ধন্দ কেশব কর্বে
ধন্দ কেশব কর্বে (১৮ এপ্রিল ১৮৫৮ – ৯ নবেম্বর ১৯৬২), জনপ্রিয়ভাবে মহর্ষি কর্বে একজন ভারতীয় সমাজ সংস্কারক, অধ্যাপক এবং লেখক ছিলেন। তিনি মহিলাদের কল্যাণ এবং অধিকারের ক্ষেত্রে বলিষ্ঠ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন। তার সম্মানার্থে মুম্বাইর কুইন্স রোডের নাম পরিবর্তন করে মহর্ষি কর্বে পথ রাখা হয়েছে। তিনি বিধবাদের মধ্যে শিক্ষার প্রচারে অগ্রণী ছিলেন।[1] তিনি ১৯১৬ সালে দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম মহিলা বিশ্ববিদ্যালয় শ্রীমতী নাথীবাঈ দামোদর ঠাকরচি মহিলা বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করেছিলেন। ভারত সরকার তাকে সমাজে অগ্রণী অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯৫৫ সালে দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মান পদ্মবিভূষণ এবং ১৯৫৮ সালে তার ১০০তম জন্মদিনে ভারতের সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মান ভারতরত্ন প্রদান করে। ভারতরত্ন লাভ করা ধন্দ কেশব কর্বে অন্যতম বয়স্ক ব্যক্তি।
মহর্ষি ধন্দ কেশব কর্বে | |
---|---|
জন্ম | চেরাভালি, দাপলি, বোম্বে প্রেসিডেন্সী, ব্রিটিশ ভারত | ১৮ এপ্রিল ১৮৫৮
মৃত্যু | ৯ নভেম্বর ১৯৬২ ১০৪) পুনে, মহারাষ্ট্র, ভারত | (বয়স
পেশা |
|
দাম্পত্য সঙ্গী | রাধাবাঈ এবং গংগুবাঈ |
সন্তান | রঘুনাথ কর্বে, শংকর কর্বে, দিনকর কর্বে, ভাস্কর কর্বে |
পুরস্কার | পদ্মবিভূষণ, ১৯৫৫ ভারত রত্ন, ১৯৫৮ |
ভারতীয় জনসাধারণ তাকে মহর্ষি বলে সম্বোধন করে। এর সঙ্গে মারাঠাভাষী লোকেরা তাকে আন্না বলে সম্বোধন করেছিলেন। ভারতীয় ডাক বিভাগের জারী করা ডাক টিকিটে স্থান লাভ করা কর্বে প্রথম জীবিত ব্যক্তি।
জীবনী
১৮৫৮ সালের ১৮ এপ্রিলে ব্রিটিশ ভারতের অন্তর্গত বোম্বে প্রেসিডেন্সীর দাপলি অঞ্চলের চেরাভালিতে ধন্দ কেশব কর্বের জন্ম হয়েছিল। শিক্ষালাভ করার পর তিনি ১৮৯১ সাল থেকে ১৯১৪ সাল পর্যন্ত মহারাষ্ট্রের পুনের ফার্গুসন কলেজে অঙ্কশাস্ত্র বিভাগের অধ্যাপনা করেছিলেন।[2] ১৯১৬ সালে ধন্দ কেশব কর্বে শ্রীমতী নাথীবাঈ দামোদর ঠাকরচি মহিলা বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করেছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের মুখ্য কার্যালয় দক্ষিণ মুম্বইয়ের চার্চগেটে অবস্থিত। এর মূল ক্যাম্পাস সান্তাক্রুজ-জুহু অঞ্চলে অবস্থিত। শ্রীমতী নাথীবাঈ দামোদর ঠাকরচি মহিলা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুম্বইয়ে দুটি এবং পুনেতে একটি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস আছে।
১৮৯৬ সালে ধন্দ কেশব কর্বে পুনের কাছে হিঙেতে বিধবা ও অসহায় নারীদের জন্য এক আশ্রম প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। নারীর সর্বাঙ্গীণ বিকাশের জন্য শিক্ষার প্রয়োজনীয়তার প্রতি লক্ষ্য রেখে তিনি এই পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন। তিনি একটি মহিলা বিশ্ববিদ্যালয় গঠনের স্বপ্ন দেখেছিলেন। তার একজন বন্ধু তাকে টোকিওতে অবস্থিত বিশ্বের প্রথম মহিলা বিশ্ববিদ্যালয়, জাপান মহিলা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি পুস্তিকা প্রেরণ করেছিলেন। ১৯১৫ সালের ডিসেম্বর মাসে বোম্বেতে অনুষ্ঠিত রাষ্ট্রীয় সমাজ সংস্কার কংগ্রেস তিনি নিজের স্বপ্ন বাস্তবায়িত করার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা করেন। ১৯১৬ সালে ২ জুলাই তারিখে পাঁচজন ছাত্রীকে প্রথম মহাবিদ্যালয়ের পাঠদান আরম্ভ হয়। তিনি এর জন্য প্রয়োজনীয় সরকারী অনুমতি এবং পুঁজির জন্য অপেক্ষা করেননি। ১৯২০ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম আনুষ্ঠানিকভাবে শ্রীমতী নাথীবাঈ দামোদর ঠাকরচি মহিলা বিশ্ববিদ্যালয় করা হয়েছিল।[3]
১৯৩৬ সালে এর মুখ্য কার্যালয় বোম্বেতে স্থানান্তর করা হয়। ১৯৫১ সালে বিশ্ববিদ্যালয়টি আইনের অধীনে আসে। এটি গোটা ভারতে মহাবিদ্যালয় অন্তর্ভুক্ত করার বিশেষ অধিকার লাভ করে। ২০১৬ সালের ৫ জুলাই তারিখে বিশ্ববিদ্যালয়টি ১০০ বছর উদ্যাপন করে। এটি ভারত তথা দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম পুরনো মহিলা বিশ্ববিদ্যালয়।
তিনি দুটি আত্মজীবনী রচনা করেছিলেন। প্রথমটি ১৯২৮ সালে প্রকাশিত মারাঠী ভাষার "অমরত্ব" এবং দ্বিতীয়টি ১৯৩৬ সালে প্রকাশিত ইংরাজী ভাষার ল"লুকিং ব্যাক"। ১৯৬২ সালের ৯ নভেম্বর তারিখে মহারাষ্ট্রের পুনেতে তার মৃত্যু হয়।
ব্যক্তিগত জীবন
ধন্দ কেশব কর্বের দুজন পত্নী ছিলেন। রাধাবাঈ এবং গংগুবাঈ তার পত্নী। তাদের চারজন পুত্র যথাক্রমে রঘুনাথ কর্বে, শংকর কর্বে, দিনকর কর্বে এবং ভাস্কর কর্বে।
পুরস্কার ও সম্মান
- ১৯৫১ - পুনে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানীয় ডি.লিট ডিগ্রী
- ১৯৫২ – বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানীয় ডি.লিট ডিগ্রী
- ১৯৫৪ – শ্রীমতী নাথীবাঈ দামোদর ঠাকরচি মহিলা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানীয় ডি.লিট ডিগ্রী
- ১৯৫৫ – পদ্মবিভূষণ[4]
- ১৯৫৭ - মুম্বাই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানীয় এল.এল.ডি ডিগ্রী
- ১৯৫৮ – ভারত রত্ন[4]
তথ্যসূত্র
- Remembering Maharshi Karve, the man who set up India's first university for women India Today. 18 April 2016.
- "Fergusson College Department of Mathematics web page"। ১৯ জুন ২০০৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১১ আগস্ট ২০০৬।
- "History of SNDT"।
- "Padma Awards Directory (1954–2007)" (পিডিএফ)। Ministry of Home Affairs। ১০ এপ্রিল ২০০৯ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৬ নভেম্বর ২০১০।