তড়িৎচৌম্বক বর্ণালী

সমস্ত ধরনের জ্ঞাত তড়িৎচৌম্বক বিকিরণের কম্পাঙ্ক এবং তাদের তরঙ্গদৈর্ঘ্যের ( বা স্ংশ্লিষ্ট ফোটনের ) সমষ্টিকে এক কথায় তড়িৎচৌম্বক বর্ণালী বলা হয় । কিন্তু কোনো বস্তুর ক্ষেত্রে " তড়িৎচৌম্বক বর্ণালী " ভিন্ন অর্থ বহন করে । আসলে কোনো বস্তুর ক্ষেত্রে " তড়িৎচৌম্বক বর্ণালী " হল ঐ বস্তু থেকে নির্গত বা বস্তু কর্তৃক বিশোষিত তার বৈশিষ্ট্যপূর্ণ তড়িৎচৌম্বক বিকিরণ । কোনো পদার্থ থেকে তড়িৎচৌম্বক বিকিরণের ফলে বিভিন্ন কম্পাঙ্কের তড়িৎচৌম্বক তরঙ্গ সৃষ্টি হয়। উৎসের শক্তির উপর নির্ভর করে সাধারণত একটি নির্দিষ্ট ব্যপ্তির অবিচ্ছিন্ন কম্পাঙ্কের তরঙ্গগুচ্ছ তৈরী হয়। এই সমগ্র তরঙ্গগুচ্ছকে এককথায় বলা হয় তড়িৎচৌম্বক বর্ণালী। সবচেয়ে কম কম্পাঙ্কের তরঙ্গ হল বেতার তরঙ্গ, অন্যদিকে গামা তরঙ্গ হল সবচেয়ে বেশি কম্পাঙ্কের তরঙ্গ। বর্ণালীর তরঙ্গদৈর্ঘ্য কয়েক হাজার কিলোমিটার থেকে পরমাণুর আকারের মতো ক্ষুদ্র দৈর্ঘ্যের হতে পারে। দৃশ্যমান আলো বর্ণালীর তরঙ্গদৈর্ঘ্য হল ৪০০ থেকে ৭০০ ন্যানোমিটার। সবচেয়ে বড় তরঙ্গদৈর্ঘ্য মহাজাগতিক আকারের সমতুল , আবার সবচেয়ে ছোটো তরঙ্গদৈর্ঘ্য হল প্ল্যাংকের দৈর্ঘ্যের কাছাকাছি [1] । বিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগ পর্যন্ত অনেক পদার্থবিদ মনে করতেন তড়িৎচৌম্বক বিকিরণ নিরবচ্ছিন্ন এবং অসীম ।

তড়িৎচৌম্বক বর্ণালী

পদার্থের বিভিন্ন ধরনের বৈশিষ্ট্য পর্যবেক্ষ্ণ করার জন্য বর্ণালীবীক্ষণে প্রায় সব ধরনের তড়িৎচৌম্বক বিকিরণ ব্যবহৃত হয়ে থাকে [2]

তড়িৎচৌম্বক বর্ণালী আবিষ্কারের ইতিহাস

প্রাচীনকাল থেকেই তড়িৎচৌম্বক বর্ণালীর শুধুমাত্র দৃশ্যমান আলোক অংশ (আলো) সম্পর্কে মানুষের ধারণা ছিল। প্রাচীন গ্রীকরা জানত আলো সরলরেখায় গমন করে, এছাড়াও তারা আলোর প্রতিফলন, প্রতিসরন সহ বেশ কিছু ধর্ম পর্যবেক্ষণ করেছিল। আলো সম্পর্কে অনুসন্ধান চলতে থাকে এবং ষোড়শ-সপ্তদশ শতকে আলোর তরঙ্গ-কণা দ্বৈততা  - এই জাতীয় পরস্পরবিরোধী তত্ত্ব তৈরী হয় [3]

দৃশ্যমান আলো বর্ণালী বাদ দিলে তড়িৎচৌম্বক বর্ণালী প্রথম আবিষ্কার করেন উইলিয়াম হার্শেল। তিনি ১৮০০ সালে অবলোহিত বিকিরণ (ইনফ্রারেড) আবিষ্কার করেন [4] । প্রিজম দ্বারা বিচ্ছুরিত আলোক বর্ণালীর বিভিন্ন বর্ণের তাপমাত্রা তিনি থার্মোমিটার দিয়ে পর্যবেক্ষ্ণ করছিলেন। সেই সময় তিনি লক্ষ করেন, বর্ণালীতে তাপমাত্রা সর্বাধিক হয় দৃশ্যমান লাল বর্ণ অতিক্রম করে। তিনি এই সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে, তাপমাত্রা পরিবর্তনের কারণ হল "ক্যালোরিফিক রে" বা "তাপ উৎপাদনকারী তরঙ্গ" - যা আলোর ন্যায় একপ্রকার তরঙ্গ, কিন্তু দেখা যায় না।

পরের বছর ইয়োহান রিটার বর্ণালীর অপর প্রান্তে কাজ করার সময় লক্ষ করেন অদৃশ্য আলোক বর্ণালী, যা কিছু নির্দিষ্ট রাসায়নিক বিক্রিয়া হতে সাহায্য করে। তিনি ঐ তরঙ্গের নাম দেন "কেমিক্যাল রে" বা "রাসায়নিক তরঙ্গ " [5] । এই তরঙ্গের ধর্ম বেগুনি বর্ণের দৃশ্যমান আলোর মতো হলেও বর্ণালীতে তার অবস্থান বেগুনি বর্ণের অনেক পরে। পরে এই তরঙ্গের নাম দেওয়া হয় "অতিবেগুনী রশ্মি (আল্ট্রাভায়োলেট)।

১৮৪৫ সালে মাইকেল ফ্যারাডে প্রথম পর্যবেক্ষ্ণ করেন তড়িৎচৌম্বক বিকিরণের সঙ্গে তড়িৎচৌম্বকত্বের সম্পর্ক আছে। চৌম্বকক্ষেত্রের উপস্থিতিতে আলোর মেরুকরন (পোলারাইজেশন) তলের আবর্তন ঘটে। এরপর ১৮৬০ এর দশকে জেমস ক্লার্ক ম্যাক্সওয়েল তড়িৎচৌম্বকক্ষেত্রের জন্য চারটি আংশিক অবকল সমীকরণ ( ম্যাক্সওয়েলের সমীকরণসমূহ ) তৈরী করেন। এর মধ্যে দুটি সমীকরণ নির্দেশ করে তড়িৎচৌম্বকক্ষেত্রের মধ্যে তরঙ্গের সম্ভাব্য আচরণ কেমন হবে। তত্ত্বমূলকভাবে ম্যাক্সওয়েল তরঙ্গের গতিবেগ নির্ণয় করেন এবং দেখেন যে, তরঙ্গের গতিবেগ আলোর গতিবেগের (ঐ সময় তা নির্ভুল ভাবে জানা ছিল ) সমান। তরঙ্গ এবং আলোর গতিবেগের চমকপ্রদভাবে মিলে যাওয়ায় ম্যাক্সওয়েল এই সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে, আলো একপ্রকার তড়িৎচৌম্বক তরঙ্গ।

ম্যাক্সওয়েলের সমীকরণসমূহ নির্দেশ করে তড়িৎচৌম্বক তরঙ্গের কম্পাঙ্ক অসীম হতে পারে এবং তারা প্রত্যেকেই আলোর গতিবেগে গমন করে। এটিই সর্বপ্রথম সমগ্র তড়িৎচৌম্বক বর্ণালীর অস্তিস্ত্ব সম্পর্কে ধারণা দেয়। ম্যাক্সওয়েল অবলোহিত বিকিরণের মতো কম কম্পাঙ্কের তরঙ্গ সহ সমগ্র তড়িৎচৌম্বক বর্ণালীর উৎপত্তি তত্ত্বগত ভাবে ব্যাখ্যা করেন । এক নির্দিষ্ট প্রকার তড়িৎ বর্তনীর মধ্যে দ্যোদুল্যমান ( oscillating ) তড়িতাধান তড়িৎচৌম্বক তরঙ্গ সৃষ্টি করতে সক্ষম। ম্যাক্সওয়েলের সমীকরণগুলি প্রমাণ করার এবং ঐরূপ কম কম্পাঙ্কের তরঙ্গ শনাক্ত করার চেষ্টা করেন পদার্থবিজ্ঞানী হেনরিখ হার্টজ। তিনি ১৮৮৬ খ্রীষ্টাব্দে ঐরূপ তরঙ্গ সৃষ্টি এবং শনাক্তকরণে সক্ষম একটি যন্ত্র তৈরী করেন। ঐ তরঙ্গ আজ বেতার তরঙ্গ নামে পরিচিত। হেনরিখ হার্টজ বেতার তরঙ্গের তরঙ্গদৈর্ঘ্য এবং কম্পাঙ্ক পরিমাপ করেন এবং দেখেন এই তরঙ্গও আলোর গতিবেগে গমন করে। এছাড়াও তিনি পর্যবেক্ষ্ণ করেন যে, আলোর মতো এই নতুন বিকিরণও বিভিন্ন অস্তরক তল (Dielectric Medium) দ্বারা প্রতিফলিত বা প্রতিসৃত হয়। তিনি গাছের রজন নির্মিত লেন্স ( lens ) দ্বারা এই তরঙ্গকে কেন্দ্রীভূত করতে সক্ষম হন। পরে গবেষণা করে তিনি মাইক্রোওয়েভ সৃষ্টি করেন ও তার বিভিন্ন ধর্ম পর্যবেক্ষ্ণ করেন। এই নতুন ধরনের তরঙ্গ বিভিন্ন আবিষ্কারের (যথা : বেতার,ওয়্যারলেস্ টেলীগ্রাফ (wireless telegraph) ইত্যাদি )পথ উন্মোচিত করে।

১৮৯৫ খ্রীষ্টাব্দে ভিলহেল্ম কনরাড র‌ন্টগেন উচ্চবিভব প্রভেদের মধ্যে একটি ফাঁকা নল (vaccum tube) নিয়ে গবেষণা করাকালীন এক নতুন ধরনের তরঙ্গ লক্ষ করেন। তিনি এই বিকিরণের নাম দেন রঞ্জন রশ্মি (এক্স- রে)। তিনি দেখেন এই তরঙ্গ মানব শরীরের মধ্য দিয়ে যেতে পারে, কিন্তূ অধিক ঘনত্ব যুক্ত অংশ যেমন - শরীরের হাড় দ্বারা প্রতিফলিত বা বাধাপ্রাপ্ত হয়। পরবর্তী কালে চিকিৎসা বিজ্ঞানে এই তরঙ্গের বহুল ব্যবহার লক্ষ করা যায়।

তড়িৎচৌম্বক বর্ণালীর শেষ অংশ পূরণ হয় গামা- রশ্মি আবিষ্কারের মাধ্যমে। ১৯০০ সালে পল্ ভিলার্ড তেজস্ক্রিয় রেডিয়ামের বিকিরণ পর্যবেক্ষ্ণ করার সময় নতুন এক ধরনের বিকিরণ লক্ষ করেন। প্রথমে তিনি মনে করেছিলেন এই বিকিরণ আলফা, বিটা কণা সদৃশ অন্য কোনো কণা সমন্বিত বিকিরণ, কিন্তু তার ভেদন ক্ষমতা আলফা বা বিটা কণা অপেক্ষা অনেক বেশি। পরে ১৯১০ সালে ব্রিটিশ পদার্থবিজ্ঞানী উইলিয়াম হেনরি ব্র্যাগ প্রমাণ করেন গামা-রশ্মি প্রকৃতপক্ষে তড়িৎচৌম্বক বিকিরণ, কোনো কণা সমন্বিত বিকিরণ নয় । ১৯১৪ সালে  আর্নেস্ট রাদারফোর্ড (১৯০৩ সালে উপলদ্ধি করেছিলেন এই রশ্মি মূলগতভাবে আলফা বা বিটা থেকে পৃথক, তখন তিনি এই রশ্মির নামকরণ করেন গামা-রশ্মি।) এবং এডওয়ার্ড আন্দ্রে গামা- রশ্মির তরঙ্গদৈর্ঘ্য পরিমাপ করে দেখেন তার ধর্ম এক্স-রশ্মির মতোই, কিন্তু রঞ্জন রশ্মি অপেক্ষা তরঙ্গদৈর্ঘ্য কম ও কম্পাঙ্ক বেশি।

তড়িৎচৌম্বক বর্ণালীর বিস্তার

তড়িৎচৌম্বক তরঙ্গকে সাধারণত নিন্মোক্ত তিনটি ভৌতরাশির যে কোনোটির দ্বারা বর্ণনা করা যেতে পারেঃ

  1. কম্পাঙ্ক ( )
  2. তরঙ্গদৈর্ঘ্য ( )
  3. আলোককণার (ফোটন) শক্তি ( )

পর্যবেক্ষ্ণ করে দেখা গেছে, কম্পাঙ্কের বিস্তার জ্যোতির্বিদ্যা পরিসর যথা- ২.৪ × ১০ ২৩ হার্জ ( ১ গিগা-ইলেক্ট্রন-ভোল্ট শক্তি সম্পন্ন গামা- রশ্মি) থেকে মহাকাশ জগতের আয়নিত মাধ্যমে প্লাজমা কম্পাঙ্ক ( ১ কিলোহার্জ ) পর্যন্ত হতে পারে । তরঙ্গের কম্পাঙ্ক তরঙ্গদৈর্ঘ্যের সঙ্গে ব্যাস্তানুপাতিক । গামা- রশ্মির তরঙ্গদৈর্ঘ্য খুবই কম, যা একটি পরমাণুর আকারের কিছু ভগ্নাংশের সঙ্গে তুলনীয় । অন্যদিকে বর্ণালীর অপর প্রান্তের তরঙ্গদৈর্ঘ্য এই মহাবিশ্বের আয়তনের মতোই বড় । ফোটনের শক্তি তরঙ্গের কম্পাঙ্কের সঙ্গে সমানুপাতিক, সুতরাং গামা- রশ্মির ফোটনের শক্তি সবচেয়ে বেশি (কয়েক লক্ষ কোটি ইলেক্ট্রন-ভোল্ট),অন্যদিকে বেতার তরঙ্গের ফোটনের শক্তি খুবই কম (ফেমটো । এই সম্পর্কগুলি নিচে সমীকরণ দ্বারা ব্যাখ্যা করা হয়াছে :

যেখানে  :

যখন তড়িৎচৌম্বক তরঙ্গ জড় মাধ্যমে প্রবেশ করে , তার তরঙ্গদৈর্ঘ্য হ্রাস পায় । মাধ্যম যাই হোক না কেন, তড়িৎচৌম্বক তরঙ্গের তরঙ্গদৈর্ঘ্য বলতে শূণ্যমাধ্যমে তার তরঙ্গদৈর্ঘ্য বোঝানো হয় ; যদিও অনেক ক্ষেত্রেই তা আলাদা করে উল্লেখ করা হয় না ।

সাধারণত তড়িৎচৌম্বক তরঙ্গকে তরঙ্গদৈর্ঘ্য অনুসারে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা যায় , যথা : বেতার তরঙ্গ , অণুতরঙ্গ , টেরাহার্জ বিকিরণ , অবলোহিত তরঙ্গ , দৃশ্যমান আলো তরঙ্গ যা আমরা দেখতে পাই , অতিবেগুনী রশ্মি , রঞ্জন রশ্মি, গামা রশ্মি । তড়িৎচৌম্বক তরঙ্গের ধর্ম তার তরঙ্গদৈর্ঘ্যের উপর নির্ভর করে । যখন তড়িৎচৌম্বক তরঙ্গ একটি অণু বা পরমাণুর সঙ্গে বিক্রিয়া করে, তখন তার ধর্ম নির্ভর করে তরঙ্গে উপস্থিত ফোটনের শক্তির উপর ।

বর্ণালিবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে দৃশ্যমান আলো তরঙ্গ (তরঙ্গদৈর্ঘ্য ৪০০ - ৭০০ ন্যানোমিটার) ছাড়াও আরো বিস্তীর্ণ অংশের তড়িৎচৌম্বক বর্ণালী শনাক্ত করা সম্ভব । একটি সাধারণ গবেষণাগারের বর্ণালিবীক্ষণ যন্ত্র ২ থেকে ২৫০০ ন্যানোমিটার তরঙ্গদৈর্ঘ্য পরিমাপ করতে সক্ষম । এই ধরনের যন্ত্রের সাহায্যে বিভিন্ন পদার্থ, গ্যাস এমন কি জ্যোতিষ্কদের ভৌত ধর্ম সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানা যায় । অনেক হাইড্রোজেন পরমাণু ২১.১২ সেন্টিমিটার তরঙ্গদৈর্ঘ্যএর বেতার তরঙ্গ বিকর্ণ করে । আবার অনেক নাক্ষত্রিক নীহারিকা ৩০ হার্জ ও তার কম কম্পাঙ্কের তরঙ্গ সৃষ্টি করে , যা তাদের পর্যবেক্ষ্ণ করার ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ । এছাড়াও অনেক মহাজাগতিক বস্তু থেকে ২.৯ × ১০২৭ হার্জ কম্পাঙ্কের তরঙ্গ শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে।

তড়িৎচৌম্বক বর্ণালীর বিভিন্ন অংশের ভিন্ন নামকরণের যুক্তিসহ ব্যাখ্যা

তড়িৎচৌম্বক বিকিরণ সমগ্র বর্ণালীর বিভিন্ন অংশে পদার্থের সঙ্গে ভিন্নভাবে বিক্রিয়া করে থাকে । এই বিক্রিয়াগুলির ধরন এতটাই আলাদা যে, প্রথমে বর্ণালীর বিভিন্ন অংশের ভিন্ন নামকরণ করা হয়েছিল, যেন তারা বিভিন্ন ধরনের বিকিরণ । তাই, যদিও এই " বিভিন্ন ধরনের " তড়িৎচৌম্বক বিকিরণ অবিছিন্ন কম্পাঙ্কতরঙ্গদৈর্ঘ্যের বর্ণালী তৈরী করে, তা সত্বেও ব্যবহারিক কারণে বিক্রিয়ার বিভিন্নতা অনুসারে সমগ্র বর্ণালীকে বিভিন্ন অংশে বিভক্ত করা হয়েছে ।

তড়িৎচৌম্বক বিকিরণের পদার্থের সঙ্গে বিক্রিয়া

বর্ণালীর বিভিন্ন অংশ পদার্থের সঙ্গে প্রধান প্রধান বিক্রিয়া
বেতার তরঙ্গ বিশাল আয়তনের বস্তুর ক্ষেত্রে আধান বাহকদের একত্রিত কম্পন (প্লাজমা কম্পন)। এর একটি উদাহরণ হতে পারে অ্যান্টেনার মধ্যে দোদুল্যমান ইলেক্ট্রনের গতি।
অণুতরঙ্গ থেকে দূরবর্তী অবলোহিত বিকিরণ প্লাজমা কম্পন ( Plasma oscillation ), অণুর ঘূর্ণন।
সন্নিকট অবলোহিত বিকিরণ অণুর স্পন্দন, প্লাজমা কম্পন (মূলত ধাতুর ক্ষেত্রে)
দৃশ্যমান আলো তরঙ্গ অণুর ইলেক্ট্রনের উত্তেজিতকরণ ( উল্লেখ্যঃ মানব চক্ষুর অক্ষিপটের রঞ্জক পদার্থের অণু), প্লাজমা কম্পন (মূলত ধাতুর ক্ষেত্রে)
অতিবেগুনী রশ্মি অণু এবং পরমাণুর যোজ্যতা ইলেক্ট্রনের উত্তেজিতকরণ, আলোক তড়িৎ ক্রিয়ায় ইলেক্ট্রনের নিঃসরণ
রঞ্জন রশ্মি পরমাণুর কেন্দ্রীয় ইলেক্ট্রনের উত্তেজিতকরণ এবং নিঃসরণ, কম্পটন বিক্ষেপন (Compton scattering) (কম পরমাণুক্রমাঙ্ক বিশিষ্ট পরমাণুর ক্ষেত্রে)
গামা রশ্মি ভারী উপাদানের উচ্চশক্তি সম্পন্ন কেন্দ্রীয় ইলেক্ট্রনের নিঃসরণ, কম্পটন বিক্ষেপন ( সব পরমাণুক্রমাঙ্ক পরমাণুর ক্ষেত্রে ), পরমাণুর নিউক্লিয়াসের উত্তেজিতকরণ, নিউক্লিয়াসের পৃথকীকরণ ।
উচ্চশক্তি সম্পন্ন গামা রশ্মি কণা ও তার প্রতিকণার সৃষ্টি, উচ্চশক্তি সম্পন্ন একটি ফোটন পদার্থের সঙ্গে বিক্রিয়া করে উচ্চশক্তি সম্পন্ন কণা ও তার প্রতিকণার স্রোত সৃষ্টি করে ।

বিকিরণের প্রকারভেদ

সীমানা

তড়িৎচৌম্বক বর্ণালীর বিভিন্ন পটির (ব্যান্ড) সীমানা সম্পর্কে এই অনুচ্ছেদে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে তড়িৎচৌম্বক বর্ণালীর বিভিন্ন পটির মধ্যে কোনো সুনির্দিষ্ট সীমানা নেই, বরং রামধনুর (এটি দৃশ্যমান বর্ণালীর উপ-বর্ণালী) রঙের মতো একটি পটি পরের পটির সঙ্গে অবিচ্ছিন্নভাবে মিশে থাকে । প্রতিটি পটির কম্পাঙ্কতরঙ্গদৈর্ঘ্যের ধর্মের মধ্যে তাকে পরিবেষ্টন করে রাখা অপর দুই পটির কম্পাঙ্কতরঙ্গদৈর্ঘ্যের ধর্মের মিশ্রণ ঘটে। উদাহরণ স্বরূপ, লাল বর্ণের আলো অবলোহিত বিকিরণের সদৃশ, যা কিছু রাসায়নিক বন্ধনে শক্তি প্রদান করে তাকে উত্তেজিত করে যেটি সালোকসংশ্লেষের সময় রাসায়নিক প্রক্রিয়া ঘটার জন্য এবং আমাদের দৃষ্টির জন্য গুরুত্বপূর্ণ ।

তড়িৎচৌম্বক বর্ণালীর বিভিন্ন অংশ

তড়িৎচৌম্বক বিকিরণকে মোটামুটি নিম্নোক্ত কয়েকটি শ্রেণীতে ভাগ করা যায় ।

  1. তড়িৎচৌম্বক বর্ণালীর বিভিন্ন অংশ
    গামা রশ্মি
  2. রঞ্জন রশ্মি
  3. অতিবেগুনী রশ্মি
  4. দৃশ্যমান আলো তরঙ্গ
  5. অবলোহিত বিকিরণ
  6. টেরাহার্জ বিকিরণ
  7. অণুতরঙ্গ (মাইক্রোওয়েভ)
  8. বেতার তরঙ্গ  (রেডিও তরঙ্গ)
তড়িৎচৌম্বক বর্ণালী তরঙ্গদৈর্ঘ্যের গড় বিস্তার কম্পাঙ্কের গড় বিস্তার
গামা রশ্মি < ১ ন্যানোমিটার > ৩ x ১০১৯ হার্জ
রঞ্জন রশ্মি ১ - ১০ ন্যানোমিটার ৩ x ১০১৬  - ৩ x ১০১৯   হার্জ -
অতিবেগুনী রশ্মি ১০ - ৪০০ ন্যানোমিটার ৭ x ১০১৪  - ৩ x ১০১৬   হার্জ
দৃশ্যমান আলো তরঙ্গ ৪০০ - ৭০০ ন্যানোমিটার ৪ x ১০১৪  - ৭ x ১০১৪   হার্জ
সন্নিকট অবলোহিত ৭০০ ন্যানোমিটার - ২.৫ মাইক্রোমিটার ১০১৪  - ৪ x ১০১৪   হার্জ
মধ্য অবলোহিত ২.৫ মাইক্রোমিটার - ১০ মাইক্রোমিটার ১০১৩  - ১০১৪   হার্জ
দূরবর্তী অবলোহিত ১০ মাইক্রোমিটার - ১ মিলিমিটার ৩ x ১০১১  - ১০১৩  হার্জ
অণুতরঙ্গ (মাইক্রোওয়েভ) ১ মিলিমিটার - ১০ সেন্টিমিটার ৩ x ১০  -৩ x ১০১১  হার্জ
ক্ষুদ্র বেতার তরঙ্গ  (রেডিও তরঙ্গ) ১০ সেন্টিমিটার - ১০ মিটার ৩ x ১০  - ৩ x ১০   হার্জ
দীর্ঘ বেতার তরঙ্গ > ১০ মিটার < ৩ x ১০  হার্জ

এই শ্রেণীবিভাগ [8] ক্রমবর্ধমান তরঙ্গদৈর্ঘ্য (যা তড়িৎচৌম্বক বিকিরণের বৈশিষ্ট্য) অনুসারে করা হয়েছে। সাধারণভাবে এই শ্রেণীবিভাগ সঠিক হলেও, প্রকৃতপক্ষে প্রায়শই নিকটবর্তী দুই তড়িৎচৌম্বক বর্ণালীর পটির মধ্যে কিছুটা সমাপতন লক্ষ করা যায়।

গামা রশ্মি এবং রঞ্জন রশ্মির মধ্যে পার্থক্য কিছুটা উৎসের উপর নির্ভরশীল। তেজস্ক্রিয়তার ফলে যে উচ্চশক্তি সম্পন্ন ফোটনের স্রোত সৃষ্টি হয়, তা হল গামা রশ্মি । অন্যদিকে ইলেক্ট্রনের এক শক্তিস্তর থেকে অন্য শক্তিস্তরে পরিবৃত্তির সময় রঞ্জন রশ্মি সৃষ্টি হয়, এই প্রক্রিয়া পরমাণুর কেন্দ্রকের উচ্চশক্তি সম্পন্ন ইলেক্ট্রনের ক্ষেত্রেও ঘটে থাকে [9][10][11] । সাধারণভাবে নিউক্লিয়াসের পরিবৃত্তি ইলেক্ট্রনের পরিবৃত্তি অপেক্ষা অধিক শক্তি সম্পন্ন হয়ে থাকে । তাই গামা রশ্মি রঞ্জন রশ্মি অপেক্ষা অধিক শক্তি সম্পন্ন। কিন্তু এর কিছু ব্যতিক্রমও থাকে । ইলেক্ট্রনের পরিবৃত্তির প্রসঙ্গে বলা যায়, মিওন পরমাণুর ( Muon ) পরিবৃত্তির ফলে রঞ্জন রশ্মি সৃষ্টি , যদিও তার শক্তি ৬ মেগা ইলেক্ট্রন-ভোল্টের ( ০.৯৬ পিকো-জুল ) [12] থেকেও বেশি হয় । যেখানে অনেক নিউক্লিয়াসের পরিবৃত্তির শক্তি তার চেয়ে কয়েক লক্ষ গুণ কম ( যথা : থোরিয়াম - ২২৯ এর নিউক্লিয়াসের পরিবৃত্তির শক্তি  ৭.৬ ইলেক্ট্রন-ভোল্ট ) হলেও, নিউক্লিয়াস থেকে উৎপত্তির জন্য নিঃসৃত ফোটনের স্রোতকে গামা রশ্মি বলা হয়ে থাকে [13]

প্রচলিত ধারণা হল - নিউক্লিয়াস থেকে উৎপন্ন হওয়া তড়িৎচৌম্বক বিকিরণ হল গামা রশ্মি এবং এটাই সর্বজন মান্য । যদিও অনেক মহাজাগতিক গামা রশ্মির উৎস আছে, যাদের শক্তি (প্রাবল্য ও তরঙ্গদৈর্ঘ্য উভয়েই ) নিউক্লিয়াসের থেকে অনেক বেশি । প্রায়শই উচ্চ শক্তি পদার্থবিদ্যায় এবং রেডিওথেরাপি দ্বারা চিকিৎসায় উচ্চশক্তির ই এম আর (EMR) (১০ মেগা ইলেক্ট্রন-ভোল্টের থেকেও বেশি) ব্যবহার করা হয়ে থাকে - যার শক্তি যেকোনো নিউক্লিয়াস থেকে সৃষ্ট গামা রশ্মি অপেক্ষা অনেক বেশি । একে তাই গামা রশ্মি বা রঞ্জন রশ্মি না বলে "উচ্চশক্তি সম্পন্ন ফোটনের স্রোত " বলা হয়ে থাকে ।

একটি নির্দিষ্ট নিরীক্ষিত তড়িৎচৌম্বক বিকিরণের তরঙ্গদৈর্ঘ্য (বা কম্পাঙ্ক ) প্রসঙ্গ কাঠামোর ( রেফারেন্স ফ্রেম্ ) উপর নির্ভরশীল ( ডপলার ক্রিয়ার জন্য ) । কোনো পর্যবেক্ষকের কাছে তড়িৎচৌম্বক বিকিরণ কোনো একটি নির্দিষ্ট তরঙ্গদৈর্ঘ্যের বলে বোধ হলেও আলোর গতিবেগের কাছাকাছি গতিবেগ সম্পন্ন পর্যবেক্ষকের কাছে ঐ বিকিরণের তরঙ্গদৈর্ঘ্য ভিন্ন হয় । উদাহরণ স্বরূপ , মহাজাগতিক অণুতরঙ্গ পটভূমি বিকিরণ (cosmic microwave background radiation) । এটি সৃষ্টি হয় যখন হাইড্রোজেন পরমাণুর উচ্চশক্তিস্তর থেকে ভূমিস্তরে আসার মাধ্যমে পদার্থ ও বিকিরণের পৃথকীকরণ ঘটে । এই ফোটনের স্রোত 'লীম্যান - সিরিজ' ( Lyman series ) তৈরী করে ( মূলত অতিবেগুনী রশ্মির বর্ণালী ) । এরপর ঐ বিকিরণের মহাজাগতিক লোহিত সরণ ঘটে এবং আলোর গতিবেগের চেয়ে অনেক কম গতিবেগ সম্পন্ন পর্যবেক্ষকের কাছে ঐ বিকিরণ অণুতরঙ্গ রূপে পর্যবেক্ষিত হয় ।

বেতার তরঙ্গ  ( রেডিও তরঙ্গ )

প্রধান অনুচ্ছেদঃ রেডিও কম্পাঙ্ক , রেডিও তরঙ্গ

উপযুক্ত আকারের অ্যান্টেনা দ্বারা সাধারণত বেতার তরঙ্গ ব্যবহৃত হয় ( অনুরণন নীতি অনুসারে ) । এর তরঙ্গদৈর্ঘ্য কয়েক শত মিটার থেকে এক মিলিমিটার পর্যন্ত হতে পারে । মড্যুলেশন (Modulation) করে এই তরঙ্গের সাহায্যে তথ্য আদান-প্রদান করা হয়। দূরদর্শন, চলভাষ, বেতার স্ংযোগ,শৌখিন বেতার যোগাযোগের ক্ষেত্রে বেতার তরঙ্গ ব্যবহৃত হয়। তরঙ্গ বণ্টনের মাধ্যমে অনেক রাষ্ট্র বেতার তরঙ্গের ব্যবহারের উপর নিয়ন্ত্রণ করে। বেতার তরঙ্গের বিস্তার, দশা এবং কম্পাঙ্ক পরিবর্তন করে (নির্দিষ্ট কম্পাঙ্ক সীমার মধ্যে) এই তরঙ্গের সাহায্যে তথ্য আদান-প্রদান করা হয়। যখন তড়িৎচৌম্বক তরঙ্গ কোনো পরিবাহীর উপরে এসে পড়ে, তখন তা পরিবাহীর মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয় এবং পরিবাহীর ইলেক্ট্রনকে উত্তেজিত করে পরিবাহীর উপরিতলে আবিষ্ট তড়িৎপ্রবাহ তৈরী করে। এই প্রক্রিয়া (আবরণী প্রভাব ( skin effect )) অ্যান্টেনায় (antenna) ব্যবহৃত হয়।

অণুতরঙ্গ ( মাইক্রোওয়েভ )

প্রধান অনুচ্ছেদঃ অণুতরঙ্গ

মাইক্রোওয়েভকে কম্পাঙ্ক অনুসারে ৩ টি শ্রেণীতে ভাগ করা যায়৷ যথাঃ

  1. Ultra High Frequency - UHF
  2. Super High Frequency - SHF
  3. Extremely High Frequency - EHF

অণুতরঙ্গের তরঙ্গদৈর্ঘ্য যথেষ্ট কম (যা মিলিমিটার এককে পরিমাপ করা হয়) হওয়ায় পরিমিত ব্যাসের ধাতব নলাকৃতি ওয়েভ গাইডে (wave guide) ব্যবহৃত হয়।  klystron এবং magnetron  টিউব দ্বারা অণুতরঙ্গ তৈরী করা হয় । এছাড়াও সলিড স্টেট ডায়োড ( Solid State Diode ) যেমন -  Gunn এবং IMPATT দ্বারা অণুতরঙ্গ তৈরী করা যায় । যে সমস্ত অণুর তরল অবস্থায় দ্বিমেরু ভ্রামক আছে , তারা অণুতরঙ্গ শোষণ করতে পারে । এই সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে মাইক্রোওয়েভ ওভেনে খাদ্য-বস্তুকে গরম করা হয় । কম প্রাবল্যের অণুতরঙ্গকে ওয়াই-ফাই (  Wi-Fi ) -এ ব্যবহার করা হয়ে থাকে । যদিও এই প্রাবল্য বস্তুকে উত্তপ্ত করতে পারে না ।

মাইক্রোওয়েভ ওভেনে পদার্থের মধ্যে শক্তি স্থানান্তরিত হয় তড়িৎচৌম্বকীয ভাবে, তাপ প্রবাহের মধ্য দিয়ে নয়। এর প্রধান সুবিধা হল খাদ্য-বস্তু সুষমভাবে উত্তপ্ত হয় এবং উত্তপ্ত হতে অনেক কম সময় লাগে। প্রচলিত পদ্ধতিতে খাদ্য-বস্তুকে গরম করতে যা সময় লাগে, তার ১% এর কম সময় লাগে এই পদ্ধতিতে । যখন সক্রিয় থাকে, তখন সাধারণ মাইক্রোওয়েভ ওভেন দুর্বলভাবে আচ্ছাদিত তড়িৎচৌম্বক ক্ষেত্রের দ্বারা ছোট্ট পরিসরের মধ্যে ব্যতিচার সৃষ্টি করার পক্ষে যথেষ্ট ক্ষমতা সম্পন্ন হয় [14]

টেরাহার্জ বিকিরণ

দূরবর্তী অবলোহিত বিকিরণ এবং অণুতরঙ্গের মধ্যবর্তী অঞ্চলের বর্ণালী হল টেরাহার্জ বিকিরণ। আগে এই বর্ণালীর উপর বিশেষ গবেষণা হয়নি, তবে বর্তমানে ইমেজিং এবং স্ংযোগ সাধনের ক্ষেত্রে এর ব্যবহার শুরু হয়েছে। এখন বিজ্ঞানীরা টেরাহার্জ প্রযুক্তিকে সামরিক বাহিনীর কাজে লাগানোর চেষ্টা করছে, যেখানে উচ্চ কম্পাঙ্কের তরঙ্গ শত্রু শিবিরের দিকে প্রক্ষেপ করে তাদের ইলেক্ট্রনিক্স যন্ত্র নষ্ট করা যেতে পারে [15]

অবলোহিত তরঙ্গ

প্রধান অনুচ্ছেদঃ অবলোহিত বিকিরণ

তড়িৎচৌম্বক বর্ণালীর অবলোহিত তরঙ্গের কম্পাঙ্কের বিস্তার মোটামুটি ৩০০ গিগা-হার্জ থেকে ৪০০ টেরা-হার্জ পর্যন্ত (তরঙ্গদৈর্ঘ্য ১ মিলিমিটার থেকে ৭৫০ ন্যানোমিটার) । এটি ৩টি অঞ্চলে বিভক্ত ।

  • দূরবর্তী অবলোহিতঃ কম্পাঙ্কের বিস্তার মোটামুটি ৩০০ গিগা-হার্জ থেকে ৩০ টেরা-হার্জ পর্যন্ত ( তরঙ্গদৈর্ঘ্য ১ মিলিমিটার থেকে ১০ মাইক্রোমিটার ) । এই তরঙ্গ সাধারণত গ্যাসীয় অবস্থায় অণুর ঘূর্ণন প্রক্রিয়ার দ্বারা , তরল অবস্থায় অণুর গতি প্রক্রিয়ার দ্বারা , এবং কঠিন অবস্থায় ফোনন ( phonons ) দ্বারা বিশোষিত হয় । পৃথিবীর বায়ুমন্ডলের জলকণা এই বর্ণালী এত বেশি শোষণ করে যে , এই বর্ণালীর পরিপ্রক্ষিতে বায়ুমন্ডল অস্বচ্ছ মাধ্যম হিসাবে কাজ করে । এই অস্বচ্ছ অঞ্চলের মধ্যেও তরঙ্গদৈর্ঘ্যের নির্দিষ্ট কিছু অঞ্চল আছে যেখানে তরঙ্গের আংশিক সঞ্চারণ সম্ভব । জ্যোতির্বিজ্ঞানের পর্যবেক্ষ্ণ করার জন্য এই অঞ্চলের যথেষ্ট গুরুত্ব আছে । ২০০ মাইক্রোমিটার থেকে কয়েক মিলিমিটার পর্যন্ত তরঙ্গদৈর্ঘ্যকে জ্যোতির্বিজ্ঞানের পরিভাষায় " সাব - মিলিমিটার " ( sub-millimeter ) তরঙ্গ বলা হয়ে থাকে ।
  • মধ্য অবলোহিত  : কম্পাঙ্কের বিস্তার ৩০ টেরা-হার্জ থেকে ১২০ টেরা-হার্জ পর্যন্ত ( তরঙ্গদৈর্ঘ্য ১০ মাইক্রোমিটার থেকে ২.৫ মাইক্রোমিটার ) । উত্তপ্ত পদার্থ ( কৃষ্ণবস্তু বিকিরক) এই বিকিরণ করে থাকে । সুস্থ স্বাভাবিক অবস্থায় মানুষের শরীর থেকে এই অঞ্চলের শেষ প্রান্তের তরঙ্গ বিকিরিত হয় । এই বিকিরণ অণুর কম্পন দ্বারা বিশোষিত হয় । যেখানে অণুর মধ্যে থাকা বিভিন্ন ধরনের পরমাণুগুলি তাদের সুস্থিতি অবস্থানের পরিপ্রেক্ষিতে কম্পিত হয় । এই অঞ্চলকে অনেক সময় " ফিঙ্গারপ্রিন্ট অঞ্চল "( fingerprint region ) বলা হয়ে থাকে, কারণ কোনো ব্যক্তির আঙুলের ছাপ যেমন খুবই স্বতন্ত্র , তেমনি কোনো পদার্থের মধ্য অবলোহিত অঞ্চলের শোষণ বর্ণালী তার সুস্থিতি অবস্থানের পরিপ্রেক্ষিতে খুবই সুনির্দিষ্ট ।
  • সন্নিকট অবলোহিত  : কম্পাঙ্কের বিস্তার ১২০ টেরা-হার্জ থেকে ৪০০ টেরা-হার্জ পর্যন্ত ( তরঙ্গদৈর্ঘ্য ২৫০০ ন্যানোমিটার থেকে ৭৫০ ন্যানোমিটার ) । এই অঞ্চলের প্রাসঙ্গিক ভৌতপ্রক্রিয়াগুলির সঙ্গে দৃশ্যমান আলো বর্ণালীর প্রাসঙ্গিক ভৌতপ্রক্রিয়াগুলির অনেক মিল দেখা যায় । কয়েক প্রকার ফটোগ্রাফিক ফিল্ম দ্বারা এই অঞ্চলের সর্বোচ্চ কম্পাঙ্ক শনাক্ত করা যায় । এছাড়াও অনেক প্রকার সলিড স্টেট ( Solid State ) ইমেজ সেন্সর ( image sensor ) ইনফ্রারেড ফোটোগ্রাফি ( infrared photography ) এবং ভিডিওগ্রাফির ( videography ) কাজে ব্যবহৃত হয় ।

দৃশ্যমান আলোক বর্ণালি

প্রধান অনুচ্ছেদঃ দৃশ্যমান আলো

ক্রমবর্ধমান কম্পাঙ্ক অনুসারে বর্ণালীর অবলোহিত তরঙ্গের পর আসে দৃশ্যমান আলোক । সূর্যের বিকিরণের সর্বোচ্চ শক্তি হয় দৃশ্যমান আলোক বর্ণালি । যদিও সমগ্র বিকিরণ বর্ণালির শক্তি পর্যালোচনা করলে দেখা যায় , সূর্য দৃশ্যমান আলোক অপেক্ষা অবলোহিত তরঙ্গ সামান্য বেশি পরিমানে বিকীর্ণ করে [16] । সমগ্র তড়িৎচৌম্বক বর্ণালীর মধ্যে দৃশ্যমান আলোকে মানুষের চোখ সবচেয়ে স্ংবেদনশীল। সাধারণত অণু বা পরমাণুর ইলেক্ট্রন যখন এক শক্তিস্তর থেকে অন্য শক্তিস্তরে যাওয়ার সময় দৃশ্যমান আলো ( এবং সন্নিকট অবলোহিত তরঙ্গ ) বিশোষণ বা বিকিরণ করে । মানুষের দৃষ্টি এবং উদ্ভিদের সালোকসংশ্লেষের সময় যে রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটে থাকে তার পিছনে এই প্রক্রিয়া কাজ করে । সমগ্র তড়িৎচৌম্বক বর্ণালীর মধ্যে একটি খুব ছোট্ট অংশ হল দৃশ্যমান আলোক যা মানুষের দৃষ্টিপদ্ধতিতে সাহায্য করে । রামধনুর মধ্যে এই দৃশ্যমান আলোক বর্ণালির বিভিন্ন পটি খুব সুন্দরভাবে দেখা যায় , যেখানে ( যদি দেখা যেত ) অবলোহিত তরঙ্গ লাল বর্ণের নিচে থাকে এবং বেগুনি বর্ণের ঠিক পরেই থাকে অতিবেগুনী রশ্মি

তড়িৎচৌম্বক বর্ণালীর দৃশ্যমান আলোক তরঙ্গের কম্পাঙ্কের বিস্তার মোটামুটি ৪০০ টেরা-হার্জ থেকে ৭৯০ পর্যন্ত ( তরঙ্গদৈর্ঘ্য ৩৮০ ন্যানোমিটার থেকে ৭৬০ ন্যানোমিটার ) । অনেক সময় , যখন মানুষের দৃষ্টির ক্ষেত্র মুখ্য আলোচ্য বিষয় নয় তখন অন্য তরঙ্গদৈর্ঘ্যকে , বিশেষতঃ সন্নিকট অবলোহিত তরঙ্গ ( ৭৬০ ন্যানোমিটারের বেশি ) এবং অতিবেগুনী রশ্মি (৩৮০ ন্যানোমিটারের কম ) - কেও আলোক তরঙ্গ বলে বর্ণনা করা হয়ে থাকে । দৃশ্যমান আলোক বর্ণালির বিভিন্ন তরঙ্গদৈর্ঘ্যের সঠিক সমবায় হল সাদা আলো । সাদা আলো প্রিজমের মধ্য দিয়ে যাওয়ার সময় ৩৮০ ন্যানোমিটার থেকে ৭৬০ ন্যানোমিটারের মধ্যে বিভিন্ন তরঙ্গদৈর্ঘ্যের বর্ণে বিভক্ত হয়ে পরে ।

তড়িৎচৌম্বক বর্ণালীর দৃশ্যমান আলোক তরঙ্গ যখন কোনো বস্তু থেকে প্রতিফলিত হয়ে আমাদের চোখে এসে পড়ে তখন আমরা বস্তুটিকে দেখতে পাই । মানুষের মস্তিষ্কের অপটিক্যাল লোব ( optical lobe ) এই কাজে সাহায্য করে ।

দৃশ্যমান বর্ণালি ছাড়া অন্য তড়িৎচৌম্বক বর্ণালীর অন্য তরঙ্গদৈর্ঘ্যকে মানুষ অনুভব করতে পারে না । তড়িৎচৌম্বক বিকিরণের প্রাকৃতিক উৎস গুলি সমগ্র বর্ণালি সৃষ্টি করে । যন্ত্র - প্রযুক্তির সাহায্যে আমরা প্রয়োজন মতো বিস্তৃত পরিসরে তরঙ্গদৈর্ঘ্য তৈরী করতে পারি । অপটিক্যাল ফাইবারে যে তড়িৎচৌম্বক তরঙ্গের মাধ্যমে তথ্য প্রেরণ করা হয় তা সর্বদা দৃশ্যমান বর্ণালি নাও হতে পারে , অনেক ক্ষেত্রেই তা অবলোহিত তরঙ্গ হয়ে থাকে । এক্ষেত্রে মড্যুলেশন ( Modulation ) পদ্ধতি বেতার তরঙ্গের মতোই ।

অতিবেগুনী রশ্মি

প্রধান অনুচ্ছেদঃ অতিবেগুনী রশ্মি

পৃথিবীর ওজোন স্তরের সাপেক্ষে অতিবেগুনী রশ্মির প্রবেশ

ক্রমবর্ধমান কম্পাঙ্ক অনুসারে দৃশ্যমান আলোকের পর আসে অতিবেগুনী রশ্মি । এর তরঙ্গদৈর্ঘ্য দৃশ্যমান বেগুনী বর্ণের চেয়ে ছোটো কিন্তু রঞ্জন রশ্মি অপেক্ষা বড় । খুব ছোটো তরঙ্গদৈর্ঘ্যের অতিবেগুনী রশ্মি পরমাণুকে আয়নিত করতে পারে ( আলোক তড়িৎ ক্রিয়া ) ।

এই পটির মধ্যভাগের অতিবেগুনী রশ্মি আয়নিত করতে পারে না , কিন্তু অণুর রাসায়নিক বন্ধন ভেঙে তাদেরকে সক্রিয় করে তোলে । এই অঞ্চলের অতিবেগুনী রশ্মি মানুষের ত্বকের কোষকে বিশেষ ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে , যা ত্বকের কর্কট রোগের ( skin cancer) অন্যতম কারণ । এছাড়াও এই রশ্মি কোষের ডিএনএ ( DNA ) অণুকে অপূরণীয় ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে ।

সূর্য যথেষ্ট পরিমানে অতিবেগুনী রশ্মি বিকীর্ণ করে , যা প্রায় তার সমগ্র শক্তির ১০% । এরমধ্যে আছে খুব কম তরঙ্গদৈর্ঘ্যর অতিবেগুনী রশ্মি , যা পৃথিবীর স্থলভাগের বেশিরভাগ প্রাণীজগতকে ধ্বংস করতে সক্ষম ( সমুদ্রের জল সেখানকার প্রাণীজগতকে কিছুটা সুরক্ষা প্রদান করে ) । তবে সূর্য থেকে বিকীর্ণ এই ক্ষতিকারক অতিবেগুনী রশ্মি ভূপৃষ্ঠে এসে পৌঁছনোর আগেই পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল দ্বারা বিশোষিত হয় । অতিবেগুনী রশ্মির অধিক শক্তি সম্পন্ন অংশ ( কম তরঙ্গদৈর্ঘ্য ) বায়ুমণ্ডলের নাইট্রোজেন দ্বারা এবং অধিক তরঙ্গদৈর্ঘ্য অক্সিজেন দ্বারা বিশোষিত হয় । মধ্যবর্তী শক্তি সম্পন্ন অতিবেগুনী রশ্মি ওজোন স্তর দ্বারা অবরুদ্ধ হয়ে যায় । এই স্তরে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ২০০ - ৩১৫ ন্যানোমিটার তরঙ্গদৈর্ঘ্য বিশোষিত হয় । তবে খুব কম শক্তি সম্পন্ন অংশের তরঙ্গদৈর্ঘ্যের বেশি হওয়ায় তা বায়ুমণ্ডল দ্বারা বিশোষিত হয় না । এরফলে ভূপৃষ্ঠে আসা সূর্য রশ্মির মধ্যে ৩% - এর কম অতিবেগুনী রশ্মি থাকে । এরমধ্যে থাকে কম শক্তি সম্পন্ন আল্ট্রাভায়োলেট - এ ( UV-A )এবং কিছুটা আল্ট্রাভায়োলেট - বি ( UV-B) । খুব কম শক্তি সম্পন্ন অতিবেগুনী রশ্মিকে (তরঙ্গদৈর্ঘ্য ৩১৫ ন্যানোমিটার থেকে দৃশ্যমান আলোক বর্ণালির মধ্যবর্তী) বলা হয় আল্ট্রাভায়োলেট - এ ( UV-A ) , যা বায়ুমণ্ডল দ্বারা ভালোভাবে বাধাপ্রপ্ত হয় না । তবে এই অঞ্চলের অতিবেগুনী রশ্মি কম ক্ষতিকারক ।

রঞ্জন রশ্মি

প্রধান অনুচ্ছেদঃ রঞ্জন রশ্মি

ক্রমবর্ধমান কম্পাঙ্ক অনুসারে অতিবেগুনী রশ্মি পর আসে রঞ্জন রশ্মি । খুব ছোটো তরঙ্গদৈর্ঘ্যের অতিবেগুনী রশ্মির মতো রঞ্জন রশ্মি পরমাণুকে আয়নিত করতে পারে । এছাড়াও অধিক শক্তি সম্পন্ন হওয়ায় রঞ্জন রশ্মি পদার্থের সঙ্গে বিক্রিয়া করে থাকে , যা কম্পটন প্রক্রিয়া (Compton effect ) নামে পরিচিত । কোমল রঞ্জন রশ্মি অপেক্ষা কঠিন রঞ্জন রশ্মির তরঙ্গদৈর্ঘ্য ছোটো । ফলে কঠিন রঞ্জন রশ্মি পদার্থের মধ্য দিয়ে যাওয়ার সময় খুব কম মাত্রায় বিশোষিত হয় । চিকিৎসা-ক্ষেত্রে রোগনির্ণয়ের কাজে রঞ্জন রশ্মি চিত্রণের ( X-ray imaging ) ব্যবহার বিশেষ উল্লেখযোগ্য । এই পদ্ধতি রেডিওথেরাপী ( radiography ) নামে পরিচিত । উচ্চ শক্তির পদার্থবিদ্যায় রঞ্জন রশ্মি ভেদনকার্যে ( as a probe ) ব্যবহৃত হয় । নিউট্রন তারার চারিদিকে থাকা অ্যক্রিশন ডিস্ক ( accretion disks ) এবং কৃষ্ণ বিবর থেকে যে রঞ্জন রশ্মি বিকিরিত হয় জ্যোতির্বিদ্যায় তা পর্যবেক্ষ্ণ করে পদ্ধতিগুলি বোঝার চেষ্টা করা হয় । নক্ষত্রদের করণা ( coronas ) এবং নীহারিকা থেকে রঞ্জন রশ্মি বিকিরিত হয় । পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল রঞ্জন রশ্মির সাপেক্ষে অস্বচ্ছ হওয়ায় ( এর ক্ষেত্র ঘনত্ব ১০০০ গ্রাম প্রতি বর্গ সেন্টিমিটার, যা ১০ মিটার পুরু জলতলের সমতুল [17]), মহাজাগতিক রঞ্জন রশ্মি পর্যবেক্ষ্ণ করার জন্য ব্যবহৃত দূরবীক্ষণ যন্ত্রকে বায়ুমণ্ডলের বাহিরে স্থাপন করা হয় ।

গামা রশ্মি

প্রধান অনুচ্ছেদঃ গামা রশ্মি

কঠিন রঞ্জন রশ্মির পর ক্রমবর্ধমান কম্পাঙ্ক অনুসারে আসে গামা রশ্মি। ১৯০০ সালে পল্ ভিলার্ড এই তরঙ্গ আবিষ্কার করেন। এটি হল সবচেয়ে উচ্চশক্তি সম্পন্ন ফোটনের স্রোত এবং এর তরঙ্গদৈর্ঘ্যের কোনো নিম্নসীমা নেই। জ্যোতির্বিদ্যায় উচ্চশক্তি সম্পন্ন মহাজাগতিক বস্তু পর্যবেক্ষ্ণ করার জন্য গামা রশ্মি খুব গুরুত্বপূর্ণ। যদিও রঞ্জন রশ্মি পর্যবেক্ষ্ণ করার মতো এক্ষেত্রেও ব্যবহৃত দূরবীক্ষণ যন্ত্রকে বায়ুমণ্ডলের বাহিরে স্থাপন করা হয়। উচ্চভেদন ক্ষমতার জন্য পদার্থবিজ্ঞানের গবেষণামূলক পরীক্ষায় ব্যবহৃত হয়। রেডিও আইসোটোপ (Radioisotopes) থেকে গামা রশ্মি প্রস্তুত করা হয়ে থাকে। খাদ্য ইরেডিয়েশন (irradiation), বীজের জীবাণুমুক্তকরণ, চিকিৎসা-ক্ষেত্রে রেডিয়েশন ক্যান্সার থেরাপী (radiation cancer therapy)[18], পারমাণবিক ঔষধ (nuclear medicine) তৈরী ইত্যাদি ক্ষেত্রে এই রশ্মি ব্যবহৃত হয়। কম্পটন বিক্ষেপনের (Compton scattering) দ্বারা খুব নির্ভুলভাবে গামা রশ্মির তরঙ্গদৈর্ঘ্য পরিমাপ করা সম্ভব।

তথ্যসূত্র

  1. Bakshi, U. A.; Godse, A. P. (২০০৯)। Basic Electronics Engineering। Technical Publications। পৃষ্ঠা 8–10। আইএসবিএন 978-81-8431-580-6। ৫ আগস্ট ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৭
  2. "Introduction to the electromagnetic spectrum and spectroscopy"
  3. Haitel , Gary .। Origins and Grand Finale: How the Bible and Science relate to the Origin of Everything, Abuses of Political Authority, and End Times Predictionsআইএসবিএন 9781491732571।
  4. "Hershel Discovers Infrared Light"। Archived from the original on ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১২। সংগ্রহের তারিখ ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৭
  5. "Johann Wilhelm Ritter"
  6. "Fundamental Physical Constant"
  7. "CODATA Recommended Values of the Fundamental Physical Constants:2006"
  8. "Electromagnetic spectrum"
  9. Feynman, Richard; Leighton, Robert;; Sands, Matthew (১৯৬৩)। The Feynman Lectures on Physics, Vol.1.। USA: Addison-Wesley। পৃষ্ঠা 2–5। আইএসবিএন 0-201-02116-1. |আইএসবিএন= এর মান পরীক্ষা করুন: invalid character (সাহায্য)
  10. L'Annunziata,Michael; Baradei, Mohammad (১৯৬৩)। Handbook of Radioactivity Analysis। Academic Press। পৃষ্ঠা 58। আইএসবিএন 0-12-436603-1।
  11. Grupen, Claus; Cowan, G; Eidelman, S. D.; Stroh, T. (২০০৫)। Astroparticle Physics। Springer। পৃষ্ঠা 109আইএসবিএন 3-540-25312-2।
  12. "CORRECTIONS TO MUONIC X-RAYS AND A POSSIBLE PROTON HALO" (পিডিএফ)
  13. "Gamma-Rays"
  14. Paithankar, A.S. (২০০১)। "Electromagnetic interference by high power microwaves"। INEMIC 2001-2002। পৃষ্ঠা 20–22।
  15. "Advanced weapon systems using lethal Short-pulse terahertz radiation from high-intensity-laser-produced plasmas"। Archived from the original on ৬ জানুয়ারি ২০১০। সংগ্রহের তারিখ ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৭
  16. "Reference Solar Spectral Irradiance: Air Mass 1.5"
  17. "Designing Spacecraft and Mission Operations Plans to Meet Flight Crew Radiation Dose" (পিডিএফ)। NASA/MIT Workshop। পৃষ্ঠা I–7(atmosphere) and I–23(water)।
  18. "Uses of Electromagnetic Waves/gcse-revision, physics, waves, uses-electromagnetic-waves/Revision World"
This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.