দ্য রিডার (২০০৮-এর চলচ্চিত্র)

দ্য রিডার স্টিভেন ডাল্ড্রি পরিচালিত ২০০৮ সালের মার্কিন প্রণয়ধর্মী নাট্য চলচ্চিত্র। বের্নহার্ড শ্লিঙ্কের ১৯৯৫ সালের জার্মান উপন্যাস ডের ফর্লেসার অবলম্বনে এর চিত্রনাট্য রচনা করেছেন ডেভিড হেয়ার। এতে শ্রেষ্ঠাংশে অভিনয় করেছেন কেট উইন্সলেট, রেফ ফাইঞ্জ, ও ডেভিড ক্রস। এটি অ্যান্টনি মিনজেলাসিডনি পোলাকের প্রযোজিত শেষ চলচ্চিত্র, তারা দুজনেই এই চলচ্চিত্রটি মুক্তির আগেই মারা যান। ২০০৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে চলচ্চিত্রটির নির্মাণ শুরু হয় এবং ২০০৮ সালের ১০ই ডিসেম্বর সীমিত পরিসরে মুক্তি পায়।

দ্য রিডার
প্রেক্ষাগৃহে মুক্তির পোস্টার
The Reader
পরিচালকস্টিভেন ডাল্ড্রি
প্রযোজক
চিত্রনাট্যকারডেভিড হেয়ার
উৎসবের্নহার্ড শ্লিঙ্ক কর্তৃক 
ডের ফর্লেসার
শ্রেষ্ঠাংশে
সুরকারনিকো মুলি
চিত্রগ্রাহক
  • ক্রিস মেনজেস
  • রজার ডিকিন্স
সম্পাদকক্লেয়ার সিম্পসন
পরিবেশকদ্য ওয়েনস্টেইন কোম্পানি
মুক্তি
  • ১২ ডিসেম্বর ২০০৮ (2008-12-12) (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র)
  •  ফেব্রুয়ারি ২০০৯ (2009-02-06) (বার্লিন)
  • ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ (2009-02-26) (জার্মানি)
দৈর্ঘ্য১২৪ মিনিট[1]
দেশ
  • জার্মানি[2]
  • মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
ভাষা
  • ইংরেজি
  • জার্মান
  • গ্রিক
নির্মাণব্যয়$৩২ মিলিয়ন[3]
আয়$১০৮.৯ মিলিয়ন[3]

চলচ্চিত্রটি মিশ্র পর্যালোচনা অর্জন করলেও উইন্সলেট ও ক্রসের অভিনয় প্রশংসিত হয়, এবং উইন্সলেট শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে একাডেমি পুরস্কারসহ অসংখ্য পুরস্কার অর্জন করেন। চলচ্চিত্রটিও শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র বিভাগে একাডেমি পুরস্কারসহ একাধিক পুরস্কারের মনোনয়ন লাভ করে।

কাহিনি সংক্ষেপ

১৫ বছর বয়সী মাইকেল বার্গ রাস্তায় হাটার সময় অসুস্থ হয়ে পড়ে। সে নিকটস্থ অ্যাপার্টমেন্ট ভবনের পাশে দাঁড়িয়ে বমি করে। ট্রাম কন্ডাক্টর হান্না স্মিটজ (কেট উইন্সলেট) কাজ থেকে বাড়ি ফেরার পথে তাকে তার বাড়িতে নিয়ে নিয়ে যায় এবং তাকে পরিষ্কার করে তাকে বাড়ি পাঠিয়ে দেয় মাইকেল আক্রান্ত হয়েছিল এবং তিন মাস শুশ্রূষার পর সে আরোগ্য হয় রোগ মুক্তির পর সে ফুল নিয়ে হান্না কে ধন্যবাদ জানাতে যায়।

৩৬ বছর বয়সী হান্না তাকে প্রলুব্ধ করে এবং তারা প্রেমের সম্পর্কে লিপ্ত হয়। তারা তার অ্যাপার্টমেন্টে একত্রে সময় কাটায় এবং শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হয়। মাইকেল তাকে তার পাঠ্যবইয়ের সাহিত্যকর্মগুলো পড়ে শোনায়। সে মাইকেলের সাথে একটা বাইসাইকেল সফরে যায় এবং সেখান থেকে ফিরে এসে সে জানতে পারে ট্রাম কোম্পানি তাকে কেরানির চাকরিতে পদোন্নতি দিয়েছে। এটা জানার পর সে মাইকেল বা অন্য কাউকে না জানিয়ে সেখান থেকে চলে যায়।

১৯৬৬ সালে মাইকেল হাইডেলবার্গ ইউনিভার্সিটির ল' স্কুলে পড়াশোনা করছে। একটি বিশেষ সেমিনারের অংশ হিসেবে সে অন্যান্য শিক্ষার্থীদের সাথে একটি বিচারকার্য দেখতে যায়। সেখানে ৩০০ ইহুদি নারীকে একটি গির্জার ভেতরে পুড়িয়ে মারার অপরাধে কয়েকজন নারীর বিরুদ্ধে বিচার চলছিল। তারা ১৯৪৪ সালে ক্রাকফের নিকট একটি কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে এস এস গার্ড হিসেবে নিয়োজিত ছিল। মাইকেল সেসব নারীদের মধ্যে হান্নাকে দেখে অবাক হয়।

এই বিচারকার্যের প্রধান সাক্ষ্য ছিলেন ইলানা মাথের। সে ও তার মা (লিয়ানা উলিন) কীভাবে সেই ক্যাম্প থেকে বেঁচে গিয়েছিল তার সাক্ষ্য দেন। সে জানায় হান্না তাকে প্রতি সন্ধ্যায় বই পড়ে শোনাত। অন্যান্য বিবাদীদের মতন হান্না স্বীকার করে সে প্রতিদিন ১০ জনকে বাছাই করত তবে সে গির্জায় আগুন দেয়ার ঘটনা রিপোর্টে স্বাক্ষরের ব্যাপারে কিছু জানে না বলে জানায়। হান্নার সহকর্মীরা বলে হান্না রিপোর্ট সম্পর্কে মিথ্যা বলছে এবং তাদের সকলের হাতের লেখার স্যাম্পল নিতে বলে। হান্না হাতের লেখা দিতে অস্বীকৃতি জানায় এবং তার দোষ স্বীকার করে নেয়।

মাইকেল বুঝতে পারে যে হান্না অশিক্ষিত এবং সে সারাজীবন ধরে এই বিষয়টি গোপন করে আসছে। বাকি রক্ষীরা মূলত তাদের বাঁচাতে লিখিত প্রতিবেদনটি হান্না লিখেছে বলে অভিযোগ করে। মাইকেল তার অধ্যাপককে বিষয়টি জানায়, কিন্তু বিবাদী নিজেই অভিযোগ স্বীকার করেছে বলে অধ্যাপক বুঝতে পারছেন না কি করবেন। মাইকেল হান্নার সাথে সাক্ষাৎ করার অনুমতি পায় কিন্তু তার সাথে দেখা না করেই কারাগার থেকে চলে যায়।

হান্না গির্জায় মৃত্যুর জন্য আজীবন কারাদণ্ড লাভ করে এবং বাকি বিবাদীরা প্রত্যেকে ৪ বছর ৩ মাস জেল খাটার সাজা লাভ করে। মাইকেল (রেফ ফাইঞ্জ) ইতোমধ্যে বিয়ে করে ও তার একটি কন্যা হয় এবং তাদের বিবাহবিচ্ছেদও হয়। তার ও হান্নার সম্পর্কের সময়ে অবস্থানরত তার শৈশবের বাড়ি থেকে কিছু বই এনে সে একটি টেপ রেকর্ডারে বই রেকর্ড করে হান্নাকে পাঠায়। এর মাঝে হান্না কারাগারের গ্রন্থাগার থেকে বই ধার নিয়ে পড়তে শুরু করে এবং মাইকেলের টেপ অনুসরণ করে নিজে নিজে পড়তে ও লিখতে শুরু করে। সে মাইকেলকে চিঠি লিখতে শুরু করে। শুরুতে সংক্ষিপ্ত আকারে বাল্যসুলভ বক্তব্য এবং পরবর্তীকালে তার চিঠিতে ক্রমশ শিক্ষার উন্নতি দেখা যায়।

১৯৮৮ সালে কারাগারের কর্মকর্তা (লিন্ডা ব্যাসেট) মাইকেলকে টেলিফোন করে জানায় হান্না তার সুন্দর ব্যবহারের জন্য সাজার মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার আগেই মুক্তি পাচ্ছে। যেহেতু তার কোন পরিবার বা আত্মীয় নেই সে তার থাকার বন্দোবস্ত করে এবং তাকে একটি চাকরির ব্যবস্থা করে দেয়। কারাগার থেকে মুক্তির আগে মাইকেল তার সাথে দেখা করতে যায় এবং সাক্ষাৎকারে মাইকেল দূরে অবস্থান করে এবং জানতে চায় সে তার অতীত থেকে কি শিখেছে। হান্না উত্তরে বলে, "আমার কেমন লাগছে বা আমি কি ভাবছি তাতে কিছু যায় আসে না। মৃতরা এখনো মৃতই।"

হান্নার মুক্তির দিনে মাইকেল ফুল নিয়ে কারাগারে এসে দেখতে পায় হান্না ফাঁসিতে ঝুলে আত্মহত্যা করেছে। সে একটি টিনের বাক্সে কিছু টাকা রেখে গেছে এবং একটি নোটে লিখে গেছে তার সঞ্চিত অর্থ ইলানার ব্যাংক একাউন্টে জমা করে দিতে। হান্না কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে তার ভয়াবহ অভিজ্ঞতার স্মৃতিকথা পড়েছে।

মাইকেল ইলানার সাথে দেখা করতে নিউ ইয়র্ক সিটিতে যায় এবং হান্নার সাথে তার সম্পর্কের কথা জানায়। সে তাকে হান্নার সুইসাইড নোট ও তার সাক্ষরতার ব্যাপারটি বলে। ইলানা মাইকেলকে বলে ক্যাম্প থেকে শিখার কিছু নেই এবং সে সেই অর্থ নিতে অস্বীকৃতি জানায়। তারপর মাইকেল সাক্ষরতার সাথে জড়িত কোন একটি ইহুদি কল্যাণ সংস্থায় এই অর্থ দান করার পরামর্শ দেয়। ইলানা টিনের বাক্স রেখে দেয়, এটি ঠিক তার আউসভিৎজে হারিয়ে যাওয়া বাক্সটির মত।

মাইকেল তার কন্যা জুলিয়াকে নিয়ে গাড়ি চালিয়ে হান্নার সমাধিতে যায় এবং তাদের গল্প বলার মধ্যে দিয়েই চলচ্চিত্রটি সমাপ্ত হয়।

কুশীলব

  • কেট উইন্সলেট - হান্না স্মিৎজ
  • রেফ ফাইঞ্জ - বয়স্ক মাইকেল বার্গ
  • ডেভিড ক্রস - যুবক মাইকেল বার্গ
  • ব্রুনো গানৎস - অধ্যাপক রোল, ইহুদি গণহত্যা থেকে বেঁচে যাওয়া ব্যক্তি
  • আলেকজান্দ্রা মারিয়া লারা - ইলানা মাদার, কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্প থেকে বেঁচে যাওয়া ব্যক্তি
  • লিয়ানা উলিন - রোজ মাদার, ইলানার মা
  • ভিয়েসনা ফেরকিস - সোফি, বিদ্যালয়ে মাইকেলের বন্ধু
  • ক্যারোলিন হেরফুর্ট - মার্টি, বিশ্ববিদ্যালয়ে মাইকেলের বন্ধু
  • বার্গহার্ট ক্লাউসনার - হান্নার মামলার বিচারক
  • লিন্ডা ব্যাসেট - মিসেস বেনার, কারাগারের কর্মকর্তা
  • হান্না হের্ৎসস্পুং - জুলিয়া, ১৯৯৫ সালে মাইকেল বার্গের কন্যা
  • জিনেট হাইন - ব্রিজিট, ১৯৯৫ সালে মাইকেল বার্গের প্রেমিকা
  • সুজান লোথার - কার্লা বার্গ, মাইকেলের মা
  • মাথিয়াস হাবিশ - পিটার বার্গ, মাইকেলের বাবা
  • ফ্লোরিয়ান বার্থোলমাই - টমাস বার্গ, মাইকেলের ভাই
  • আলিসা ভিল্মস - এমিলি বার্গ, মাইকেলের বোন
  • সিলভেস্টার গ্রোথ - হান্নার মামলার প্রসিকিউটর
  • ফাবিয়ান বুশ - হান্নার মামলার প্রতিরক্ষা আইনজীবী
  • ভোলকার ব্রুচ - ডিটার স্পেনৎস, সেমিনার দলের শিক্ষার্থী

তথ্যসূত্র

  1. "The Reader (15)"ব্রিটিশ বোর্ড অব ফিল্ম ক্লাসিফিকেশন। ২০০৮-১২-০২। সংগ্রহের তারিখ ২৫ নভেম্বর ২০২০
  2. Dargis, Manohla (ডিসেম্বর ৯, ২০০৮)। "Innocence Is Lost in Postwar Germany"দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস। সংগ্রহের তারিখ ২৫ নভেম্বর ২০২০
  3. "The Reader (2008)"বক্স অফিস মোজো। ২০১০-১২-৩০। সংগ্রহের তারিখ ২৫ নভেম্বর ২০২০

বহিঃসংযোগ

টেমপ্লেট:স্টিভেন ডাল্ড্রি

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.