দহগ্রাম ইউনিয়ন
দহগ্রাম ইউনিয়ন বাংলাদেশের লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রাম উপজেলার একটি ইউনিয়ন ও বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ ছিটমহল, যা ভারতের মূল ভূখণ্ডের মধ্যে অবস্থিত। এর তিন দিকে ভারতের কুচবিহার জেলা, একদিকে তিস্তা নদী, নদীর ওপারেও ভারতীয় ভূখণ্ড। ভৌগোলিক কারণে এটি দহগ্রাম-আঙ্গোরপোতা ছিটমহল নামেই বেশি পরিচিত। এ ইউনিয়নের মোট আয়তন ২২.৬৮ বর্গ কিমি. ও মোট জনসংখ্যা প্রায় ২০,০০০ জন। ১৯৮৫ সালে দহগ্রাম ও আঙ্গরপোতা ছিটমহল একত্রে পাটগ্রাম উপজেলার একটি স্বতন্ত্র ইউনিয়ন (দহগ্রাম ইউনিয়ন) হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ১৯৮৯ খ্রিষ্টাব্দের ১৯ আগস্টে এখানে ইউনিয়ন পরিষদের উদ্বোধন করা হয়।
দহগ্রাম | |
---|---|
ইউনিয়ন | |
ডাকনাম: দহগ্রাম ইউপি | |
দহগ্রাম | |
স্থানাঙ্ক: ২৬°১৮′১″ উত্তর ৮৮°৫৬′৪৩″ পূর্ব | |
দেশ | বাংলাদেশ |
বিভাগ | রংপুর বিভাগ |
জেলা | লালমনিরহাট জেলা |
উপজেলা | পাটগ্রাম উপজেলা |
সরকার | |
• চেয়ারম্যান | মোঃ হাবিবুর রহমান (বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ) |
আয়তন | |
• মোট | ২২.৬৮ বর্গকিমি (৮.৭৬ বর্গমাইল) |
জনসংখ্যা (২০১১) | |
• মোট | ২০,০০০ |
• জনঘনত্ব | ৮৮০/বর্গকিমি (২,৩০০/বর্গমাইল) |
সময় অঞ্চল | বিএসটি (ইউটিসি+৬) |
ওয়েবসাইট | দহগ্রাম |
ইতিহাস
১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে ভারত বিভাগের সময় তদানিন্তন বাংলা প্রদেশটি ব্রিটিশ শাসকেরা ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ভাগ করে দেয়। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠতার ফলে দহগ্রাম, যা ভারতীয় ভূখণ্ড দ্বারা চারিদিকে পরিবেষ্ঠিত, তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের ভাগে পড়ে। এটি ছিল ভারতে অবস্থিত পাকিস্তানের বৃহত্তম ছিটমহল। ১৯৫৩ সালের পূর্বে পাকিস্তান দাবি করেছিল যে, দহগ্রাম পূর্ব পাকিস্তানের মূল ভূখণ্ডের সাথে সরাসরি ভাবে যুক্ত। কিন্তু মানচিত্র পর্যালোচনা করে দেখা যায় যে, এটি পূর্ব পাকিস্তান সীমান্ত হতে প্রায় ৮৫ মিটার পশ্চিমে অবস্থিত। তখন থেকে এটি দুই দেশের মধ্যকার বিরোধের অন্যতম প্রধান বিষয় হয়ে দাঁড়ায়।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের পরে ভারত ও বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে ছিট মহল সংক্রান্ত বিরোধ নিরসনের জন্য চুক্তি হয়। কিন্তু এই চুক্তি বাস্তবায়িত হয় নাই, এবং দহগ্রাম সংক্রান্ত বিবাদ এখন পর্যন্ত বিরাজমান থেকে যায়। ১৯৮২ সালে একটি নতুন চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়, যা ১৯৯২ সালে বাস্তবায়িত হয়। এই চুক্তি অনুসারে ভারত, দহগ্রাম-আঙ্গরপোতাবাসীদের বাংলাদেশের মূল ভূখণ্ডের সাথে যোগাযোগ স্থাপনের জন্য ১৭৮ বাই ৮৫ মিটার (৫৮৪ ফু × ২৭৯ ফু) আয়তনের একটি ভূমি বাংলাদেশকে ইজারা হিসেবে দেয় যা বর্তমানে তিনবিঘা করিডোর হিসেবে খ্যাত।
পূর্বে করিডোরটি দিনের ১২ ঘণ্টা সময়ের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হত,[1][2] এতে দহগ্রাম-আঙ্গরপোতার অধিবাসীদের কঠিন সমস্যার সম্মুখীন হতে হত কারণ সেসময় সেখানে কোন হাসপাতাল ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছিল না।[2]
২০১১ সালের ৬ই সেপ্টেম্বর ঢাকায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ও ভারতের প্রধানমন্ত্রীর মধ্যকার একটি চুক্তি অনুযায়ী বর্তমানে করিডোরটি ২৪ ঘণ্টাই উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে।[3][4]
২০১১ সালের ১৯শে অক্টোবর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক আনুষ্ঠানিকভাবে করিডোরটি উন্মুক্ত ঘোষণা করা হয়।[5]
অবকাঠামো
২০১১ সালের পূর্বে দহগ্রাম-আঙ্গরপোতাতে কোন হাসপাতাল[2] বা কলেজ ছিল না। ২০১১ সালের ১৯শে অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দহগ্রামে একটি দশ শয্যার হাসপাতাল ও দহগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের উদ্বোধন করেন।[5]
তথ্যসূত্র
- "'Tin Bigha likely to be kept open 24 hrs within a short time'"। The Daily Star (ইংরেজি ভাষায়)। নভেম্বর ২০, ২০১০। সংগ্রহের তারিখ ৭ সেপ্টেম্বর ২০১১।
- "Dahagram-Angorpota's unending miseries"। bdnews24.com (ইংরেজি ভাষায়)। জুন ৩০, ২০১০। ২ এপ্রিল ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৭ সেপ্টেম্বর ২০১১।
- "Tin Bigha corridor to remain open 24 hours"। Bangla News 24 (ইংরেজি ভাষায়)। ৬ সেপ্টেম্বর ২০১১। ২২ সেপ্টেম্বর ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৭ সেপ্টেম্বর ২০১১।
- "Transit tumbles into Teesta abyss"। bdnews24.com (ইংরেজি ভাষায়)। ৭ সেপ্টেম্বর ২০১১। ২ এপ্রিল ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৭ সেপ্টেম্বর ২০১১।
- Shakhawat Liton; Dilip Roy (২০ অক্টোবর ২০১১)। "2 enclaves float in joy"। The Daily Star (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০ অক্টোবর ২০১১।
- Schendel, Willem van (২০০২)। "Stateless in South Asia: The Making of the India-Bangladesh Enclaves" (পিডিএফ)। The Journal of Asian Studies (ইংরেজি ভাষায়)। 61 (1): 115–147। আইএসএসএন 1752-0401। ডিওআই:10.2307/2700191।