দৈর্ঘ্য
জ্যামিতিক পরিমাপে, দৈর্ঘ্য হল একটি বস্তুর সর্বশেষ বর্ধিত মাত্রা।[1] আন্তর্জাতিক পরিমাপ ব্যবস্থা অনুসারে দৈর্ঘ্য হল সেই পরিমাণ যা মাত্রার দূরত্বকে প্রকাশ করে। অন্যভাবে বলতে গেলে "দৈর্ঘ্য" হল, একটি বস্তুর মাত্রার পরিমাপক। উদাহরণস্বরূপ, একটি তারকে এর দৈর্ঘ্য বরাবর এমনভাবে কাটা যেতে পারে যাতে এটি এর পুরুত্বের চেয়ে ছোট হয়।
দৈর্ঘ্যকে অবশ্যই আলাদা চিন্তা করতে হবে উচ্চতা থেকে, যা উল্লম্ব দিকে পরিমাপ ব্যবস্থা এবং প্রস্থ বা প্রসার থেকে, যেটি দূরত্বের পরিমাপ প্রকাশ করে পাশাপাশি দুটি প্রান্তের মধ্যে যা বস্তুর দৈর্ঘ্যের সাথে সমকোণে থাকে। দৈর্ঘ্য হল শুধুমাত্র একটি মাত্রার পরিমাপক, অপরদিকে ক্ষেত্রফল হল দুইটি মাত্রার পরিমাপ (দৈর্ঘ্যের বর্গগুণ) এবং আয়তন হল তিনটি মাত্রার পরিমাপ (দৈর্ঘ্যের ঘনফল)। অধিকাংশ পরিমাপ ব্যবস্থায়, দৈর্ঘ্যের এককটি হল ভিত্তি একক, যেটি থেকে অন্যান্য এককের সংজ্ঞায়ন করা হয়।
ইতিহাস
পরিমাপ ব্যবস্থা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে যখন থেকে মানুষের যাযাবর জীবনযাপন থেকে বসতি স্থাপন শুরু করে এবং নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার শুরু করে, জমির মালিকানার নিয়ম তৈরি হয় ও প্রতিবেশীদের সঙ্গে ব্যবসা শুরু করে। যেহেতু সমাজ আরও প্রযুক্তিমূখী হয়ে উঠছে, তাই বহুমুখী কাজের ক্ষেত্রগুলোতে আরও সূক্ষ্ম পরিমাপ ব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তা ক্রমবর্ধমান হারে বাড়ছে, যার রেঞ্জ মাইক্রো - ইলেকট্রনিক্স থেকে অন্তরীক্ষ পর্যন্ত।[2]
দৈর্ঘ্য পরিমাপে ব্যবহৃত প্রাচীনতম এককটি প্রাচীন বিশ্বে পরিচিত ছিল "এক হাত" পরিমাপ হিসাবে যার পরিমাণ ছিল বাহুর কনুই থেকে আঙুলের ডগা পর্যন্ত। এই পরিমাপকে এরপর আরও ভেঙ্গে ছোট মাপ যেমন ফুটে পরিণত করা হত, হাত (৪ ইঞ্চির হাত আজও ঘোড়ার উচ্চতা প্রকাশ করার জন্য ব্যবহার করা হয়) বা আঙ্গুল কিংবা দুটি একই সাথে দীর্ঘ দূরত্ব মাপার একক হিসাবে ব্যবহৃত হয়। মানুষের বিভিন্ন মাপের হাতের কারণে এই দীর্ঘ দূরত্বের মাপ যথেষ্ট পরিবর্তন হতে পারে।
আলবার্ট আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতা তত্ত্ব প্রকাশিত হবার পর থেকে দৈর্ঘ্যকে সকল রেফারেন্স তলে আর পরম ভাবা হয় না। এ কারণে কোন একটি রেফারেন্স তলে থাকা এক মিটার লম্বা স্কেল অপর একটি রেফারেন্স তলে সমান হয় না যদি সেটি প্রথম তলের সাথে আপেক্ষিক বেগে চলতে থাকে। এর মানে হল একটি বস্তুর দৈর্ঘ্য পরিবর্তনশীল হতে পারে পর্যবেক্ষকের অবস্থানের উপর নির্ভর করে।
একক
ব্যবহারিক বিজ্ঞান এবং ইঞ্জিনিয়ারিং এর ক্ষেত্রে, যখন একজন "দৈর্ঘ্যের একক" এর কথা বলে, তখন "দৈর্ঘ্য" শব্দ দ্বারা "দূরত্ব" কে বুঝানো হয়। দৈর্ঘ্য পরিমাপে ব্যবহার করা হয় এমন বেশ কিছু একক রয়েছে। অতীতে, দৈর্ঘ্যের এককের মাপ বের করা হত মানব দেহের অংশের দৈর্ঘ্যের পরিমাপ থেকে, দূরত্ব অতিক্রম করতে কত কদম ফেলতে হয়, পৃথিবীর বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান বা জায়গাগুলি মধ্যে দূরত্ব, বা ইচ্ছামত কিছু সুনির্দিষ্ট বস্তুর দৈর্ঘ্যের উপর।
আন্তর্জাতিক একক পদ্ধতি (এসআই) অনুসারে, দৈর্ঘ্যের মৌলিক একক হল মিটার এবং যা এখন আলোর গতি পরিপ্রেক্ষিতে সংজ্ঞায়িত করা হয়। সেন্টিমিটার এবং কিলোমিটার, মিটার থেকে উদ্ভূত করা হয়, এগুলোও সর্বজনীনভাবে ব্যবহৃত একক। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রচলিত একক, ইংরেজি বা ইম্পেরিয়াল একক ব্যবস্থার সাধারণভাবে ব্যবহৃত দৈর্ঘ্যের একক হল ইঞ্চি, ফুট, গজ এবং মাইল।
মহাশূন্যের বিশালতা মধ্যে দূরত্ব বোঝাতে, জ্যোতির্বিদ্যায় সাধারণত পৃথিবীতে ব্যবহৃত এককের তুলনায় অনেক বড় একক ব্যবহার করা হয় এবং জ্যোতির্বিদ্যার এককের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত আলোকবর্ষ এবং পারসেক।
আরও দেখুন
তথ্যসূত্র
- Princeton.edu
- History of Length Measurement, National Physical Laboratory