ধাতু (বাংলা ব্যাকরণ)
ব্যাকরণ শাস্ত্রে, ক্রিয়ামূল বলতে ক্রিয়াপদের অবিভাজ্য বা মূল অংশের অন্তর্নিহিত ভাবটির দ্যোতনা [টীকা 1] করে[1] অথবা বিশ্লেষণ করা যায় না এ রকম যে ক্ষুদ্রতম ধ্বনিসমষ্টি ক্রিয়ার বস্তু বা গুণ বা অবস্থানকে বুঝায়। ক্রিয়ামূলকে ধাতুও বলে। ক্রিয়ামূল বা ধাতু নির্দেশ করতে মূল শব্দের পূর্বে "√" করণী চিহ্ন ব্যবহার করা হয়।
বাংলা ব্যাকরণ |
---|
ইতিহাস |
ধ্বনিতত্ত্ব |
|
রূপতত্ত্ব/শব্দতত্ত্ব |
|
বাক্যতত্ত্ব |
|
অর্থতত্ত্ব |
|
ছন্দ ও অলংকার |
|
প্রকারভেদ
ক্রিয়ামূল বা ধাতু প্রধানত তিন প্রকার।
- মৌলিক ধাতু
- বাংলা ধাতু
- সংস্কৃত ধাতু
- বিদেশি ধাতু
- সাধিত ধাতু
- নাম ধাতু
- প্রযোজক ধাতু বা ণিজন্ত ধাতু
- কর্মবাচ্যের ধাতু
- যৌগিক বা সংযোগমূলক ধাতু
- বিশেষ্যের সাথে যুক্ত হওয়া ধাতু
- বিশেষণের সাথে যুক্ত হওয়া ধাতু
- ধ্বন্যাত্মক অব্যয়ের সাথে যুক্ত হওয়া ধাতু
মৌলিক বা সিদ্ধ ধাতু
যেসকল ধাতুকে ভাঙা বা বিশ্লেষণ করা যায় না তাদের মৌলিক বা সিদ্ধ ধাতু বলে। উদাহরণ: √কর্, √চল, √দেখ্, √খেল,√পড়, √খা।
উৎস বিবেচনায় মৌলিক ধাতুগুলোকে তিন শ্রেণিতে ভাগ করা হয়: (ক) বাংলা ধাতু (খ) সংস্কৃত ধাতু এবং (গ) বিদেশি ধাতু
সাধিত ধাতু
কোনো মৌলিক ধাতু কিংবা নাম শব্দের সাথে আ প্রত্যয় যুক্ত হয়ে যে ধাতু গঠিত হয় তাকে সাধিত ধাতু বলে। উদাহরণ: √কর + আ = √করা, √দেখ্ + আ = √দেখা, √পড়্+আ= √পড়া।
সংযোগমূলক বা যৌগিক ধাতু
বিশেষ্য , বিশেষণ ও ধ্বনাত্বক অব্যয়ের সাথে √কর্, √দে, √হ, √পা ইত্যাদি মৌলিক ধাতু যুক্ত হয়ে যে ধাতু গঠন করে তাকে সংযোগমূলক বা যৌগিক ধাতু বলে। উদাহরণ: পূজা কর্, রাজি হ, কষ্ট পা, শাস্তি দে।
নাম ধাতু
নাম শব্দ অর্থাৎ বিশেষ্য, বিশেষণ, অব্যয় প্রভৃতি শব্দ কখনও কখনও প্রত্যয়যোগে, কখনওবা প্রত্যয় যুক্ত না হয়ে ক্রিয়ারূপে ব্যবহৃত হয়, এ ধরনের ক্রিয়ার মূলকে নাম ধাতু বলে। উদাহরণ: জুতা > জুতানো, বেত > বেতানো, হাত > হাতানো, বাঁকা > বাঁকানো।
ণিজন্ত বা প্রযোজক ধাতু
মৌলিক ধাতুর সাথে 'আ' বা 'ওয়া' যুক্ত হয়ে ণিজন্ত বা প্রযোজক ধাতু গঠিত হয়। উদাহরণ: √কর + আ =করা। যা কিছু হারায় , গিন্নী বলেন, "কেষ্টা বেটাই চোর", এখানে হারায় হলো প্রযোজক ধাতু। এটা এক ধরনের সাধিত ধাতু।
ধ্বন্যাত্মক ধাতু
ধাতুরূপে ব্যবহৃত অনুকার (অনুকার = সাদৃশ্যকরণ, অনুকরণ) ধ্বনিকে ধ্বন্যাত্মক ধাতু বলে। উদাহরণ: ফোঁসা, হাঁপা, মচ্মচা, টল্টলা।
নঞ্র্থক ধাতু
"অস্তি" বাচক √হ ধাতুর পূর্বে নঞ্র্থক 'ন' শব্দের যোগে গঠিত √নহ্ ধাতুকে নঞ্র্থক ধাতু বলে। উদাহরণ: নহি, নই, নহ, নও, নহে, নয়।
ধাতুর মূল
শব্দ বা ধাতুর মূলকে প্রকৃতি বলে। সাধারণ অর্থে শব্দের মূল বলতে মৌলিক শব্দকে এবং ধাতুর মূল বলতে সিদ্ধ বা মৌলিক ধাতুকেই বুঝায়। উদাহরণ: "দোকান" শব্দের মূল "দোকান", "ঢাকা" শব্দের মূল "ঢাকা" এবং √লিখ ধাতুর মূল "লিখ্", √কর ধাতুর মূল "কর্"।
প্রকৃতি দুই প্রকার। যথা-
২. ক্রিয়া-প্রকৃতি:
ধাতু-প্রকৃতি বা ক্রিয়া-প্রকৃতি হলো ধাতুর মূল। ধাতু-প্রকৃতি বা ক্রিয়া-প্রকৃতি প্রত্যয় বা বিভক্তিযুক্ত না হয়ে শব্দরূপে ব্যবহৃত হয় না। যে সমস্ত ধাতু শব্দরূপে ব্যবহৃত হতে দেখা যায়, সেগুলোতে একটি "শূন্য প্রত্যয় (০)" যুক্ত আছে বলে ধরে নেওয়া হয় । উদাহরণ: লিখ্, কর্ ।
বিভিন্ন ধাতু
বাংলা ভাষার সমস্ত ধাতুকে ২০টি গণে ভাগ করা হয়েছে। যথা:-
ক্রমিক নং | ধাতুগণ | উদাহরণ |
---|---|---|
১ | হ-আদিগণ | হ (হওয়া), ল (লওয়া) ইত্যাদি। |
২ | খা-আদিগণ | খা (খাওয়া), ধা (ধাওয়া), পা (পাওয়া), যা (যাওয়া) ইত্যাদি। |
৩ | দি-আদিগণ | দি (দেওয়া), নি (নেওয়া) ইত্যাদি। |
৪ | শু-আদিগণ | চু (চোঁয়ানো), নু (নোয়ানো), ছু (ছোঁয়া) ইত্যাদি। |
৫ | কর্-আদিগণ | কর্ ( করা), কম্ (কমা), গড় (গড়া), চল (চলা) ইত্যাদি। |
৬ | কহ্-আদিগণ | কহ্ (কহা), সহ্ (সহা), বহ্ (বহা) ইত্যাদি। |
৭ | কাট্-আদিগণ | গাঁথ্, চাল্, আক্, বাঁধ্, কাঁদ্ ইত্যাদি। |
৮ | গাহ্-আদিগণ | চাহ্, বাহ্, নাহ্ (নাহান>স্নান) ইত্যাদি। |
৯ | লিখ্-আদিগণ | কিন্, ঘির্, জিত্, ফির্, ভিড়্, চিন্ ইত্যাদি। |
১০ | উঠ্-আদিগণ | উড়্, শুন্, ফুট্, খুঁজ্, খুল্, ডুব্, তুল্ ইত্যাদি। |
১১ | লাফা-আদিগণ | কাটা, ডাকা, বাজা, আগা (অগ্রসর হওয়া) ইত্যাদি। |
১২ | নাহা-আদিগণ | গাহা ইত্যাদি। |
১৩ | ফিরা-আদিগণ | ছিটা, শিখা, ঝিমা, চিরা ইত্যাদি। |
১৪ | ঘুরা-আদিগণ | উঁচা, লুকা, কুড়া (কুড়াচ্ছে) ইত্যাদি। |
১৫ | ধোয়া-আদিগণ | শোয়া, খোঁচা, খোয়া, গোছা, যোগা ইত্যাদি। |
১৬ | দৌড়া-আদিগণ | পৌঁছা, দৌড়া ইত্যাদি। |
১৭ | চটকা-আদিগণ | সমঝা, ধমকা, কচলা ইত্যাদি। |
১৮ | বিগড়া-আদিগণ | হিচড়া, ছিটকা, সিটকা ইত্যাদি। |
১৯ | উলটা-আদিগণ | দুমড়া, মুচড়া, উপচা ইত্যাদি। |
২০ | ছোবলা-আদিগণ | কোঁচকা, কোঁকড়া, কোদলা ইত্যাদি। |
প্রাতিপাদিক
প্রতিপাদিক হলো বিভক্তিহীন নাম-প্রকৃতি বা সাধিত শব্দ এবং বিভক্তিহীন তবে প্রত্যয়যুক্ত ক্রিয়ামূল বা ক্রিয়া-প্রকৃতি। প্রকৃতির সাথে প্রত্যয়ের যোগে যে শব্দ ও ক্রিয়ামূল গঠিত হয় তার নাম প্রাতিপাদিক। [2]
নাম-প্রাতিপাদিক
বিভক্তহীন ও প্রত্যয়হীন কিংবা বিভক্তিহীন অথচ প্রত্যয়যুক্ত নাম-প্রকৃতিকে নাম প্রাতিপাদিক বলে। উদাহরণ: দোকান + দার = দোকানদার + কে = দোকানদারকে।
ক্রিয়া-প্রাতিপাদিক
বিভক্তহীন ও প্রত্যয়যুক্ত ধাতু-প্রকৃতিকে ক্রিয়া-প্রাতিপাদিক বলে। উদাহরণ: কর্ + অ = করা + কে = করাকে
টীকা
- দ্যোতনা= সূচনা, প্রকাশনা
তথ্যসূত্র
- ড.সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় (১৯৪২)। ড.সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়। কলকাতা: কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়। পৃষ্ঠা ৩৪৪।
- "প্রাতিপাদিক" মানে যা দিয়ে শুরু করা হয়