ত্রিপুরসুন্দরী

ত্রিপুরসুন্দরী বা ষোড়শী বা ললিতাম্বা [2] হলেন সনাতন ধর্মের এক দেবী। ইনি দশমহাবিদ্যার অন্যতমা। ত্রিপুরসুন্দরী রাজরাজেশ্বরী নামেও পরিচিতা। ইনি দেবী পার্বতীর একটি স্বরূপ। শিবমহাপুরাণের উমা সংহিতায় বিস্তারিত বর্ণনা আছে।

ললিতাম্বা ত্রিপুরসুন্দরী (পার্বতী)
দশ মহাবিদ্যার সদস্য গোষ্ঠীর সদস্য
অন্তর্ভুক্তিপরশক্তি , মহাদেবী , মহাবিদ্যা , ব্রহ্মবিদ্যা পার্বতী ,
আবাসমণিদ্বীপ /শ্রী নাগারা/উমালোক/শিবলোক
মন্ত্র
  • ওঁ শ্রী মাত্রে নমঃ॥
ওঁ ঐং হ্রীং শ্রীং ঐং ক্লীং সওম্ ক্লীং ঐং ওঁ নমো ভগবতী ত্রিপুরা দেবী মম ভাসাম কুরু কুরু স্বাহা
অস্ত্রফাঁস, তীর এবং ধনুক[1]
উৎসবমাঘ পূর্ণিমা, ললিতা জয়ন্তী
ব্যক্তিগত তথ্য
সঙ্গীকামেশ্বর (শিব)
সন্তানগণেশ ও কার্তিকেয় (স্কন্দ)
শ্রীচক্রের উপর বামপদ স্থাপন করে সিংহাসনে উপবিষ্ট শ্রী ললিতা-ত্রিপুরসুন্দরী (পার্বতী); হাতে সনাতনী প্রতীক ইক্ষুদণ্ড, পুষ্পবাণ, পাশ-অঙ্কুশ।
দেবী ত্রিপুরসুন্দরীর চিত্র, ঊনবিংশ শতাব্দী
চতুর্ভুজা ললিতার রূপে পার্বতী, সঙ্গে পুত্র গণেশস্কন্দ,ওড়িশা, পূর্ব ভারত। ব্রিটিশ মিউজিয়ামে রক্ষিত একাদশ শতাব্দীর ভাস্কর্য।

ত্রিপুরসুন্দরীর ষোড়শী রূপটি ষোড়শবর্ষীয়া এক বালিকার রূপ। এই রূপ ষোড়শপ্রকার কামনার প্রতীক। ষোড়শীতন্ত্রে ত্রিপুরাসুন্দরীকে "শিবের নয়নজ্যোতি" বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তিনি কৃষ্ণবর্ণা ও শিবোপরি উপবিষ্টা। শিব ও ষোড়শীকে শয্যা, সিংহাসন অথবা ব্রহ্মা, বিষ্ণু, রুদ্রইন্দ্রের মস্তকোপরিস্থিত বেদিতে উপবিষ্ট রূপে কল্পনা করা হয়।

ললিতাম্বা শ্রীবিদ্যা সংক্রান্ত অন্যতমা দেবী। ললিতা ধনুক, পঞ্চবাণ, পাশ ও অঙ্কুশধারিনী। পাশ-অঙ্কুশ বন্ধন ও মুক্তির প্রতীক, পঞ্চবাণ পঞ্চ ইন্দ্রিয়ের প্রতীক এবং ইক্ষুধনু মনের প্রতীক।

ভারতীয় রাজ্য ত্রিপুরার নাম ত্রিপুরাসুন্দরীর নাম থেকে ব্যুৎপত্তি লাভ করেছে। উদয়পুর শহরের অদূরে রাধাকিশোরপুর গ্রামের নিকট একটি পাহাড়চূড়ায় অবস্থিত ত্রিপুরেশ্বরী মন্দির দেবীর প্রধান মন্দির।

কাশ্মীরি পণ্ডিতরা ত্রিপুরাসুন্দরীর পাঁচটি স্তবগান সংকলন করেছেন। পঞ্চস্তবী নামে পরিচিত এই স্তবগানগুলি উক্ত সম্প্রদায়ের মধ‍‍্যে আজও জনপ্রিয়।

পৌরাণিক উপাখ‍্যান ব্রহ্মাণ্ড পুরাণ মতে, দেবী ললিতা ত্রিপুরাসুন্দরী আদি পরাশক্তি। কামদেবের ভস্মোদ্ভুত ভণ্ডাসুর নামে অসুরকে বিনাশ করতে তাঁর আবির্ভাব ঘটে। একবার চিত্রকর্মা নামে রুদ্রগণের এক সেনাপতি খেলার ছলে কামদেবের ভস্ম দ্বারা এক পুত্তলিকা তৈরি করেন। চিত্রকর্মা তা মহাদেবের কাছে নিয়ে যান। মহাদেবের উদ্দেশ‍্য ছিল দুর্বোধ‍্য। পুত্তলিকাটিকে শিবের কাছে নিতেই তাতে প্রাণ সঞ্চারিত হয় ও এক বালকে পরিণত হয়। চিত্রকর্মা তখন আনন্দে আত্মহারা হয়ে যায়। সে বালকটিকে উপদেশ ও শতরুদ্রেয় মন্ত্র দান করেন এবং মহাদেবের তপস‍্যা করার পরামর্শ দেন। বালকটি মহাদেবের কঠোর তপস‍্যা করতে থাকে। মহাদেব তার তপস‍্যায় তুষ্ট হয়ে বর প্রার্থনা করতে বলেন। সে তখন বর প্রার্থনা করে যে, তার প্রতিদ্বন্দ্বীর অস্ত্রের আঘাতে সে যেন আবদ্ধ না হয় এবং সে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বীর অর্ধ বল হরণ করে নিজের বল বৃদ্ধি করতে পারে। মহাদেব তাঁকে বরদান করেন এবং সাথে ষাট হাজার বছর রাজত্ব করার বর দেন। মহাদেব তখন প্রস্থান করলেন। সে বিস্মিত ও শঙ্কিত হল। পরে সব ভুলে গেল। ব্রহ্মা সকল কিছুর সাক্ষী ছিলেন। তিনি হতাশ হন এবং তাকে ভণ্ড ভণ্ড বলতে লাগলেন। কারণ, সে ধর্মচ‍্যুত হয়েছিল। তার মধ‍্যে আসুরিক প্রবৃত্তি দেখা দেয়। তাই তার নাম হয় ভণ্ডাসুর। কামদেবের অবশেষ ভস্ম থেকে তার দুই ভাই বিশুক্র ও বিশঙ্গের জন্ম হয়। পড়ে থাকা ভস্ম তিনশ' অক্ষৌহিণী সেনায় পরিণত হয়। শুক্রাচার্য সবকিছু শুনে তাদের গুরুর দ্বায়িত্ব পালন করেন। তিনি দৈত‍্যপ্রকৌশলী ময়কে মহেন্দ্র পর্বতের উপর এক পুরী নির্মাণ করতে বলেন। যার নাম হয় শোণ‍্যক পুরী। শুক্রাচার্য প্রতি ঘরে নিয়মিত যজ্ঞানুষ্ঠানের, বেদাধ‍্যয়ন ও তপস‍্যার পরামর্শ দেন। তিনি ভণ্ডাসুরকে শোণ‍্যক পুরের রাজা, বিশুক্র ও বিশঙ্গকে যুবরাজ পদে অভিষিক্ত করেন। ভণ্ডাসুরের সন্মোহিনী, কুমুদিনী, চিত্রাঙ্গী ও সুন্দরী নামে চারজন স্ত্রী ছিল। ভণ্ডাসুর তাদের থেকে ত্রিশজন পুত্র প্রাপ্ত হন।

একবার ভণ্ডাসুর তার ভাই ও অন‍্যান‍্য রাক্ষসদের নিয়ে বায়ুরূপ নিয়ে ত্রিলোকের সকল স্বর্গের দেবতা, মর্ত‍্যের মানুষ ও পাতালের নাগেদের দেহে প্রবেশ করে তাদের দেহ থেকে বীর্য, রস সহ অন‍্যান‍্য তরল পদার্থ শোষণ করে ও তাদের রূপ হরণ করে কুরূপ, নপুংসক ও শক্তিহীন করে তোলেন। তাদের মধ‍্যে আর একে অপরের প্রতি প্রেমভাব রইল না। তারা তখন ব্রহ্মাকে নিয়ে বিষ্ণুর কাছে গেলেন। বিষ্ণু ছিলেন যোগনিদ্রায় মগ্ন। সেই সময় ভন্ড অসুর ইন্দ্রানী শচী কে বলপূর্বক বিবাহ করতে চাইলে, শচী কৈলাসে পালিয়ে আসেন, ও মা পার্বতীর কাছে আশ্রয় চান দেবী পার্বতী তাকে অভয় দেন যে তিনি থাকতে তার কেউ ক্ষতি করতে পারবে না। সহস্র সৈন্য নিয়ে ভন্ড অসুর আক্রমণ করে কৈলাস, লীলা ছলে মহাদেব অন্তর্নিহিত হলেন, দেবী পার্বতী ও চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়লেন, তখন সকল দেবতাগণ দেবীকে স্তুতি করলেন বললেন ' হে দেবী আপনিই দুর্গা ,কালী , চণ্ডিকা , মহামায়া, আদ্যাশক্তি হে জগতজননী রক্ষা করুন মোদের। দেবী পার্বতী ক্রমশ তার উগ্র রূপে প্রকাশ পেলেন। দেবীর সঙ্গে অসুর সেনার ভীষণ যুদ্ধ শুরু হলো। কিন্তু ভন্ড তো শিবের কাছে বর প্রাপ্ত তাই ব্রহ্মা দেবীকে যুদ্ধ স্থগিত করার অনুরোধ জানালেন। দেবাদিদেব মহাদেব প্রকট হলেন ও ভন্ড অসুর কে কৈলাশ থেকে বিতাড়িত করলেন। নিদ্রা ভঙ্গে বিষ্ণু বিধান দিলেন একমাত্র মহাশক্তি মহামায়া পার্বতী পারেন অসুর বধ করতে। তবে তার গৃহিণী রূপ নয় তাকে তার মহাশক্তিশালী রূপ ধারণ করতে হবে। বিষ্ণুর বিধান মতে সকল দেবতাগণ ও ব্রহ্মা, বিষ্ণু , শিব মর্তে গিয়ে দেবী পার্বতীর আরাধনা শুরু করলেন। মর্তের সেই স্থানটি ছিল বর্তমানের ত্রিপুরা রাজ্য যেখানে সতী রূপে দেবীর অঙ্গুলী পতিত হয়েছিল। অবশেষে দেবতাদের অনুরোধে যজ্ঞের চিদাগ্নি থেকে দেবী পার্বতী, ললিতা ত্রিপুরাসুন্দরী রূপে আবির্ভূত হন। দেবীর বুদ্ধি হতে প্রকাশিতা হন দেবী মন্ত্রীনাথা শ‍্যামলা ও অহং থেকে প্রকাশিতা হন দন্ডীনাথা বারাহী , একে একে দেবী পার্বতীর দেহ থেকে তার সকল শক্তি সমভূতা দেবী তথা চণ্ডী, কালী, তারা, বগলামুখি, কালরাত্রি দেবীর বেরিয়ে আসেন। পরে ভীষণ যুদ্ধে দেবী পার্বতী, ভন্ড অসুর কে বধ করেন, যেইখানে সতী রূপে দেবীর অঙ্গুলী পতিত হয় সেইখানেই দেবী পার্বতী, ললিতা ত্রিপুরা সুন্দরী রূপে ভন্ড অসুর বধ করেন। অন্য মতে পাওয়া যায়, একবার শিব, পার্বতীকে কৃষ্ণ বর্ণা বলার কারণে দেবী তার প্রতি রুষ্ট হন ও কৈলাস ত্যাগ করে পরে তপস্যার মাধ্যমে তিনি নিজের শ্বেত গাত্রবর্ণ ফিরে পান, ত্রিলোকের শ্রেষ্ঠ সুন্দরী হওয়ার জন্য দেবী পার্বতীর নাম হলো ত্রিপুরা সুন্দরী।

সাহিত্যে ত্রিপুরসুন্দরী

হিন্দু ধর্মসাহিত্যে ত্রিপুরসুন্দরীকে পরমাসুন্দরী দেবীরূপে বর্ণনা করা হয়েছে। ললিতা সহস্রনামসৌন্দর্যলহরী স্তোত্রে ত্রিপুরসুন্দরীরূপী পার্বতীর রূপবর্ণনা করা হয়েছে। হিন্দু বিশ্বাস অনুযায়ী, কামনা সৃষ্টির মাধ্যমে তিনি সৃষ্টির স্রোত অবিরত রাখেন। আদি শঙ্করাচার্য তার ত্রিপুরসুন্দরী অষ্টকম স্তোত্রে ত্রিপুরসুন্দরীকে বিশ্বজননী বলেছেন। ত্রিপুরাসুন্দরীর মধ্যে কালীর শক্তি ও দুর্গার সৌন্দর্য ও মহত্বের সম্মিলন লক্ষিত হয়। এই ত্রিপুরা সুন্দরী দেবীই যে প্রকৃত পক্ষে ব্রহ্মবিদ্যা পার্বতীর একটি স্বরূপ, তা আদি শঙ্করাচার্য্য স্বীকার করেছেন তার প্রত্যেক শক্তি সম্পর্কিত স্তোত্রে ।

কিংবদন্তি

তিন দেবতাদের মধ্যে শিব হলেন ত্রিমূর্তি ত্রিদেব । শিব দক্ষের কন্যা সতী দেবীকে বিবাহ করেন । দক্ষ শিবকে তার যজ্ঞে আমন্ত্রণ জানাননি। সতী সেই অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গিয়েছিলেন। দক্ষ সতীর কাছে শিবনিন্দা করেছিল, তাই সতী তার অপমানের অবসান ঘটাতে যোগবলে অগ্নিতে দেহত্যাগ করেছিলেন। ফলস্বরূপ, শিব দক্ষকে বিচ্ছিন্ন করে দেন, কিন্তু শিবের ক্রোধ শান্ত হ‌ওয়ার পর তিনি দক্ষকে একটি ছাগলের মাথা দিয়ে পুনরায় জীবন দান করেন । এই ঘটনা, অর্থাৎ তার স্ত্রীর মৃত্যু, শিবকে বিচলিত করে এবং তিনি গভীর ধ্যানে প্রবেশ করেন। পর্বত রাজা হিমালয়ের এবং তার স্ত্রী মেনকার কন্যা হয়ে সতীদেবীই পার্বতীরূপে আসেন। আদি পরাশক্তি (শক্তি সর্বোচ্চ রূপ শিবা) কর্তৃক তাদের একটি বর দেওয়ার কারণে এটি সম্ভব হয়েছিল । স্বভাবতই, পার্বতী শিবকে তার স্বামী হিসাবে পেয়েছিলেন ।

দেবগণ তারকাসুরে এক শত্রুর মুখোমুখি হন , যার একটি বর ছিল যে তাকে কেবল শিব এবং পার্বতীর পুত্রই হত্যা করতে পারে । তাই থেকে একটি ছেলে জন্ম উদ্দেশ্যে শিব এবং পার্বতী , দেব নিয়োজিত মন্মথ , ভালবাসার দেবতা। মনমাথা তার ফুলের তীর গুলি করে শিব এবং পার্বতীর মধ্যে প্রেমের অনুভূতি জাগিয়ে তোলে। প্রতারিত হবার জন্য রাগে, শিব তার তৃতীয় চোখ খুললেন যা ভালোবাসার দেবতাকে ছাই করে দিল। মনমাথার স্ত্রী দেবগণ এবং রথী দেবী শিবকে অনুরোধ করেছিলেন মন্মথকে জীবন দিতে। তাদের অনুরোধ মেনে শিব মন্মথের ছাইয়ের দিকে তাকালেন। ভস্ম থেকে ভান্ডাসুর এসেছেযিনি সমস্ত দুনিয়াকে নপুংসক করে তুলেছিলেন এবং শহর থেকে শনিথা পুর নামে শাসন করেছিলেন, তার পর তিনি দেবগণকে কষ্ট দিতে শুরু করেছিলেন। দেবগণ তখন নারদ এবং ত্রিমূর্তির পরামর্শ চাইলেন , যারা তাদেরকে নির্গুণ ব্রাহ্মণের সাহায্য নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন, চূড়ান্ত ঈশ্বর প্রধান যা অপ্রকাশিত অর্থাৎ সত-চিত-অনান্দা (অস্তিত্ব-চেতনা-সুখ)। মহাবিশ্বের কল্যাণের জন্য। এর জন্য, একটি মহাযজ্ঞ (মহান আত্মত্যাগ) করা হয়েছিল, যেখানে সমগ্র সৃষ্টি, অর্থাৎ প্রকাশ্য মহাবিশ্বকে উৎসর্গ হিসাবে দেওয়া হয়েছিল, এবং আগুন থেকে মহাপ্রিপুর সুন্দরী উঠেছিল। ললিতার রূপে অতীত দৃষ্টিভঙ্গি) তারপর নিজেকে কামেশ্বর (পুরুষ) এবং কামেশ্বরী (প্রকৃতি) বিভক্ত করে তারপর তারা পুরো মহাবিশ্বকে আবার আগের মতো সৃষ্টি করে।

অন্য একটি কাহিনীতে, পার্বতী , শিবের প্রতি তার ভালবাসা এবং আকর্ষনের আকাঙ্ক্ষায় , নিজেকে ললিতা ত্রিপুরা সুন্দরীতে রূপান্তরিত করে তার সৌন্দর্য এবং সর্ববিশ্বকে তিন জগতে প্রদর্শনের জন্য।

বাসস্থান

তার বাসস্থানকে শিব লোক/ উমালোক/ শ্রী নাগারা (শহর)/ মনিদ্বীপও বলা হয়, লোহা, ইস্পাত, তামা এবং সীসার তৈরি ২৫টি রাস্তা এটিকে প্রদক্ষিণ করে। পাঁচটি ধাতু, রূপা, সোনা, সাদা পুষ্প রাগ পাথর, লাল পদ্মরাগ পাথর, গোমেদ , হীরা, বৈদুর্য, ইন্দ্র নীল নীল নীলকান্তমণি , মুক্তা, মারাঠা, প্রবাল, নয়টি রত্ন এবং রত্ন এবং মূল্যবান পাথরের মিশ্রণে তৈরি একটি খাদ। অষ্টম রাস্তায় ছিল কদম্বদের বন। এর সভাপতিত্ব করেন শ্যামলা। পঞ্চদশ রাস্তায় থাকতেন অষ্ট দিক পালক। ষোড়শীতে বাস করতেন বরাহী ওরফে ডান্ডিনি যিনি ছিলেন তার প্রধান সেনাপতি। এখানে শ্যামলারও একটি বাড়ি ছিল। সপ্তদশ রাস্তায় বিভিন্ন যোগিনী বাস করতেন। অষ্টাদশ রাস্তায় বাস করতেন মহা বিষ্ণু। উনিশ রাস্তায় এ বাস করতেন , বিংশ তারা দেবী, একবিংশ মধ্যে যারা গর্ব দুর্গ, বিশ তৃতীয় সভাপতিত্ব, বিশ সেকেন্ডের ভৈরব , চব্বিশ চন্দ্র , এবং বিশ পঞ্চমাংশ মন্মথ উপর বন ভালবাসার.

শহরের কেন্দ্র

নাগার কেন্দ্রে রয়েছে মহা পদ্মা বানা (মহান পদ্ম বন) এবং এর মধ্যেই চিন্তামনি গৃহ (পবিত্র চিন্তার ঘর), উত্তর -পূর্বে চিড় অগ্নি কুণ্ড এবং এর পূর্ব গেটের দুই পাশে ঘর রয়েছে মন্ত্রিনী এবং দণ্ডিনীর। এর চারটি ফটকে চতুরামনয় দেবতা দাঁড়িয়ে আছে নজরদারির জন্য। এর মধ্যেই চক্র রয়েছে। চক্রের কেন্দ্রে পঞ্চ ব্রহ্মের সিংহাসনে বিন্দু পিঠ (বিন্দু তক্তা) নামে সর্বানন্দময় (সর্বজনীন সুখ) মহা ত্রিপুরা সুন্দরী বসে আছেন। চক্রের মধ্যে রয়েছে নিম্নোক্ত সাজসজ্জা, যেমন ত্রৈলোক্য মোহনাম (তিন জগতের মধ্যে সবচেয়ে সুন্দর), ষোলটি পাপড়িযুক্ত পদ্ম যার নাম সর্বস্ব পরিপূরকাম (সব ইচ্ছা পূরণের), আটটি পাপড়িযুক্ত পদ্ম যা সর্বসম্পোজনম (সমস্ত পরিচ্ছন্নকারী), চৌদ্দ কোণ বিশিষ্ট ব্যক্তিকে সর্ব সৌভাগ্যম (সব ভাগ্য) বলা হয়,

ভান্ডাসুর

দেবগণ ভান্ডাসুরকে বধ করার জন্য তার কাছে প্রার্থনা করেছিলেন । যখন তিনি বান্দাসুরার সাথে যুদ্ধ শুরু করেছিলেন, তখন তার সঙ্গে ছিল অনিমা, মহিমা, ব্রাহ্মণী , কৌমারী, বৈষ্ণবী, বরাহী , মহেশ্বরী , চামুণ্ডি , রুদ্রানী, নিত্য দেবতা এবং অবর্ণা দেবতা যারা চক্র দখল করে। সাম্পাতকারী যখন হাতি রেজিমেন্টের অধিনায়ক ছিলেন, আসওয়ারুদা ছিলেন অশ্বারোহী বাহিনীর অধিনায়ক। গিরি চক্র নামক রথে চড়ে ধান্দিনি সেনাবাহিনীর নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, মন্থরিনীর সাহায্যে গিয়া চক্র নামে রথে চড়েছিলেন। জওয়ালা মালিনী তার চারপাশে একটি ফায়ার রিং তৈরি করে সেনাবাহিনীকে রক্ষা করেছিল। ত্রিপুরা সুন্দরী চক্রের রথে কেন্দ্রে চড়েছিলেন। নিত্যা ভান্ডাসুরের সেনাবাহিনীর একটি বড় অংশ ধ্বংস করেছিল, বালা ভান্ডাসুরের পুত্রকে বধ করেছিল , এবং মন্থরিনি এবং ধান্দিনি তার ভাইদের বধ করেছিল বিশাঙ্গা এবং বিষুকর নামে। অসুররা যখন অগ্রসর সেনাদের জন্য অবরোধ সৃষ্টি করে, তখন ত্রিপুরসুন্দরী অবরোধ অপসারণের জন্য কামেশ্বরের সাহায্যে গণেশ তৈরি করেন। অতপর ভান্ডাসুর নামক অসুরদের সৃষ্টি করলেনহিরণ্যক্ষ , হিরণ্যকশিপু এবং রাবণ । তিনি পাসুপথশাস্ত্র ব্যবহার করে তার সমস্ত সেনাবাহিনীকে বধ করেছিলেন এবং কামেশ্বরস্থের সাথে তাকে বধ করেছিলেন। দেবতারা তখন তার প্রশংসা করলেন। তিনি তখন পৃথিবীর মঙ্গলের জন্য মনমথনকে পুনরায় তৈরি করেছিলেন। এই গল্পটি ললিতা সহস্রনাম -এর প্রথম শ্লোকের প্রথম নামের মধ্যে রয়েছে । সব মিলিয়ে এতে এক হাজার নাম রয়েছে। একে রহস্য নাম সহস্র (হাজার গোপন নাম) বলা হয়। এটি পড়া, নামের অর্থ নিয়ে ধ্যান করলে ভক্তদের সমস্ত ইচ্ছা পূরণ হবে।

আরও দেখুন

আরও পড়ুন

  • Hindu Goddesses: Vision of the Divine Feminine in the Hindu Religious Traditions (আইএসবিএন ৮১-২০৮-০৩৭৯-৫) by David Kinsley

পাদটীকা

  1. Kinsley 1998, পৃ. 112।
  2. Frawley, David: "Tantric Yoga and the Wisdom Goddesses", page 89. Motilal Banarsidass Publishers, reprint 2005

তথ্যসূত্র

  • Kinsley, David (১৯৯৭)। Tantric Visions of the Divine Feminine: The Ten Mahavidyas। New Delhi: Motilal Banarsidassআইএসবিএন 978-0520204997।

বহিঃসংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.