তুলোঁ

তুলোঁ (ফরাসি : [tulɔ̃]) কোত দাজ্যুরের একটি শহর এবং ভূমধ্যসাগরীয় উপকূলের একটি বৃহৎ বন্দর। প্রোভঁস-আল্প-কোত দাজ্যুর রেজিওঁতে অবস্থিত তুলোঁ ভার দেপার্তমঁর রাজধানী। ২০০৯ সাল মোতাবেক, তুলোঁ কম্যুনে ১৬৫,৫১৪ জন লোক বাস করে, ফলে এটি ফ্রান্সের ১৫তম বৃহত্তম শহর। ২০০৮ সাল মোতাবেক, এটি ৫৫৯,৪২১ বাসিন্দা নিয়ে নগর এলাকার কেন্দ্র, যা ফ্রান্সের নবম বৃহত্তম নগরী।[1] তুলোঁ মার্সেই, নিসমোঁপ্যলিয়ের পর ভূমধ্যসাগরীয় উপকূলে চতুর্থ বৃহত্তম ফরাসি শহর।

তুলোঁ
Tolon  (অক্সিতঁ)
প্রেফ্যক্ত্যুরকম্যুন
শীর্ষে বামে: তুলোঁ অপেরা হাউজ, শীর্ষে ডানে: ল্য স্তাদ দ্যু মায়োল, ২য়: ডাউনটাউন তুলোঁ ও এর বন্দরের প্যানোরামিক দৃশ্য, ৩য় বামে: প্লেস দ্য লা লিবার্ত, ৩য় ডান: মুরিলোঁর সৈকতসমূহ, নিচে বামে: ফারোঁ পর্বতে কেবল কার, নিচে ডানে: সাঁ-লুই দুর্গ
শীর্ষে বামে: তুলোঁ অপেরা হাউজ, শীর্ষে ডানে: ল্য স্তাদ দ্যু মায়োল, ২য়: ডাউনটাউন তুলোঁ ও এর বন্দরের প্যানোরামিক দৃশ্য, ৩য় বামে: প্লেস দ্য লা লিবার্ত, ৩য় ডান: মুরিলোঁর সৈকতসমূহ, নিচে বামে: ফারোঁ পর্বতে কেবল কার, নিচে ডানে: সাঁ-লুই দুর্গ
তুলোঁ পতাকা
পতাকা
তুলোঁ প্রতীক
প্রতীক
তুলোঁ অবস্থান
লুয়া ত্রুটি মডিউল:তথ্যছক_মানচিত্র এর 86 নং লাইনে: bad argument #1 to 'sqrt' (number expected, got nil)।
তুলোঁ ফ্রান্স-এ অবস্থিত
তুলোঁ
তুলোঁ
স্থানাঙ্ক: ৪৩°০৭′৩৩″ উত্তর ০৫°৫৫′৫০″ পূর্ব
দেশ ফ্রান্স
নগরের পৌরসভাতুলোঁ
ক্যান্টনতুলোঁ-১, ,
আন্তঃগোষ্ঠীমেত্রোপোল তুলোঁ প্রোভঁস মেদিত্যরানে
সরকার
  মেয়র (২০০১ থেকে) উবের ফালকো
আয়তন৪২.৮৪ বর্গকিমি (১৬.৫৪ বর্গমাইল)
জনসংখ্যা (Jan. 2017)১,৭১,৯৫৩
  জনঘনত্ব৪,০০০/বর্গকিমি (১০,০০০/বর্গমাইল)
বিশেষণতুলোঁনাই
সময় অঞ্চলসিইটি (ইউটিসি+০১:০০)
  গ্রীষ্মকালীন (দিসস)সিইএসটি (ইউটিসি+০২:০০)
আইএনএসইই/ডাক কোড৮৩১৩৭ /৮৩০০০
উচ্চতা০–৫৮৯ মি (০–১,৯৩২ ফু)
(avg. ১ মি অথবা ৩.৩ ফু)
ফ্রান্সের ভূমি রেজিস্টার তথ্য, যার ভেতর হ্রদ, পুকুর, হিমবাহ > ১ বর্গকি.মি.(০.৩৮৬ বর্গ মাইল বা ২৪৭ একর) এবং নদীর মোহনা অন্তর্ভূক্ত নয়।

তুলোঁ জাহাজ নির্মাণ, মাছ ধরা, দ্রাক্ষাসুরা প্রস্তুত, এবং অ্যারোনটিক্সের উপকরণ, গহনা, মানচিত্র, কাগজ, তামাক, মুদ্রণ, জুতা ও ইলেকট্রনিক উপকরণ উৎপাদনের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। তুলোঁ সামরিক বন্দর ফ্রান্সের ভূমধ্যসাগরীয় উপকূলে প্রধান নৌ কেন্দ্র। এখানে ফরাসি এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার শার্ল দ্য গোল ও এর যুদ্ধদল রক্ষিত রয়েছে। ফরাসি ভূমধ্যসাগরীয় নৌবহরও এখানে অবস্থিত।

ইতিহাস

প্রাক-ইতিহাস

মার্সেইয়ের নিকট কস্কের গুহা-সহ অন্যান্য প্রত্নতাত্ত্বিক খনন থেকে ধারণা করা যায় কমপক্ষে পুরা প্রস্তর যুগ থেকে এই প্রোভঁসের উপকূলে জনবসতি ছিল। গ্রিক উপনিবেশিকেরা খ্রিষ্টপূর্ব ৭ম শতাব্দীতে এশিয়া মাইনরের ফোকেয়া থেকে এখানে আসে এবং উপকূল সীমান্তে ওলবিয়া, হেরের দক্ষিণে সাঁ-পিয়ের দ্য লালমাঁর থেকে তুলোঁর পূর্ব পর্যন্ত বাণিজ্য কুঠি গড়ে তোলে। খ্রিষ্টপূর্ব ৪র্থ শতাব্দীর শুরুতে লিগুরীয়রা এই এলাকায় বসবাস শুরু করে।[2]

খ্রিস্তপূর্ব ২য় শতাব্দীতে মাসালিয়ার (বর্তমান মার্সেই) বাসিন্দারা এই অঞ্চলের শান্তি রক্ষার্থে সহায়তার জন্য রোমানদের আমন্ত্রণ জানান। রোমানরা লিগুরীয়দের পরাজিত করে এবং উপকূল জুড়ে তাদের নিজেদের উপনিবেশ গড়ে তোলে। বর্তমান তুলোঁতে তেলো মার্তিউস নামে একটি রোমান জনবসতি পাওয়া যায়। ধারণা করা হয় তেলো নামটি হয় বসন্তের দেবী অথবা লাতিন তোল (tol) হতে এসেছে এবং মার্তিউস হল যুদ্ধের দেবতা। তেলো মার্তিউস প্রধান দুটি রোমান রঙ প্রস্তুতকারী কেন্দ্রের একটি ছিল। এখানে মুরেক্স নামক স্থানীয় সামুদ্রিক শামুক থেকে বেগুনী রঙ প্রস্তুত করা হত, যা রাজকীয় পোশাকে ব্যবহার করা হত। তুলোঁ পোতাশ্রয়টি বাণিজ্য জাহাজের আশ্রয়স্থল হয়ে ওঠে। শহরটির নাম ধীরে ধীরে তেলো (Telo) থেকে তোলোঁ (Tholon), তোলোঁ (Tolon), ও তুলোঁ (Toulon)-এ পরিণত হয়।

ফরাসি রাজা ষোড়শ লুই ১৭৮৮ খ্রিস্টাব্দে দেশের সমস্ত প্রাদেশিক পার্লামেন্ট মুলতুবি করেন এবং সকল সম্প্রদায়ের কাছ থেকে কর আদায়ের উদ্যোগ নিলে ক্ষুব্ধ হয়ে সুবিধাভোগী অভিজাত শ্রেণী রাজার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ শুরু করে। তুলোঁ,দ্যাফিনে,দুজোঁ প্রভৃতি স্থানে ব্যাপক বিদ্রোহ ছড়িয়ে পড়ে।

১৯শ শতাব্দী

১৮০৩ থেকে ১৮০৫ সাল পর্যন্ত নাপোলোনীয় যুদ্ধের সময় অ্যাডমিরাল হোরাশিও নেলসনের নেতৃত্বে একটি ব্রিটিশ রণতরী তুলোঁকে অবরুদ্ধ করে দিয়েছিল।

১৮২০ সালে গ্রিক দ্বীপ মিলোতে ভেনাস দ্য মিলো ভাস্কর্য আবিষ্কৃত হয় এবং এটি প্রথম দেখেছিলেন ফরাসি নৌ কর্মকর্তা এমিল ভুতিয়ে। তিনি তুরস্কে অবস্থানরত ফরাসি রাষ্ট্রদূতকে এটি কিনতে বলেন এবং তিনি তার জাহাজ এস্তাফেতে করে এটি তুলোঁতে নিয়ে আসেন। তুলোঁ থেকে এটি লুভ্‌র জাদুঘরে নিয়ে যাওয়া হয়।[3]

দ্বিতীয় ফরাসি প্রজাতন্ত্র সময়কালে ১৮৪৯ সালে জর্জ-ইউজেন হাউসমানকে ভারের জেলাধ্যক্ষ করা হয়। তার সময়ে তিনি এই শহরে বড় রকমের পুনঃনির্মাণ করেন, যা তিনি পরবর্তী কালে প্যারিস শহরেও করেন। তিনি পুরনো দুর্গের বৃহৎ অংশ ভেঙ্গে ফেলেন এবং নতুন বুলেভার ও স্কয়ার নির্মাণ করেন। ১৮৬২ সালে ফ্রান্সের দ্বিতীয় বৃহত্তম অপেরা হাউজ তুলোঁ অপেরা হাউজ চালু হয়।[4]

২০শ শতাব্দী

পপুলার ফ্রন্টের রাজত্বের এক বছর পূর্বে ১৯৩৫ সালের আগস্ট মাসে নির্মম নীতিপরায়ণতার বিরুদ্ধে তুলোঁ শিপইয়ার্ডে শ্রমিকদের মধ্যে সহিংস আন্দোলন হয়। এর ফলে অনেক লোক মারা যান ও আহত হন এবং জরুরি অবস্থা জারি করা হয়।[5]

১৯৭৪ সালে তুলোঁকে পুনরায় ভারের প্রেফ্যক্ত্যুর বা প্রশাসনিক কেন্দ্রে পরিণত করা হয়। পাঁচ বছর পর তুলোঁ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়।[6] ১৯৯৫ সালে তুলোঁ চারটি ফরাসি শহরের একটি ছিল, যেখানে চরম-ডানপন্থী ফ্রন্ট ন্যাশনাল স্থানীয় নির্বাচনে জয়লাভ করে। ২০০১ সালে ফ্রন্ট ন্যাশনাল ভোটে ক্ষমতাচ্যুত হয়।

পরিবহন

তুলোঁতে গার দ্য তুলোঁ রেল স্টেশনটি রেলপথ সেবা প্রদান করে। এখান থেকে মার্সেই, নিস, প্যারিস ও অন্যান্য আঞ্চলিক শহরে রেল যোগাযোগ রয়েছে। তুলোঁ বন্দরটি কর্সিকার উদ্দেশ্যে ফেরি পারাপারের প্রদান বন্দর। এই শহর থেকে নিকটবর্তী বিমানবন্দর হল আঞ্চলিক তুলোঁ-উয়েরে বিমানবন্দর। এ৫০ অটোরুট তুলোঁকে মার্সেইয়ের সাথে যুক্ত করে, এবং এ৫৭ আটোরুট তুলোঁ থেকে ল্য ল্যুকে পরিবাহিত হয়, যেখানে এটি এ৮ অটোরুটের সাথে যুক্ত হয়।

তথ্যসূত্র

  1. Insee - Résultats du recensement de la population de 2008 - Unité urbaine de Toulon ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ তারিখে
  2. বাস্তিয়ে, আলদো (২০০১)। Historie de la Provence, Éditions Ouest-France
  3. রুমানিয়াক, সাইরিল। L'Arsenal de Toulon et la Royale। পৃষ্ঠা ৪৩।
  4. Du Grand-Théâtre à l'Opéra de Toulon, Académie du Var, sous la direction de Jacques Kerigny, 160 p., Éditions Privat, 2012 (ISBN 978-2-7089-5908-8)
  5. Toulon disorders ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৪ ডিসেম্বর ২০১৯ তারিখে দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস August 9, 1935 (archive)।
  6. "Equipe présidentielle de l'UTLN - Université de Toulon"তুলোঁ বিশ্ববিদ্যালয় (ফরাসি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ৭ সেপ্টেম্বর ২০২০

বহিঃসংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.