দ্রুতি
কোনো বস্তু একক সময়ে যে দূরত্ব অতিক্রম করে, সাধারণভাবে তাকে দ্রুতি (speed) বলে। প্রকৃতপক্ষে একটি বস্তুর বেগের মানই হচ্ছে তার দ্রুতির পরিমাপ। অন্য কথায়: একটি বস্তু একক সময়ে যে দূরত্ব অতিক্রম করে, তাকেই দ্রুতি বলা যেতে পারে। ক্যালকুলাস অনুযায়ী, দ্রুতি হলো সময়ের সাথে দূরত্বের পরিবর্তনের হার। দ্রুতি একটি স্কেলার রাশি; অর্থাৎ এর কোনো দিক নেই। কারণ দূরত্বেরও কোনো দিক নেই, দিক আছে সরণের। দ্রুতির ভেক্টর রাশি হচ্ছে বেগ। দ্রুতির মাত্রা হচ্ছে এবং একক হচ্ছে । দূরত্বকে d এবং সময়কে t দ্বারা প্রকাশ করলে দ্রুতির রাশিমালা দাড়ায়:
দ্রুতি (Speed) | |
---|---|
সাধারণ প্রতীক | v |
এসআই একক | m/s, m s−1 |
মাত্রা | L T−1 |
রৈখিক গতির ক্ষেত্রে দ্রুতির পরিমাপ সাধারণভাবেই করা যায়। তবে যে বস্তুগুলোর গতি দ্বিমাত্রিক (যেমন: বিমান), তাদের দ্রুতির দুইটি উপাংশ পাওয়া যায়। এর একটির নাম সম্মুখ দ্রুতি এবং অন্যটি ঊর্ধ্ব দ্রুতি।
এককসমূহ
দ্রুতির এককসমূহের মধ্যে রয়েছে:
- মিটার প্রতি সেকেন্ড, (m/s), এটি আন্তর্জাতিক একক/ এস আই (SI) একক।
- কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা, (km/h)
- মাইল প্রতি ঘণ্টা, (m/h)
- নটিক্যাল মাইল প্রতি ঘণ্টা (k/t)
- মাক, শব্দের দ্রুতির মাক সংখ্যা হচ্ছে ১। মাক n বলতে শব্দের দ্রুতির চেয়ে n গুণ বেশি বা কম বোঝায়।
- মাক ১ ≈ ৩৪৩ m/s ≈ ১২৩৫ km/h ≈ ৭৬৮ mph
- শূন্যস্থানে আলোর দ্রুতি (যার প্রতীক c) একটি অন্যতম প্রাকৃতিক একক।
- c = ২৯৯,৭৯২,৪৫৮ m/s
- বায়ুতে শব্দের দ্রুতি প্রায় ৩৪০ m/s, এবং পানিতে এই দ্রুতি প্রায় ১৫০০ m/s
- অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ রূপান্তর
- ১ m/s = ৩.৬ km/h
- ১ mph = ১.৬০৯ km/h
- ১ knot = ১.৮৫২ km/h = ০.৫১৪ m/s
বিভিন্ন যানবাহনে দ্রুতি পরিমাপ করার জন্য এগুলোর সাথে সাধারণত স্পিডোমিটার যুক্ত থাকে, যা দিয়ে দক্ষতার সাথে দ্রুতি পরিমাপ করা সম্ভব।
গড় দ্রুতি
যে সকল ভৌত ধর্মগুলোর দিক দিয়ে চিন্তা করলে দ্রুতি দ্বারা মূলত তাৎক্ষণিক দ্রুতি বোঝায়। কিন্তু বাস্তব পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় গড় দ্রুতি ( দ্বারা চিহ্নিত করা হয়) শব্দটি। নির্দিষ্ট সময় অতিক্রান্ত দূরত্বকে উক্ত সময় দ্বারা ভাগ করলে গড় দ্রুতি পাওয়া যায়। যেমন: কেউ যদি ২ ঘণ্টায় ৬০ কিলোমিটার দূরত্ব অতিক্রম করে, তবে তার গড় দ্রুতি হবে, ৬০/২ = ৩০ কিমি/ঘণ্টা। কিন্তু তার তাৎক্ষণিক দ্রুতি সময়ের সাথে দ্রুত পরিবর্তিত হয় এবং এ থেকে অনেক কম বেশিও হতে পারে, আবার শূন্যও হতে পারে।
গাণিতিকভাবে প্রকাশ করলে দাঁড়ায়:
পরিমাণ সময়ের ব্যবধানে যে তাৎক্ষণিক দ্রুতি পাওয়া যায় তাকে সময়ের ফাংশন হিসেবে নিম্নোক্তভাবে প্রকাশ করা হয়:
আবার পরিমাণ দূরত্বের পরিবর্তনে প্রাপ্ত তাৎক্ষণিক দ্রুতিকে দূরত্বের ফাংশন হিসেবেও প্রকাশ করা যায়:
অনেক সময় ধারণা করা হয়, অর্ধেক দূরত্ব পরিমাণ দ্রুতিতে এবং বাকি অর্ধেক দূরত্ব দ্রুতিতে অতিক্রম করলে মোট গড় দ্রুতি হবে । কিন্তু এটি ভুল ধারণা। প্রকৃতপক্ষে গড় দ্রুতির সমীকরণটি হবে এরকম:
এখানে লক্ষ্য করার মতো বিষয় হচ্ছে এই যে, প্রথম সমীকরণের ফল একটি সঠিক বীজগাণিতিক গড়
এছাড়া দ্রুতির বণ্টন ফাংশন থেকেও গড় দ্রুতি পরিমাপ করা যেতে পারে। এই ফাংশন দূরত্ব বা সময় যেকোনটিরই হতে পারে:
বিভিন্ন ধরনের দ্রুতির পরিমাপ
নিচে বিভিন্ন ধরনের দ্রুতির পরিমাপ উল্লেখ করা হলো:
- সাধারণ শামুকের দ্রুতি = ০.০৩৬ কিমি/ঘ (০.০০২৩ মা/ঘ,বা m/s বা ms^1) হবে
- দ্রুত গতিতে হাঁটার দ্রুতি = ৬ কিমি/ঘ (৩.৭৫ মা/ঘ)
- অলিম্পিকের দৌড়বিদদের দ্রুতি = ৩৬ কিমি/ঘ (২২.৫ মা/ঘ) (১০০ মিটারে গড় দ্রতি)
- ফরাসি মহাসড়কে দ্রুতির সীমা = ১৩০ কিমি/ঘ (৮০ মা/ঘ)
- একটি বোয়িং ৭৪৭-৮ বিমানের ভ্রমণের দ্রুতি = ১০৪৭.৪১ কিমি/ঘ (৬৫০.৮৩ মা/ঘ)
- আকাশপথে সবচেয়ে বেশি দ্রুতি অর্জনের রেকর্ড = ৩,৫২৯ কিমি/ঘ (২,১৮৮ মা/ঘ)
- নভোখেয়াযান যখন ফিরে আসে, তখন তার দ্রুতি = ২৮,০০০ কিমি/ঘ (১৭,৫০০ মা/ঘ)
তথ্যসূত্র
আরও দেখুন
- ভি দ্রুতি
- পল ভিরিলিও