তৌহিদউল্লাহ

তৌহিদউল্লাহ (জন্ম: অজানা ) বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর বিক্রম খেতাব প্রদান করে। [1]

তৌহিদউল্লাহ
জাতীয়তাবাংলাদেশী
নাগরিকত্ব পাকিস্তান (১৯৭১ সালের পূর্বে)
 বাংলাদেশ
পরিচিতির কারণবীর বিক্রম

জন্ম ও শিক্ষাজীবন

তৌহিদউল্লাহর বাড়ি কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার জগন্নাথ ইউনিয়নের কাঠকড়া গ্রামে। তার বাবার নাম আবদুল মান্নান ভূঁইয়া এবং মায়ের নাম আয়েশা খাতুন। তার স্ত্রীর নাম কূলসূমবেগম দ ম্পতির দুই মেয়ে ফাতেমা, জুুুলেখা।

কর্মজীবন

১৯৭১ সালে ৬ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে কর্মরত ছিলেন তৌহিদউল্লাহ। তখন এই রেজিমেন্টের অবস্থান ছিল পাকিস্তানের পেশোয়ারে। তিনি ছুটিতে ছিলেন।

মুক্তিযুদ্ধে অবদান

১৯৭১ সালের ৭ বা ৮ নভেম্বর। ফেনী জেলার বিলোনিয়া এলাকার অনেক স্থানে ছিল পাকিস্তানিদের মজবুত প্রতিরক্ষা। ৩১ অক্টোবর থেকে ওই এলাকায় বৃষ্টি হচ্ছিল। কয়েক দিন মুষলধারে বৃষ্টি হয়। এর মধ্যে যুদ্ধও চলছিল। সেদিনও টিপটিপ বৃষ্টির মধ্যেই সন্ধ্যার পর চিথলিয়ার কাছে মুহুরী নদীর পশ্চিমে ধানীকুণ্ডের দক্ষিণে তৌদিউল্লাহসহ ২০ জনের একটি দল রেকি করতে যান। তার হাতে ছিল এলএমজি। তাঁদের উদ্দেশ্য ছিল শত্রুর অবস্থান ও শক্তি সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করা। দুর্ভাগ্যবশত তারা শত্রুর অ্যামবুশে পড়ে যান। পরে তাঁদের কোম্পানি কমান্ডার লেফটেন্যান্ট ইনাম-উজ-জামান খবর পেয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের বড় একটি দল সেখানে পাঠান। তারা পাকিস্তানিদের পাল্টা আক্রমণ করে। মুক্তিযোদ্ধাদের পাল্টা আক্রমণে পাকিস্তানিরা পিছু হটতে বাধ্য হয়। অন্ধকারে হঠাৎ একসঙ্গে অনেক অস্ত্রের গর্জন শুরু হয়। ঝাঁকে ঝাঁকে গুলি। আচমকা আক্রমণে মুক্তিযোদ্ধারা সবাই অপ্রস্তুত। তৌহিদউল্লাহ একেবারে শত্রুর নাগালের মধ্যে। পজিশন নেওয়ার আগেই কয়েকটি গুলি এসে বিদ্ধ হলো তার পায়ে। নিমেষে তার শরীর যন্ত্রণায় কুঁকড়ে গেল। চোখের সামনে সহযোদ্ধা আজিজ গুলিবিদ্ধ হয়ে শহীদ হলেন। আহত হলেন আরও কয়েক সহযোদ্ধা। রক্তে ভেসে গেল জায়গাটা। রুদ্ধশ্বাস এক অবস্থা। ভাবনা-প্রস্তুতির সময় নেই। সহযোদ্ধা কেউ কেউ পাল্টা আক্রমণের চেষ্টা করলেন। তৌহিদউল্লাহও প্রাণপণে চেষ্টা করলেন; কিন্তু পারলেন না। বিশৃঙ্খল হয়ে পড়েছে তাঁদের গোটা দল। এমন অবস্থায় পশ্চাদপসরণ ছাড়া তাঁদের সামনে আর কোনো বিকল্প থাকল না। তৌহিদউল্লাহ মুক্তিবাহিনীর একজন সাহসী যোদ্ধা ছিলেন। তিনি ২ নম্বর সেক্টরের রাজনগর সাবসেক্টর এলাকার অন্তর্গত ফুলগাজী, মুন্সিরহাট, বন্ধুরহাটসহ আরও কয়েক স্থানে যুদ্ধ করেন। ২১ জুন পর্যন্ত বিলোনিয়া মুক্ত ছিল। সে সময় তিনি ফেনীর দক্ষিণে একটি ডিফেন্সে ছিলেন। ২১ জুন তিনটি হেলিকপ্টার এসে তাঁদের অবস্থানের ৫০০ গজ দূরে নামে। তারা তখন ভেবেছিলেন, হেলিকপ্টারগুলো মুক্তিবাহিনীর। আসলে সেগুলো ছিল শত্রুর হেলিকপ্টার। যখন হেলিকপ্টার থেকে পাকিস্তানি সেনা নামতে থাকে, তখন তাঁদের ভুল ভাঙে। তৌহিদউল্লাহ তার এলএমজি দিয়ে হেলিকপ্টার লক্ষ্য করে ব্রাশফায়ার করেন। কিন্তু তার আগেই হেলিকপ্টার অনেক ওপরে উঠে যায়। সেদিন সেখানে দুই পক্ষে ব্যাপক গোলাগুলি হয়। [2]

পুরস্কার ও সম্মাননা

তথ্যসূত্র

  1. দৈনিক প্রথম আলো, "তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না"; তারিখ: ১৬-০৫-২০১১
  2. একাত্তরের বীরযোদ্ধা, খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা (প্রথম খন্ড)। প্রথমা প্রকাশন। এপ্রিল ২০১২। পৃষ্ঠা ৯৯। আইএসবিএন 9789849025375।

বহি:সংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.