দ্য ডার্টি পিকচার
দ্য ডার্টি পিকচার ২০১১ সালের একটি ভারতীয় জীবনী ও সংগীতবহুল কাহিনী চলচ্চিত্র। ছবিটি সিল্ক স্মিতার জীবন থেকে অনুপ্রাণিত যিনি দক্ষিণ ভারতে উত্তেজক চরিত্রে অভিনয়ের জন্য পরিচিত ছিলেন। অবশ্য নির্মাতারা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন যে গল্পটি একা স্মিতার উপর নির্ভর করে বা আক্ষরিক অর্থে কেবল তারই সম্পর্কে নয় বরং দক্ষিণের তার আরও কিছু সমসাময়িক যেমন ডিস্কো শান্তিকে নিয়েও নির্মিত হয়েছে। এটি হলিউড অভিনেত্রী এবং যৌন প্রতীক মেরিলিন মনরো সহ এই জনপ্রিয় সাংস্কৃতিক মাধ্যমের আরও অন্যান্য মহিলার ব্যক্তিগত জীবনের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।[4] এই সমস্ত ধারণার উপর ভিত্তি করে একতা কাপুর চিত্রনাট্যকার রজত অরোরা কে দিয়ে একটি গল্প প্রস্তুত করান এবং শোভা কাপুর এর সাথে সহ-প্রযোজনার দায়িত্ব নেন। ছবিটি পরিচালনা করেন মিলান লুথরিয়া।[5][6]
দ্য ডার্টি পিকচার | |
---|---|
পরিচালক | মিলান লুথরিয়া |
প্রযোজক | একতা কাপুর শোভা কাপুর |
রচয়িতা | রজত অরোরা |
শ্রেষ্ঠাংশে | |
বর্ণনাকারী | ইমরান হাশমি |
সুরকার | স্কোর: সন্দীপ শিরোদকর সংগীত: বিশাল-শেখর |
চিত্রগ্রাহক | ববি সিং |
সম্পাদক | আকিব আলী |
প্রযোজনা কোম্পানি | বালাজি মোশন পিকচার্স |
পরিবেশক | অলট এন্টারটেইনমেন্ট বালাজি মোশন পিকচার্স, এএ ফিল্মস |
মুক্তি |
|
দৈর্ঘ্য | ১৪৪ মিনিট[1] |
দেশ | ভারত |
ভাষা | হিন্দি |
নির্মাণব্যয় | ₹১৮০ মিলিয়ন (US$ ২.২ মিলিয়ন) |
আয় | ₹ ১.১৭ বিলিয়ন (US$ ১৪.৩ মিলিয়ন)(বিশ্বজুড়ে)[2][3] |
₹১৮০ মিলিয়ন (US$ ২.২ মিলিয়ন) বাজেটে নির্মিত[7] দ্য ডার্টি পিকচার এর হিন্দি, তেলুগু এবং তামিল সংস্করণ বিশ্বজুড়ে মুক্তি পায় ২ ডিসেম্বর ২০১১ (স্মিথার জন্মবার্ষিকী) সালে। [8] প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছেন বিদ্যা বালান, ইমরান হাশমি, নাসিরউদ্দিন শাহ এবং তুষার কাপুর। [9] মুক্তি পাওয়ার পরে ছবিটি সমালোচকদের প্রশংসা লাভ করে এবং বাণিজ্যিক সাফল্যও পায়। অভিনয়ের জন্য বালান সর্বোচ্চ প্রশংসিত হন এবং তাঁকে "চলচ্চিত্রটির নায়ক" হিসাবে অভিহিত করা হতে থাকে।[10] এছাড়াও পুরুষ-অধ্যুষিত সমাজে অনন্য কিছু অবদান রাখতে মহিলা চরিত্রকে এমন শক্তিশালী হিসাবে চিত্রিত করার জন্যও ছবিটি ব্যাপক প্রশংসা লাভ করে।[11] রজত অরোরা রচিত গানের কথায় সংগীতে সুর সংযোজন করেছেন বিশাল শেখর।
দ্য ডার্টি পিকচার এর বিশ্বজুড়ে উপার্জন ₹ ১.১৭ বিলিয়ন (US$ ১৪.৩ মিলিয়ন)।[2][3] এবং লাভ করেছে বেশ কয়েকটি পুরষ্কারও যার মধ্যে বেশিরভাগই সিল্কের চরিত্রায়নের জন্য পেয়েছেন বিদ্যা বালান। ছবিটি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার সহ সেরা অভিনেত্রী, তিনটি ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ডস এবং ছয়টি স্ক্রীন অ্যাওয়ার্ডস সহ সেরা চিত্র এবং সেরা পরিচালক এর সম্মান লাভ করে। বক্স অফিস ইন্ডিয়া চতুর্থ সপ্তাহের পরেই ছবিটিকে সুপার হিট ঘোষণা করে। [12]
পটভূমি
বিয়ের একদিন আগে রেশমা (বিদ্যা বালান চেন্নাই এ তারকা হওয়ার প্রত্যাশায় তার গ্রাম থেকে পালিয়ে আসেন। কিন্তু এক কাস্টিং ডিরেক্টরকে তিনি প্রভাবিত করতে ব্যর্থ হন। আকর্ষণহীন এবং অভিনয়ে অক্ষম বলে তাঁকে অপমান করা হয়। এরপর তিনি সুরক্ষিত চরিত্র পেতে ব্যাকগ্রাউন্ড নর্তকীর স্বতঃস্ফূর্ত অডিশন দিতে শুরু করেন। যাইহোক তার আবেদনময় নাচে ছলাকলা-পূর্ণ দেহ-আন্দোলনের ব্যবহারে চিত্র পরিচালক আব্রাহাম ইমরান হাশমি) বিরক্ত হয়ে ওঠেন এবং রেশমার পুরো নাচের দৃশ্যকে সম্পাদনা করে (সংযত) দেন। তবে ছবিটি বক্স অফিসে সেই ছবিটি ব্যর্থ হয়। হতাশ নির্মাতা সেলভা গণেশ (রাজেশ শর্মা) তখন রেশমার অভিনয় স্মরণ করে তার আসন্ন ছবিতে একটি গানে তাঁকে অভিনয় করান। সেলভা আরও পরামর্শ দেন যে এখন তাঁকে "সিল্ক" হিসাবে উল্লেখ করা হবে যা আরও বিদেশী-বিদেশী শোনাবে এবং মনমুগ্ধকরও হবে।
প্রথম শুটিংয়ে সিল্ক প্রবীণ অভিনেতা এবং তার শৈশবের আইডল সূর্যকান্তের (নাসিরউদ্দিন শাহ) সাথে নাচেন। তার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে সিল্ক দীর্ঘমেয়াদী যৌন সম্পর্কে তার স্নেহ এবং মনোযোগ অর্জন করেন। ইতিমধ্যে সেলভা গণেশকে একটি নতুন চলচ্চিত্রের প্রস্তাব দেন আব্রাহাম এবং সূর্যকান্তকে দিয়ে অভিনয়ের জন্য আগ্রহী হন। তবে চলচ্চিত্রকে আরও বাণিজ্যিকভাবে কার্যকর করার জন্য সূর্যকান্তের যৌনতা যুক্ত করার পরামর্শ আব্রাহামকে ক্ষুব্ধ করে তোলে। তবে সিল্কের নাম আস্তে আস্তে ইন্ডাস্ট্রিতে ছড়িয়ে পড়ে এবং সূর্যকান্তের সাথে আরও অনেক যৌন উত্তেজক চলচ্চিত্র করতে শুরু করেন যা অচিরেই তাঁকে স্টারডমে রূপান্তরিত করে তোলে।
সূর্যকান্তের ছোট ভাই রামকান্ত (তুষার কাপুর) সিল্কের একজন ভক্ত। ক্রমে তার সাথে সিল্কের বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। তার প্রতি সিল্কের ভাললাগার বিকাশ হলে সিল্ক বুঝতে পারেন তিনিই তার জীবনে প্রথম ব্যক্তি যাঁর প্রতি তার ভালোবাসা তার শারিরীক এবং যৌন আবেদনের চেয়েও বেশি। একটি পুরস্কার অনুষ্ঠানে যখন সিল্কের অভিনয়ের প্রশংসা করা হচ্ছিল তখন সূর্যকান্ত তাঁকে অপমান করে বলেন যে তিনি সবার "নোংরা রহস্য" ছাড়া আর কিছুই নন। এই মন্তব্যে মর্মাহত সিল্ক ঘোষণা করে যে তিনি তার এই "নোংরা ছবি" বানাতে থাকবেন এবং এটি করার জন্য তার মনে কোনও সংশয় নেই। তিনি রামকান্তের সাথে আরও বেশি সময় কাটাতে শুরু করেন এবং প্রখ্যাত সাংবাদিক নায়লা (অঞ্জু মাহেন্দ্রু) উভয় ভাইয়ের সাথে রোমান্টিক সম্পর্কের জন্য সিল্কের সমালোচনা করে তাঁকে ট্যাবলয়েড গসিপের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করে তোলেন। কেলেঙ্কারী এড়াতে এবং প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য সূর্যকান্ত তার আসন্ন ছবিগুলি থেকে সিল্ককে বাদ দেন এবং তাঁকে ছোট অজানা চলচ্চিত্র নির্মাতাদের সাথে কাজ করতে বাধ্য করেন। সিল্ক তার কাজের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলতে থাকেন এবং একজন নবীন উচ্চাকাঙ্ক্ষী অভিনেত্রী শাকিলার জন্য ভীত হতে শুরু করেন। একটি চ্যালেঞ্জে পূর্ণ নাচের দৃশ্য গ্রহণের সময় তিনি ইচ্ছাকৃতভাবে শাকিলাকে ল্যাঙ মারেন। রামকান্ত বিব্রত হয়ে তাঁদের সম্পর্ক শেষ করার সিদ্ধান্ত নেন।
এই হৃদয়বিদারক ঘটনায় এবং তার পরিবার থেকে প্রত্যাখ্যাত হয়ে সিল্ক অ্যালকোহলিক এবং চেইন স্মোকার হয়ে ওঠেন। তার ওজন বেড়ে যায় যার। ফলে যৌন প্রতীক হিসাবে তার মর্যাদা হ্রাস পেতে থাকে। একত্রে ছবি নির্মাণের প্রস্তাব নিয়ে সিল্ক গণেশের কাছে যান। শেষ পর্যন্ত দর্শক এবং চলচ্চিত্রশিল্প ততোদিনে তার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। ফলে ছবিটি ব্যর্থ হয়। অপরদিকে আব্রাহাম পরিচালিত একটি ছবি বিশাল হিট হওয়ায় আব্রাহাম মনে করেন যে অবশেষে তিনি সিল্ককে (এবং নিজেই) প্রমাণ করেছেন যে তার চলচ্চিত্রগুলি সফল হওয়ার জন্য কোনও যৌনতার দরকার পড়ে না। খ্যাতি এবং সৌভাগ্য হারিয়ে সিল্কের মনে এত ঘৃণা জমে যে তিনি যে কোনও ভূমিকা নিতে এক স্বল্প দৈর্ঘের চলচ্চিত্র নির্মাতার কাছে হাজির হন। সিল্ক স্তম্ভিত হয়ে দেখেন যে তাঁকে একটি পর্ণোগ্রাফিক চিত্রের প্রস্তাব করা হয়েছে যা তিনি তখনই প্রত্যাখ্যান করেন। কিন্তু তাঁকে অ্যালকোহলে নেশাগ্রস্ত করে তার অনুমতি ছাড়াই চিত্রগ্রহণ শুরু হয়ে যায়। পুলিশ এই সময়ে জায়গাটিতে অভিযান চালালে সিল্ক কোনওক্রমে পালাতে সক্ষম হন।
প্রথমে অস্বীকার করলেও আব্রাহাম নিজে টের পান যে তিনি সিল্কের প্রেমে পড়েছেন। এই নৈতিক দ্বিধা নিয়ে তার মনে প্রতিনিয়ত সংগ্রাম চলতে থাকে। ফোনে কথোপকথনের সময়ে আব্রাহামকে সিল্ক যখন তার জন্য সবার কাছে বিদায় জানাতে বললেন তখন তিনি আশঙ্কিত হয়ে পড়েন। আতঙ্কিত আব্রাহাম ছুট্টে সিল্কের বাড়ি গিয়ে আবিষ্কার করেন অতিরিক্ত ঘুমের বড়ি খেয়ে সিল্ক মৃত অবস্থায় তার বিছানায় পড়ে আছেন এবং সঙ্গে পাওয়া যায় তার নিজের লেখা একটি সুইসাইড নোট।
ফিল্মটি আব্রাহামের বর্ণনার মধ্য দিয়ে শেষ হয়। সিল্ক যে জীবন চালিত করে এসেছেন তা পরীক্ষা করে আব্রাহামের মনে শুধু এই প্রশ্নই জাগ্রত হয় - তার (সিল্ক) বা তার জীবন ঠিক ছিল নাকি ভুল।
তথ্যসূত্র
- "The Dirty Picture (15)"। British Board of Film Classification। ১৩ অক্টোবর ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২১ মার্চ ২০১৩।
- "Boxofficeindia.com"। Boxofficeindia.com। ৫ নভেম্বর ২০১২। ৭ অক্টোবর ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৪ অক্টোবর ২০১৩।
- "2011 Worldwide Figures"। boxofficeindia। ২৩ জানুয়ারি ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০ জানুয়ারি ২০১১।
- "Vidya Balan has a unique sex-appeal: Milan Luthria"। The Times of India। ১ ডিসেম্বর ২০১১। ১০ ডিসেম্বর ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১ ডিসেম্বর ২০১১।
- Talukdar, Tanya। "Dirty Picture chose me: Milan Luthria"। Daily News and Analysis। India। ১৫ এপ্রিল ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১১ এপ্রিল ২০১১।
- "'Silk' makes Vidya Balan a jubilee heroine in city, News – City – Ahmedabad Mirror, Ahmedabad Mirror"। Ahmedabadmirror.com। ২৪ মে ২০১২। ১৯ জুলাই ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩১ মে ২০১২।
- Dubey, Rachana। "The Dirty Picture creates first day buzz"। HT Media Ltd.। ৪ ডিসেম্বর ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩ ডিসেম্বর ২০১১।
- "'The Dirty Picture' hits screens on Silk Smitha's birthday"। CNN-IBN। ৩ ফেব্রুয়ারি ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৭ আগস্ট ২০১১।
- Prakash (১ ডিসেম্বর ২০১১)। "Actress Vidya Balan | The Dirty Picture | Tamil Audience"। Oneindia.in। ২ অক্টোবর ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০ ডিসেম্বর ২০১১।
- ""Hero" Vidya enjoys the attention"। NDTV Movies। ১৫ এপ্রিল ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০ মার্চ ২০১২।
- S, Arpana। "Bollywood woman power"। HT Media Ltd.। ১০ ডিসেম্বর ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৩ ডিসেম্বর ২০১১।
- "Boxofficeindia.com"। BoxofficeIndia.com। ১০ ডিসেম্বর ২০১১। ৩ জুন ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৪ ডিসেম্বর ২০১১।