দৌলতপুর উপজেলা, কুষ্টিয়া
দৌলতপুর উপজেলা বাংলাদেশের কুষ্টিয়া জেলার একটি উপজেলা। এর সর্ব পূর্বের সীমান্তবর্তী গ্রাম মহিষকুন্ডি এবং সবথেকে পশ্চিমে রয়েছে আল্লাহরদর্গা
দৌলতপুর | |
---|---|
উপজেলা | |
দৌলতপুর দৌলতপুর | |
স্থানাঙ্ক: ২৪°০′১২″ উত্তর ৮৮°৫২′২৭″ পূর্ব | |
দেশ | বাংলাদেশ |
বিভাগ | খুলনা বিভাগ |
জেলা | কুষ্টিয়া জেলা |
জাতীয় সংসদ | ৭৫নং আসন কুষ্টিয়া-১ |
সরকার | |
• সাংসদ | আ ক ম সারোয়ার জাহান বাদশা (বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ) |
আয়তন | |
• মোট | ৪৬১ বর্গকিমি (১৭৮ বর্গমাইল) |
জনসংখ্যা (২০০১)[1] | |
• মোট | ৪,৪৩,৯৬০ |
• জনঘনত্ব | ৯৬০/বর্গকিমি (২,৫০০/বর্গমাইল) |
সময় অঞ্চল | বিএসটি (ইউটিসি+৬) |
প্রশাসনিক বিভাগের কোড | ৪০ ৫০ ৩৯ |
ওয়েবসাইট | প্রাতিষ্ঠানিক ওয়েবসাইট |
অবস্থান ও আয়তন
দৌলতপুর উপজেলা কুষ্টিয়া জেলার অধীনে একটি উপজেলা। দৌলতপুর উপজেলার আয়তন ৪৬১বর্গ কিলোমিটার। এর উত্তরে রাজশাহী জেলার বাঘা উপজেলা ও নাটোর জেলার লালপুর উপজেলা, দক্ষিণে মেহেরপুর জেলার গাংনী উপজেলা ও মিরপুর উপজেলা, পূর্বে ভেড়ামারা উপজেলা ও মিরপুর উপজেলা, পশ্চিমে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ।
ইতিহাস
১৯৮৩ সালে দৌলতপুর থানাকে উপজেলা হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ১৯৭১ সালের ৩রা ডিসেম্বর দৌলতপুরে মুক্তিবাহিনী ও পাক হানাদার বাহিনীর মধ্যে একটি লড়াই সংঘটিত হয়। এতে বহু লোক হতাহত হয়। দৌলতপুর উপজেলায় মুক্তিযুদ্ধের সময়কার ৬টি গণকবর রয়েছে। এছাড়া এখানে মুক্তিযুদ্ধের স্মরণে একটি সৌধ নির্মাণ করা হয়েছে। দৌলতপুর উপজেলায় মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের নামে ১০ টি রাস্তার নামকরণ করা হয়েছে। শেরপুর নামক গ্রামে এই উপজেলার সব চেয়ে বড় যুদ্ধ সংঘটিত হয়। এই যুদ্ধে পাকিস্তান বাহিনী পরাজয় বরন করে।
ভৌগোলিক উপাত্ত
নদ-নদী
দৌলতপুর উপজেলায় ২টি নদী রয়েছে। নদীগুলো হচ্ছে পদ্মা নদী ও মাথাভাঙ্গা নদী।[2][3] এছাড়া হিশনা-ঝাঞ্চা নদী নামের আরো একটি নদী দৌলতপুর উপজেলার মাঝ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।
সাংষ্কৃতিক বৈশিষ্ট্য
ভাষা
দৌলতপুরে মানুষের মুখের ভাষা মিষ্টি ভাষা হিসেবে খুবই পরিচিত। এ অঞ্চলের মানুষের ভাষা অনেকাংশেই বাংলা প্রমিত ভাষার মতো।
উৎসব
এখানে ধর্ম বর্ণ মিলে মিশে ঈদ, পূজা পালন করা হয়।
খেলাধুলা
খেলাধুলায় কিছুটা পিছিয়ে আছে তবে আল্লারদর্গা বাজারের পাশে একটি স্টেডিয়াম নির্মাণাধীন আছে, শিঘ্রই নির্মাণ সম্পন্ন হবে , এতে এই অঞ্চলের খেলাধুলার উন্নতি হবে বলে আশা করা যায়।
প্রশাসনিক এলাকা
১৬১টি মৌজা ও ২৪২টি গ্রাম নিয়ে গঠিত দৌলতপুর উপজেলায় ১৪টি ইউনিয়ন রয়েছে।
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড
- আদাবাড়ীয়া ইউনিয়ন -০৬
- আড়িয়া ইউনিয়ন -১৩
- খলিষাকুন্ডি ইউনিয়ন -৪৭
- চিলমারী ইউনিয়ন -২৭
- দৌলতপুর ইউনিয়ন, দৌলতপুর (কুষ্টিয়া) -৩৩
- পিয়ারপুর ইউনিয়ন -৬৭
- প্রাগপুর ইউনিয়ন -৮১
- ফিলিপনগর ইউনিয়ন -৭৪
- বোয়ালিয়া ইউনিয়ন -২০
- মথুরাপুর ইউনিয়ন -৬১
- মরিচা ইউনিয়ন -৫৪
- রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়ন -৮৮
- রেফাইতপুর ইউনিয়ন -৯৪
- হোগলবাড়ীয়া ইউনিয়ন -৪০
জনসংখ্যার উপাত্ত
২০০১ সালের বাংলাদেশ আদমশুমারী অনুযায়ী দৌলতপুর উপজেলার জনসংখ্যা ৪,৪৩,৯৬০ জন। এর মধ্যে ৫১.৪২ শতাংশ পুরুষ ও বাকী ৪৮.৫৮ শতাংশ নারী। উপজেলার আঠারোর্ধ জনসংখ্যা ১,৭৮,৫৩৯ জন। এখানকার সাক্ষরতার হার ৬৫.৫% (৭+ বছর বয়সী) যেখানে জাতীয় পর্যায়ে সাক্ষরতার হার ৬২.৪%।[4]
- ধর্ম
মোট জনসংখ্যার ৯৯.২৮% মুসলিম ও ০.৭২% অন্যান্য ধর্মাবলম্বী। এখানে ১৬০ টি মসজিদ , ১ টি মন্দির ও ১ টি গির্জা রয়েছে।
স্বাস্থ্য
স্বাস্থ্য চিকিৎসা দিক দিয়ে কিছুটা পিছিয়ে, তবুও এখানে আছে ৫০ বেডের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেস, এছাড়া আছে প্রতি ওয়ার্ডে একটি করে কমিওনিটি ক্লিনিক।
শিক্ষা
দৌলতপুর উপজেলার সাক্ষরতার হার ৬৭%; যার মধ্যে ৭৩% পুরুষ ও ৬১% মহিলা। এই উপজেলার রয়েছেঃ
- সরকারি কলেজ ১ টি,
- মহাবিদ্যালয়ঃ ১১টি,
- মাধ্যমিক বিদ্যালয়ঃ ৪৫টি,
- সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ঃ ১০৫টি,
- বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ঃ ৮২টি,
- মাদ্রাসাঃ ৩৫টি,
- সরকারি ভকেশনাল প্রশিক্ষন কেন্দ্রঃ ১টি এবং
- এতিমখানাঃ ১টি।
উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: দৌলতপুর কলেজ, মহিষকুন্ডি কলেজ, পিপলস কলেজ, হোসেনাবাদ টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজ, নুরুজ্জামান বিশ্বাস ডিগ্রী কলেজ, দৌলতপুর সরকারি পাইলট মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়, দৌলতখালী মাধ্যমিক বিদ্যালয়।
কৃষি
দৌলতপুর উপজেলা তামাক চাষের জন্যে বিশ্ব বিখ্যাত। এখানে প্রচুর তামাক উৎপাদন হয় যা দেশের চাহিদা পুরণ করে বিদেশে রপ্তানি করা হয়। উল্লেখ্য, উপজেলার আমদহ, দীঘলকান্দি, দৌলতখালী, হরিণগাছি (পাইকপাড়া),পিয়ারপুর, রিফাইতপুর এলাকায় শতকরা প্রায় শতভাগ জমিতে তামাক চাষ হয়। এছাড়া তারাগুনিয়া ও মথুরাপুর এলাকায় প্রচুর শাক-সবজি উৎপাদন হয়, যা স্থানীয় চাহিদা পুরণ করে ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য অঞ্চলে পাঠানো হয়। তাছাড়া, ধান, পাট, চীনাবাদামও এ অঞ্চলে প্রচুর পরিমানে উৎপাদিত হয়।
অর্থনীতি
- শিল্প-প্রতিষ্ঠান
- এই উপজেলা যেমন কৃষিতে এগিয়ে তেমনি শিল্প প্রতিষ্ঠানে অনেক উন্নত। এখানে বিশ্বাস পরিবাবের বেশ কয়েক টি বড় শিল্প প্রতিষ্ঠান আছে, যেমন, নাসির টোব্যাকো ইন্ডাস্ট্রিজ, নাসির বিড়ি,নাসির সিগারেট, রকেট ম্যাচ,২ স্টার ম্যাচ, বায়েজিদ অটো রাইস মিল ইত্যাদি কল কারখানা, এগুলোতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে আনুমানিক ১ লক্ষাধিক লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে। এছাড়া অনেক ছোট ছোট কল কারখানা আছে।
যোগাযোগ ব্যবস্থা
- সড়কপথ
- কুষ্টিয়া শহর থেকে সরাসরি সড়ক পথে দৌলতপুরে যাওয়া যায়। প্রতি ১০ মিনিট পর পর বাস যায়।
- রেলপথ
- দৌলতপুরে কোন রেলপথ নেই।দৌলতপুর বাসির দীর্ঘ দিনের দাবি এখানে রেলপথ স্থাপন করা জন্যে এছাড়াও এখানে একটি স্থলবন্দর (প্রাগপুর) এর জন্য অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
উল্লেখযোগ্য ব্যক্তি
- শাহ আজিজুর রহমান: বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী।
- রাধা বিনোদ পাল: আইনবিদ এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ছিলেন।
- এ্যাডভোকেট আ কা ম সরওয়ার জাহান বাদশাহ্ এম পি তিনি ২০১৮ সালে ৩০ এ ডিসেম্বর সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। কুষ্টিয়া সরকারী কলেজ সংসদের ভিপি ছিলেন।
- প্রকৌশলী খিজির খান: বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড(পিডিবি) এর চেয়ারম্যান ছিলেন।
- মোহাম্মদ কোরবান আলী -সাবেক খাদ্য প্রতিমন্ত্রী।
- আহসানুল হক (পচামোল্লা) - জেলা বিএনপি সাবেক সভাপতি, সাবেক ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী।
- রেজাউল হক চৌধুরী- বাংলাদেশের কুষ্টিয়া-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য।
- সালমা আক্তার- সঙ্গীত শিল্পী।
- শফি মন্ডল- জনপ্রিয় বাউল শিল্পী
- আফাজউদ্দিন আহমেদ -সাবেক সংসদ সদস্য।
দর্শনীয় স্থান ও স্থাপনা
এই উপজেলায় দর্শনীয় স্থান, ফিলিপনগর পদ্মার নদী পাড় । ফিলিপনগরের পদ্মা নদীর চর।নাসির সিগারেট ফ্যাক্টরি, রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়ন সীমান্তে পদ্মা নদীর ব্লক ঘাট,হিসনা পাড় আর প্রাগপুর স্থল বন্দর দেখার মত স্থান।
প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ
হোসেনাবাদ রাজবাড়ী, মহিষকুন্ডি নীলকুঠি, রেফায়েতপুর জমিদার বাড়ি,ভাদুর আকরা,আবেদ মাঝির ঘাট,ইসলামপুর জিরো পয়েন্ট,ছালা বাবার দরবার, পাগলের মেলা সিরাজনগর।
আরও দেখুন
তথ্যসূত্র
- গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার (জুন ২০১৪)। "এক নজরে দৌলতপুর"। বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়ন। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি ও বেসিস। ৬ মার্চ ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৭ জানুয়ারী ২০১৫।
- ড. অশোক বিশ্বাস, বাংলাদেশের নদীকোষ, গতিধারা, ঢাকা, ফেব্রুয়ারি ২০১১, পৃষ্ঠা ৩৯০, আইএসবিএন ৯৭৮-৯৮৪-৮৯৪৫-১৭-৯।
- মানিক মোহাম্মদ রাজ্জাক (ফেব্রুয়ারি ২০১৫)। বাংলাদেশের নদনদী: বর্তমান গতিপ্রকৃতি। ঢাকা: কথাপ্রকাশ। পৃষ্ঠা ৬১২। আইএসবিএন 984-70120-0436-4।
- "Population Census Wing, BBS."। ২৭ মার্চ ২০০৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ November 10। অজানা প্যারামিটার
|accessyear=
উপেক্ষা করা হয়েছে (|access-date=
ব্যবহারের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে) (সাহায্য); এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন:|সংগ্রহের-তারিখ=
(সাহায্য)