকাতা: পত্র ভারতী। পৃষ্ঠা ৪৭।
- ভট্টাচার্য্য, লালমোহন বিদ্যানিধি (১৯০৮)। সম্বন্ধনির্ণয়। কলিকাতা: নিউ স্কুল-বুক প্রেস।
- সেন, সত্যেন্দ্রনাথ (১৯৫৯-০৮-১৫)। কৃত্তিবাস বিরোচিত রামায়ণ। বঙ্কিম চ্যাটার্জি স্ট্রীট, কলিকাতা: মনীষা গ্রন্থালয় (প্রাঃ) লিঃ।
- সান্যাল, অবন্তীকুমার (আগষ্ট ১৯৭৯)। "শ্রীচৈতন্যের জীবনী"। বাংলা সাহিত্যের সরল বৃত্তান্ত: পঞ্চদশ-ষোড়শ শতাব্দী (প্রথম সংস্করণ)। ১৫ বঙ্কিম চ্যাটার্জী ষ্ট্রীট: দেবেন্দ্র গ্রন্থালয়।
- চক্রবর্তী, নরহরি। ভক্তিরত্নাকর। মুর্শিদাবাদ।
- বসাক, হরিপদ (১৯৯৭)। "নদীয়ার তাঁতশিল্প"। পশ্চিমবঙ্গ পত্রিকা।
- সংকলন (১৯৭৩)। মুখোপাধ্যায়, ধীরেন্দ্রনাথ; কুমার, মদনমোহন; বিশ্বাস, দিলীপকুমার; দত্ত, ভবতোষ, সম্পাদকগণ। ভারতকোষ (পিডিএফ)। পঞ্চম খন্ড। কলকাতা: বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ।
- রায়, দেবব্রত (২০০৭)। নবদ্বীপ ও তৎ পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের লোকসংস্কৃতি। কল্যাণী: লোকসংস্কৃতি বিভাগ কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়।
- চন্দ, ভোলানাথ (১৮৬৯)। The travels of a Hindoo to various parts of Bengal and Upper India। প্রথম খণ্ড। লন্ডন: N. Trubner & Co.।
- চন্দ্র, উদয়; হিয়ারস্টাড, গির; নীলসন, কেনেথ বো (২০১৫-০৯-২৫)। The Politics of Caste in West Bengal (ইংরেজি ভাষায়)। নতুন দিল্লি: Routledge: Taylor & Francis Group। আইএসবিএন 978-1-317-41477-3।
- জেনারেল রিপোর্ট (১৮৬৮)। General Report on Public Instruction in the Lower Provinces of the Bengal Presidency for 1867-68 (ইংরেজি ভাষায়)। কলিকাতা: বেঙ্গল সেক্রেটারিয়েট বুক ডিপো।
- আহমেদ, ফারুকী সালমা (২০১১), A Comprehensive History of Medieval India: From Twelfth to the Mid-Eighteenth Century (ইংরেজি ভাষায়), পিয়ারসন এডুকেশন ইন্ডিয়া, আইএসবিএন 978-81-317-3202-1
- কটন, স্যার ইভান (১৯৮০)। রায়, নিশীথ রঞ্জন, সম্পাদক। Calcutta, Old and New: A Historical and Descriptive Handbook to the City (ইংরেজি ভাষায়)। কলকাতা: গজেনারেল প্রিন্টার্স এণ্ড পাবলিশার্স।
- স্মিথ, ভিনসেন্ট এ. (১৯২৩)। The Oxford History Of India: From the Earliest Times to the end of 1911 (দ্বিতীয় সংস্করণ)। অক্সফোর্ড: অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস।
- Wright, Henry Nelson (১৯০৭)। Catalogue of the coins in the Indian Museum, Calcutta, including the cabinet of the Asiatic Society of Bengal। Oxford Published for the Trustees of the Indian Museum, at the Clarendon Press।
- মহাদেবন, ডক্টর টি. এম. পি., সম্পাদক (জানুয়ারি ১৯৫৭)। Journal Of The Madras University। খণ্ড ২৮, নম্বর ২। মাদ্রাজ: মাদ্রাজ বিশ্ববিদ্যালয়।
- মার্শম্যান, জন ক্লার্ক (১৮৫৩)। Marshman's History of Bengal (in Bengali)। শর্মা, ঈশ্বর চন্দ্র কর্তৃক অনূদিত।
- বিজলেস স্টাডিজস (২০০২)। Business Studies (ইংরেজি ভাষায়)। ২৫। ইউনিভার্সিটি কলেজ অফ বিজলেস স্টাডিজস।
- শাস্ত্রী, হরপ্রসাদ (১৮৯৬)। A School History Of India। কলিকাতা: সংস্কৃত প্রেস ডিপোসেটরি।
- মুখার্জী, রাধা কুমুদ (১৯৮৯)। Ancient Indian Education: Brahmanical and Buddhist (ইংরেজি ভাষায়)। দিল্লি: মতিলাল বনারসীদাস পাবলিশার্স। আইএসবিএন 978-81-208-0423-4।
- দাস, নবীন চন্দ্র (১৯৭১)। Ancient Geography of Asia compiled from Valmiki Ramayan। কলিকাতা: ভারত-ভারতী ওরিয়েন্টাল পাবলিশার্স।
- সেন, জ্যোতির্ময় (১৯৮৮)। Land Utilisation and Population Distribution: A Case Study of West Bengal, 1850-1985 (ইংরেজি ভাষায়)। দিল্লি: দয়া পানলিশিং হাউস। আইএসবিএন 978-81-7035-043-9।
- তাভেরনিয়ার, জেন ব্যাপতিস্ট (১৮৮৯)। Travels in India (ইংরেজি ভাষায়)। ১। বল, ভ্যালেন্টাইন কর্তৃক অনূদিত। লন্ডন: ম্যাকমিলান এণ্ড কোম্পানি।
- কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় (১৮৪৪)। Calcutta Review: (ইংরেজি ভাষায়)। ৩। কলিকাতা: কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়।
- Journal of Scientific & Industrial Research (ইংরেজি ভাষায়)। ৫৯-৬০। সকাউন্সিল অফ সায়েন্টিফিক এণ্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিসার্চ। ২০০১। আইএসবিএন 978-81-7236-207-2।
- দে, দিলীপ কুমার (২০০৭)। কোচবিহারের লোকসংস্কৃতি। অনিমা প্রকাশনী।
- মার্ক্স, কার্ল (১৯৭২)। ক্রেডার, লরেন্স, সম্পাদক। The Ethnological Notebooks of Karl Marx: (Studies of Morgan, Phear, Maine, Lubbock) (ইংরেজি ভাষায়) (দ্বিতীয় সংস্করণ)। Van Gorcum। আইএসবিএন 978-90-232-0924-9।
- দে, সুশীল কুমার (১৯৪২)। Early History Of The Vaisnava Faith And Movement In Bengal। কলিকাতা: জেনারেল প্রিন্টার্স এন্ড পাবলিশার্স।