দাগনভূঞা

দাগনভূঞা বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের একটি ছোট শহর। এটি চট্টগ্রাম বিভাগের অন্তর্গত ফেনী জেলায় অবস্থিত দাগনভূঞা উপজেলার প্রধান শহর। এ শহরটি দাগনভূঞা উপজেলা প্রশাসনিক সদর দফতর। ১৩.৬৯ বর্গকিলোমিটার আয়তন এবং ৩৩,৫৭৪ জন জনসংখ্যা বিশিষ্ট শহরটি দাগনভূঞা পৌরসভা দ্বারা শাসিত হয়। জনসংখ্যার বিচারে দাগনভূঞা ফেনী জেলার তৃতীয় বৃহত্তম শহর।

দাগনভূঞা
পূর্বনাম: গোপীগঞ্জ
গুপীগঞ্জ
পৌরশহরউপজেলা সদর
দাগনভূঞা
বাংলাদেশে দাগনভূঞা শহরের অবস্থান
স্থানাঙ্ক: ২২.৯১২৭৪৫° উত্তর ৯১.৩১৮০৯৬° পূর্ব / 22.912745; 91.318096
দেশ বাংলাদেশ
বিভাগঢাকা বিভাগ
জেলাফেনী জেলা
উপজেলাদাগনভূঞা উপজেলা
সরকার
  ধরনপৌরসভা
  শাসকদাগনভূঞা পৌরসভা
  পৌরমেয়রওমর ফারুক খাঁন [1]
আয়তন
  মোট১৩.৬৯ বর্গকিমি (৫.২৯ বর্গমাইল)
জনসংখ্যা
  মোট৩৩,৫৭৪
  জনঘনত্ব২,৫০০/বর্গকিমি (৬,৪০০/বর্গমাইল)
সময় অঞ্চলবাংলাদেশ সময় (ইউটিসি+৬)

নামকরণ

দাগনভূঞার পূর্ব নাম গোপীগঞ্জ/গুপিগঞ্জ যা ভুলুয়া রাজ্যের অধীনে শাসিত হতো । ইতিহাস পর্যালোচনায় দেখা যায়, প্রখ্যাত জমিদার শ্রী অরুণ সিং বাহাদুরের স্ত্রীর নাম ছিল শ্রী গোপীদেবী যিনি স্বামীর জমিদারীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন। সে থেকে তার নাম অনুসারে জমিদারী স্টেট গোপীগঞ্জ নামে পরিচিতি লাভ করে। জমির আহমেদ-এর সূত্র মতে পরবর্তীতে মুঘল সম্রাট শাহাজাহানের পুত্র শাহাজাদা সুজার আমলে বারো ভুঁইয়াদের কোন এক উপবংশের মাতুভূঁঞা ও দাগনভূঁঞা নামে দু’জন বিশিষ্ট ব্যক্তি ঐ সময় ফেনীর পশ্চিমাঞ্চলে বসতি স্থাপন করেছিলেন। মাতুভূঁঞা ও দাগনভূঁঞা এই দুই ব্যক্তির মাতুভূঁঞা বর্তমান ভূঁঞা বাড়িতে এবং অপরজন দাগনভূঁঞা দিঘীর পার্শ্বে স্থায়ী বসতি স্থাপন করেন বলেন ধারণা করা হয়। ফলশ্রুতিতে তার নাম অনুসারে এলাকাটি দাগনভূঞা হিসেবে খ্যাতি পায়।[2]

ইতিহাস

১৮৭৬ সালে ব্রিটিশ সরকারের প্রশাসনিক প্রয়োজনে গঠিত বৃহত্তর নোয়াখালীর অংশ হিসেবে ফেনী মহকুমার অন্তর্গত দাগনভূঞাকে ১৯৭৯ সালে সরকারের প্রশাসনিক প্রয়োজনে দাগনভূঞা থানা হিসেবে রূপান্তর করা হয়। তৎমধ্যে ফেনী মহকুমাকে ১৯৮৪ সালের মার্চ মাসে ফেনীকে জেলা হিসেবে রূপান্তর করা হয় এবং পরবর্তীতে ১৯৮৩ সালে সরকার দাগনভূঞা থানাকে দাগনভূঞা উপজেলায় উন্নীত করা হয়। তখন এ দাগনভূঞা শহরকে উপজেলা শহর(সদর দফতর) করা হয়। পরবর্তীতে ২০০০ সালে দাগনভূঞা পৌরসভা প্রতিষ্ঠিত হলে এ শহর পৌর শহরের মর্যাদা লাভ করে।[2]

ভাষা ও সংস্কৃতি

দাগনভূঞা অঞ্চলের ভূ-প্রকৃতি ও ভৌগোলিক অবস্থান এই অঞ্চলের মানুষের ভাষা ও সংস্কৃতি গঠনে ভূমিকা রেখেছে। এখানে ভাষার মূল বৈশিষ্ট্য বাংলাদেশের অন্যান্য অঞ্চলের মত হলেও, তবুও কিছুটা বৈচিত্র্য খুঁজে পাওয়া যায়। যেমন কথ্য ভাষায় মহাপ্রাণধ্বনি অনেকাংশে অনুপস্থিত, অর্থাৎ ভাষা সহজীকরণের প্রবণতা রয়েছে। দাগনভূঞার আঞ্চলিক ভাষা মূলত নোয়াখালী উপভাষা যা সন্নিহিত নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর এবং কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের ভাষার মিল পাওয়া যায়। চট্টগ্রামের ভাষার সাথে সামান্য মিল থাকলেও বৈসাদৃশ্যই অধিক। এই এলাকার ইতিহাস পর্যালোচনায় দেখা যায় যে দাগনভূঞার সভ্যতা বহুপ্রাচীন। এই এলাকায় প্রাপ্ত প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন প্রাচীন সভ্যতার বাহক হিসেবে দেদীপ্যমান।[3]

প্রশাসন

এ শহরটি দাগনভূঞা পৌরসভা নামক একটি স্থানীয় সরকার সংস্থা(পৌরসভা) দ্বারা পরিচালিত হয় যা ৯টি ওয়ার্ড এবং ২০টি মহল্লায় বিভক্ত । ১৩.৬৯ বর্গ কি.মি. আয়তনের দাগনভূঞা শহরের ১২.৭৬ বর্গ কি.মি. এলাকা দাগনভূঞা পৌরসভা দ্বারা শাসিত হয়। এ পৌর শহরের নাগরিকদের পৌরসেবা ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা প্রদান করাই এ সংস্থার কাজ। [4]

ভৌগোলিক উপাত্ত

শহরটির অবস্থানের অক্ষাংশ ও দ্রাঘিমাংশ হল ২২.৯১২৭৪৫° উত্তর ৯১.৩১৮০৯৬° পূর্ব / 22.912745; 91.318096। সমুদ্র সমতল থেকে শহরটির গড় উচ্চতা ৩ মিটার

জনসংখ্যা

বাংলাদেশের আদমশুমারি ও গৃহগণনা-২০১১ অনুযায়ী দাগনভূঞা শহরের মোট জনসংখ্যা ৩৩,৫৭৪ জন যার মধ্যে ১৬,৮১৪ জন পুরুষ এবং ১৬,৭৬০ জন নারী। এ শহরের পুরুষ এবং নারী অনুপাত ১০১:১০০। [5]

তথ্যসূত্র

  1. "দাগনভূঁঞা পৌরসভার মেয়র"। ১০ নভেম্বর ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-১১-০৯
  2. ""দাগনভূঞা" নামকরণ ও ইতিহাস"। দাগনভূঞা.কম। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-১১-০৯
  3. "ভাষা ও সংস্কৃতি"। daganbhuiyan.feni.gov.bd। ১০ নভেম্বর ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-১১-০৯
  4. "এক নজরে পৌরসভা"। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-১১-০৯
  5. "Urban Centers in Bangladesh"। Population & Housing Census-2011 [আদমশুমারি ও গৃহগণনা-২০১১] (পিডিএফ) (প্রতিবেদন)। জাতীয় প্রতিবেদন (ইংরেজি ভাষায়)। ভলিউম ৫: Urban Area Rport, 2011। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো। মার্চ ২০১৪। পৃষ্ঠা ২৯২। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-১১-০৯
This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.