দিয়াশলাই

দিয়াশলাই (ইংরেজি: Match) হলো আগুন জ্বালানোর লক্ষ্যে ব্যবহৃত কাষ্ঠ শলাকাবিশেষ যার অগ্রভাগে সামান্য বারুদ লাগানো থাকে। শলাকার বারুদ প্রান্তটি উপযুক্ত খসখসে তলে ঘষা দিলে আগুন জ্বলে ওঠে। চলতি ভাষায় একে দেশলাই বলেও উল্লেখ করা হয়। এটি পরিপূর্ণ, নিয়ন্ত্রিত পন্থায় আগুন জ্বালানোর ঘরোয়া পদ্ধতি। সাধারণত: ছোট বাক্সে দিয়াশলাই-এর শলাকা বা কাঠিগুলো সাজিয়ে রাখা হয়। সচরাচর বাক্সের দুই বা এক পার্শ্বে দিয়াশলাই ঘষে আগুন জ্বালানোর খসখসে তল থাকে। নিরাপদ দিয়াশলাই বলতে এমন ধরেণর দিয়াশলাই বোঝানো হয় আগুন জ্বালানোর পর যার জ্বলন্ত বারুদমুখ খসে পড়ে যায় না।

প্রজ্জ্বলিত দেয়াশলাই কাঠি

সাধারণতঃ কাঠজাতীয় কাঠি দিয়ে দিয়াশলাই প্রস্তুত করা হয় ও দিয়াশলাই বাক্সে করে বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে বিপণন কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত করা হয়। এর এক প্রান্তের সম্মুখাংশে রাসায়নিক দ্রব্য বা বারুদ থাকে যা ফসফরাস দিয়ে তৈরী। গ্যাসের চূলা, ধূমপান, মশার কয়েলসহ বিভিন্ন নিত্য প্রয়োজনীয় কাজে দিয়াশলাইয়ের ব্যাপক ব্যবহার রয়েছে। ডজন কিংবা গ্রোস আকারে দিয়াশলাই পাইকারীভাবে বিক্রয় করা হয়। খুচরা পর্যায়েও দিয়াশলাই বাক্স বিক্রয় করা হয়ে থাকে। একটি বাক্সে গড়ে ৫০টি কাঠি থাকতে পারে।

উৎপত্তি

দিয়াশলাইয়ের ইংরেজি প্রতিশব্দ ম্যাচ যা প্রাচীন ফরাসী শব্দ মেসে থেকে উদ্ভূত। মেসে মোমবাতির শলতে-কে নির্দেশ করতো।[1]

ঐতিহাসিকভাবে ম্যাচ দড়ির দৈর্ঘ্যকে নির্দেশ করতো যা রাসায়নিক দ্রব্যের সংস্পর্শ রয়েছে ও ধারাবাহিকভাবে প্রজ্জ্বলনে সক্ষম।[2] এগুলো হাল্কা আগুন প্রজ্জ্বলনে, বন্দুককামানের জন্যে আগুন জ্বালানোয় ব্যবহৃত হতো। কতক ধরনের দিয়াশলাইকে তাদের প্রজ্জ্বলন ক্ষমতার উপর নির্ভর করে সংজ্ঞায়িত করা হয়। যেমন: দ্রুতগামী দিয়াশলাইধীরগতির দিয়াশলাই। গঠনশৈলীর উপর নির্ভর করে ধীরগতির ৩০ সেন্টিমিটারবিশিষ্ট দিয়াশলাই এক ঘণ্টা এবং দ্রুতগতির ৪ থেকে ৬০ সেন্টিমিটার দৈর্ঘ্যের দিয়াশলাই এক মিনিটে জ্বলতে সক্ষমতা প্রদর্শনে সক্ষম।

বিবর্তন ধারা

দিয়াশলাইয়ে অগ্নিপ্রজ্জ্বলনের ধারাবাহিক দৃশ্য

আধুনিককালের দিয়াশলাইয়ের পূর্ব-পুরুষ হিসেবে ৫৭৭ খ্রীষ্টাব্দে পাইন গাছের কাঠ দিয়ে ছোট ছোট টুকরোয় সালফারের প্রয়োগ ঘটানো হয়েছিল। উত্তরাঞ্চলীয় ঝু এবং চেন, নর্দান কি এলাকায় মোতায়েনকৃত সামরিক বাহিনীর সদস্যদের আহারের জন্যে শুষ্ক, দাহ্য পদার্থ প্রজ্জ্বলন, রান্না ও উত্তাপের জন্যে আগুনের দরকার পড়েছিল।[3]

১৫৩০ সালের দিকে ইউরোপে বিভিন্ন ধরনের দিয়াশলাই প্রস্তুতের ধুম পড়ে যায়। কিন্তু ১৮০৫ সালে জীন চ্যান্সেল নামীয় ব্যক্তি কর্তৃক প্রথম আধুনিক, স্বয়ংক্রিয়ভাবে জ্বলনে সক্ষম দিয়াশলাই আবিষ্কার করেন। ম্যাচের সম্মুখের অংশে পটাশিয়াম ক্লোরেট, সালফার, চিনি এবং রাবারের দ্রবণ ব্যবহার করা হতো। ছোট এসবেসটস বোতলে সালফিউরিক এসিডে পূর্ণ দ্রবণে প্রবেশ করিয়ে দেয়াশলাইয়ে আগুন জ্বালানো হতো।[4]

দুর্ভাগ্যক্রমে ফসফরাস দিয়ে দিয়াশলাই তৈরীর ফলে ব্যবহারকারী ফসি জ এবং অন্যান্য হাড়ক্ষয়জনিত রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটে।[5] এছাড়াও, শ্বেত ফসফরাস ব্যবহারে ব্যক্তিদের প্রাণহানিকর ঘটনা ঘটতে থাকে। দিয়াশলাইয়ের সম্মুখাংশ গলাধঃকরণ করে মৃত্যু ও আত্মহত্যাজনিত ঘটনাগুলো ধারাবাহিকভাবে হতে থাকে। ১৮৪৫ সালে ভিয়েনায় প্রথমদিকে এ ধরনে ঘটনা ঘটে। নিউইয়র্কের সার্জনও এ জাতীয় নয়টি ঘটনা নিয়ে পাম্পলেট প্রকাশ করেন।[6][7]

গ্যালারী চিত্র

তথ্যসূত্র

গ্রন্থপঞ্জি

  • Threlfall, Richard E., (1951). The Story of 100 Years of Phosphorus Making: 1851–1951. Oldbury: Albright & Wilson Ltd.

আরও পড়ুন

  • Beaver, Patrick, (1985). The Match Makers: The Story of Bryant & May. London: Henry Melland Limited. আইএসবিএন ০-৯০৭৯২৯-১১-৭
  • Emsley, John, (2000). The Shocking History of Phosphorus: A Biography of the Devil's Element. Basingstoke: Macmillan Publishing. আইএসবিএন ০-৩৩৩-৭৬৬৩৮-৫
  • Steele, H. Thomas (1987). Close Cover Before Striking: The Golden Age of Matchbook Art. Abeville Press

বহিঃসংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.