দ্য কনসার্ট ফর বাংলাদেশ (অ্যালবাম)
'দ্য কনসার্ট ফর বাংলাদেশ' – মূলত শিরোনাম ছিল 'দ্য কনসার্ট ফর বাংলা দেশ' হল একটি লাইভ ট্রিপল অ্যালবাম, যা অ্যাপল রেকর্ডস কর্তৃক মুক্তি পেয়েছিল। অ্যালবামটিতে কণ্ঠশিল্পী ছিলেন জর্জ হ্যারিসন ও তার বন্ধুরা। এটি ১৯৭১ সালের ডিসেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রে ও ১৯৭২ সালের জানুয়ারিতে ব্রিটেনে মুক্তি পেয়েছিল। মূলত অ্যালবামের গানগুলো সাজানো হয়েছিল একই নামে ১৯৭১ সালের ১লা আগস্টে নিউ-ইয়র্কের ম্যাডিসন গার্ডেন স্কয়ারের দুটি কনসার্ট থেকে যেখানে গান পরিবেশন করেছিলেন হ্যারিসন, বব ডিলন, রবিশঙ্কর, আলী আকবর খান, রিংগু স্টার, বিলি প্রিস্টন, লিওন রাসেল ও এরিক ক্ল্যাপটন। কনসার্টটির প্রাথমিক উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের শরনার্থী বাঙালিদের জন্য অর্থ সংগ্রহ করা যা পরবর্তীতে বিভিন্ন চ্যারিটি মাল্টি কালচারাল রক সংস্কৃতিতে রুল মডেল হয়ে উঠে। এই কনসার্ট থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে ১৯৮৫ সালে লাইভ এইড ও ২০০১ সালের দ্য কনসার্ট ফর নিউ ইয়র্ক সিটি অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
দ্য কনসার্ট ফর বাংলাদেশ | ||||
---|---|---|---|---|
জর্জ হ্যারিসন ও বন্ধুরা কর্তৃক লাইভ অ্যালবাম | ||||
মুক্তির তারিখ | ডিসেম্বর ২০, ১৯৭১ (যুক্তরাষ্ট্র) জানুয়ারি ১০, ১৯৭২ (যুক্তরাজ্য) | |||
শব্দধারণের সময় | ১৯৭১ সালের ১লা আগস্ট, ম্যাডিসন স্কোয়ার গার্ডেন, নিউ ইয়র্ক | |||
ঘরানা |
| |||
দৈর্ঘ্য | ৯৯:৩২ | |||
সঙ্গীত প্রকাশনী | অ্যাপল | |||
প্রযোজক |
| |||
জর্জ হ্যারিসন কালক্রম | ||||
| ||||
বিকল্প প্রচ্ছদ | ||||
বিকল্প প্রচ্ছদ |
ফিল স্পেক্টরের সহ-প্রযোজনায়, লাইভ উপস্থাপনায় ধারণ করা ওয়াল অব সাউন্ড পদ্ধতির এই অনুদান সংগ্রহকারী অ্যালবামের মুক্তি তিন মাসের জন্য আটকে ছিল, হ্যারিসন ও ক্যাপিটল এবং কলম্বিয়া/সিবিএস নামের দুটি রেকর্ড কোম্পানির মধ্যে দীর্ঘ আলোচনার ফলে। রেকর্ড কোম্পানি দুটি তাদের ব্যবসায়িক ইন্টারেস্ট রক্ষার ব্যাপারে সচেষ্ট ছিল। লাইভ কনসার্টের প্রধান অংশগ্রহণকারী শিল্পী ছাড়াও এই রেকর্ডিং-এ অন্তর্ভুক্ত ছিল ব্যাডফিঙ্গার, জিম হর্ণ, ক্লাউস ভোরম্যান, আল্লা রাখা খান, জিম ক্যাল্টনার, জেসি এড ডেভিস ও ক্লাউদিয়া লিনার। অ্যালবামের সাথে প্যাকেজ হিসেবে মূল কনসার্টের ৬৪ পৃষ্ঠার ছবি সংবলিত একটি বই ছিল। অ্যালবামের প্রচ্ছদ নকশা করেন টম উইলকিস; প্রচ্ছদে দেখা যায় একজন রুগ্ন শিশু সামনে খালি থালা নিয়ে বসে রয়েছে।
মুক্তির পরপরই 'কনসার্ট ফর বাংলাদেশ' অ্যালবামটি সমালোচকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে ও বাণিজ্যিকভাবে সফলতা লাভ করে। অ্যালবামটি পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের টপ চার্টে স্থান করে নেয় ও ১৯৭৩ সালের মার্চে বছরের সেরা অ্যালবাম হিসেবে গ্র্যামি অ্যাওয়ার্ডের জন্য মনোনীত হয়। ১৯৭২ সালে একই থিম নিয়ে অ্যাপল রেকর্ডের তৈরি ও সল সুইমারের পরিচালনায় কনসার্ট ফর বাংলাদেশ চলচ্চিত্রের সাথে এই অ্যালবামটির মাধ্যমে সেসময় ভারতীয় শাস্ত্রীয় সংগীত সবচেয়ে বেশি পশ্চিমা শ্রোতার কাছে পৌঁছায়। ২০০৫ সালে অ্যালবামটি নতুন মোড়কে পুনঃমুক্তি দেওয়া হয়।
অ্যালবামটি মুক্তির পর থেকেই অ্যালবামটি সম্পর্কে বিভিন্নজন বিভিন্ন মন্তব্য লিখতে থাকেন; এর মধ্যে লেখক টম মুন বর্ণনা করেন, “যখনই আপনার বিশ্বাস সঙ্গীতের শক্তির উপর হ্রাস পেতে শুরু করে..”[1]। 'কনসার্ট ফর বাংলাদেশ' অ্যালবামটির বিক্রির অর্থে এখন বিরতিহীনভাবে ইউনিসেফের 'জর্জ হ্যারিসন ফান্ড' লাভবান হচ্ছে, যা ২০১১ সালে অ্যালবামটির ৪০তম বার্ষিকীতে আফ্রিকার শিং ক্যাম্পেইনে শিশুদের জন্য $১.২ মিলিয়ন ডলার অর্জিত হয়।
কনসার্টসমূহ
সম্পূর্ণ শোটাকেই একটা ভাগ্যের জোড় বলতে হবে। আমি রিঙ্গোর সাহায্যে কিছু রিহার্সাল করেছি, ব্যাডফিঙ্গার হতে হর্ন বাদক, কিন্তু ঘটনাগুলো ঘুব দ্রুতই ঘটে যায় যে এটা খুবী দারুণ ছিল আমরা আমাদের লাইভ অ্যালবামের জন্য টেপে যে কোন কিছু ধরে রাখার ব্যবস্থা করতে পেরেছিলাম।[2]
– মিউজিশিয়ান ম্যাগাজিনের কাছে জর্জ হ্যারিসন, নভেম্বর ১৯৮৭
১৯৭১-এ লস এঞ্জেলসে থাকাকালীন সময়ে, সে সময়ে পূর্ব পাকিস্তান নামে পরিচিত দেশটির সম্পর্কে বন্ধু ও সঙ্গীতজ্ঞ রবি শঙ্করের কাছ থেকে জানার পরিস্থিতির গুরুত্ব অনুধাবন করার পর ,[3] জর্জ হ্যারিসন নিউ ইয়র্কের ম্যাডিসন স্কয়ার গার্ডেনে যুদ্ধ-বিদ্ধস্থ ও দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত দেশটির জন্য ত্রাণ সংগ্রহে দুটি তহবিল-সংগ্রহকারী কনসার্টের আয়োজন করে।[4] এই তড়িৎ প্রস্তুতির মধ্যক্ষণে,[5] তিনি বাঙ্গালীর সমস্যার প্রতি মনোযোগ আকর্ষণ করার জন্য "বাংলা দেশ" নামক গানটি কম্পোজ করেন, এবং শোর চারদিন আগে চ্যারিটি সিঙ্গেল হিসেবে অ্যালবামের তড়িৎ মুক্তি দেন।[6][7] তার ত্রয়ী এ্যালবাম, অল থিংস মাস্ট পাস্ট এর সাম্প্রতিক সফলতার উচ্চ শিখরে আরোহণের পর,[8][9] হ্যারিসন ১৯৭১ এর পহেলা আগস্ট একটি অল-স্টার ইউনিসেফ বেনিফিট কনসার্টের ব্যবস্থা করেন, যার পেছনে ছিল[10] ২৪ জন মিউজিশিয়ান ও সঙ্গীতশিল্পী সদস্য।[11] সমানভাবে উল্লেখযোগ্য হল সহযোগী প্রাক্তন-বিটল সদস্য রিঙ্গো স্টার ও বব ডিলান, যাদের উভয়ই, হ্যারিসনের ন্যায়, যারা বেশ কয়েক বছর যাবত কনসার্টের দর্শকদের মুখোমুখি হননি।[12][13] ডিলানের ক্ষেত্রে, এটা ছিল পাঁচ বছরের ইউএস কনসার্ট স্টেজের তার প্রথম উপস্থিতি,[14] এবং বিকেলের শো-তে সেগমেন্টের মধ্যক্ষণে আগমনের পূর্ব পর্যন্ত ইভেন্টে তার অংশগ্রহণ অনিশ্চিত ছিল।[15]
অনুমিত ১ কোটি শরণার্থী সমস্যা প্রায় আন্তর্জাতিক সচেতনতা বৃদ্ধিতে কনসার্টটি ব্যাপকভাবে সফল হয়েছিল[3][16][17] – এবং ২৪৩,০০০ ইউএস ডলারেরও অধিক মূল্যের একটি চেক খুব দ্রুত ত্রাণ হিসেবে ইউনিসেফে প্রেরণ করা হয়।[18] গণমাধ্যম রক আলট্রায়িজমের (rock altruism) অগ্রদূত হিসেবে হ্যারিসনের ব্যাপারে উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করে[19][20] "ষাটের দশকের স্বর্গীয় উদ্যম এখনো দ্যুতিময় রয়েছে" তার প্রমাণ হিসেবে ইভেন্টের প্রশংসা করে, যা রোলিং স্টোন ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হয়। [21] ম্যাডিসন স্কয়ার গার্ডেনে গ্যারি কেলগ্রেন কর্তৃক রেকর্ড প্লান্টের সিক্সটিন ট্রাক মোবাইল ইউনিটের সাহায্যে পরিচালিত কনসার্ট রেকর্ডিং-এর সময়,[22][23] হ্যারিসন ইভেন্টের অ্যাপল রেকর্ডসের লেবেলের অধীনে একটি লাইভ এ্যালবামের মাধ্যমে বিটলসের আরও অধিক তহবিল সংগ্রহের সংকল্প করেন,[24] যার ধারাবাহিকতায় দ্য কনসার্ট ফর বাংলাদেশ শিরোনামে অ্যাপল ফিল্মসের অধীনে কনসার্ট প্রামাণ্যচিত্র নির্মিত হয়।[25]
টীকা
তথ্যসূত্র
- Tom Moon, 1,000 Recordings to Hear Before You Die, Workman Publishing Company (New York, NY, 2008); quoted in The Super Seventies "Classic 500", The Concert For Bangla Desh – George Harrison and Friends (retrieved 24 May 2012).
- টিমোথি হোয়াইট, "জর্জ হ্যারিসন: রিকন্সিদারড", মিউজিসিয়ান ম্যাগাজিন, নভেম্বর ১৯৮৭, পৃ. ৫৫।
- Lavezzoli, p. 187.
- Clayson, p. 308.
- Lavezzoli, p. 189.
- Leng, pp. 112, 114.
- Madinger & Easter, pp. 434–35.
- Neal Alpert, "George Harrison's Concert for Bangladesh", Gadfly Online, 3 December 2001 (archived from the original on 3 March 2012; retrieved 3 March 2016).
- Lavezzoli, pp. 187, 189.
- Leng, p. 115.
- Schaffner, pp. 146–47.
- জেন ওয়েনারের সঙ্গে কনসার্ট ফর বাংলাদেশ রিভিসিতেটেড-এ সাক্ষাৎকারে
- The Editors of Rolling Stone, p. 154.
- Tillery, p. 99.
- Interviews with Kofi Annan and Charles J. Lyons, in The Concert for Bangladesh Revisited.
- Inglis, p. 36.
- Tillery, pp. 100–01.
- Schaffner, p. 148.
- Badman, p. 45.
- Rodriguez, p. 51.