তারানাথ তান্ত্রিক

তারানাথ তান্ত্রিক বাংলা সাহিত্যের একটি কাল্পনিক চরিত্র। বাংলা ঔপন্যাসিক বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁঁকে সৃষ্টি করেছেন।

তারানাথ তান্ত্রিক
লেখকবিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়,তারাদাস বন্দ্যোপাধ্যায়
দেশভারত
ভাষাবাংলা
ধারাবাহিকতারানাথ তান্ত্রিক
বিষয়গল্প,উপন্যাস
ধরনঅলৌকিক,ভৌতিক,রহস্য,তন্ত্র
প্রকাশকমিত্র ও ঘোষ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড
প্রকাশনার তারিখ
১৯৪০ সাল

চরিত্র

বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় তারানাথ তান্ত্রিকের স্রষ্টা

তারানাথ তান্ত্রিক হলেন এক রহস্যময় ব্যক্তিত্ব এবং প্রবক্তা। তাঁর পুরোনাম তারানাথ জ্যোতির্বিনোদ।তাঁর বংশগত পদবি চক্রবর্তী। তাঁর পিতা আদিনাথ।তাঁর জন্মের পূর্বে তাঁর বাড়িতে অমরজীবন নামে এক রহস্যময় ব্যক্তি এসেছিলেন।তিনি ভবিষ্য়‌বাণী করেছিলেন যে তাদের বংশে এক তান্ত্রিকের জন্ম হবে।সে সময় আকাশে নীল রঙের উল্কা দেখা যাবে।[1]

তিনি মধ্য পঞ্চাশবর্ষী। হাত দেখে আর কোষ্ঠী বানিয়ে দিন গুজরান করেন এই প্রৌঢ়। সংসার তেমন সচ্ছল নয়। অভাব রয়েছে। কিন্তু অভাব কিছুতেই কাবু করতে পারে না মানুষটিকে। স্ত্রী-কন্যা-পুত্র নিয়ে দিব্যি আছেন তারানাথ। জ্যোতিষীর খোলস ছাড়ালে জানা যায়, তিনি একজন সিদ্ধ তান্ত্রিক। কিন্তু কোনও কারণে তার সাধনা অসম্পূর্ণ থেকে যায়। খুব অল্প বয়সে ঘর ছেড়ে ঘুরে বেড়িয়েছেন বাংলার মাঠ-ঘাট-প্রান্তরে।তিনি সমগ্র বাংলায় পরিভ্রমণের সময় অনেক অতিপ্রাকৃত শক্তির সাথে অনেক মুখোমুখি হন।[2] বীরভূমের এক শ্মশানে মাতু পাগলি নামের এক রহস্যময়ী সাধিকার কাছে মহাডামর সাধনা করেন তারানাথ। কিন্তু তাতে সফল হননি। পরে বরাকরের অরণ্যে তিনি লাভ করেন মধুসুন্দরী দেবীর বর। কিন্তু সেই সাধনাকেও সম্পূর্ণ বলা যায় না। অবশেষে থিতু হন তারানাথ। সংসার নিয়ে চলে আসেন কলকাতায়। একটা সময়ে ক্ষমতার অপব্যবহার ঘটিয়ে প্রচুর পয়সা করেছিলেন। কিন্তু তা জলের মতোই বেরিয়ে যায়। কায়ক্লেশে হস্তরেখা বিচার করে আর কোষ্ঠী বানিয়ে দিন যায় তার। তিনি চা এবং সিগারেট সহযোগে তার মট লেন হাউসে কয়েকজন বন্ধুদের সাথে আড্ডায় সেই অভিজ্ঞতাগুলি ভাগ করেছেন। গল্পে বলা হয়েছে লেখক তারনাথের ঘরে নিয়মিত পরিদর্শক। কখনও কখনও তার বন্ধুর সাথে, মাঝে মাঝে একা।[3]

লেখকের ভাষায়

চরিত্রের প্রেক্ষাপট ১৯৩৯ ।গল্পগুলোর সূচনা মূলত কলকাতার এক চায়ের দোকান থেকে হয়। পা দোলাতে দোলাতে হুল্লোড় করার সময় একেবারেই নয়। উথালপাতাল করা সেই সময়ে সকলেরই কান তখন রেডিওর দিকে। খবর আসে, হিটলারের সেনাবাহিনী পোল্যান্ড দখল করে ফেলেছে। চায়ের দোকানে আড্ডারত দুই বন্ধুর উৎকণ্ঠা, এক দিকে দুর্ভিক্ষ, আর এক দিকে যুদ্ধ। অর্থাৎ মৃত্যুই একমাত্র বাস্তবতা। এই দশা থেকে মুক্তির কি কোনও উপায় নেই? আছে অবশ্যই আছে। একজনই বাঁচাতে পারেন। তিনি তারানাথ তান্ত্রিক। দুই বন্ধু চলেছেন তারানাথের সঙ্গে দেখা করতে। এক বন্ধুর আবার তন্ত্রসাধনার মতো ‘বোগাস’ জিনিসপত্র একেবারেই পোষায় না। কিন্তু অপর জন নাছোড়বান্দা। দু’জনে এসে দাঁডালেন তারানাথের দুয়োরে। সাইনবোর্ডে লেখা, তারানাথ জ্যোতির্বিদ্যাবিনোদ। হাত দেখানো, সঙ্গে কোষ্ঠী বিচার করা হয়। গ্রহ শান্তির কবচ তন্ত্রমতে প্রস্তুতও করেন তারানাথ। এমনকি এ হেন তন্ত্রসাধকের কাছে বড় বড় রাজা-মহারাজাদের সার্টিফিকেট অবধি আছে। তবে খরচা নিমিত্ত মাত্র। বড়জোড় একটা সিগারেট চেয়ে বসতে পারেন তান্ত্রিক মহাশয়। বদলে গালভরা গল্প। গল্পের পর গল্প। লোকটার বড় অদ্ভুত ইতিহাস।

গল্প নয়। সত্যি কথা। আর সেটা মারাত্মক।

ওই দুই বন্ধুকে বলেন তারানাথ। একটা সিগারেটেরও আবদার জানান পাঁচতারা যুক্ত তান্ত্রিক। আর তার পরেই অলৌকিক আর অতিলৌকিক দুনিয়ায় ঢুকে পড়ে তারানাথ বলে ওঠেন,

মন দিয়ে শোনো, মন খারাপের গল্প।

গল্প

১৯৪০ সালে বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় তারানাথ [4] চরিত্রটি তৈরি করেছিলেন। তবে তিনি এই চরিত্রটি সমন্বিত দুটি ছোট গল্প লিখেছিলেন এবং এই গল্প দুটির মাধ্যমে তারনাথের তান্ত্রিক জীবনের সূচনা প্রধানত প্রদর্শিত হয়। বিভূতিভূষণ তুলে ধরেন বাংলার নিজস্ব অতিলৌকিক জগৎকে। ‘পথের পাঁচালী’-র লেখকের এক অজানা চর্চার দিক উঠে আসে এই লিখন দু’টিতে। বিভূতিভূষণের প্রয়াণের পরে তাঁর পুত্র তারাদাস বন্দ্যোপাধ্যায় স্মৃতির গহীন থেকে তুলে আনেন তারানাথকে। তারনাথ তান্ত্রিক সমন্বিত ছয়টি গল্প নিয়ে তাঁর পুত্র তারাদাস বন্দ্যোপাধ্যায়ে তারানাথ তান্ত্রিক (১৯৮৫) এবং ‘অলাতচক্র’(২০০৩) নামে একটি উপন্যাস লেখেন। তার লিখনে রুপ পায় বাংলার সংস্কৃতির শিকড়ে থেকে যাওয়া বিশ্বাস ও প্রজ্ঞার অজানা ভুবন। তারানাথ চরিত্রটি বিপুল জনপ্রিয়তা পেতে শুরু করে। এই চরিত্রকে নিয়ে লেখা সমস্ত গল্পগুলি অলৌকিক, অস্বাভাবিক, গাঢ় শিল্প, রহস্য এবং যাদু বাস্তবতার উপর ভিত্তি করে।[3] গল্পের মধ্যে তক্তাপোষে বসে গল্প বলেন বৃদ্ধ তারানাথ। সে সময় তার মেয়ে চারি এসে মুড়িমাখা আর চা দিয়ে যায়। তার গল্পের শ্রোতা দু’জন। কলকাতার এক গলির ভিতরে পাসিং শো সিগারেটের ধোঁয়ার মধ্যে দিয়ে যেন দরজা খুলে যায় এক অন্য জগতের।

অন্যান্য মিডিয়ায়

কলকাতা রেডিও মির্চির সানডে সাসপেন্সে তারানাথের গল্প প্রচারিত হয়েছিল।[5] বাঙালি চলচ্চিত্র নির্মাতা কৌশিক মুখোপাধ্যায় তারানাথ তান্ত্রিকের গল্পের উপর ভিত্তি করে হইচই ওয়েব সিরিজ তৈরি করেছেন। কৌশিক রায় এবং জয়ন্ত কৃপালানি নাম ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন। [6][7][8][9] চরিত্রটি সৌমিক দাশগুপ্ত দ্বারা গ্রাফিক উপন্যাস সিরিজ টিএনটির জন্য পুনঃঅঙ্কিত হয়েছিল [10][11] এবং আরেকটি টেলি সিরিয়াল কালার্স বাংলার, তারানাথ তান্ত্রিকে অভিনেতা টোটা রায় চৌধুরী তারানাথের ভূমিকায় অভিনয় করেন।[12][13] সাম্প্রতিক প্রজন্মের কাছেও তারানাথ অত্যন্ত আদৃত এক চরিত্র। হুমায়ূন আহমেদ এর প্রিয় ভূতের বই ছিল তারানাথ তান্ত্রিক।[1] সেজন্যই তার সৃষ্ট মিসির আলি চরিত্রে এর প্রভাব দেখা যায়।

তথ্যসূত্র

  1. "তারানাথ তান্ত্রিক সমগ্র pdf download (taranath tantrik somogro book pdf)"ULTRANEXTGEN (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২১-০১-২২। ২০২১-০৭-০৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৭-০২
  2. "Real address for fictional tantric"telegraphindia.com। সংগ্রহের তারিখ জানুয়ারি ২১, ২০১৯
  3. "Q's Taranath Tantrik to start streaming today on Hoichoi"। জানুয়ারি ২১, ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ জানুয়ারি ২১, ২০১৯
  4. "Not just social media"। সংগ্রহের তারিখ জানুয়ারি ২১, ২০১৯
  5. "Taranath Tantrik 3"। সংগ্রহের তারিখ জানুয়ারি ২১, ২০১৯
  6. "তারানাথ তান্ত্রিক, হাত দেখাবেন নাকি?"Anandabazar Patrika। সংগ্রহের তারিখ জানুয়ারি ২১, ২০১৯
  7. "Hoichoi pledges library growth as it takes Bengali content to Bangladesh, UAE"। সংগ্রহের তারিখ জানুয়ারি ২১, ২০১৯
  8. "অদেখা জগতের দরজা খুলে গেল, ফিরলেন তারানাথ"। সংগ্রহের তারিখ জানুয়ারি ২১, ২০১৯
  9. "TOLLYWOOD"। জানুয়ারি ২১, ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ জানুয়ারি ২১, ২০১৯
  10. "Dark arts and mystery in the trailer for Q's Bengali web series 'Taranath Tantrik'"। সংগ্রহের তারিখ জানুয়ারি ২১, ২০১৯
  11. "Taranath Tantrik part-1"। সংগ্রহের তারিখ জানুয়ারি ২১, ২০১৯
  12. "Interview- Actor Tota Roy Chowdhury on Playing Taranath Tantrik in the Colors Bangla Serial"। জানুয়ারি ২১, ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ জানুয়ারি ২১, ২০১৯
  13. "Tota makes a comeback after 15 years on telly"। সংগ্রহের তারিখ জানুয়ারি ২১, ২০১৯

বহিঃসংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.