তড়িৎ

তড়িৎ বা বিদ্যুৎ হল এক প্রকার শক্তি যা তড়িৎ আধানের স্থিতি বা গতির ফলস্বরূপ সৃষ্টি হয়। চুম্বকত্বের সাথে মিলিত হয়ে এটি একটি মৌলিক ক্রিয়ার জন্ম দেয় যার নাম হল তড়িৎ চুম্বকত্ব। অনেক গাঠনিক ও বাহ্যিক ঘটনার জন্য তড়িৎ দায়ী। যেমন: বজ্রপাত, তড়িৎ ক্ষেত্র, তড়িৎ প্রবাহ ইত্যাদি। অনেক শিল্প কারখানায় এবং ব্যবহারিক জীবনে এগুলোর প্রভাব বিদ্যমান। ইলেক্ট্রনিক্স এবং তড়িৎ ক্ষমতা এর উৎকৃষ্ট উদাহরণ।

বজ্রপাত হল বিদ্যুতের অন্যতম একটি রূপ

ইতিহাস

তড়িৎ সম্পর্কে মানুষের জ্ঞান হবার আগে মানুষ ইল মাছের শক সম্পর্কে অবগত ছিল। ১৬০০ সালে ইংরেজ বিজ্ঞানী উইলিয়াম গিলবার্ট সর্বপ্রথম তড়িৎ ও চুম্বকত্ত সম্পর্কে অভিমত প্রকাশ করেন। পরবর্তীকালে আমেরিকান চিন্তাবিদ বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিন পরীক্ষার মাধ্যমে প্রমাণ করেন যে, বজ্রপাত হল বিদ্যুতের একটি বিশেষ রূপ। পরবর্তীকালে মাইকেল ফ্যারাডে, জর্জ ওহম প্রভৃতি বিজ্ঞানীর গবেষণায় তড়িৎ এর বিভিন্ন ধর্ম সম্পর্কে মানুষ অবগত হয়।

বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিন আঠারো শতকে বিদ্যুতের উপর বিস্তারিত গবেষণা করেন

তড়িৎ আধান

প্রত্যেক পদার্থ অতি ক্ষুদ্র কণা দ্বারা গঠিত, এদেরকে পরমাণু বলে। প্রত্যেক পদার্থের পরমাণু আবার নিউক্লিয়াসের চারদিকে ঘুর্ণায়মান ইলেকট্রন দ্বারা গঠিত। পদার্থ সৃষ্টিকারী মৌলিক কণাসমূহের মৌলিক ও বৈশিষ্ট্যমূলক ধর্মকেই তড়িৎ আধান বলে। C.G.S. পদ্ধতিতে, দুটি সমপরিমাণ বিন্দু আধানকে শূন্যস্থানে কিংবা বায়ু মাধ্যমে এক সেমি দূরে রাখলে যদি এরা পরস্পরের ওপর এক ডাইন বল প্রয়োগ করে, তবে প্রতিটি বিন্দু-আধান কে একক আধান বলা হয়।

       এর SI একক - কুলম্ব(C) ও CGS একক -স্ট্যাটকুলম্ব বা esu(electroStatic unit)। এছাড়াও রয়েছে অ্যাবকুলম্ব বা emu (electromagnetic unit)।   যেখানে --

1 emu = 10 C = 3×10^10 esu

সুতরাং 1 কুলম্ব = 3× 10^9 স্ট্যাটকুলম্ব
    তড়িৎ আধানকে q দ্বারা প্রকাশ করলে - 
   স্থির তাড়িতিক আকর্ষণ বা বিকর্ষণ বল (F)=(1/4πε)q1•q2/r² 
  [যেখানে কুলম্বের ধ্রুবক K = 1/4πε, ε = তড়িৎ ভেদ্যতা(permittivity), q1, q2 = দুটি বিন্দু তড়িৎ আধান  ও r = বিন্দুদ্বয়ের মধ্যবর্তী সরলরৈখিক দূরত্ব 
   S.I. পদ্ধতিতে ε = 8.85×10–¹² C²/N•M²

ও K = 1 dyne•cm/esu² (CGS)

       = 9 ×10^9 N•m²/C²(SI)  ]

তড়িৎ বিভব

তড়িৎ বিভব হল তড়িদাহিত বস্তুর এমন একটি অবস্থা যা থেকে বোঝা যায় ঐ বস্তুর সাথে অন্য কোন বস্তুর সংযোগ ঘটালে আধানটি কোন বস্তু থেকে কোন বস্তুটির দিকে যাবে। অসীম দূরত্ব থেকে একক ধনাত্মক আধানকে তড়িৎক্ষেত্রের কোনো বিন্দুতে আনতে যে কার্য করতে হয়, তাকে তড়িৎ বিভব (electric potential) বলে। একে V দ্বারা প্রকাশ করলে -

        V = W/Q., যেখানে W = কৃতকার্য ও Q = আধান
 এর SI একক - ভোল্ট ও CGS এ- স্ট্যাটভোল্ট  300 স্ট্যাটভোল্ট =1 ভোল্ট=10^8 অ্যাবভোল্ট
  এটি একটি স্কেলার রাশি। একে ভোল্টমিটারে মাপা হয়। এর মাত্রা [ML²T–³I–¹]
   এখন ধনাত্মক ক্ষেত্র থেকে ঋণাত্মক ক্ষেত্রে যেতে একক আধানের কৃতকার্যকে বিভবপ্রভেদ বললে, ঋণাত্মক ক্ষেত্র থেকে ধনাত্মক ক্ষেত্রে একক আধানের কৃতকার্যকে তড়িচ্চালক শক্তি (EMF) বলে। একে পোটেনশিওমিটার দ্বারা মাপা যায়। 
এটি বিভবপ্রভেদ সৃষ্টির কারণ। এর মাধ্যমে তড়িৎ শক্তি সৃষ্টি হয় ও বিভবপ্রভেদ তাকে অন্য শক্তিতে রূপান্তরিত করে।
তড়িৎ প্রবাহমাত্রা 

কোন ধাতব পরিবাহীর যে কোন প্রস্থচ্ছেদ দিয়ে যে অতিক্রান্ত তড়িৎ আধানকে তড়িৎ প্রবাহ বলে। এই তড়িৎ প্রবাহের হারকে তড়িৎ প্রবাহ মাত্রা(CURRENT) বলে। এটি দুই প্রকার যথা - 1) সম প্রবাহ(DC)- প্রবাহ একমুখী 2) পরিবর্তী প্রবাহ(AC)- নির্দিষ্ট সময় অন্তর দিক পরিবর্তন ঘটে। কিন্তু ভেক্টরের যোগ সূত্র না মানায় এটি স্কেলার রাশি। একে I দ্বারা প্রকাশ করলে -

    I = Q/t, যেখানে Q = আধান, t = সময় 
 এর SI একক- অ্যাম্পিয়ার(A) ও CGS একক- স্ট্যাটঅ্যাম্পিয়ার। এছাড়াও আছে অ্যাবঅ্যাম্পিয়ার।

1 A = 10 emu

তড়িৎ ক্ষমতা

তড়িতের আন্তর্জাতিক একক এম্পিয়ার (A)

তড়িৎ চুম্বকত্ব সংশ্লিষ্ট আন্তর্জাতিক একক
প্রতীক নাম প্রতিপাদিক এককসমূহ একক মৌলিক এককসমূহ
I তড়িৎ প্রবাহ অ্যাম্পিয়ার (মৌলিক এককসমূহ) A A = W/V = C/s
q তড়িৎ আধান, তড়িতের পরিমাণ কুলম্ব C A·s
V বিভব পার্থক্য ভোল্ট V J/C = kg·m2·s3·A1
R, Z, X রোধ, ইম্পেডেন্স, রিঅ্যাক্টেন্স ওহম Ω V/A = kg·m2·s3·A2
ρ রোধাঙ্ক ওহম-মিটার Ω·m kg·m3·s3·A2
P বৈদ্যুতিক ক্ষমতা ওয়াট W V·A = kg·m2·s3
C ধারকত্ব ফ্যারাড F C/V = kg1·m2·A2·s4
স্থিতিস্থাপকতা ফ্যারাড এর বিপরীত F1 V/C = kg·m2·A2·s4
ε প্রবেশ্যতা ফ্যারড প্রতি মিটার F/m kg1·m3·A2·s4
χe বৈদ্যুতিক susceptibility (মাত্রাহীন) - -
G, Y, B তড়িৎ পরিবাহিতা, Admittance, Susceptance সিমেন্স S Ω1 = kg1·m2·s3·A2
σ তড়িৎ পরিবাহিতাঙ্ক সিমেন্স প্রতি মিটার S/m kg1·m3·s3·A2
H সহায়ক চৌম্বক ক্ষেত্র, চুম্বকন ক্ষেত্র ,চৌম্বক ক্ষেত্রের তীব্রতা অ্যাম্পিয়ার প্রতি মিটার A/m A·m1
Φm চৌম্বক ফ্লাক্স ওয়েবার Wb V·s = kg·m2·s2·A1
B চৌম্বক ক্ষেত্র, চৌম্বক ক্ষেত্রের তীব্রতা, চৌম্বক আবেশ, চৌম্বক ক্ষেত্রের শক্তি টেসলা T Wb/m2 = kg·s2·A1
Reluctance অ্যাম্পিয়ার-চক্র প্রতি ওয়েবার A/Wb kg1·m2·s2·A2
L আবেশ হেনরি H Wb/A = V·s/A = kg·m2·s2·A2
μ Permeability হেনরি প্রতি মিটার H/m kg·m·s2·A2
χm চৌম্বক susceptibility (মাত্রাহীন) - -

তড়িতের আন্তর্জাতিক একক

তড়িৎ চুম্বকত্ব সংশ্লিষ্ট আন্তর্জাতিক একক
প্রতীক নাম প্রতিপাদিক এককসমূহ একক মৌলিক এককসমূহ
I তড়িৎ প্রবাহ অ্যাম্পিয়ার (মৌলিক এককসমূহ) A A = W/V = C/s
q তড়িৎ আধান, তড়িতের পরিমাণ কুলম্ব C A·s
V বিভব পার্থক্য ভোল্ট V J/C = kg·m2·s3·A1
R, Z, X রোধ, ইম্পেডেন্স, রিঅ্যাক্টেন্স ওহম Ω V/A = kg·m2·s3·A2
ρ রোধাঙ্ক ওহম-মিটার Ω·m kg·m3·s3·A2
P বৈদ্যুতিক ক্ষমতা ওয়াট W V·A = kg·m2·s3
C ধারকত্ব ফ্যারাড F C/V = kg1·m2·A2·s4
স্থিতিস্থাপকতা ফ্যারাড এর বিপরীত F1 V/C = kg·m2·A2·s4
ε প্রবেশ্যতা ফ্যারড প্রতি মিটার F/m kg1·m3·A2·s4
χe বৈদ্যুতিক susceptibility (মাত্রাহীন) - -
G, Y, B তড়িৎ পরিবাহিতা, Admittance, Susceptance সিমেন্স S Ω1 = kg1·m2·s3·A2
σ তড়িৎ পরিবাহিতাঙ্ক সিমেন্স প্রতি মিটার S/m kg1·m3·s3·A2
H সহায়ক চৌম্বক ক্ষেত্র, চুম্বকন ক্ষেত্র ,চৌম্বক ক্ষেত্রের তীব্রতা অ্যাম্পিয়ার প্রতি মিটার A/m A·m1
Φm চৌম্বক ফ্লাক্স ওয়েবার Wb V·s = kg·m2·s2·A1
B চৌম্বক ক্ষেত্র, চৌম্বক ক্ষেত্রের তীব্রতা, চৌম্বক আবেশ, চৌম্বক ক্ষেত্রের শক্তি টেসলা T Wb/m2 = kg·s2·A1
Reluctance অ্যাম্পিয়ার-চক্র প্রতি ওয়েবার A/Wb kg1·m2·s2·A2
L আবেশ হেনরি H Wb/A = V·s/A = kg·m2·s2·A2
μ Permeability হেনরি প্রতি মিটার H/m kg·m·s2·A2
χm চৌম্বক susceptibility (মাত্রাহীন) - -

বহিঃসংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.