দক্ষিণ মেরু

পৃথিবীর দক্ষিণ ভাগে অবস্থিত যে স্থানে পৃথিবীর আহ্নিক গতির অক্ষ ভূপৃষ্ঠকে ছেদ করে, সেই স্থান হল পৃথিবীর দক্ষিণ মেরু বা ভৌগোলিক দক্ষিণ মেরু বা কুমেরু। দক্ষিণ মেরু অ্যান্টার্কটিকা মহাদেশে অবস্থিত পৃথিবীর দক্ষিণতম বিন্দু। এই স্থান পৃথিবীর উত্তর প্রান্তে অবস্থিত উত্তর মেরুর ঠিক বিপরীতে অবস্থিত। পৃথিবীর দক্ষিণ মেরুতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্থায়ী গবেষণাগার আমুন্ডসেন-স্কট দক্ষিণ মেরু কেন্দ্র অবস্থিত।

চৌম্বকীয় (২০০৭)
ভূচৌম্বকীয় (২০০৫)
দুর্গম
ভৌগোলিক
দক্ষিণ মেরুসমূহ

ভূগোল

ভৌগোলিক দক্ষিণ মেরু

পৃথিবীর দক্ষিণ গোলার্ধের যে স্থানে পৃথিবীর আহ্নিক গতির অক্ষ ভূপৃষ্ঠকে ছেদ করে, সেই স্থানটি হল পৃথিবীর ভৌগোলিক দক্ষিণ মেরু। এই স্থানের ভৌগোলিক স্থানাঙ্ক ৯০° দক্ষিণ। এই স্থানের দ্রাঘিমা অসংজ্ঞাত হওয়ায় একে ০° ধরে নেওয়া হয়। দক্ষিণ মেরুতে সমস্ত দিক উত্তর দিকে নির্দেশ করে। এই কারণে দক্ষিণ মেরুতে মূল মধ্যরেখার সাপেক্ষে দিক নির্ণয় করা হয়। [1]

পূর্বে দক্ষিণ মেরু পৃথিবীর দক্ষিণ গোলার্ধের সমুদ্রে অবস্থান করলেও মহাদেশীয় প্রবাহের ফলে বর্তমানে অ্যান্টার্কটিকায় অবস্থিত। অ্যান্টার্কটিকার এই স্থানটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ২,৮৩৫ মিটার বা ৯,৩০১ ফুট ওপরে ২,৭০০ মিটার পুরু বরফে ঢাকা মালভূমিতে অবস্থিত। তাই এই স্থানের ভূপৃষ্ঠ সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে মাত্র ১০০ মিটারের মতো উঁচু। এই স্থান থেকে সবচেয়ে নিকটবর্তী সমুদ্র ১৩০০ কিলোমিটার দূরে তিমি উপসাগর[2] মেরুর বরফ মূল মধ্যরেখার থেকে ৩৭° থেকে ৪০° পশ্চিমের মধ্যে ওয়েডেল সাগরের দিকে বছরে ১০ মিটার করে প্রবাহিত হচ্ছে। [3]

সময়

যেহেতু দক্ষিণ মেরুতে সূর্যোদয়সূর্যাস্ত বছরে একবার হয় এবং পৃথিবীর সকল দ্রাঘিমা রেখা এই বিন্দুতে এসে মিলিত হয়, সেহেতু দক্ষিণ মেরুকে কোন নির্দিষ্ট সময় অঞ্চলে অন্তর্ভুক্ত করা যায় না। কিন্তু প্রায়োগিক ও প্রাত্যাহিক ব্যবহারের জন্য আমুন্ডসেন-স্কট দক্ষিণ মেরু কেন্দ্র নিউজিল্যান্ড সময়ের সাহায্য নেয়।

আবহাওয়া

মার্চ থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দক্ষিণ মেরুতে সূর্য দেখতে পাওয়া যায় না। শুধুমাত্র মে থেকে জুলাই মাস অব্দি সামান্য গোধূলির আলো পাওয়া যায়। সেপ্টেম্বর থেকে মার্চ অব্দি পুরো গ্রীষ্মকাল সূর্য দিগন্তের ওপরে অবস্থান করে ঘড়ির কাঁটার বিপরীত দিকে ঘোরে বলে মনে হয়। দিগন্তের ওপরে সূর্য থাকলেও আকাশে নিচের দিকেই থাকে, ডিসেম্বর মাসে সর্বোচ্চ ২৩.৫° অব্দি ওপরে ওঠে। অধঃপাতিত সূর্যালোক বরফের দ্বারা প্রতিফলিত হয়ে যায়। সূর্য থেকে প্রাপ্ত উষ্ণতার অভাব ও প্রায় ২,৮০০ মিটার ঊচ্চতার কারণে দক্ষিণ মেরুতে পৃথিবীর অন্যতম শীতলতম আবহাওয়া লক্ষ করা যায়।

দক্ষিণ মেরুতে বছরের মধ্যে ডিসেম্বরজানুয়ারি মাসে সব চেয়ে বেশি তাপমাত্রা থাকে [গড় −২৫.৯ °সে (−১৫ °ফা)] মার্চের শেষে সূর্যাস্ত ও সেপ্টেম্বরের শুরুতে সূর্যোদয়ের সময় তাপমাত্রা নেমে −৪৫ °সে (−৪৯ °ফা) হয়। শীতকালে গড় তাপমাত্রা −৫৮ °সে (−৭২ °ফা) থাকে। ২০১১ খ্রিষ্টাব্দের ২৫শে ডিসেম্বর সর্বকালীন সর্বোচ্চ তাপমাত্রা −১২.৩ °সে (৯.৯ °ফা)[4] এবং ১৯৮২ খ্রিষ্টাব্দের ২৩শে জুন সর্বকালীন সর্বনিম্ন −৮২.৮ °সে (−১১৭.০ °ফা)[5][6][7] পাওয়া যায়।

দক্ষিণ মেরুর আবহাওয়া শুষ্ক। বাতাসের আপেক্ষিক আর্দ্রতা প্রায় শূন্যের কাছাকাছি। বৃষ্টিপাত প্রায় কখনোই হয়না বললেই চলে। কিন্তু প্রচন্ড গতিবেগে প্রবাহিত হাওয়ায় তুষারপাত হয় এবং প্রতি বছর ২০ সেমি (৭.৯ ইঞ্চি) হারে তুষার জমা হয়।[8]

২০০৯ সালের দক্ষিণ মেরু-এর আবহাওয়া সংক্রান্ত তথ্য
মাস জানু ফেব্রু মার্চ এপ্রিল মে জুন জুলাই আগস্ট সেপ্টে অক্টো নভে ডিসে বছর
সর্বোচ্চ রেকর্ড °সে (°ফা) −১৪
(৭)
−২০
(−৪)
−২৬
(−১৫)
−২৭
(−১৭)
−৩০
(−২২)
−৩১
(−২৪)
−৩৩
(−২৭)
−৩২
(−২৬)
−২৯
(−২০)
−২৯
(−২০)
−১৮
(০)
−১২.৩
(৯.৯)
−১২.৩
(৯.৯)
সর্বোচ্চ গড় °সে (°ফা) −২৫.৯
(−১৪.৬)
−৩৮.১
(−৩৬.৬)
−৫০.৩
(−৫৮.৫)
−৫৪.২
(−৬৫.৬)
−৫৩.৯
(−৬৫.০)
−৫৪.৪
(−৬৫.৯)
−৫৫.৯
(−৬৮.৬)
−৫৫.৬
(−৬৮.১)
−৫৫.১
(−৬৭.২)
−৪৮.৪
(−৫৫.১)
−৩৬.৯
(−৩৪.৪)
−২৬.৫
(−১৫.৭)
−৪৬.৩
(−৫১.৩)
সর্বনিম্ন গড় °সে (°ফা) −২৯.৪
(−২০.৯)
−৪২.৭
(−৪৪.৯)
−৫৭.০
(−৭০.৬)
−৬১.২
(−৭৮.২)
−৬১.৭
(−৭৯.১)
−৬১.২
(−৭৮.২)
−৬২.৮
(−৮১.০)
−৬২.৫
(−৮০.৫)
−৬২.৪
(−৮০.৩)
−৫৩.৮
(−৬৪.৮)
−৪০.৪
(−৪০.৭)
−২৯.৩
(−২০.৭)
−৫২.০
(−৬১.৬)
সর্বনিম্ন রেকর্ড °সে (°ফা) −৪১
(−৪২)
−৫৭
(−৭১)
−৭১
(−৯৬)
−৭৫
(−১০৩)
−৭৮
(−১০৮)
−৮২
(−১১৬)
−৮০
(−১১২)
−৭৭
(−১০৭)
−৭৯
(−১১০)
−৭১
(−৯৬)
−৫৫
(−৬৭)
−৩৮
(−৩৬)
−৮২.৮
(−১১৭.০)
মাসিক সূর্যালোক ঘণ্টার গড় ৫৫৮ ৪৮০ ২১৭ ৬০ ৪৩৪ ৬০০ ৫৮৯ ২,৯৩৮
উৎস ১: [9]
উৎস ২: [10]

তথ্যসূত্র

  1. "Moving the South Pole" ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০১২ তারিখে, NASA Quest
  2. Amundsen-Scott South Pole Station, National Science Foundation, Office of Polar Programs
  3. "Where is the real Pole really?"। ২০১৩-০৬-২৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-০৩-২৫
  4. Matthew A. Lazzara (২০১১-১২-২৮)। "Preliminary Report: Record Temperatures at South Pole (and nearby AWS sites…)"। সংগ্রহের তারিখ ২০১১-১২-২৮
  5. Your stay at Amundsen-Scott South Pole Station ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১ জুন ২০১২ তারিখে, National Science Foundation Office of Polar Programs
  6. "How cold is the Antarctic?"। NIWA। সংগ্রহের তারিখ ২০১২-০৮-১৩
  7. "Antarctic Weather"। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-০৫-২৫
  8. Initial environmental evaluation – development of blue-ice and compacted-snow runways, National Science Foundation Office of Polar Programs, April 9, 1993
  9. "দক্ষিণ মেরু, অ্যান্টার্কটিকা"। WeatherBase। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-১০-০৭
  10. "Antarctica Climate data and graphs"। ৯ অক্টোবর ২০১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১০-০৪-১০
This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.