তোওহোকু অঞ্চল

তোওহোকু অঞ্চল (東北地方, তোওহোকু-চিহোও) (আক্ষরিক অর্থ "উত্তর-পূর্ব অঞ্চল") হল জাপানের বৃহত্তম দ্বীপ হোনশুর উত্তর-পূর্ব অংশ নিয়ে গঠিত একটি ঐতিহ্যগত অঞ্চল। এই অঞ্চলটি ছয়টি কেন্‌ বা প্রশাসনিক অঞ্চলে বিভক্ত, যথা আওমোরি, আকিতা, ফুকুশিমা, ইওয়াতে, মিয়াগি এবং য়ামাগাতা[2]

তোওহোকু অঞ্চল
東北地方
অঞ্চল
জাপানে তোওহোকু অঞ্চল
আয়তন
  মোট৬৬,৮৮৯.৫৫ বর্গকিমি (২৫,৮২৬.২০ বর্গমাইল)
জনসংখ্যা (২০১৫)[1]
  মোট৯০,২০,৫৩১
  জনঘনত্ব১৩০/বর্গকিমি (৩৫০/বর্গমাইল)
সময় অঞ্চলজেএসটি (ইউটিসি+9)

তোওহোকু অপেক্ষাকৃত কঠোর জলবায়ুর এক নয়নাভিরাম স্থান হিসেবে খ্যাত। বিংশ শতাব্দীতে এখানে পর্যটনশিল্পের বিকাশ হয়।

ইতিহাস

ঐতিহাসিকভাবে তোওহোকু অঞ্চলের অধিকাংশ মিচিনোকু অঞ্চল নামে পরিচিত ছিল।[3] মিচিনোকু নামের প্রথম উল্লেখ পাওয়া যায় হিতাচি-নো-কুনি ফুদোকি (常陸国風土記) (৬৫৪) গ্রন্থে। বর্তমানে মিচিনোকু শব্দের ব্যবহারে কিছু বৈচিত্র্য আছে।[4]

তোওহোকুতে প্রথম ঐতিহাসিক বসতি স্থাপনের সময় ছিল সপ্তম থেকে নবম শতাব্দী। ততদিনে সমসাময়িক সভ্যতাসংস্কৃতি বেশ ভাল ভাবেই কেন্দ্রীয় ও দক্ষিণ-পশ্চিম জাপানে অধিষ্ঠিত হয়ে গিয়েছিল। ভূমিপুত্র এমিশিদের শেষ ঘাঁটি এবং বিভিন্ন যুদ্ধের ক্ষেত্র হিসেবে তোওহোকু অঞ্চল প্রায়ই ইতিহাসের বিভিন্ন সময়ে কিয়োতোর নিয়ন্ত্রণকে এড়িয়ে চলত।

হাইকু কবি মাৎসুও বাশো তোওহোকু অঞ্চলে ভ্রমণের অভিজ্ঞতা নিয়ে লিখেছিলেন ওকু নো হোসোমিচি (গভীর উত্তরের সংকীর্ণ পথ)।

প্রথাগতভাবে অঞ্চলটিকে জাপানের অন্যতম অনুন্নত অঞ্চল হিসেবে গণ্য করা হয়।[5]

১১ই মার্চ, ২০১১ তে বিধ্বংসী ৯.০ মাত্রার ভূকম্প ও সুনামিতে অঞ্চলটির পূর্ব উপকূলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয় এবং ১৫,৮৯৪ জনের প্রাণ যায়।[6] এছাড়াও প্রায় ৫ লক্ষ মানুষ ঘরছাড়া হন এবং ঐ ভূকম্পের ফলে সংঘটিত ফুকুশিমা-দাইচি নিউক্লীয় দুর্ঘটনায় তেজষ্ক্রিয় বিকিরণের শিকার হন।

উপবিভাগসমূহ

প্রথাগতভাবে তোওহোকু অঞ্চলকে আওমোরি, আকিতা ও ইওয়াতে প্রশাসনিক অঞ্চল সমেত "উত্তর তোওহোকু" (北東北, কিতা-তোওহোকু) এবং য়ামাগাতা, মিয়াগি ও ফুকুশিমা প্রশাসনিক অঞ্চল সংবলিত "দক্ষিণ তোওহোকু" (南東北, মিনামি-তোওহোকু) এই দুই অঞ্চলে ভাগ করা হয়।

জনবসতি

২০০০ খ্রিঃ থেকে তোওহোকুর জনসংখ্যা ক্রমাগত হ্রাস পাচ্ছে এবং বর্তমানে এই প্রক্রিয়ার গতি বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে অপেক্ষাকৃত জনবহুল মিয়াগি প্রশাসনিক অঞ্চলও এখন ক্রমহ্রাসমান জনসংখ্যার বিপদে আক্রান্ত। অবশ্য পূর্বোল্লিখিত দুর্ঘটনার পর সেন্‌দাই শহর কলেবরে বৃদ্ধি পেয়েছে। ১৯৫০ এর দশকে সমগ্র জাপান-ব্যাপী জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার হ্রাসের পর হোনশু দ্বীপের সবচেয়ে উত্তরে অবস্থিত তিন প্রশাসনিক অঞ্চল আওমোরি, আকিতা ও ইওয়াতের জনসংখ্যা ১৯৮০ এর দশক থেকে আবার হ্রাস পেতে শুরু করে। ১৯৮০ এর আগে পর্যন্ত ফুকুশিমার জনসংখ্যা এই অঞ্চলে সর্বাধিক থাকলেও বর্তমানে এই শিরোপার দাবিদার মিয়াগি।

ভূগোল

জাপানের অধিকাংশের মত তোওহোকু অঞ্চলও পাহাড় ও পর্বতময়। ওওউ পর্বতমালা অঞ্চলের উত্তর থেকে দক্ষিণে প্রসারিত হয়েছে। অঞ্চলের অধিকাংশ নিম্নভূমি পাহাড়বেষ্টিত ও সমুদ্র থেকে দূরবর্তী, এবং এই সমস্ত স্থানেই জনবসতির কেন্দ্রীভবনের প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। সমুদ্রের উপকূলভাগ বন্দর নির্মাণের অনুকূল না হওয়ায় অঞ্চলটি যোগাযোগের জন্য রেলপথ ও সড়ক যোগাযোগের উপর বেশি নির্ভরশীল। সৌভাগ্যক্রমে পর্বতমালার মধ্যভাগে কিছু অঞ্চল নিম্নভূমি হওয়ায় দুই পাশের জনবসতির যোগাযোগের কিছুটা সুবিধে হয়।

প্রথাগতভাবে তোওহোকুকে জাপানের শস্যভাণ্ডার আখ্যা দেওয়া হত, কারণ সেন্‌দাই ও তোকিও-য়োকোহামার বাজারে এই অঞ্চল থেকেই চাল ও অন্যান্য ফসল সরবরাহ করা হত। দেশের মোট চাল উৎপাদনের ২০ শতাংশ আসত তোওহোকু থেকে। অঞ্চলটিত জলবায়ু অবশ্য সাইবেরিয়া থেকে আগত শীতল বায়ুপ্রবাহের কারণে হোনশুর অন্যান্য অঞ্চল অপেক্ষা কঠোর। ফলে বছরে মাত্র এক বারই এখানে ধান চাষ সম্ভব হয়।

১৯৬০ এর দশকে তোওহোকুতে লোহা, ইস্পাত, সিমেন্ট, রাসায়নিক, কাগজের মণ্ড নির্মাণ ও তৈল শোধন শিল্প স্থাপন আরম্ভ হয়।

তথ্যসূত্র

  1. Ministry of Internal Affairs and Communications Statistics Bureau (২৬ অক্টোবর ২০১১)। "平成 22 年国勢調査の概要" (পিডিএফ)। সংগ্রহের তারিখ ৬ মে ২০১২
  2. Nussbaum, Louis-Frédéric. (2005). "Tōhoku" in গুগল বইয়ে Japan Encyclopedia, p. 970, পৃ. 970,
  3. Hanihara, Kazuro. "Emishi, Ezo and Ainu: An Anthropological Perspective," ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২ অক্টোবর ২০১১ তারিখে Japan Review, ১৯৯০, 1:37 (PDF p. 3).
  4. McCullough, Helen Craig. (1988). গুগল বইয়ে The Tale of the Heike, p. 81, পৃ. 81,; excerpt, "Furthermore, in the old days, the two famous eastern provinces, Dewa and Michinoku, were a single province made up of sixty-six districts, of which twelve were split off to create Dewa."
  5. Dentsu. (1970). Industrial Japan, Issues 18-26, p. 58; retrieved 2013-4-17.
  6. "National Police Agency of Japan Damage Situation and Police Countermeasures associated with 2011Tohoku district - off the Pacific Ocean Earthquake" (পিডিএফ)। মার্চ ১০, ২০১৬। ফেব্রুয়ারি ৮, ২০১২ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা।

বহিঃসংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.