তারাওয়া

তারাওয়া পশ্চিম-মধ্য প্রশান্ত মহাসাগরের দ্বীপরাষ্ট্র কিরিবাসের অন্তর্গত গিলবার্ট দ্বীপপুঞ্জের উত্তরভাগে অবস্থিত একটি প্রবালপ্রাচীরবেষ্টিত দ্বীপ বা অ্যাটল ও রাজধানী।[1][2][3] দ্বীপটি অস্ট্রেলিয়ার ৪৫০০ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে অবস্থিত। এটি কিরিবাসের সবচেয়ে জনবহুল অ্যাটল দ্বীপ। তারাওয়ার ইংরেজি ভি অক্ষরের আকৃতিবিশিষ্ট ৩৫ কিলোমিটার দীর্ঘ প্রবালপ্রাচীরটি ৩০টিরও বেশি খণ্ডদ্বীপ নিয়ে গঠিত। এদের মধ্যে বাইরিকি, বোনরিকি, বেতিও ও বিকেনিবেউ প্রধান চারটি খণ্ডদ্বীপ। অন্যান্য খণ্ডদ্বীপগুলিতে যাবার জন্য নৌকা ব্যবহার করতে হয়। অ্যাটলটি একটি বাণিজ্যিক ও শিক্ষাকেন্দ্র। তারাওয়ার দক্ষিণ দিকের বেতিও, বাইরিকি ও বিকেনিবেউ খণ্ডদ্বীপগুলিতে বন্দর সুবিধা আছে। বোনরিকিতে একটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এবং বাইরিকিতে জাতীয় সরকারের প্রধান কার্যালয় অবস্থিত। এছাড়া বাইরিকিতে দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি শাখা অবস্থিত, যা ১৯৭৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। বেতিওতে হালকা শিল্পকারখানা আছে। এখান থেকে কোপরা (নারকেলের শুকানো শাঁস) ও শুক্তিপুট (ঝিনুকের খোলার ভেতরের রঙধনু বর্ণের চকচকে উপাদান) রপ্তানি করা হয়। ১৯৪৩ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে দ্বীপটিতে মার্কিন মেরিন বাহিনী এবং জাপানি দখলকারী বাহিনীর মধ্যে তীব্র যুদ্ধ সংঘটিত হয়, যার নাম তারাওয়ার যুদ্ধ। মার্কিনীরা দ্বীপটি দখলে নিতে সক্ষম হয়। যুদ্ধের পরে তারাওয়াকে ব্রিটিশ শাসনাধীন গিলবার্ট ও এলিস দ্বীপপুঞ্জের রাজধানী বানানো হয়। ১৯৭৯ সালে কিরিবাস দ্বীপরাষ্ট্র স্বাধীনতা লাভ করলে এটি রাষ্ট্রটির রাজধানীতে পরিণত হয়। দক্ষিণ তারাওয়া গোটা প্রশান্ত মহাসাগরের সবচেয়ে জনঘনত্ববিশিষ্ট এলাকাগুলির একটি। তারাওয়ার মোট আয়তন ৩১ বর্গকিলোমিটার এবং এখানে প্রায় ৫৬ হাজার লোকের বাস, যা কিরিবাসের মোট জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক।[4][5]

তারাওয়া
তারাওয়া অ্যাটল দ্বীপের মধ্যে দক্ষিণ তারাওয়া (লাল) এবং উত্তর তারাওয়া (হলুদ) অংশের অবস্থান
গিলবার্ট দ্বীপপুঞ্জের মানচিত্র
তারাওয়া কিরিবাস-এ অবস্থিত
তারাওয়া
তারাওয়া
কিরিবাসে তারাওয়া-র অবস্থান
ভূগোল
অবস্থানPacific Ocean
স্থানাঙ্ক১°২০′ উত্তর ১৭৩°০০′ পূর্ব
দ্বীপপুঞ্জগিলবার্ট দ্বীপপুঞ্জ
আয়তন৫০০ বর্গকিলোমিটার (১৯০ বর্গমাইল)
সর্বোচ্চ উচ্চতা মিটার (১০ ফুট)
প্রশাসন
কিরিবাস
জনপরিসংখ্যান
জনসংখ্যা৫৬,২৮৪ (২০১০)

ভূগোল

তারাওয়া অ্যাটলটির প্রশস্ত প্রবালপ্রাচীরটি একটি বৃহৎ উপহ্রদ বা লেগুনকে ঘিরে রেখেছে, যার আয়তন প্রায় ৫০০ বর্গকিলোমিটার। এখানে প্রাকৃতিকভাবে প্রচুর মাছ ও খোলসযুক্ত কম্বোজ-কবচী (শামুক, ঝিনুক, কাঁকড়া, চিংড়ি, ইত্যাদি) পাওয়া যায়, তবে জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে সামুদ্রিক সম্পদের উপরেও চাপ বাড়ছে। খরার প্রাদুর্ভাব সত্ত্বেও স্বাভাবিক বছরগুলিতে যথেষ্ট বৃষ্টিপাত হয়, যার সুবাদে রুটিফল বা মাদার ফল, পেঁপে, কলা, নারিকেল ও কেয়াফল/হালাফল।

উত্তর তারাওয়ার খণ্ডদ্বীপগুলি প্রশস্ত প্রণালী দ্বারা বিচ্ছিন্ন। এগুলিকে ভাটার সময় পাড়ি দেওয়া যায়। বুওতা ও আবাতাও দ্বীপের মধ্যে ফেরির সুবিধা আছে।[6] দক্ষিণ তারাওয়ার সাথে বুওতা দ্বীপটি সেতুর মাধ্যমে সংযুক্ত। বেতিও থেকে তানায়েয়া পর্যন্ত দক্ষিণের খণ্ডদ্বীপগুলি সমুদ্রের উপর নির্মিত উঁচু সড়কপথের মাধ্যমে একে অপরের সাথে সংযুক্ত।[7]

জলবায়ু

ক্রান্তীয় খণ্ডদ্বীপে পামবৃক্ষের পাতাগুলি বায়ুপ্রবাহের দিকে মুখ করে আছে।

কোপ্পেন জলবায়ু শ্রেণীকরণ ব্যবস্থা অনুযায়ী তারাওয়ার জলবায়ু ক্রান্তীয় অতিবৃষ্টি অরণ্য ধরনের। এপ্রিল থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত জলবায়ু মৃদু ও মনোরম হয়; এসময় গড় তাপমাত্রা প্রায় ৩০ ডিগ্রী সেলসিয়াস। হয়। নভেম্বর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত পশ্চিমা ঝোড়ো বায়ুপ্রবাহের কারণে বৃষ্টিপাত ও কদাচিৎ তাইফুন ঘূর্ণিঝড় হয়।[2][8][9]

উত্তর তারাওয়াতে বাৎসরিক গড় বৃষ্টিপাত ৩০০০ মিলিমিটার এবং দক্ষিণে ৫০০ মিলিমিটার।[8] বেশিরভাগ অংশ বিষুবীয় মহাসামুদ্রিক জলবায়ু অঞ্চলের শুষ্ক বেষ্টনীতে অবস্থিত বলে দীর্ঘ খরার শিকার হয়।[9]

তারাওয়া-এর আবহাওয়া সংক্রান্ত তথ্য
মাস জানু ফেব্রু মার্চ এপ্রিল মে জুন জুলাই আগস্ট সেপ্টে অক্টো নভে ডিসে বছর
সর্বোচ্চ গড় °সে (°ফা) ৩১.৩
(৮৮.৪)
৩১.৩
(৮৮.৩)
৩১.৩
(৮৮.৩)
৩১.৪
(৮৮.৬)
৩১.৪
(৮৮.৫)
৩১.৫
(৮৮.৭)
৩১.৬
(৮৮.৯)
৩১.৬
(৮৮.৮)
৩১.৪
(৮৮.৬)
৩১.৮
(৮৯.২)
৩১.৭
(৮৯.১)
৩১.৫
(৮৮.৭)
৩১.৪
(৮৮.৬)
সর্বনিম্ন গড় °সে (°ফা) ২৪.৫
(৭৬.১)
২৫.০
(৭৭.০)
২৫.৩
(৭৭.৫)
২৫.৪
(৭৭.৭)
২৫.৭
(৭৮.২)
২৫.৫
(৭৭.৯)
২৫.৬
(৭৮.১)
২৫.৭
(৭৮.২)
২৫.৭
(৭৮.৩)
২৫.৫
(৭৭.৯)
২৫.৪
(৭৭.৭)
২৫.১
(৭৭.২)
২৫.৩
(৭৭.৫)
অধঃক্ষেপণের গড় মিমি (ইঞ্চি) ২২০
(৮.৭)
১৮০
(৭.১)
১৮০
(৭.১)
১৯০
(৭.৫)
১৭০
(৬.৭)
১৬০
(৬.৩)
১৬০
(৬.৩)
১৬০
(৬.৩)
১২০
(৪.৭)
১৪০
(৫.৫)
১২০
(৪.৭)
২২০
(৮.৭)
২,০২০
(৭৯.৬)
উৎস: Pacific Climate Change Science Program[10]

প্রশাসন

তথ্যসূত্র

  1. "Kiribati government website"। Government of Kiribati। ২৬ জুন ২০১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৯ মে ২০১৪
  2. "CIA"। ৭ সেপ্টেম্বর ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৯ জুন ২০১৯
  3. "European Union – list of countries in the world"
  4. "Country files at earth-info.nga.mil"। ১২ আগস্ট ২০০৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৯ জুন ২০১৯
  5. "Kiribati Census Report 2010 Volume 1" (পিডিএফ)। National Statistics Office, Ministry of Finance and Economic Development, Government of Kiribati। ১০ আগস্ট ২০১৪ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৭ মার্চ ২০১৩
  6. "North Tarawa Island Report 2012"। Government of Kiribati
  7. "South Tarawa Island Report 2012"। Government of Kiribati
  8. Kiribati. Encyclopædia Britannica
  9. Thomas, 3
  10. Climate, climate variability and change of Kiribati ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২ মে ২০১৩ তারিখে. Pacific Climate Change Science Program, cawcr.gov.au

বহিঃসংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.