তড়িৎচুম্বকত্ব

তড়িৎচুম্বকত্ব হচ্ছে পদার্থবিজ্ঞানের একটি শাখা যেটি তড়িৎচুম্বকীয় বল অধ্যয়নের সাথে জড়িত, এক ধরনের ভৌত বল যা বৈদ্যুতিক আধানযুক্ত কণার মাঝে ঘটে। তড়িৎচুম্বকীয় বল তড়িৎ ক্ষেত্র এবং চৌম্বক ক্ষেত্র দ্বারা গঠিত তড়িৎচুম্বকীয় ক্ষেত্র দ্বারা বাহিত হয় এবং এটি আলোর মতো তড়িৎচুম্বকীয় বিকিরণের জন্য দায়ী। এই বল আকর্ষণধর্মী ও বিকর্ষণধর্মী- উভয় প্রকারের হতে পারে। এটি সবল বল, দুর্বল বল এবং মহাকর্ষসহ প্রকৃতির চারটি মৌলিক বলের একটি। মহাকর্ষের তুলনায় এটা ১০৩৬ গুণ বেশি শক্তিশালী।[1] উচ্চ শক্তিতে দুর্বল বল এবং তড়িৎচুম্বকীয় বল একক তাড়িত-দুর্বল বল হিসাবে একীভূত হয়।

আলাস্কায় আহিত কণা এবং চুম্বকত্বের ফলে সৃষ্ট মেরুজ্যোতির আলো, যা হলো তড়িৎচুম্বকত্ব পাঠের মৌলিক বিষয়াদি
দুটি ইলেক্ট্রনের মধ্যে বৈদ্যুতিক চৌম্বকীয় বল দেখায় এমন একটি ডায়াগ্রাম

তড়িৎচুম্বকীয় ঘটনাকে তড়িৎচুম্বকীয় বলের পরিপ্রেক্ষিতে সংজ্ঞায়িত করা হয়, যাকে কখনো কখনো লরেঞ্জ বলও বলা হয় , যার মধ্যে একই ঘটনার বিভিন্ন প্রতিভাস হিসাবে তড়িৎচুম্বকত্ব উভয়ই অন্তর্ভুক্ত। আগে তড়িৎ ও চুম্বকত্ব এ দুটিকে দুটি ভিন্ন বল মনে করা হত। ১৮৭৩ সালে জেমস ক্লার্ক ম্যাক্সওয়েল প্রমাণ করেন এ দুটি আসলে একই অভিন্ন বলের প্রকাশ। তড়িৎচুম্বকীয় বল দৈনন্দিন জীবনে সম্মুখীন বেশিরভাগ বস্তুর অভ্যন্তরীণ বৈশিষ্ট্য নির্ধারণে একটি প্রধান ভূমিকা পালন করে। পারমাণবিক নিউক্লিয়াস এবং তাদের কক্ষপথের ইলেকট্রনগুলির মধ্যে তড়িৎচুম্বকীয় আকর্ষণ পরমাণুগুলিকে একত্রিত করে। তড়িৎচুম্বকীয় বল পরমাণুর মধ্যে রাসায়নিক বন্ধনের জন্য দায়ী যা অণুআন্তঃআণবিক বল তৈরি করে। তড়িৎচুম্বকীয় বল সমস্ত রাসায়নিক প্রক্রিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করে, যা পার্শ্ববর্তী পরমাণুর ইলেকট্রনের মধ্যে মিথস্ক্রিয়া থেকে উদ্ভূত হয়। তড়িৎচুম্বকত্ব আধুনিক প্রযুক্তিতে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয় এবং তড়িৎচুম্বকীয় তত্ত্ব হচ্ছে ডিজিটাল প্রযুক্তিসহ বৈদ্যুতিক শক্তি প্রকৌশল এবং ইলেকট্রনিক্সের ভিত্তি।

যখন দুটি আহিত কণা স্থির থাকে তখন তাদের মধ্যে কেবল তড়িত্‍ বল ক্রিয়া করে। আহিত কণাগুলো গতিশীল হলে তড়িত্‍ বলের পাশাপাশি কণাগুলোর মধ্যে চৌম্বক বলের সৃষ্টি হয়। দুটি চৌম্বক মেরুর আকর্ষণ বা বিকর্ষণ বলও তাড়িতচৌম্বক বল। দুটি আহিত মৌলিক কণার মধ্যে ক্রিয়াশীল তড়িত্‍ বল এদের মধ্যে ক্রিয়াশীল মহাকর্ষ বলের তুলনায় অনেক বেশি শক্তিশালী। তবুও সবলতার বিচারে তড়িত্‍ বল হচ্ছে মাঝারি ধরনের। ঘর্ষণ বল, স্প্রিং বল ইত্যাদি আহিত কণাগুলোর মধ্যে তড়িত্‍ বলের কারণেই সৃষ্টি হয়। এর তীব্রতা ১০ নিউটন আর এর পাল্লা অসীম। আলো একধরনের তড়িৎচুম্বকীয় বল। তড়িৎক্ষেত্র ও চৌম্বকক্ষেত্র মিলে সৃষ্টি হয় তাড়িতচৌম্বক ক্ষেত্র। কোনো তারের মধ্য দিয়ে তড়িৎ প্রবাহিত হলে সেখানে একটি চৌম্বক ক্ষেত্র সৃষ্টি হয়। এই নীতির উপর ভিত্তি করেই তড়িৎচুম্বকত্ব কাজ করে। স্থায়ী চুম্বক যে বলের কারণে ধাতব বস্তুকে আকর্ষণ করে তার সাথে এই ক্ষেত্রের কোনো পার্থক্য নেই।

তড়িৎচুম্বকীয় ক্ষেত্রের অসংখ্য গাণিতিক বর্ণনা রয়েছে। সর্বাধিক বিশিষ্টভাবে ম্যাক্সওয়েলের সমীকরণসমূহ বর্ণনা করে যে কীভাবে বৈদ্যুতিক ও চৌম্বক ক্ষেত্র একে অপরের দ্বারা এবং আধান ও প্রবাহ দ্বারা উৎপন্ন এবং পরিবর্তিত হয়।[2]

তড়িৎচুম্বকীয় তত্ত্বের তাত্ত্বিক প্রভাব বিশেষ করে বিস্তারের "মাধ্যম" (ব্যাপ্তিযোগ্যতা এবং প্রবেশ্যতা) এর বৈশিষ্ট্যের উপর ভিত্তি করে আলোর গতির প্রতিষ্ঠা ১৯০৫ সালে আলবার্ট আইনস্টাইন বিশেষ আপেক্ষিকতার বিকাশের দিকে পরিচালিত করে।

তথ্যসূত্র

  1. পদার্থবিজ্ঞান, নবম-দশম শ্রেণি, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড, বাংলাদেশ। শিক্ষাবর্ষ ২০২১।
  2. Hampshire, Damian P. (২০১৮-১২-১৩)। "A derivation of Maxwell's equations using the Heaviside notation"Philosophical Transactions of the Royal Society A: Mathematical, Physical and Engineering Sciences376 (2134): 20170447। arXiv:1510.04309অবাধে প্রবেশযোগ্যডিওআই:10.1098/rsta.2017.0447পিএমআইডি 30373937পিএমসি 6232579অবাধে প্রবেশযোগ্যবিবকোড:2018RSPTA.37670447H

বহিঃসংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.