দুঃসাহসী টিনটিন কমিকসের চরিত্রসমূহ

বেলজীয় কার্টুনিস্ট হার্জের সৃষ্টি দুঃসাহসী টিন‌টিন কমিকস সিরিজের কাল্পনিক চরিত্রগুলোর তালিকা এখানে দেয়া হয়েছে। চরিত্রগুলো বর্ণানুক্রমিকভাবে বিন্যাস্ত করা হয়েছে তিনটি শ্রেণীতে: প্রধান চরিত্র, প্রতিপক্ষ এবং সহায়ক চরিত্র। তালিকার শুরুতে ২৪টি অ্যালবামের প্রতিটির জন্যে একটি চরিত্রসূচীও যোগ করা হয়েছে।

হার্জের আঁকা দুঃসাহসী টিন‌টিন কমিকসের প্রধান এবং কিছু সহায়ক চরিত্র। মাঝ বরাবর আছে টিনটিনকুট্টুস (পান্না কোথায় কমিকস থেকে)।

হার্জের সৃষ্ট সহায়ক চরিত্রগুলো প্রধান চরিত্রদের থেকেও অনেক বেশি বিকশিত এবং পরিপুষ্ট, তাদের চারিত্র্য-শক্তি ও ব্যক্তিত্বের গভীরতায়, চার্লস ডিকেন্সের চরিত্রগুলোর মতোই।[1] হার্জ এদের ব্যবহার করেছিলেন তার প্রধান চরিত্রগুলোর জন্যে একটি বাস্ববানুগ জগৎ গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে।[2] আর সিরিজে বাস্তবিকতা এবং ধারাবাহিকতার প্রয়োজনে চরিত্রগুলো পুনরাবৃত্ত হয়েছে।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালে যখন জার্মানরা বেলজিয়াম দখল করে এবং সেখানে বিভিন্ন বিধিনিষেধ আরোপ করে তখন হার্জ বাধ্য হয়ে কমিকসে রাজনৈতিক উপাদান পরিহার করেন এবং চরিত্রায়ণের দিকে বেশি মনোযোগ দিতে থাকেন। পাঠকদের কাছ থেকেও ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়।[3] ফলে এ সময়েই একে একে সৃষ্টি হয় টিনটিনের বর্ণময় প্রধান চরিত্র, দুর্বৃত্ত প্রতিপক্ষ এবং অনেক শক্তিমান সহায়ক কুশীলব।[4][5]

বই অনুসারে চরিত্রের সূচী

সোভিয়েত দেশে টিনটিন


কঙ্গোয় টিনটিন


আমেরিকায় টিনটিন


ফারাওয়ের চুরুট


নীলকমল


কানভাঙা মূর্তি


কৃষ্ণদ্বীপের রহস্য


ওটোকারের রাজদন্ড


কাঁকড়া রহস্য


আশ্চর্য উল্কা


বোম্বেটে জাহাজ


লাল বোম্বেটের গুপ্তধন


মমির অভিশাপ


সূর্যদেবের বন্দী


কালো সোনার দেশে


চন্দ্রলোকে অভিযান


চাঁদে টিনটিন


ক্যালকুলাসের কাণ্ড


লোহিত সাগরের হাঙর


তিব্বতে টিনটিন


পান্না কোথায়


ফ্লাইট ৭১৪


বিপ্লবীদের দঙ্গলে


বর্ণশিল্প রহস্য

প্রধান চরিত্র

টিনটিন

কুট্টুস

ক্যাপ্টেন হ্যাডক

প্রফেসর ক্যালকুলাস

জনসন ও রনসন

বিয়াঙ্কা কাস্তাফিয়ার

রাস্তাপপুলাস

চ্যাং চোং-চেন

নেস্টর

জ়লিয়ন ওয়াগ

প্রতিপক্ষ

ফ্লাইট ৭১৪ কমিকসের একটি প্যানেল, ছবিতে দেখা যাচ্ছে: হান্স বোয়েমস্পল্ডিং পাশাপাশি ক্যাপ্টেন হ্যাডকটিনটিন

আল কাপোন

আল কাপোন শিকাগোর একজন ক্রাইম বস এবং কঙ্গোয় টিনটিনআমেরিকায় টিনটিন-এর মূল খলনায়ক। আমেরিকায় তার প্রতিদ্বন্দী ছিল ববি স্মাইলস। আল কাপোন কঙ্গোতে হীরা চোরাকারবারি করে আফ্রিকার হীরা উৎপাদনের নিয়ন্ত্রণ পেতে চেয়েছিল। টিনটিনের কারণে তার কাজ ভেস্তে যায়। পরে আমেরিকাতে সে তার গুণ্ডাদের দিয়ে টিনটিনকে ধরে আনে। কিন্তু টিনটিন তাদেরকে কুপোকাৎ করে বেঁধে ফেলে, তবে আল কাপোন পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়।[6]

আল কাপোন চরিত্রটি সত্যিকারের শিকাগোর গ্যাংস্টার আল কাপোনের অনুকরণে তৈরি। 1931 সালে হার্জ যখন চরিত্রটি আঁকেন, তখনও সে বেঁচেছিলো।[6] এটি ছিল সিরিজের শেষ বাস্তব চরিত্র যেটায় আসল নাম ব্যবহার করা হয়েছে।

আলোনসো পেরেজ ও রামন বাদা

আলোনসো পেরেজরামন বাদা ছিল কানভাঙা মূর্তি-র মূল খলনায়ক। তারা আরামবায়াদের একটি বিগ্রহের ভেতরে লুকিয়ে রাখা হীরার সন্ধান করছিল। ইঞ্জিনিয়ার পেরেজ হলো নেতা আর রামন সহযোগী। রামন একজন ছুরি-নিক্ষেপক হলেও তার নিক্ষিপ্ত ছোরা প্রায়শই লক্ষ্যবিচ্যুত হয়। কথাবার্তায় সে পেরেজের চেয়ে বেশি স্পেনিশ ব্যবহার করে। শেষদৃশ্যে টিনটিনের সাথে হাতাহাতির সময় তারা সমুদ্রে পড়ে যায় আর দেখা যায় ডানাওয়ালা শয়তানেরা তাদেরকে নরকে নিয়ে যাচ্ছে।

অ্যালান থম্পসন

অ্যালান থম্পসন বা সংক্ষেপে অ্যালান অপরাধীদের সহযোগিতাকারী আমেরিকান ব্যবসায়ী ও জাহাজের নাবিক, প্রায়ই চোরাচালান এবং অন্যান্য অপরাধে জড়িত থাকে।

অ্যালান ছিল মূলত কাঁকড়া রহস্যতে ক্যাপ্টেন হ্যাডকের বিশ্বাসঘাতক ফার্স্টমেট। ক্যাপ্টেনকে মদ খাইয়ে মাতাল করে রেখে গোপনে জাহাজে করে আফিম পাচার করে ওমর বেন সালাদের কাছে। হার্জ পরে ফারাওয়ের চুরুট পুনরাঙ্কনের সময় তাতে অ্যালানের চরিত্রটি ঢুকিয়ে দেন, যদিও মূল সংস্করণে তা ছিল না। পরের বছর হার্জ লোহিত সাগরের হাঙর-এ তাকে রাস্তাপপুলাসের সহযোগী রূপে দেখান। সেখানে তার জাহাজে করে আফ্রিকান লোকদের ধরে নিয়ে ক্রীতদাস হিসেবে বেচাকেনা করা হতো। ফ্লাইট ৭১৪তে সে হয়ে ওঠে রাস্তাপপুলাসের মূল দোসর। সেখানে সান্দোনেশীয়রা তাকে খুব মারধোর করে আর তার সব দাঁত ফেলে দেয়। এদিকে দ্বীপে আগ্নেয়গিরির বিস্ফোরণ হলে অন্য অপরাধীদের সাথে সেও রবারের ডিঙিতে সাগরে ভেসে পড়ে। তখন একদল এলিয়েন এসে তাদেরকে সম্মোহিত করে মহাকাশযানে উঠিয়ে অজানা গন্তব্যে নিয়ে যায়।

ইভ রোডিয়ারের সমাপ্তকৃত বর্ণশিল্প রহস্যতে দেখা যায় রাস্তাপপুলাসের মতো সেও ফিরে এসেছে এবং অপরাধজগত ছেড়ে যুক্তলাষ্ট্রে ডাকপিয়নের চাকরি নিয়েছে। তবে রাস্তাপপুলাসের মৃত্যুর পর পুলিশ তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে।

দি অ্যাডভেঞ্চার্স অব টিনটিন চলচ্চিত্রে অ্যালান চরিত্রে রূপ দিয়েছেন ড্যানিয়েল মেইজ।

ইভান

ইভান কৃষ্ণদ্বীপের রহস্যে অসৎ মানসিক ডাক্তার ডঃ মুলারের শোফার এবং তার দক্ষিণহস্তস্বরূপ।

এন্ডাডিন আকাশ

এন্ডাডিন আকাশ একজন আধ্যাত্মিক গুরু এবং অসমাপ্ত কমিকস বর্ণশিল্প রহস্যর প্রধান খলনায়ক। এ সম্ভাবনা খুব বেশি যে, সে আসলে ছদ্মবেশী রাস্তাপপুলাস। তার নামটা হার্জ নিয়েছেন ব্রুসেলসের ম্যারল উপভাষা থেকে।

ওমর বেন সালাদ

ওমর বেন সালাদ কাঁকড়া রহস্যতে একজন আরব সওগাদর। ফরাসী মরোক্কোর কাল্পনিক বন্দর-নগরী বাঘারে তার বিরাট ব্যবসা। এক দোকানদার জানায় যে ওমর বেন সালাদ বাঘারের সবচেয়ে বড় ধনী, তার আছে নিজস্ব প্রাসাদ, চাকরবাকর, জমিজিরাত, গাড়িঘোড়া এবং নিজস্ব বিমান।

টিনটিন আবিষ্কার করে যে সে একটি মাদক-চোরাকারবারি চক্রের নেতা যারা কাঁকড়ার টিন ব্যবহার করে আফিম পাচার করে। কাহিনীর শুরুতে টিনটিন যখন অ্যালানদের হাতে ধরা পড়েছিল তখন ওমর তাকে জলে ডুবিয়ে মারার আদেশ দেয়। পরবর্তীতে টিনটিন তার গোপন গুদামে আফিম খুঁজে পায় এবং পুলিশের কাছে ধরিয়ে দেয়। জানা যায় যে ওমরের চোরাকারবার দূর প্রাচ্যেও বিস্তৃত ছিল।

ওমরের শহর 'বাঘার' নামটি ফরাসী 'ব্যাগার'-এর কাছাকাছি যার অর্থ 'ঝগড়া' বা 'লড়াই'। ওমর আরবিতে সুপরিচিত নাম তবে 'ওমর সালাদ' অনেকটা 'হোমার্দ সালাদ' (গলদা চিংড়ির সালাদ)-এর সদৃশ।

দি অ্যাডভেঞ্চার্স অব টিনটিন চলচ্চিত্রে ওমর বেন সালাদের চরিত্রায়ণ করেছেন গাড এলমালেহ। সেখানে ওমর কোনো ষড়যন্ত্রে জড়িত থাকে না, কেবল তার প্রাসাদে বিয়াঙ্কা কাস্তাফিয়রের গানের অনুষ্ঠান হয়।

কর্নেল আলভারেজ

কর্নেল আলভারেজ বিপ্লবীদের দঙ্গলে-তে জেনারেল টাপিওকার সহকারী হিসেবে থাকে। সান থিওডোরসে ক্যাপ্টেন হ্যাডক ও প্রফেসর ক্যালকুলাসের আগমনে সে তাদের অধ্যর্থনা জানায় এবং তাদের অ্যাপার্টমেন্টে নিয়ে যায়। তার বন্ধুভাবাপন্নতা ও ভালোমানুষীতে ক্যাপ্টেন মুগ্ধ হলেও পরে জানা যায় যে সে ছিল কর্নেল স্পঞ্জের ষড়যন্ত্রের অংশ। তারা ষড়যন্ত্র করে টিনটিন, ক্যাপ্টেন হ্যাডক ও প্রফেসর ক্যালকুলাসকে মারতে চাইলেও টিনটিনেরা বেঁচে যায়, আলভারেজ এতে তার লোকদের ওপর রেগে ওঠে। অবশ্য গল্পের শেষে যখন জেনারেল টাপিওকা ক্ষমতাচ্যুত হয়, সে জেনারেল আলকাজারের পক্ষে চলে যায়, এমনকি টাপিওকার ফাঁসি না হওয়ায় হতাশাও প্রকাশ করে। পরে সে টিনটিন ও হ্যাডককে সাহায্য করে জনসন রনসনকে বাঁচাতে যারা কিনা আরেকটু হলেই ফায়ারিং স্কোয়াডে নিহত হতো। বিয়াঙ্কা কাস্তাফিয়ার ও তার সঙ্গীদের মুক্ত করতেও সে সহযোগিতা করে।

কর্পোরাল ডায়াজ

কর্পোরাল ডায়াজ ছিল জেনারেল আলকাজারের সেনাবাহিনীর একজন কর্নেল (কানভাঙা মূর্তি)। আলকাজারকে সে জানায় যে তাদের বাহিনীতে কর্পোরাল সংখ্যা কম, তখন আলকাজার তাকে কর্পোরাল পদে নামিয়ে দেয় এবং টিনটিনকে কর্নেল করে। প্রতিশোধপরায়ণ ডায়াজ বারবার তাদের মারতে চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়। একসময় ট্রিকলারের মিথ্যা অভিযোগ শুনে আলকাজার টিনটিনকে বরখাস্ত ও মৃত্যুদণ্ড দেয় এবং ডায়াজকে পুনর্বহাল করে। কিন্তু ঠিক সেসময় ডায়াজ শেষবারের মতো বোমা পাঁততে করতে গিয়ে মারা যায়।

গিবনস

মি. ডব্লিউ. আর. গিবনস চীনে নিয়োজিত বড় এক আমেরিকান কোম্পানির ইস্পাত ব্যবসায়ী (নীলকমল)। সে দেখতে মোটা, হইচই করা স্বভাব এবং গোঁড়া বর্ণবাদী। এক মাঝবয়সী চীনা রিকশাওয়ালাকে সে মারতে গেলে টিনটিন তাকে বাধা দেয়। পরে সে "অক্সিডেন্টাল প্রাইভেট ক্লাব"-এ গিয়ে তার বন্ধু পুলিশপ্রধান ডসনকে এ ব্যাপারে বলে। এসময় ক্লাবের এক চীনা ওয়েটারকেও সে মারধোর করে। পরবর্তীতে ফেরারী টিনটিনকে সে আবার দেখতে পেয়ে পুলিশকে জানায়, কিন্তু পুলিশ টিনটিনকে না পেয়ে গিবনকেই জেলে পুরে দেয়। ঘটনাক্রমে আরেকবার টিনটিনের সাথে তার দেখা হয়। এবার সে ঠিকই তাকে ধরিয়ে দেয়।

অসমাপ্ত বর্ণশিল্প রহস্যয় টিনটিন ও হ্যাডক এক দ্বীপে অবস্থিত ভিলায় বিয়াঙ্কা কাস্তাফিয়ারের সাথে সাক্ষাতের সময় সেখানে অতিথিদের মধ্যে গিবনসও ছিল। কাস্তাফিয়ার তার সম্পর্কে বলে যে "উনি একজন ইমপোর্ট-এক্সপোর্ট"।

চিকিটো

চিকিটো বা রুপাক ইনকা হুয়াকো একজন বিশুদ্ধ রক্তের পেরুভীয় কেচুয়া এবং ইনকাদের অন্যতম শেষ বংশধর। তাকে প্রথমে মমির অভিশাপ-এ জেনারেল আলকাজারের সহকারী হিসেবে দেখা গেলেও পরে সূর্যদেবের বন্দিতে জানা যায় যে সে একজন সক্রিয় ইনকা সদস্য।

চিকিটো জেনারেল আলকাজারের ছুরি খেলার সহকারী, কিন্তু এর আড়ালে জেনারেলের অজান্তে সে একে একে কয়েকজন বিজ্ঞানীর বাড়িতে আক্রমণ করে। সন্ডার্স-হার্ডিম্যান অভিযাত্রী দলের সদস্য এই বিজ্ঞানীরা তার পূর্বপুরুষ ইনকাদের সমাধিতে খোঁড়াখুড়ি করেছিল। চিকিটো তাদের ঘরে বা অফিসে ঢুকে একরকম স্ফটিকের গোলক ভেঙে রেখে যায়। গোলকের মধ্যস্থ কোকা-উদ্ভূত মাদক তাদেরকে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন করে দেয় এবং দুঃস্বপ্ন দেখায়। ডাক্তাররা তাদের সুস্থ করতে ব্যর্থ হন।

একরাতে চিকিটো ক্যালকুলাসের বন্ধু প্রফেসর তারাগেঁর ঘরে ঢুকে শেষ গোলকটা ভেঙে চিমনী দিয়ে পালিয়ে যায়। যাবার সময় সে বিজ্ঞানীদের উদ্ধারকৃত ইনকা মমি রাসকার কাপাকের অলঙ্কারগুলোও খুলে নিয়ে যায়। পালানোর সময় পুলিশের গুলীতে আহত হয়ে সে একটি গাছে আশ্রয় নেয়। পরদিন ভোরে প্রফেসর ক্যালকুলাস গাছতলায় মমির একটি ব্রেসলেট খুঁজে পেয়ে হাতে পরে। এই অপরাধে চিকিটো তাকে অপহরণ করে এবং বলিদানের জন্য পাচাকামাক জাহাজে করে পেরুতে নিয়ে যায়। পরবর্তীতে সূর্যদেবের বন্দিতে দেখা যায় ক্যালকুলাসকে উদ্ধারের জন্য টিনটিন রাতের আঁধারে জাহাজে ওঠে, কিন্তু চিকিটো তাকে ধরে ফেলে। তখন টিনটিন জাহাজ থেকে সাগরে লাফিয়ে পড়ে সাঁতরে চলে আসে। তাদের শেষ দেখা হয় সূর্যদেবের মন্দিরে, যেখানে চিকিটো ও ইনকারা টিনটিন ও তার সঙ্গীদের পুড়িয়ে মারার আয়োজন করে, যদিও টিনটিনের বুদ্ধিতে তা ব্যর্থ হয়। শেষপর্যন্ত চিকিটো সূর্য-রাজপুত্রের আদেশে বিজ্ঞানীদেরকে অভিশাপ থেকে মুক্তি দেয়।

জাম্বো

জাম্বো কাঁকড়া রহস্যয় কারাবুজান জাহাজে অ্যালানের এক সহকারী। অ্যালান তাকে বলে জানলা দিয়ে টিনটিন আসলে তাকে ধরার জন্য, কিন্তু টিনটিন বাঙ্কের তলা থেকে বেরিয়ে জাম্বোকে বেঁধে রেখে যায়।

মূল সিরিজে জাম্বো ছিল আফ্রিকান কালো ছেলে, কিন্তু হার্জের আমেরিকান প্রকাশকেরা এরূপ সাদা-কালো মিশ্রণে আপত্তি করে। ফলে হার্জ জাম্বো এবং আরেকজন নাবিককে আরব হিসেবে আঁকেন। তবে তাদের কথাগুলো না পাল্টানোয় দেখা যায় যে হ্যাডক আরব নাবিককে 'নিগ্রো' বলে ডাকছে।

জেনারেল টাপিওকা

জেনারেল টাপিওকা জেনারেল আলকাজারের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী স্বৈরাচারী সেনানায়ক। সান থিওডোরসের সেনাবাহিনীতে তারা উভয়ই জেনারেল এবং একে অন্যকে হটিয়ে রাষ্ট্রক্ষমতা দখলে ব্যস্ত। শেষবার বিপ্লবীদের দঙ্গলে-তে দেখা যায় সে আলকাজারের কাছে পরাজিত হয় আর তাকে বর্দুরিয়ায় নির্বাসন দেয়া হয়।

ট্রিকলার

(ফরাসী: Chicklet)

মি. আর. ডব্লিউ. ট্রিকলার বিবেকবর্জিত এক আমেরিকান ব্যবসায়ী যে দক্ষিণ আমেরিকার সান থিওডোরসে জেনারেল আমেরিকান অয়েল কোম্পানির প্রতিনিধি। ট্রিকলার চেষ্টা করছিল সান থিওডোরকে দিয়ে যুদ্ধ লাগিয়ে পাশের দেশের গ্রান চাপো অঞ্চল দখল করিয়ে সেখানে তেল কোম্পানির ইজারা নিতে। এছাড়া যুদ্ধ বাঁধালে তার সহযোগী ব্যাসিল বাজারভ দুদেশের কাছে অস্ত্র বিক্রি করেও লাভবান হবে।

ট্রিকলার নুয়েভো রিকোর সাথে যুদ্ধ বাঁধাবার জন্য জেনারেল আলকাজারকে রাজি করাতে টিনটিন ঘুষ সাধে। টিনটিন প্রত্যাখ্যান করায় সে গুপ্তঘাতক লাগিয়ে তাকে খুন করানোর চেষ্টা করে এবং ব্যক্তিগতভাবে সাক্ষাৎ করে আলকাজারকে যুদ্ধে রাজি করায়, সাথে টিনটিনের নামে শত্রুদের পক্ষে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগ করে, আলকাজার তা বিশ্বাস করে টিনটিনকে মৃত্যুদন্ডের আদেশ দেয়। তবে শেষপর্যন্ত গ্রান চাপোতে তেলের কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি।

ট্রিকলারকে ক্যালকুলাসের কাণ্ডতে হোটেল স্নোরে দেখা যায়, সম্ভবত অস্ত্রব্যবসার কাজে সে সেখানে গিয়েছিল।

বর্ণশিল্প রহস্যতে টিনটিন ও হ্যাডক বিয়াঙ্কা কাস্তাফিয়রের আমন্ত্রণে এক ভিলায় বেড়াতে গলে সেখানে অনেক অতিথির মধ্যে ট্রিকলারেরও দেখা পায়। কাস্তাফিয়র পরিচয় করিয়ে দিয়ে বলে যে, "এক গুরুত্বপূর্ণ তেল কোম্পানির পরিচালক"।

ডসন

মি. জে. এম. ডসন নীলকমল-এ সাংহাই আন্তর্জাতিক উপনিবেশের দুর্নীতিগ্রস্ত ব্রিটিশ পুলিশ-চীফ। তার বন্ধু আমেরিকান ব্যবসায়ী গিবনসকে টিনটিন উপযুক্ত শিক্ষা দিলে সে টিনটিনকে কয়েদ করে পুলিশ দিয়ে তাকে মার লাগাবার ব্যবস্থা করে। পরবর্তীতে টিনটিনের আপত্তি সত্ত্বেও নিরপেক্ষ এলাকা থেকে তাকে সে জাপানিদের হাতে তুলে দেয়। তবে শেষে অনিচ্ছাসত্ত্বেও টিনটিনের সম্মানে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তাকে উপস্থিত থাকতে হয়।

লোহিত সাগরের হাঙর-এ তাকে আরো খারাপ ভূমিকায় দেখা যায়। সেখানে সে রাস্তাপপুলাসের পৃষ্ঠপোষকতায় মি. দেব্রে (ফরাসী: M. Dubreuil) ছদ্মনামে জেনারেল টাপিওকা এবং জেনারেল আলকাজার দুজনের কাছেই অস্ত্র বিক্রি করে। টিনটিন ও হ্যাডকের খেমেদে প্রবেশে সে বাধাদান করে এবং ওআদের ফিরতি বিমানে বোমা পেতে রাখে। তার পরিকল্পনা ব্যর্থ হয় এবং পরে তার ভাগ্য অজানা, সম্ভবত সে গ্রেপ্তার হয়েছিল।

ডসনকে পরে আর কোথাও না দেখা গেলেও অসমাপ্ত বর্ণশিল্প রহস্যতে তার কয়েকটি স্কেচ ছিল রামো নাশের আর্ট প্রদর্শনীর দর্শনার্থী হিসেবে। অ্যানিমেশন সিরিজগুলোতে কেবল জনসন-রনসনের সাথে কথাবার্তা বাদে তার ভূমিকা একেবারে ছেঁটে দেয়া হয়েছে।

ডঃ মুলার

ডঃ মুলার এক জার্মান মনোবিজ্ঞানী, যে তার পরিচয়ের আড়ালে অনেক অপরাধমূলক কাজ করে, যেমন- রোগীদের অপচিকিৎসা, জাল টাকা ছাপানো এবং অপরাধীদের পক্ষে যুদ্ধ করা। হার্জ বলেছেন, মুলার "এমন এক রাস্তাপপুলাস যে নিজের জীবনও বিপন্ন করতে পারে"। মুলার মাঝেমধ্যে ব্যাভারীয় গালি 'ক্রুজটার্কেন' ব্যবহার করে, ফলে ধারণা করা যায় যে সে অস্ট্রিয়া বা ব্যাভারিয়ার লোক, তবে সে সুইস, দক্ষিণ টিরল, ইতালীয় বা আমেরিকান যেকোন দেশেরই হতে পারে। রাস্তাপপুলাসের মতো তারও প্রকৃত জাতীয়তা কখনো প্রকাশ করা হয়নি।

কৃষ্ণদ্বীপের রহস্যতে প্রথম আবির্ভাবে মুলার ছিল ইংরেজ ও স্কটিশ জাল টাকার কারবারিদের সহযোগী। টিনটিন তাদের দুর্গে অভিযান চালিয়ে তাদের আটকাতে সক্ষম হয় এবং পুলিশের হাতে তুলে দেয়। পরবর্তীতে টিনটিন মুলারের দেখা পায় কালো সোনার দেশে, খেমেদে। সেখানে সে স্কোয়াল পেট্রোলিয়াম কোম্পানির প্রতিনিধি পুরাতাত্ত্বিক 'প্রোফেসর স্মিথ' সেজেছে, ছাগলদাড়ির বদলে চাপদাড়ি রেখেছে এবং আগের চেয়ে শুকিয়েছে, দেখে আরব বলে মনে হয়। বিদ্রোহী বাবেল আরের পক্ষ নিয়ে সে আমীর মহম্মদ বেন কলিশ এজাবকে হটাতে চেষ্টা করছে। সে ফর্মুলা ফোরটিন উদ্ভাবন করে যা পেট্রোলের বিস্ফোরক ক্ষমতা বাড়ায়; পাশাপাশি আমীরের পছন্দের অ্যারাবেক্স কোম্পানির পাইপলাইনেও সে বিস্ফোরণ ঘটায়। লোহিত সাগরের হাঙর-এ সে 'মুল পাশা' নামে বাবেল আরের বাহিনীতে উঁচুপদে আসীন হয়। পরে বাবেল আর উৎখাত হলে সেও ধরা পড়ে এবং সম্ভবত তার শিরশ্ছেদ করা হয়।

ডঃ মুলার চরিত্রটি স্কটিশ বংশোদ্ভূত নাৎসি ডঃ জর্জ বেলের পর ভিত্তি করে তৈরি। হার্জ তার সম্পর্কে জানতে পারেন তার বহু গুরুত্বপূর্ণ তথ্যের উৎস লে ক্রেপুলিয়েট পত্রিকার ফেব্রুয়ারি 1934 সংখ্যা থেকে। এই ডঃ বেল নাৎসি বাহিনীর সর্বোচ্চ স্তরের সাথে যোগাযোগ রাখতেন এবং রাশিয়ার রুবল জাল করে সেদেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির এক ষড়যন্ত্রে তিনি জড়িত ছিলেন।

পুশকভ

(ফরাসী: Wronzoff)

পুশকভ জালটাকা ছাপানোর এক আন্তর্জাতিক দলের সদস্য এবং কৃষ্ণদ্বীপের রহস্যতে ডঃ মুলারের সহযোগী। অত্যন্ত ধূর্ত ও ধোঁকাবাজ এই পুশকভ টিনটিন এবং পুলিশকে বেশ কয়েকবার ধোঁকা দিয়েছে: প্রথমে ট্রেনে টিনটিনকে মিথ্যা ডাকাতির কেসে ফাঁসিয়ে দেয়, পরে টিনটিনের কাছে মাফ চাওয়ার ভঙ্গী করে নিচু হয় এবং আক্রমণ করে বসে, টিনটিন তাকে হাতকড়া পরিয়ে আটকে রাখলেও সে পালিয়ে গিয়ে দলের লোকদের নিয়ে এসে আবার চড়াও হয়। শেষপর্যন্ত পুলিশ তাকে কয়েদ করে হাজতে নিয়ে যায়।

ফকির

ফকির ফারাওয়ের চুরুট-এ একটি আফিম পাচারকারী চক্রের উঁচু পদের সদস্য। সে মারাত্মক রাজাইজা আরক ব্যবহার করে মানুষকে পাগল বানিয়ে দেয়। এছাড়া সে সম্মোহন, ভারতীয় দড়িবাজী এবং পলায়নবিদ্যায় পারদর্শী। টিনটিনের হাত থেকে পালানোর সময় ঘটাক্রমে মাথায় পাথরের আঘাতে সে জ্ঞান হারায় এবং ধরা পড়ে।

1932-34 সালে প্রকাশিত মূল সাদা-কালো সংস্করণে, ফকির তার বসকে ফোনে জানায় যে টিনটিন যে বাংলোয় আশ্রয় নিয়েছে তার এক প্রহরীকে ঘুষ দিয়ে সে টিনটিনের "আত্মহত্যা"র ঘটনা সাজাতে চায়। পরে এই ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে সেই ছিল অবগুণ্ঠিত মাদক পাচারকারীদের মিটিংয়ের সভাপতি।

পরবর্তী কমিকস নীলকমল-এ ফকির জেল থেকে পালিয়ে যায় এবং এক চীনা লোককে বিষমাখা তীরে বিদ্ধ করে। লোকটি এসেছিল মাদক পাচারকারী মিৎসুহিরাতো সম্পর্কে টিনটিনকে সতর্ক করতে। 1934 সালের মূল সাদাকালো সংস্করণে জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে ব্লো-পাইপ হাতে ফকিরের পালানোর দৃশ্যটি অন্তর্ভুক্ত ছিল। কোনো ঝুঁকি না নিয়ে টিনটিন গাইপাজামার মহারাজাকে বলে যে ফকির ধরা না পড়া পর্যন্ত সে বাইরে বেরুবে না। পরদিন পুলিশ জানায় যে ফকির আবার ধরা পড়েছে।

বন্দুক-চোরাচালানী

বন্দুক-চোরাচালানী হলো ফারাওয়ের চুরুট-এ একজন অস্ত্র পাচারকারী, সাগরে ঝড়ের সময় টিনটিনকে সে উদ্ধার করে তার জাহাজে রাখে। পরে টিনটিন তার চোরাই অস্ত্রপাতি দেখে ফেললে চোরাচালানী তাকে বেঁধে রাখে। এদিকে পুলিশের গোয়েন্দা জনসন ও রনসন টিনটিনকে ধরতে এলে তাদের দেখেই চোরাচালানী পালিয়ে যায়, পরে তার কি হয়েছে তা অজ্ঞাত।

বিখ্যাত ফরাসী লেখক ও অভিযাত্রী হেনরি ডি মনফ্রেইডকে হার্জ প্রথমে খুব শ্রদ্ধা করতেন। পরে যখন জানতে পারেন যে মনফ্রেইড যুদ্ধে অস্ত্র সরবরাহ ও চোরাচালান করেন, তখন হার্জের মনোভাব বদলে গেল এবং তার ওপর ভিত্তি করেই এ চরিত্রটি সৃষ্টি করেন - প্রথমে যে উপকার করলেও পরে শত্রু হয়ে দাঁড়ায়।

ববি স্মাইলস

ববি স্মাইলস শিকাগোর অপরাধীদের বস এবং তার প্রতিদ্বন্দ্বী হলো আরেক বস আল কাপোন (আমেরিকায় টিনটিন)। গল্পের শুরুর দিকেই সে শিকাগো থেকে পালিয়ে চলে যায় পশ্চিমের বুনো আমেরিকায়। টিনটিন তাকে ধাওয়া করে; সেও বারবার টিনটিনকে বিপদে ফেলে, এমনকি নেটিভ আমেরিকানদেরকে টিনটিনের বিরুদ্ধে খেপিয়ে দেয়। তবে শেষপর্যন্ত সে ধরা পড়ে এবং তার বিচার হয়।

অ্যানিমেটেড সিরিজগুলোতে তাকে আল কাপোনের পক্ষে কাজ করতে দেখা যায়, যদিও কমিকসে তারা শত্রু।

বার্নাবি

বার্নাবি ছিল অ্যান্টিক-ব্যবসায়ী বার্ড ভাইদের ভাড়া করা লোক। তার কাজ ছিল ইউনিকর্ন জাহাজের তিনটা মডেল থেকে তিনটা পার্চমেন্ট সংগ্রহ করা। এর মধ্যে প্রথমটা সে পুরনো স্ট্রিট মার্কেটে দেখতে পেলেও টিনটিন সেটা কিনে ফেলেছিল। তাই সে সেটা চুরি করে এবং পরে পার্চমেন্টের খোঁজে টিনটিনের বাসাও তছনছ করে। পরে স্যাখারিনকে অজ্ঞান করে তার জাহাজ থেকে দ্বিতীয় পার্চমেন্টটা নেয়। এবার বার্ড ভাইদের সাথে টাকা নিয়ে দর কষাকষি হলে সে হুমকি দেয় যে টিনটিনকে সব বলে দেবে। কিন্তু টিনটিনের বাসায় পৌছতেই বার্ডরা তাকে গুলি করে, আহত অবস্থায় সে টিনটিনকে কিছু পাখির দিকে ইঙ্গিত করে।

ব্যাসিল বাজারভ

(ফরাসী: Baril Bazarov)

ব্যাসিল বাজারভ' (প্রথম সংস্করণে মাজারভ) কানভাঙা মূর্তিতে করাপ্ট আর্মস কোম্পানির (ফরাসীতে 'ভাইকিং আর্মস কোম্পানি'র) একজন জার্মান অস্ত্রবিক্রেতা। সে বিবাদমান সান থিওডোরস ও নুয়েভো রিকো দুই দেশের কাছেই অস্ত্র বিক্রি করে। এছাড়া সে তার সহযোগী মি. ট্রিকলারের সাথে মিলে তাদের শত্রু টিনটিনকে শেষ করে দেয়ার চেষ্টাও করে।

হার্জ এই চরিত্রটি "পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে" তৈরি করেছেন বাস্তবে ভাইকারস কোম্পানির গ্রীক অস্ত্রবিক্রেতা বাসিল জাহারফের ওপর ভিত্তি করে। জাহারফ বলিভিয়া ও প্রতিবেশী দেশ প্যারাগুয়ের মধ্যে 'গ্রান চ্যাকোর যুদ্ধে' উভয় দেশের কাছেই অস্ত্র বিক্রি করেন (কমিকসে আছে 'গ্রান চ্যাপোর যুদ্ধ')। কানভাঙা মূর্তি প্রকাশের সময় জাহারফ ছিলেন খ্যাতির তুঙ্গে, পেয়েছেন লিজিয়ন ডি অনার পুরস্কার এবং অর্ডার অব দ্য ব্রিটিশ এম্পায়ারের সদস্যপদ।

ব্রুসেলসের আঞ্চলিক ভাষায় 'বাজারভ' মানে 'বাজে মাল'।

মিৎসুহিরাতো

মিৎসুহিরাতো একজন জাপানী ডাবল এজেন্ট। সাংহাইয়ের শান্তি-সরণীতে তার একটি দোকান আছে মেয়েদের কাপড়ের। তবে মূলত সে রাস্ঔআপপুলাসের মাদক-পাচারকারী চক্রের সদস্য। অন্য জাপানী চরিত্রগুলোর মতো তাকেও দেখানো হয়েছে অসৎ ও কুচক্রী রূপে যে কিনা নিজ দেশের স্বার্থে চীনে রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি করে। তার চেহারা বিশ্রী, দাঁতউঁচু এবং স্বভাবে যুদ্ধবাজ। নীলকমল-এর শেষে বন্দী হয়ে সে হারিকিরি করে আত্মহত্যা করে।

মুশলার

মুশলার ওটোকারের রাজদণ্ড কাহিনীর একটি চরিত্র। হার্জ বর্দুরিয়ার এই রাজনৈতিক নেতার নামটি বানিয়েছেননাৎসী পার্টির নেতা এডলফ হিটলার ও ন্যাশনাল ফ্যাসিস্ট নেতা বেনিতো মুসোলিনির নাম থেকে (মুসোলিনি+হিটলার=মুশলার)।

মুশলারের সৈন্যদের হার্জ নাম দিয়েছিলেন আয়রন গার্ড, বাস্তবের আয়রন গার্ডদের নামানুসারে। রোমানিয়ার এই ফ্যাসিস্ট আয়রন গার্ডরা রাজা দ্বিতীয় ক্যারলকে হটিয়ে দিতে চাচ্ছিল এবং এজন্য তাথা গোপনে একটি রোমানিয়া-জার্মান চুক্তিও করে।[7] মুশলারের বর্দুরিয়ার অফিসারদের পোশাক জার্মান এসএসদের ইউনিফর্ভের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।[8]

স্ট্যান্ডার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সাহিত্য-সমালোচক জাঁ-মেরি অ্যাপোস্টোলাইডস জানান যে আয়রন গার্ডের অন্তর্ভুক্তি কর্নেল ফ্রাঙ্কোয়িস ডে লা রকোকে ক্রস-অফ-ফায়ার গঠনে প্ররোচিত করে,[9] আর এটাও উল্লেখ্য যে মুশলারের চরিত্রটা ছিল "the Evil One without a face".[9]

রাসকার কাপাক

রাসকার কাপাক হলো মমির অভিশাপ কমিকসে ইনকা মমিসন্ডার্স-হার্ডিম্যান অনুসন্ধানী দলের সদস্যরা এই প্রাচীন ইনকা রাজার দেহ খুঁড়ে তোলে। প্রফেসর তারাগঁ মমিটি তার ঘরে রাখেন। কিন্তু এক ঝড়ের দিনে ঘরের চিমনিতে বজ্রপাত হয় এবং একটি আগুনের গোলা ছুটে এসে মমির ওপর বিস্ফোরিত হয়; মমিটি হাওয়া হয়ে যায়। সেরাতে টিনটিন, ক্যাপ্টেন হ্যাডক এবং প্রফেসর ক্যালকুলাস একই স্বপ্ন দেখে: রাসকার কাপাক একটা স্ফটিকের গোলক নিয়ে তাদের ঘরে বেয়ে উঠেছে এবং ঘরের মেঝেতে সেটা ভেঙে ফেলছে। স্বপ্ন দেখে তিনজনই ভয় পেয়ে জেগে ওঠে। পরবর্তীতে মমিটির কী হয়েছিল তা জানা যায়নি।

র‍্যাঙ্কো

র‍্যাঙ্কো কৃষ্ণদ্বীপের রহস্য কাহিনীর একটি গরিলা। তার মালিক পুশকভ তাকে দিয়ে ভয় দেখিয়ে কৌতুহলী স্কটিশদেরকে কৃষ্ণদ্বীপ থেকে দূরে রাখে। কারণ সেখানে সে ও তার সঙ্গীরা প্রিন্টিং প্রেস বসিয়ে জাল টাকা ছাপায়। র‍্যাঙ্কোকে প্রথমে খুব হিংস্র ও রক্তপিফাসু মনে হলেও পরে কুট্টুসের গর্জনে সে ভয় পেয়ে দমে যায়। এমনকি ভয়ে একবার লাফ দিয়ে সিঁড়ি থেকে পড়ে তার হাতও ভেঙে যায়। টিনটিন তখন তার হাত ব্যান্ডেজ করে দেয় এবং পরে তাকে চিড়িয়াখানায় পাঠিয়ে দেয়া হয়।

সর্দার শ্যোনচক্ষু ছুঁচো

সর্দার শ্যোনচক্ষু ছুঁচো ছিল নেটিভ আমেরিকান ব্ল্যাকফুট উপজাতির দলপতি। শয়তান ববি স্মাইলস তাকে বোঝায় যে টিনটিন এসে তাদের আবাসভূমি দখল করবে। সর্দার তাই "পাঁশুটে-মুখ" টিনটিনকে বেঁধে কুড়ুল দিয়ে শিরশ্চ্ছেদ করার মতলব করে। কিন্তু টিনটিন বুদ্ধি করে ব্ল্যাকফুটদের মধ্যে মারামারি লাগিয়ে দিয়ে পালিয়ে আসে এবং ঘটনাক্রমে রেড ইন্ডিয়ানদেরই একটি সুড়ঙ্গে আশ্রয় নেয়। টিনটিন তাদের গোপন পথের হদিস পেয়ে যাওয়াতে সর্দার আবার তাকে ধরার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়, তখন তারা সুড়ঙ্গটা পাথরচাপা দিয়ে যায়। এদিকে সুপ্ত তেলের খনি বিস্ফোরিত হয়ে সুড়ঙ্গ দিয়ে উঠে আসে এবং টিনটিনও বেঁচে যায়। পরে আমেরিকান তেল উত্তোলক কোম্পানিগুলো এসে সর্দারকে সামান্য কিছু টাকা দিয়ে রেড ইন্ডিয়ানদেরকে সেখান থেকে উৎখাত করে দেয়।

স্পল্ডিং

স্পল্ডিং ছিল ফ্লাইট ৭১৪তে মিলিওনিয়ার লাসজলো ক্যারিদাসের ইংরেজ সেক্রেটারি এবং প্লেন হাইজ্যাকারদের সহযোগী। সে সবসময় কেতাদুরস্ত, ওষ্ঠ অনমনীয় আর পোশাকে ফ্যাশনসচেতন। ক্যাপ্টেন হ্যাডক প্রথম দেখায় তাকেই ক্যারিদাস বলে ভেবেছিল। স্পল্ডিং রাস্তাপপুলাসঅ্যালানের প্রতি খুব অনুগত হলেও রাস্তাপপুলাস অন্য ষড়যন্ত্রকারীদের মতো তাকেও মেরে ফেলার পরিকল্পনা করেছিল। তবে শেষপর্যন্ত এলিয়েনরা তাকেসহ সবাইকে অজানা গন্তব্যে তুলে নিয়ে যায়।

1968 সালে সানডে টাইমসের সাথে এক সাক্ষাৎকারে হার্জ বলেন যে, স্পল্ডিং "পাবলিক স্কুল পড়ুয়া ইংরেজ ভদ্রলোক, স্পষ্টতই তার পরিবারের কুসন্তান"।

হান্স বোয়েম

হান্স বোয়েম ফ্লাইট ৭১৪র একজন বিমানচালক। রাস্তাপপুলাসের লোকদের সাথে হাত মিলিয়ে সে প্লেনটি হাইজ্যাক করে। কিন্তু পরে রাস্তাপপুলাসই তাকে মেরে ফেলার পরিকল্পনা করেছিল।

সহায়ক চরিত্র

অলিভেরা দা ফিগুয়েরা

সেনর অলিভেরা দা ফিগুয়েরা ( বা অলিভেরা দি ফিগুয়েরা) টিনটিনের বন্ধুভাবাপন্ন এক দক্ষ পণ্যবিক্রেতা যে কিনা ছাতা থেকে রোলার স্কেটস পর্যন্ত সবরকম আজেবাজে জিনিসও ক্রেতাদের গছিয়ে দিতে পারে। ফারাওয়ের চুরুট-এ টিনটিন ও কুট্টুস লোহিত সাগরে ঝড়ের মুখে এক নৌকায় আশ্রই পায়, সেখানেই প্রথম দেখা হয় অলিভেরা দা ফিগুয়েরার সাথে। তখনি টিনটিনকে সে বিভিন্ন কথাবার্তা বলে বহুরকম জিনিস গছিয়ে দেয়। পরে কালো সোনার দেশেতে সে একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে: টিনটিনকে তার ভাগ্নে পরিচয়ে ডঃ মুলারের বাড়িতে ঢুকতে সাহায্য করে এবং বাইরে প্রহরীদেরকে লম্বা এক গল্প ফেঁদে বসিয়ে রাখে। লোহিত সাগরের হাঙর-এ টিনটিন ও হ্যাডককে সে তার বাড়িতে লুকিয়ে রেখে আমিরের সাথে দেকা করার ব্যবস্থা করে দেয়। এছাড়া পান্না কোথায়তে পত্রিকায় হ্যাডক ও বিয়াঙ্কা কাস্তাফিয়রের বাগদানের খবর পেয়ে অভিনন্দন জানিয়ে সেও টেলিগ্রাম পাঠায়।

হার্জ প্রথমে তার নাম "অলিভেরা দা ফিগুয়েরা" রাখলেও পরে বদলে রাখেন "অলিভেরা দি ফিগুয়েরা"। তবে দুটোর অর্থ একই: 'ডুমুর গাছের জলপাই গাছ'।

আরামবায়া

আরামবায়ারা দক্ষিণ আমেরিকার রেইনফরেস্টের এক আদিবাসী গোষ্ঠী (কাল্পনিক কলিফ্লোর নদীর তীরে তাদের গ্রাম)। ব্রিটিশ অভিযাত্রী রিজওয়েল তাদের সাথে থাকে। টিনটিন ও কুট্টুস আরামবায়াদের একটি কানভাঙা মূর্তির সন্ধানে সান থিওডোরসের জঙ্গলে এসে তাদের দেখা পায়। বর্বর বলে তাদের কুখ্যাতি থাকলেও টিনটিনের সাথে তারা ভালো ব্যবহার করে এবং জানায় যে তাদের শত্রু উপজাতি রামবাবারাই বিদেশী লোকদের ধরে মুন্ডু কেটে রাখে। কানভাঙা মূর্তির এই আদিবাসীদের আবার দেখা যায় বিপ্লবীদের দঙ্গলেতে, সেখানে তারা জেনারেল আলকাজার ও টিনটিনদের আতিথ্য করে।

ইরমা

ইরমা বিয়াঙ্কা কাস্তাফিয়রের কাজের লোক। ক্যালকুলাসের কাণ্ডতে তাকে প্রথম দেখা যায়, পরে দেখা যায় পান্না কোথায়তে। কাস্তাফিয়র তাকে সৎ, বিশ্বস্ত ও অনুগত ভৃত্য বলে মনে করে। সবসময় বিনম্র স্বভাব দেখা গেলেও তার আত্মসম্মানবোধ তীব্র। যেমন: জনসন ও রনসন যখন তাকে কাস্তাফিয়রের পান্না চুরির দায়ে অভিযুক্ত করে, সে প্রচন্ড রেগে যায় এবং তাদেরকে লাঠিপেটা করে। বিপ্লবীদের দঙ্গলেতে অন্যদের সাথে তাকেও জেলে বন্দী হয়। বর্ণশিল্প রহস্যতে ইরমা টিনটিন ও হ্যাডককে এক দ্বীপে দেখতে পেয়ে কাস্তাফিয়রকে জানায়।

ওয়াং চেন-ই

ওয়াং চেন-ই নীলকমল-এ ড্রাগনসংঘের হান উপজাতীয় নেতা। চীনে টিনটিনকে তিনি আশ্রয় দেন এবং কাহিনীর শেষে চ্যাং চোং-চেনকে দত্তক নেন।

কোকো

কোকো কঙ্গোর একটি ছেলে যে সেখানে টিনটিনের গাইড হিসেবে কাজ করে (কঙ্গোয় টিনটিন)। সে কথা বলে পুরনো ধাঁচের পিজিন ভাষায়। টিনটিনের ভীষণ অনুগত ও বিশ্বস্ত কোকো তাকে একবার দুষ্ট জাদুকরের হাত থেকে বাঁচায়।

ক্রিস্টোফার উইলোবি-ড্রুপ ও মার্কো রিজট্টো

(ফরাসী: Jean-Loup de la Battellerie et Walter Rizotto)

ক্রিস্টোফার উইলোবি-ড্রুপমার্কো রিজট্টো প্যারিস ফ্লাশ ম্যাগাজিনের দুজন লেখক ও আলোকচিত্রী। পান্না কোথায়তে বিয়াঙ্কা কাস্তাফিয়র ও ক্যাপ্টেন হ্যাডকের সাক্ষাৎকার নিয়ে তারা জমজমাট গল্প ফাঁদে যে ক্যাপ্টেন ও কাস্তাফিয়র বাগদান করেছেন, খবরটায় কাস্তাফিয়র বেশ মজা পেলেও ক্যাপ্টেন খুব রাগারাগি করেন। সাংবাদিক দুজনকে আবার দেখা যায় বিপ্লবীদের দঙ্গলেতে। কৃষ্ণদ্বীপের রহস্যর পুনরাঙ্কনে উইলোবি-ড্রুপকে দেখা যায় শুঁড়িখানায় বুড়ো লোকের সাক্ষাৎকার নিতে, রিজট্টো তখন বন্দরে একদল সাংবাদিকের সাথে টিনটিনের জন্য অপেক্ষা করছিল।

প্যারিস ম্যাচ সাময়িকীতে হার্জ একটি সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন যেটা সাংবাদিকরা ছাপানোর সময় অদলবদল করে, এরপরেই হার্জ চরিত্রদুটি সৃষ্টি করেন।

গাইপাজামার মহারাজা

গাইপাজামার মহারাজা ভারতের কাল্পনিক গাইপাজামা রাজ্যের রাজা। তিনি দয়ালু হৃদয়ের লোক এবং টিনটিনকে প্রথম সাক্ষাতেই বিশ্বাস করেন (ফারাওয়ের চুরুট)। মহারাজা জানান যে তার বাপ-দাদারা এক আফিম-পাচারকারী সন্ত্রাসী চক্রের বিরুদ্ধে লড়াই করছেন। নীলকমল-এর কাহিনী শুরু হয় মহারাজার প্রাসাদ থেকে, টিনটিন সেখানে তার অতিথি হিসেবে ছিল।

বাস্তবে ভারতে গাইপাজামা নামে কোনো স্থান নেই, নামটি 'গাই' (গরু) ও 'পাজামা' (পায়জামা) শব্দদ্বয়ের অর্থহীন মিশ্রণ।

জেনারেল আলকাজার

জেনারেল আলকাজার টিনটিনের একজন বন্ধু এবং কাল্পনিক কলা-প্রজাতন্ত্রী দেশ সান থিওডোরসের অনিয়মিত স্বৈরশাসক। দেশের ক্ষমতা নিয়ে চিরশত্রু জেনারেল টাপিওকার সাথে তার প্রতিদ্বন্দিতা চলে। দুজনেই ক্ষমতা দাবি করে এবং গদি পেলে প্রত্যেকেই নিজের নামে দেশের রাজধানীর নামকরণ করে। কানভাঙা মূর্তিতে তাকে দেখা যায় লস ডোপিকাসের গদিতে,[10] কিন্তু ক্ষমতা হারিয়ে পরে সে রামন জারাটে ছদ্মনামে ইউরোপে ছুরি-খেলা দেখিয়ে বেড়ায় (মমির অভিশাপ)। লোহিত সাগরের হাঙর-এ জানা যায় যে সে অবৈধ অস্ত্রবিক্রেতার কাছ থেকে অস্ত্র কিনছে। শেষপর্যন্ত বিপ্লবীদের দঙ্গলেতে সে দেশে ফেরে কিন্তু জঙ্গলে লুকিয়ে থেকে পিকারোদের নিয়ে শহরে গেরিলা আক্রমণ করা তার জন্য কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। এরমধ্যে তার কুরূপা স্ত্রী পেগি আলকাজারের জ্বালায় সে অস্থির। টিনটিন এসবে অনাগ্রহী হলেও তার বন্ধুদের বাঁচাবার জন্যে একটি পরিকল্পনা করে এবং আলকাজার তাতে আবার ক্ষমতা ফিরে পায়। কাহিনীর শেষে আলকাজারকে ক্ষমতায় দেখা গেলেও বোঝা যায় যে টাপিওকার সাথে তার প্রতিদ্বন্দিতা চলতে থাকবে।

জোরিনো

জোরিনো আদিবাসী পেরুভীয় বালক, পাহাড়ি শহর জাউগাতে কমলালেবু বেচে সে দিন গুজরান করে। সূর্যদেবের বন্দিতে সে টিনটিন এবং ক্যাপ্টেন হ্যাডককে তাদের বন্ধু প্রফেসর ক্যালকুলাসকে উদ্ধার করতে দুর্গম পার্বত্য অঞ্চলে ইনকাদের আস্তানায় যেতে পথ দেখায়। কাহিনীর শেষে ইনকারা জোরিনোকে তাদের সাথে থেকে যাবার প্রস্তাব করলে সে তাতে রাজি হয়।

পাত্রাশ পাশা

পাত্রাশ পাশা ফারাওয়ের চুরুট-এ একজন আরব শেখ এবং দুঃসাহসী টিনটিনের খুব ভক্ত। প্রথমে শত্রু ভেবে টিনটিনকে তার লোকেরা অপহরণ করে আনে কিন্তু পরে টিনটিনকে চিনতে পেরে ছেড়ে দেন এবং সঙ্গে তার সেরা ঘোড়া ও রসদ দিয়ে দেন। পাশার একজন দাস টিনটিনকে তার একটা বই দেখায়, মূলত সেটা ছিল আমেরিকায় টিনটিন, পরে হয়ে যায় কঙ্গোয় টিনটিন এবং শেষে চাঁদে টিনটিন স্থায়ী হয় - তখনকার সর্বশেষ কমিকস, যদিও সেটা ফারাওয়ের চুরুট-এর অনেক পরের কাহিনী। লোহিত সাগরের হাঙর-এ বিদ্রোহী বাবেল আর যখন আমীর মহম্মদ বেন কলিশ এজাবকে ক্ষমতাচ্যুত করে তখন তিনি কিছুদিন পাত্রাশ পাশার জাতিগোষ্ঠীর আশ্রয়ে থাকেন এবং তারাও তার আনুগত্য করে।

পাবলো

পাবলো সান থিওডোরসের রাজধানী লস ডোপিকসের স্থানীয় বাসিন্দা। কানভাঙা মূর্তিতে টিনটিনকে খুন করার জন্য ট্রিকলার তাকে ভাড়া করে। পাবলো হত্যাপ্রচেষ্টায় ব্যর্থ হয় এবং টিনটিন তাকে ধরে ফেলে। তবে সে প্রাণভিক্ষা চাইলে টিনটিন তাকে ছেড়ে দেয়। ট্রিকলার এবার টিনটিনকে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে ফাঁসায় এবং তার মৃত্যুদণ্ডের আদেশ হয়। কৃতজ্ঞ পাবলো তখন একদল লোক নিয়ে জেল ভেঙে টিনটিন ও কুট্টুসকে মুক্ত করে।

1935 সালের ধারাবাহিককৃত সংস্করণে পাবলোর পুরো নাম দেয়া হয়েছিল- জোয়ান পাওলিনো, লস ডোপিকসের আতঙ্ক এবং দেশের সেরা শ্যুটার।

বিপ্লবীদের দঙ্গলেতে পাবলো আবার হাজির হয়। টিনটিনদেরকে সে এবার সামরিক বন্দীশালা থেকে পালাবার পথ বাতলে দেয়, বাস্তবে সে পথে টিনটিনদের মারার আয়োজন করা হয়েছিলো। টিনটিন পাবলোর বিশ্বাসঘাতকতা জানতে পেরেও ছেড়ে দেয়, কারণ পাবলো আগে একবার তার জীবন বাঁচিয়েছিল।

পেগি আলকাজার

পেগি আলকাজার জেনারেল আলকাজারের স্ত্রী, তাকে দেখা যায় বিপ্লবীদের দঙ্গলে। কোঁকড়া চুলের এই মহিলা সবসময় আলকাজারকে শাসন করে, এমনকি তাকে দিয়ে ঘরের কাজকর্মও করায়।

প্রফেসর ইউক্লিড

প্রফেসর ইউক্লিড কানভাঙা মূর্তি কাহিনীর একজন ভুলোমনা প্রফেসর; চশমা নিতে ভুলে যান, রেইনকোটের বদলে আয়ার ওভারকোট পর ফেলেন, লাঠিকে ছাতা ভেবে মাথার ওপর ধরে রাখেন, টিয়াপাখির কথা শুনে ভাবেন মানুষ, ব্রিফকেসটা ফেলে যান ল্যাম্পপোস্টের তলায়। গ্রীক গণিতজ্ঞ ইউক্লিডের নামানুসারে তার নাম রাখা হয়। তিনিও হার্জের সৃষ্ট প্রফেসর ক্যালকুলাসের অনেকগুলো আদিরূপের একটি।

প্রফেসর হেক্টর আলেমবিক

(ফরাসী: Professeur Nestor Halambique)

প্রফেসর হেক্টর আলেমবিক একজন সিজিলোগ্রাফার বা সীলমোহর-বিশেষজ্ঞ। ওটোকারের রাজদণ্ডতে এক পার্কে তার ফেলে আসা ব্যাগ ফিরত দিতে এসে টিনটিন তার পরিচয় পায়। চশমাপরা অবিরাম-ধূমপায়ী এই পণ্ডিত মানুষটি টিনটিনকে তার সিলদাভিয়া যাবার ইচ্ছের কথা জানান; সেখানে সম্রাট চতুর্থ ওটোকারের এক প্রাচীন সীল নিয়ে তিনি গবেষণা করতে চান। টিনটিন তার সহকারী হবার প্রস্তাব দেয়। যাত্রার আগের দিন টিনটিন তার সাথে ফোনে কথা বলার সময় ধস্তাধস্তি ও চিৎকার শুনতে পাস্ক্র এবং লাইন কেটে যায়। টিনটিন দ্রুত তার বাড়িতে গিয়ে দেখতে পায় তিনি শান্তভাবে ব্যাগ গুছাচ্ছেন। বাইরে তার কোনো পরিবর্তন দেখা না গেলেও স্বভাবের কিছু ব্যাপার, যেমন সিগারেট বা চশমা ব্যবহার না করা ইত্যাদি টিনটিনকে সন্দিগ্ধ করে তোলে। কাহিনীর শেষে জানা যায় যে আসলে প্রফেসর অপহৃত হয়েছিলেন এবং তার যমজ ভাই আলফ্রেড তার বদলে সিলদাভিয়া গিয়ে রাজার রাজদণ্ড চুরি করে।

প্রফেসরের নামটি একটি শব্দকৌতুক, রসায়নে এক ধরনের বকযন্ত্রকে 'আলেমবিক' বলে।

বনুজি কারাকি

বনুজি কারাকি ইয়োকোহামা পুলিশ বিভাগের একজন জাপানী গোয়েন্দা (কাঁকড়া রহস্য)। সে দূর প্রাচ্যে একটি শক্তিশালী মাদক চোরাকারবারি দল সম্পর্কে তদন্ত করে তাদের পিছু নিয়ে ইউরোপে আসে, কিন্তু টিনটিনের সাথে সাক্ষাৎ করতে এসে তার বাড়ির সামনে থেকে অপহৃত হয়। কাহিনীর শেষে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে এবং সে টিনটিনের সাথে দেখা করতে সক্ষম হয়।

বাবুর্চি বিল

বিল ছিল আশ্চর্য উল্কায় অরোরা জাহাজের বাবুর্চি। পরে লাল বোম্বেটের গুপ্তধন-এ সে সাইরাস জাহাজে রাঁধুনীর কাজ করে। কাহিনীর শুরুতে তাকে দেখা যায় মদের দোকানে বন্ধুর সাথে খোশগল্প করতে। সেখানেই বসা এক সাংবাদিক তার বেফাঁস কথাবার্তা শুনে বোম্বেটের গুপ্তধন সন্ধানের ব্যাপারটা জেনে যায় এবং পত্রিকায় ছাপিয়ে দেয়। এতে গুপ্তধনের দাবিদারেরা এসে টিনটিন ও ক্যাপ্টেনকে ছেঁকে ধরে। পরবর্তীতে জাহাজে কুট্টুস এবং প্রফেসর ক্যালকুলাস বিলকে বেশ ঝামেলায় ফেলে, প্রথমজন চুরি করেছিল একটা মুরগি আর দ্বিতীয়জন একবাক্স বিস্কুট। অবশ্য অরোরা জাহাজে থাকতেও বিলের স্পেশাল ডিশ কুট্টুস সুযোগ পেলেই সাবাড় করে দিতো

মহম্মদ বেন কলিশ এজাব

মহম্মদ বেন কলিশ এজাব কাল্পনিক আরব রাজ্য খেমেদের আমীর। দুষ্ট রাজপুত্র আবদুল্লাহের বাবা। তাকে প্রথম দেখা যায় কালো সোনার দেশেতে, পরে লোহিত সাগরের হাঙর-এর সময় প্রতিদ্বন্দী বাবেল আরের দ্বারা কিছুদিনের জন্য ক্ষমতাচ্যুত হন। রাজপুত্র আবদুল্লাহর চরিত্রটি ইরাকের রাজা দ্বিতীয় ফয়সালের ওপর ভিত্তি করে তৈরি।

আমীর তার বন্ধুদের প্রতি সদয় এবং প্রফুল্ল তবে শত্রুদের প্রতি নির্মমভাবে কঠোর। এক ঘটনায় ডঃ মুলার আমীরের হাতে ধরা পড়ার বদলে আত্মহত্যা করতে চেয়েছিল। সর্বোপরি, আমীর তার ছেলের স্নেহে অন্ধ, ছেলের সব দুষ্টামি সে হাসিমুখে মেনে নেয়।

"কলিশ এজাব" একটি শব্দকৌতুক; ডাচ/ব্রুসেলসের উপভাষায় এর অর্থ "যষ্টিমধুর রস"।

মহাভিক্ষু

মহাভিক্ষু তিব্বতে টিনটিন-এর একটি চরিত্র। তিনি একটি তিব্বতি মঠের সন্ন্যাসীদের প্রধান। হিমবাহে নিমজ্জিত টিনটিন ও তার সঙ্গীদেরকে সন্ন্যাসীরা উদ্ধার করে মঠে আনে। পরে টিনটিন ও হ্যাডক শেষপর্যন্ত বন্ধু চ্যাংকে উদ্ধার করে ফিরে আসার সময় মহাভিক্ষু তাদের সম্মানে এগিয়ে আসেন এবং টিনটিনের বন্ধুবৎসলতার জন্য তাকে একটি রেশমী বস্ত্র উপহার দেন। এছাড়া টিনটিনদের নেপালে ফেরার ব্যবস্থাও তিনি করে দেন।

মার্টিনে ভ্যান্ডেজান

মার্টিনে ভ্যান্ডেজান বর্ণশিল্প রহস্যর একটি চরিত্র। সে হেনরি ফোরকার্টের নারী সহকারী এবং এন্ডাডিন আকাশের শিষ্যা।

মি. বোল্ট

(ফরাসী: Isidore Boullu)

মি. বোল্ট একজন রাজমিস্ত্রি, পান্না কোথায়-এ মার্লিনস্পাইক হলৈর ভাঙা সিঁড়ি মেরামতের জন্য তার ডাক পড়লেও বারবার সে নানা অজুহাতে সে ফাঁকি দেয়। পরবর্তীতে ক্যাপ্টেন হ্যাডকের সাথে বিয়াঙ্কা কাস্তাফিয়রের বাগদানের ভুয়া খবর পেয়ে সে টেলিগ্রামে অভিনন্দন জানায় এবং ব্যান্ডপার্টির সাথে মার্লিনস্পাইক হলের সামনে বিয়ের বাজনা বাজাতে যায়। কাহিনীর শেষাংশে সে সিঁড়িটি মেরামত করে দিলেও একটু পরেই ক্যাপ্টেন বেখেয়ালে আবার ভেঙে ফেলে। বিপ্লবীদের দঙ্গলের মধ্যবর্তী সময়ে সম্ভবত সিঁড়িটা আবার মেরামত করা হয়েছিল।

মিসেস ফিঞ্চ

(ফরাসী: Mme Pinson)

মিসেস ফিঞ্চ ছিলেন টিনটিনের বাড়িওয়ালী। মার্লিনস্পাইক হলে গিয়ে হ্যাডকের সাথে যোগ দেয়ার পূর্বে টিনটিন তার 26 ল্যাব্রেডর রোডের বাড়িতেই থাকতো। তার বাড়ির সামনে থেকে যখন বনুজি কারাকি অপহৃত হয় (কাঁকড়া রহস্য), সরলমনা মিসেস ফিঞ্চ খুব আতংকিত হয়েছিলেন।

উল্লেখ্য, 26 ল্যাব্রেডর রোড (ফরাসী: 26 rue du Labrador) বাস্তবে হার্জ মিউজিয়ামের ঠিকানা।

রাজা দ্বাদশ মুস্কর

রাজা দ্বাদশ মুস্কর হলেন সিলদাভিয়ার সম্রাট। ওটোকারের রাজদণ্ডতে তাকে দেখা যায়। রাজা দক্ষ মোটরচালক, নিজের গাড়ি নিজেই চালান এবং সাথে পিস্তলও রাখেন; তার স্ত্রী এক অনামা কুইন কনসোর্ট। অনেক আগে, ১৩৬০ সালে, রাজদণ্ডের কারণে রাজা চতুর্থ মুস্করের জীবন বেঁচে গিয়েছিল। সেই থেকে প্রতিবছর ১৫ই জুলাই সেন্ট ভ্লাদিমির দিবসে বর্তমান রাজা জনগণকে দেখান যে তার কাছে রাজদণ্ডটি আছে, না দেখাতে পারলে রাজাকে সিংহাসনচ্যুত করা হবে।

টিনটিন আঁচ করতে পারে যে রাজদণ্ড চুরি করার ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে, সে রাজাকে সাবধান করে দিতে যায়। কিন্তু রাজার পারিষদদের মধ্যে বিশ্বাসঘাতক এইড-ডি-ক্যাম্প বরিস (কর্নেল জরগেন) ও অন্যান্যরা তাকে বারবার আটকানোর চেষ্টা করে। শেষপর্যন্ত টিনটিন রাজাকে জানাতে সক্ষম হয়। রাজা খোলামনে কথাগুলো শোনেন এবং নিজে ষড়যন্ত্র তদন্ত করতে যান। দেখা যায় যে টিনটিনের ধারণা সত্যি, রাজদণ্ড ইতোমধ্যেই চুরি হয়ে গেছে। দেশে সাংবিধানিক সংকট আসন্ন। এদিকে দীর্ঘদিনের শত্রু পাশের দেশ বর্দুরিয়া এ সুযোগে আক্রমণ করতে যাচ্ছে। মুস্কর তখনি তার মণ্ত্রী ও জেনারেলদের আদেশ দেন শত্রুদের ঠেকাতে। গল্পের বিদ্রোহী দলটি, নাম আয়রন গার্ড, সম্ভবত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন সময়ে ইউরোপে ছড়িয়ে পড়া ফ্যাসিস্ট প্যারামিলিটারিদের থেকে অনুপ্রণিত। সিংহাসনচ্যুতির সংকটটা ১৯৩৮ সালে অস্ট্রিয়ার অ্যান্সচ্লুসের সাথে খুবই সাদৃশ্যপূর্ণ, তবে পরিণতিটা একই রকম হয়নি।

রাজা দ্বাদশ মুস্কর এবং তার দেশটা নির্দিষ্টভাবে কোনো কিছুর ওপর ভিত্তি করে তৈরি হয়নি; দুটোই বিভিন্ন পূর্ব ইউরোপীয়বলকান রাজ্যগুলো অবলম্বনে সৃষ্ট।[11] এ রাজ্যগুলোর মধ্যে অনেকগুলোই ছিল সম্রাটশাসিত; রোমানিয়ায় রাজা দ্বিতীয় ক্যারল, আলবেনিয়ায় প্রথম জোগ, যুগোস্লাভিয়ায় প্রথম আলেকজান্ডার এবং বুলগেরিয়ায় তৃতীয় বরিস। রাজার পোশাকের নকশা সম্ভবত স্পেনের রাজা ত্রয়োদশ আলফানসোর প্রতিকৃতি[12] এবং রোমানিয়ার রাজপুত্র আলেকজান্দ্রু আইওয়ান কুজা হতে অনুপ্রাণিত। আলবেনিয়ার জোগের সাথে রাজা মুস্করের বেশ সাদৃশ্য দেখা যায়। জোগও নিজের সাথে বন্দুক রাখতেন এবং তাকেও কঠিন কঠিন ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করতে হয়েছিলো। তাকে অনেকসময় সামরিক ইউনিফর্মেও দেখা গেছে, তাতে থাকতো রয়্যাল গার্ডের কর্নেল পদের মর্যাদাচিহ্ন। রাজা মুস্করের সামরিক কাজ বাস্তবের ইউরোপীয় রাজপরিবারগুলোর মতোই, তারাও জাতীয় সৈন্যবাহিনীতে যোগদান করে থাকে।

রাজা দ্বাদশ মুস্কর সিলদাভিয়ার যুদ্ধ-পরবর্তী কাহিনীগুলোতে লক্ষণীয়ভাবে অনুপস্থিত: চন্দ্রলোকের অভিযানে মুন রকেট আকাশে ওড়ার সময় তিনি হাজির হননি, আবার ক্যালকুলাসের কাণ্ডতে প্রফেসর ক্যালকুলাসকে যখন বর্দুরিয়া ও সিলদাভিয়ার লোকজন অপহরণ করে তখনও টিনটিন রাজার সাহায্য চায়নি। যেহেতু সিলদাভিয়া-কেন্দ্রিক পরবর্তী গল্পগুলো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে লেখা, ততদিনে কাহিনীর অবলম্বন বলকান সম্রাটরা গদিচ্যুত ও নির্বাসিত হয়েছেন, ফলে এটা নিশ্চিত নয় যে যুদ্ধোত্তর সিলদাভিয়া কি সম্রাটশাসিত, নাকি সমাজতন্ত্রী কিংবা গণতন্ত্রী রাষ্ট্র।

রামো নাশ

রামো নাশ অসমাপ্ত বর্ণশিল্প রহস্য কাহিনীতে একজন বর্ণশিল্পী। তার সৃষ্ট এইচ অক্ষরটি হ্যাডক কিনে নেয়। কমিকসের একটি সংস্করণে দেখা যায় যে সে গোপনে ক্লাসিক ভাস্কর্যসমূহের নকল তৈরি করতো এবং এন্ডাডিন আকাশ নামে রাস্তাপপুলাস সেগুলো আসল বলে বিক্রি করতো। পরে রামো নাশ টিনটিন ও হ্যাডককে রাস্তাপপুলাসের হাত থেকে বাঁচায়।

রিজওয়েল

রিজওয়েল একজন ব্রিটিশ অভিযাত্রী যে দক্ষিণ আমেরিকার আরামবায়া-অধ্যুষিত রেইনফরেস্টে ভ্রমণ করতে যায়। তাকে প্রথম দেখা যায় কানভাঙা মূর্তিতে এবং পরে বিপ্লবীদের দঙ্গলে। রিজওয়েল আরামবায়াদের সাথে বসবাস করা শুরু করে, এদিকে সভ্য জগতের লোকেরা ভাবে যে সে মারা গেছে। টিনটিন যখন আরামবায়াদের অঞ্চলে প্রবেশ করে তখন রিজওয়েল বিষাক্ত তীর ছুঁড়ে তাকে ভয় দেখিয়ে তাড়াতে চেষ্টা করে। তবে পরে পরিচয় পেয়ে টিনটিনকে সে আরামবায়াদের গ্রামে নিয়ে যায়।

রিজওয়েল ভেন্ট্রিলোকুইজমে দক্ষ এবং নিখুঁত লক্ষ্যভেদী। আরামবায়াদেরকে সে গলফ খেলা শেখানোর চেষ্টা করে। রসিক রিজওয়েল জেনারেল আলকাজারের সাথে মজা করে, তার মুখের চুরুট তীর ছুঁড়ে উড়িয়ে দেয়। বিপ্লবীদের দঙ্গলেতে আরামবায়াদের মদ্যপানের অভ্যাস ও মাতলামিতে রিজওয়েল খুব মর্মাহত হয়েছিল।

রিজওয়েল চরিত্রটি বাস্তবের ব্রিটিশ অভিযাত্রী পার্সি ফসেটের কথা স্মরণ করিয়ে দেয় যিনি 1925 সালে অনুরূপ অবস্থায় আমাজনের জঙ্গলে নিরুদ্দেশ হয়েছিলেন।

লেফটেন্যান্ট দ্যলকুর

লেফটেন্যান্ট দ্যলকুর কাঁকড়া রহস্য কাহিনীর একটি চরিত্র। তিনি সাহারা মরুভূমিতে আফগার ঘাঁটির কমাণ্ডার। প্লেনবিধ্বস্ত বিপন্ন টিনটিন ও হ্যাডককে তার সৈন্যরা উদ্ধার করে আনে। সুস্থ হবার পর তাদেরকে তিনি কারাবুজান জাহাজের খোঁজে যেতে সাহায্য করেন। পথে ডাকাতরা তাদের আক্রমণ করলে তিনি সৈন্যদল নিয়ে এসে তাদের বাঁচান এবং শেষে তার লোকদের দিয়ে টিনটিন ও হ্যাডককে মরক্কোর বাঘার বন্দরে পৌঁছে দেন।

সোফোক্লিস সার্কোফেগাস

(ফরাসী: Philémon Siclone)

সোফোক্লিস সার্কোফেগাস একজন ভুলোমনা প্রফেসর এবং মিশরতত্ববিদ। টিনটিনের সাথে তার দেখা হয় ফারাওয়ের চুরুট-এ ক্রুইজ জাহাজে ভ্রমণের সময়। প্রফেসর একটু পাগলাটে: নৌকার দাঁঢ় বাইছেন অথচ নৌকা পানিতেই নামানো হয়নি, কুট্টুসকে এমন করে গুডবাই বললেন যেন সে একটা ছোট ছেলে, আর হাঁটার সময় প্রায়ই জিনিসপত্র বা মানুষের সাথে ধাক্কা খান। সার্কোফেগাস আচরণে উদভ্রান্ত ধরনের, পোশাক রাজা এডওয়ার্ডের আমলের আর আছে অদ্ভুত দাড়ি। তিনি সেই একগুচ্ছ পাগলাটে বিজ্ঞানী ও পণ্ডিতদের একজন যাদের চূড়ান্ত রূপ হলো প্রফেসর ক্যালকুলাস

টিনটিনকে সাথে নিয়ে সার্কোফেগাস ফারাও কি-ওসখের সমাধি খুঁজে বের করেন কিন্তু তার একটু পরেই তিনি গায়েব হয়ে যান। টিনটিন সমাধিতে নেমে জানতে পারে যে সেটা আসলে এক আফিম পাচারকারী চক্রের ঘাঁটি। চোরাচালানীরা টিনটিন, কুট্টুস ও সার্কোফেগাসকে কফিনে (সার্কোফেগি) ভরে লোহিত সাগরে ফেলে দেয়। পরে আবার চোরাচালানীদের সহযোগী অ্যালান সার্কোফেগাসকে বন্ধী হিসেবে জাহাজে তুলে নিয়ে ভারতের দিকে যাত্রা করে।

1930 সালে প্রকাশিত ফারাওয়ের চুরুট-এর প্রথম সংস্করণে সার্কোফেগাস চরিত্রটি ছিল নামহীন এবং তার দাড়িও ছিল না, তবে চশমা ছিল। সমাধির অভ্যন্তরে ঘোরার সময় টিনটিন কেবল তার ও কুট্টুসের জন্য সার্কোফেগি (কফিন) দেখতে পায়, এছাড়া সার্কোফেগাসকে সাগরে ফেলার ঘটনাও ঘটেনি। ফলে পরবর্তীতে সে কীভাবে ভারতে গিয়ে হাজির হলো তার কোনো ব্যাখ্যা পাওয়া যায়না। বরং টিনটিন ভাবছিল যে সার্কোফেগাসও চোরাচালানীদের সঙ্গী কিনা।

ভারতের জঙ্গলে ভাগ্যক্রমে কাকতালীয়ভাবে টিনটিনের সাথে সোফোক্লিসের দেখা হয়। ততদিনে চোরাচালানীরা রাজাইজা বিষ ব্যবহার করে তাকে পাগল বানিয়ে দিয়েছে। সোফোক্লিস নিজেকে ভাবতে থাকেন ফারাও দ্বিতীয় রামেসিস এবং ঘুরে ঘুরে নারকেল গাছের গায়ে কি-ওসখের প্রতীক আঁকেন। শেষে তাকে ভারতের এক মানসিক চিকিৎসাকেন্দ্রে ভর্তি করা হয়। নীলকমল-এ জানা যায় যে রাজাইজা বিষের প্রতিষেধক আবিষ্কৃত হয়েছে, তবে সার্কোফেগাস সুস্থ হয়েছেন কিনা তা জানা যায়নি।

হেনরি ফোরকার্ট

হেনরি ফোরকার্ট অসমাপ্ত বর্ণশিল্প রহস্যর একটি চরিত্র। টিনটিনের সাথে দেখা করতে এসে এক গাড়ি দুর্ঘটনায় সে সন্দেহজনকভাবে নিহত হয়।

তথ্যসূত্র

গ্রন্থপঞ্জী

বহিঃসংযোগ

  • Tintin.com – অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে চরিত্রসমূহের তালিকা
  • Tintinologist.org – ইংরেজিতে সবচেয়ে বড় ও পুরনো টিনটিন ফ্যান সাইটে চরিত্রসমূহের তালিকা।
This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.