তামোল পান
তামোল পান হলো তাম্বুল বা সুপারি সহযোগে পরিবেশিত পান। তামোল পানের ব্যবহার অসমীয়া সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ। বিবাহ, অন্নপ্রাসন, পূজা-পার্বন ও অন্যান্য মঙ্গলিক ও সামাজিক কাজে তামোল পান ব্যবহার করা হয়। সাধারনতঃ অসমের গ্রামীণ অঞ্চলে তামোল পানের প্রচলন বেশি যদিও অসমের শহরাঞ্চলে কম বেশি পরিমানে এর প্রচলন দেখা য়ায়। বর্তমান দিনে অসমে অনেক ব্যবসায়ী তামোল পান বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করেন।
তামোল পানের ব্যবহার
বাংলার পানকে অসমীয়া ভাষায় পান বলে যদিও আসামের পান দেখতে একটু ভিন্ন ধরনের ও স্বাদ ভিন্ন হয়। চা, জলপান ও ভাত খাওয়ার পর তামোল পান খেঁয়ে মুখ সতেজ করা এক প্রাচীন অসমীয়া পরম্পরা। গুরুজন ও সম্মানীয় ব্যক্তিদের তামোল পান খেতে দিয়ে সম্মান ও শ্রদ্ধা জানানো হয়। বিবাহ, অন্নপ্রাশন, নামঘর ও নানান ধরনের অনুষ্ঠানে তামোল পানের ব্যবহার দেখা যায়। অসমের কিছু স্থানভেদে দোষী ব্যক্তি তামোল পান দিয়ে জনসাধারন থেকে ক্ষমা চাওয়ার এক প্রচলিত নিয়ম আছে। অসমীয়া বিবাহের প্রবেশ দ্বারে খরাই পাত্রে তামোল পান রেখে আমন্ত্রিত অতিথিদের স্বাগত জানানোর নিয়ম বহুপ্রাচীন কাল থেকে দেখা যায়। অসমীয়া সংস্কৃতির অন্যতম প্রতীক খরাই বা পান বাটায় তামোল পান চুন, সাদা, জর্দা ইত্যাদি দিয়ে পরিবেশন করা হয়। অসমবাসিদের মধ্যে তামোল পান বহুল ভাবে নেশাকর দ্রব্য হিসেবে প্রচলির। পানের দোকান চালিয়ে অনেক দরিদ্র পরিবার জীবিকা নির্বাহ করে। ২০টি পানের সংহতিকে এক গুছি ও ৮০টি সুপারীর সংহতিকে এক পুন বলে।
উৎপত্তি
সুপারী গাছের ফলকে অসমীয়া ভাষায় তামোল বলে । কাঁচা অবস্থায় সুপারীকে কেঁচা তামোল, মাটিতে গর্ত খোড়ে পঁচিয়ে বানানো সুপারীকে বুড়া তামোল ও শুকনা সুপারীকে খুকান তামোল বলে। পান লতা জাতীয় উদ্ভিদ। আসামে পশ্চিমবঙ্গ থেকে আমদানিকৃত পান পাওয়া যায় যাহা অসমে বাংলাপান ও মিঠাপট্টিপান নামে পরিচিত। অসমের মাটিতে “গছপান” নামক পানের চাষ হয় এবং গছপান অসমীয়া সংস্কৃতিতে ব্যবহৃত পান।
ধর্মীয় গ্রন্থে তামোল পানের আভাস
হিন্দু শ্রাস্ত্রে তামোল পান সমন্ধে উল্লেখ করা আছে। শাস্ত্রমতে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ গোপনে বিজেতার ঘরে যান। কথার সত্যতা প্রমাণ করার জন্য রাধা বিজেতার গৃহে উপস্থিত হন। ভগবান শ্রীকৃষ্ণ পূর্বাভাস পেয়ে নিজে সুপারী গাছের রূপ ও বিজেতা পান গাছের রূপ ধারণ করেন। উক্ত কারণে পান-সুপারী দেবতার প্রসাদ হিসাবে বিবেচিত হয়। কথিত মতে মুনিবর নারদ বৈকুন্ঠ থেকে এই ফল পৃথিবীতে মানুষের ভোগের জন্য এনেছিলেন।