ডেভিড ম্যাকমিলান

ডেভিড উইলিয়াম ক্রস ম্যাকমিলান (ইংরেজি: David William Cross MacMillan) একজন স্কটীয়-বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ-মার্কিন রসায়নবিদ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ে রসায়নশাস্ত্রের অধ্যাপক। তিনি ২০১০ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়টির রসায়ন বিভাগের প্রধানও ছিলেন।[1][2] "অপ্রতিসম জৈব-অনুঘটন উদ্ভাবন" করার জন্য তিনি ২০২১ সালে জার্মান রসায়নবিদ বেনিয়ামিন লিস্টের সাথে রসায়নে নোবেল পুরস্কারে ভূষিত হন।[3]

ডেভিড ডব্লিউ. সি. ম্যাকমিলান

FRS FRSE
জন্ম(১৯৬৮-০৩-১৬)১৬ মার্চ ১৯৬৮
মাতৃশিক্ষায়তনগ্লাসগো বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসসি)
ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া, আরভিন (পিএইচডি, ১৯৯৬)
পুরস্কারকার্ডে-মরগ্যান মেডেল
মেম্বার অব ন্যাশনাল একাডেমি অব সায়েন্সেস (২০১৮)
রসায়নে নোবেল পুরস্কার (২০২১)
বৈজ্ঞানিক কর্মজীবন
প্রতিষ্ঠানসমূহ
সন্দর্ভসমূহবাইসাইক্লিক টেট্রাহাইড্রোফুরানসের স্টেরিওকন্ট্রোল্ড গঠন এবং এন্যানশিওসিলেক্টিভ ইউনিসেলিন ডাইটারপেনস মোট সংশ্লেষণ (1996)
ডক্টরাল উপদেষ্টাল্যারি ই ওভারম্যান
অন্যান্য শিক্ষায়তনিক উপদেষ্টাআর্নেস্ট ডব্লিউ. কলভিন
ডেভিড এ. ইভান্স
ডক্টরাল শিক্ষার্থীভি মারিয়া দং, তেশিক ইউন, ট্রিস্টান ল্যাম্বার্ট
ওয়েবসাইটchemlabs.princeton.edu/macmillan

শিক্ষা ও প্রাথমিক জীবন

ম্যাকমিলান ১৯৬৮ সালে স্কটল্যান্ডের বেলশিলে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি গ্লাসগো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রসায়নে স্নাতক উপাধি লাভ করেন, যেখানে তিনি আর্নি কলভিনের সাথে কাজ করেছিলেন। তিনি ১৯৯০ সালে আরভাইনের ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ল্যারি ওভারম্যানের নির্দেশনায় ডক্টরেট পর্যায়ে অধ্যয়ন শুরু করতে যুক্তরাজ্য ত্যাগ করেন। এই সময় তিনি বাইসাইক্লিক টেট্রাহাইড্রোফুরান্সের স্টেরিওকন্ট্রোল্ড গঠনের দিকে পরিচালিত নতুন প্রতিক্রিয়া পদ্ধতির উন্নয়নে মনোনিবেশ করেছিলেন।

পুরস্কার ও সম্মাননা

২০২১ নোবেল পুরস্কার

বেনিয়ামিন লিস্ট ও ডেভিড ম্যাকমিলান ২০২১ সালে যৌথভাবে রসায়নে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। জৈব-অনুঘটন নামক একটি সুক্ষ্ম আণবিক নির্মাণ উপকরণ উদ্ভাবনের জন্য তাঁদেরকে এই পুরস্কার প্রদান করা হয়। তাঁদের এই উপকরণটি ঔষধনির্মাণ গবেষণাতে বিশাল ভূমিকা রেখেছে এবং রসায়নশাস্ত্রকে পরিবেশবান্ধব করেছে। শিল্প ও গবেষণার বহুসংখ্যক খাত রয়েছে, যেগুলিতে রসায়নবিদদেরকে এমন সব অণু নির্মাণ করতে সক্ষম হতে হয়, যে অণুগুলি স্থিতিস্থাপক কিন্তু দীর্ঘস্থায়ী উপাদান গঠন করতে, তড়িৎকোষ বা ব্যাটারিতে শক্তি সঞ্চয় করতে ও বিভিন্ন রোগের অবনতি প্রতিরোধ করতে ব্যবহৃত হয়। এই ধরনের কাছে অনুঘটক নামক কিছু পদার্থের প্রয়োজন হয়, যেগুলির উপস্থিতিতে কোনও রাসায়নিক বিক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ বা ত্বরান্বিত করা যায়, কিন্তু বিক্রিয়ার দ্বারা সেগুলির কোনও পরিবর্তন হয় না। যেমন মোটরগাড়িতে ব্যবহৃত কিছু অনুঘটক গাড়ি থেকে নির্গত ধোঁয়াতে অবস্থিত বিষাক্ত পদার্থগুলিকে নির্দোষ পদার্থে রূপান্তরিত করতে সাহায্য করে। মানবদেহেও হাজার হাজার অনুঘটক জাতীয় পদার্থ আছে (যেগুলিকে উৎসেচক বলে), যেগুলি জীবনধারণে জন্য প্রয়োজনীয় অণুগুলি উৎপাদনে সাহায্য করে। বহুদিন ধরে গবেষকেরা মনে করতেন যে মূলত দুই ধরনের অনুঘটক আছে, ধাতু ও উৎসেচক। বেনিয়ামিন লিস্ট ও ডেভিড ম্যাকমিলান স্বতন্ত্রভাবে তৃতীয় এক প্রকারের অনুঘটক প্রস্তুত করেন, যাদেরকে অপ্রতিসম জৈব-অনুঘটক নাম দেওয়া হয়েছে। এগুলি অপেক্ষাকৃত ক্ষুদ্রতর কতগুলি জৈব অণুর সমন্বয়ে নির্মাণ করা হয়। জৈব অনুঘটকগুলিতে মূলত কার্বনের পরমাণুসমূহ নিয়ে গঠিত একটি স্থিতিশীল পরিকাঠামো থাকে, যেটিতে অধিকতর সক্রিয় রাসায়নিক দল যুক্ত হতে পারে। ঐসব দলে প্রায়শই অক্সিজেন, নাইট্রোজেন, গন্ধক (সালফার) ও ফসফরাসের মতো অতিসাধারণ মৌলিক পদার্থ থাকে। এর ফলে এই ধরনের জৈব অনুঘটকগুলি একই সাথে পরিবেশবান্ধব ও অর্থসাশ্রয়ী। জৈব অনুঘটকগুলির অপ্রতিসম অনুঘটন চালনা করার সামর্থ্যের কারণে এগুলির ব্যবহার বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে। যখন কোনও অণু নির্মাণ করা হয়, তখন প্রায়শই এমন সব পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় যেখানে কাছাকাছি দেখতে কিন্তু প্রকৃতপক্ষে দুইটি ভিন্ন ধরনের অণুর সৃষ্টি হয়, যেগুলি একে অপরের প্রতিবিম্বের মতো (যেমন মানুষের ডান ও বাম হাতের মতো)। রসায়নবিদদের প্রায়শই এই জোড়ের যেকোনও একটি অণুর দরকার পড়ে, বিশেষ করে ঔষধ দ্রব্য প্রস্তুতির সময়। ২০০০ খ্রিস্টাব্দের পর থেকে জৈব-অনুঘটনের প্রয়োগ অবিশ্বাস্য গতিতে বৃদ্ধি পেয়েছে। বেনিয়ামিন লিস্ট ও ডেভিড ম্যাকমিলান এই নতুন ক্ষেত্রটির দুই নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিত্ব। তারা দেখিয়েছেন কীভাবে জৈব অনুঘটক ব্যবহার করে বহু বিভিন্ন প্রকারের রাসায়নিক বিক্রিয়া চালনা করা সম্ভব। এইসব বিক্রিয়া ব্যবহার করে বর্তমানে গবেষকেরা আরও কার্যকরভাবে নতুন ঔষধ থেকে শুরু করে সৌরকোষে আলোক ধারণকারী অণু, ইত্যাদি বিভিন্ন অণু নির্মাণ করতে সক্ষম হয়েছেন।[4]

তথ্যসূত্র

  1. "Home"Macmillan Group (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২০-০৭-২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৬-১৫
  2. A short interview of Professor MacMillan is available on the Eminent Organic Chemists Page provided by the ACS Organic Division
  3. "সৌরকোষের অগ্রগতি নিয়ে কাজ, রসায়নে নোবেল পেলেন লিস্ট ও ম্যাকমিলান"। bangla.hindustantimes.com। হিন্দুস্থান টাইমস-বাংলা। ৬ অক্টোবর ২০২১। সংগ্রহের তারিখ ৬ অক্টোবর ২০২১
  4. "Press release: The Nobel Prize in Chemistry 2021"Nobelprize.org। সংগ্রহের তারিখ ১ নভেম্বর ২০২১
This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.