তাকওয়া
তাকওয়া (আরবি: تقوى) শব্দের অর্থ বিরত থাকা, বেঁচে থাকা, ভয় করা, নিজেকে রক্ষা করা। ব্যবহারিক অর্থে পরহেজগারি, খোদাভীতি, আত্মশুদ্ধি ইত্যাদি বোঝায়। ইসলামি পরিভাষায়, আল্লাহ তায়ালার ভয়ে যাবতীয় অন্যায়, অত্যাচার ও পাপকাজ থেকে বিরত থাকাকে তাকওয়া বলা হয়। অন্যকথায় সকল প্রকার পাপাচার থেকে নিজেকে রক্ষা করে কুরআন সুন্নাহ মোতাবেক জীবন পরিচালনা করাকে তাকওয়া বলা হয়। যিনি তাকওয়া অবলম্বন করেন তাঁকে বলা হয় মুত্তাকি (আরবি: لِّلْمُتَّقِينَ)।
আল্লাহকে ভয় করার অর্থ অত্যন্ত ব্যাপক। কুরআনের এসেছে,
وَأَمَّا مَنْ خَافَ مَقَامَ رَبِّهِ وَنَهَى النَّفْسَ عَنِ الْهَوَى (40) فَإِنَّ الْجَنَّةَ هِيَ الْمَأْوَى (41)
“যে ব্যক্তি আল্লাহর সামনে দণ্ডায়মান হওয়ার ভয় করবে ও কুপ্রবৃত্তি থেকে বেঁচে থাকবে, তার স্থান হবে জান্নাত।” (সূরা আন-নাযিআত, আয়াত ৪০-৪১)
তাত্ত্বিক ব্যাখ্যা
তাফসির ইবনে কাসির এর মতে তাকওয়ার মূল অর্থ হল কোনটি আল্লাহ অপছন্দ করেন তা এড়ানো। উমর বিন খাত্তাব(রা), উবাই ইবনে কাব(রা) কে তাকওয়ার বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে উনি জাবাবে বললেন, "আপনি কি কখনো এমন পথে হেঁটেছেন যেখানে কাঁটা বিছানো রয়েছে?" উমর বললেন, হ্যাঁ। উবাই জিজ্ঞাসা করলেন, "তখন আপনি কি করেছেন?" এর উত্তরে উমর বললেন, আমি অনেক সচেতনতার সাথে পথ চলেছি যাতে কাঁটা থেকে নিরাপদে থাকা যায় ।" উবাই বলেন, "এটিই তাকওয়া, জীবনের বিপজ্জনক যাত্রার মধ্য দিয়ে নিজেকে পাপ থেকে রক্ষা করা, যাতে পাপের দ্বারা আবদ্ধ না হয়ে সবসময় সতর্কতার সাথে থেকে যাত্রা সফলভাবে শেষ করা যায়"।[1]
তাকওয়া এবং ফিকহ
ফিকহ (ইসলামী আইনশাস্ত্র) এর কমপক্ষে একটি জনপ্রিয় রচনায় "তাকওয়ার বই", যা হারাম (নিষিদ্ধ) বিষয় সম্পর্কে নিষেধ করেছে, মাকরুহ (নিরুৎসাহিত) এবং "ইসলামের স্তম্ভগুলি" এর বাইরে বিষয়গুলিও নিষিদ্ধ হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে: খাবার, পোশাক, যৌনতার সাথে সম্পর্কিত জিনিসগুলি ("ব্যক্তিগত বিষয়গুলি"), সংগীত, পরনিন্দা, খারাপ কথা, খারাপ সঙ্গ, দাড়ি ছাঁটাই ইত্যাদি।[2]
তথ্যসূত্র
- আবদুর-রহমান, মুহাম্মদ সাঈদ (২০০৯)। মহিমান্বিত কুরআনের অর্থ ও ব্যাখ্যা। এমএসএ পাব্লিকেশন লিমিটেড। পৃষ্ঠা ৬৩। সংগ্রহের তারিখ ১৩ জুলাই ২০১৫।
- ফিকহের প্রয়োজনীয় হানাফী হাতবই, মাওলানা ইউসুফ তালাল আলী আল-আমরিকির রচিত 'কাজী থানা উল্লাহর মা লা বুদা মিনহু' এর একটি অনুবাদ, (কাজী পাবলিকেশনস, লাহোর, পাকিস্তান), পাতা ১৫০-১৬৮