দেবল

হিন্দু ধর্মে দেবল একজন অন্যতম ঋষি ছিলেন।তিনি নারদব্যাসের মতো এক মহান ঋষি হিসেবে ভগবদগীতা (১০.১৩) তে অর্জুনের দ্বারা উল্লেখিত হয়েছেন। [1]

সুতো হাতে দেবল মুনি

দেবাঙ্গ পুরাণ অনুসারে তিনি হলেন দেবাঙ্গ সম্প্রদায়ের পূর্বসূরি।তিনি "অগ্নি মনু" নামে পরিচিত ব্যক্তি। তিনি প্রথম তাঁতি যিনি সবার জন্য কাপড় বোনেন। এতে পোশাকের চাহিদা বেড়ে যায়। দেবল মুনি ভগবান শিবের হৃদয় বা তৃতীয় চোখ থেকে উৎপন্ন হন পোশাক তৈরি করতে এবং বিশ্বকে বুনন শেখানোর জন্য ।

তাঁতি

ভগবান বিষ্ণুর নাভিপদ্ম থেকে সুতা পেয়ে তিনি যখন ফিরছিলেন তখন পাঁচ রাক্ষসের একটি দল তাকে আক্রমণ করেছিল। সেটি ছিল এক অন্ধকার রাত এবং রাক্ষসরা শক্তিশালী ছিল। তিনি ভগবান বিষ্ণুর চক্রের সাহায্যে লড়াই করতে চেষ্টা করছিলেন । কিন্তু ব্যর্থ হয়ে আত্মরক্ষার জন্য যোগমায়ার কাছে প্রার্থনা করেছিলেন। দেবী সেখানে হাজির হন। তার মাথায় ছিল উজ্জ্বল মুকুট, হাতে ত্রিশুল এবং অন্যান্য অস্ত্র । তিনি সিংহের পিঠে আরোহণ করেছিলেন। তিনি তাদের হত্যা করেছিলেন । তাদের রক্ত সাদা, কালো, লাল, সবুজ এবং হলুদ বর্ণের ছিল। দেবল মুনি রঙিন রক্তে সুতো ভেজালেন। পরবর্তীতে দেবীর নতুন নাম হয় চৌদ্দেশ্বরী বা সৌদেশ্বরী( মানে উজ্জ্বলতা )। তিনি প্রতি অমাবস্যা রাতে দেবল মুনিকে তাঁর উপাসনা করার পরামর্শ দিয়েছিলেন।

দেবল মুনি দক্ষিণ হিমালয় গিয়েছিলেন ।তিনি সাগর রাজ্যের মালিক ছিলেন। যার রাজধানী ছিল আমোদ নগর। তিনি নতুন পোশাক বোনেন ।সেগুলো তিনি ত্রিমূর্তি, ত্রিদেবী, দেব, অসুর, গন্ধর্ব, কিন্নর এবং সাধারণ মানুষকে দিয়েছিলেন। তিনি দেহের বিভিন্ন অংশগুলি ঢাকতে জামাকাপড় দিয়েছিলেন তাই তার সম্প্রদায়ের নাম দেবাঙ্গ (অঙ্গ= দেহের অংশ) সম্প্রদায়।

বিবাহ

তিনি সূর্যদেবের কনিষ্ঠ বোন দেবাধূতাকে বিয়ে করেছিলেন। তিনি সূর্যের প্রথম আত্মীয় হয়েছিলেন ।পরে আধি শেষের মেয়ে চন্দ্ররেখাকে বিয়ে করেছিলেন। দেবাঙ্গ সম্প্রদায়ের লোকদেরকে শেদার / জেন্দার বলা হয় (শেষাকে তামিল ভাষায় শেদা বলে সম্বোধন করা হয়)। পরবর্তীতে তিনি অসুর বক্রদন্তের কন্যা অগ্নিধূতাকে বিয়ে করেন। দেবল মুনিকে অনুসরণকারী লোকেরা দেবাঙ্গ বা দেবাঙ্গর নামে পরিচিত। তার পূজ্য প্রধান দেবতা হলেন শ্রী রামলিঙ্গ সৌদেশ্বরী আম্মান ।

দেবল স্মৃতি

তিনি দেবল স্মৃতি রচনা করেছিলেন ।এতে তিনি ভিন্নধর্মে চলে যাওয়া হিন্দুদের নিজধর্মে ফিরিয়ে আনতে এবং ভিন্নধর্মের মানুষকে হিন্দুধর্ম গ্রহণেরপদ্ধতি লিপিবদ্ধ করেন ।যা শুদ্ধি বা ঘরওয়াপসি নামে ও পরিচিত। সিন্ধুতে সমুদ্রতীরে দেবল নগরে অন্য ঋষিদের সাথে এক সম্মেলনে তিনি এই গ্রন্থ রচনা করেন।[2] [3]সিন্ধুতে মুসলিম আক্রমণের থেকে ভারতে উদ্ভূত ধর্মান্তর সমস্যার সমাধানের জন্য এর সাহায্য নেয়া হয়েছিল। এর রচনা ৭ম শতাব্দী থেকে ১০ম শতাব্দীর মধ্যে । এটিতে মাত্র ৯৬ টি শ্লোক রয়েছে। সিন্ধু ইসলামিক শাসনে চলে যাওয়ার পরে যখন উত্তর-পশ্চিম ভারতের লোকেরা মুসলমান হতে শুরু করেছিল তখন তাদের হিন্দু সমাজে ফিরে আসার সুবিধার্থে এই স্মৃতি ব্যবহার করা হয়েছিল। মনুস্মৃতি এবং যাজ্ঞবল্ক্য স্মৃতিতে ধর্মান্তরিত মানুষের নিজ ধর্মে ফিরে আসার কোনও রকম উপায় ছিল না।

যাজ্ঞবল্ক্য রচিত 'মিতাক্ষর', 'অপারর্ক', 'স্মৃতিচন্দ্রিকা' ইত্যাদি গ্রন্থে দেবল মুনির উল্লেখ রয়েছে। একইভাবে দেবল স্মৃতি থেকে অনেক উদ্ধৃতি 'মিতাক্ষর' এ নেওয়া হয়েছে। 'স্মৃতিচন্দ্রিকা'-তে দেবল স্মৃতি থেকে ৪৮ বছর ধরে ব্রহ্মচরিত দায়িত্ব পালন করা, ব্রহ্মচর্য পালন করা, স্ত্রীর কর্তব্য ইত্যাদি বিষয়ে উদ্ধৃতি নেওয়া হয়েছে।

'দেবল স্মৃতি' নামে ৯০ শ্লোকের একটি বই আনন্দশ্রমে ছাপা হয়েছে। কেবলমাত্র প্রায়শ্চিত্তের পদ্ধতির কথা সেই বইয়ে উল্লেখ করা হয়েছে।এর মাধ্যমে স্বধর্মে ফিরে আসা যায়। তবে সেই বইটিতে অন্যান্য স্মৃতি থেকে নেওয়া শ্লোকদের সংকলন করা হয়েছে। এসবের রচনাকালও খুব প্রাচীন হবে। কারণ এই স্মৃতির ১-২-২২ শ্লোক এবং ৩০-৩১ শ্লোক বিষ্ণুকে উদ্দেশ্য করে । যা অপারর্কে বলা হয়েছে। অপারর্ক ও স্মৃতিচন্দ্রিকায়, 'দেবল স্মৃতি' থেকে দায় বিভাগ, স্ত্রীধন থাকা এক মহিলার শক্তি ইত্যাদি সম্পর্কে উদ্ধৃতি নেওয়া হয়েছে। এ থেকে এটি প্রতীয়মান হয় যে স্মৃতিকর দেবল, বৃহস্পতি, কাত্যায়ন প্রভৃতি অবশ্যই সমসাময়িক ছিলেন।

তথ্যসূত্র

  1. "கீதையில் தேவலர்"devangakula.org (Tamil ভাষায়)।
  2. "পাতা:প্রবাসী (ত্রয়োবিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৬০৯ - উইকিসংকলন একটি মুক্ত পাঠাগার"bn.wikisource.org। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৬-২৫
  3. "সম্পাদক সমীপেষু: খণ্ড খণ্ড করবেন না"www.anandabazar.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৬-২৫

 

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.